ইহরামের অর্থ
========
ইহরামের   শাব্দিক   অর্থ:  হারাম  করা।  কেননা  ইহরাম পরিধান  কারীর    উপর অনেক  হালাল জিনিসও  হারাম হয়ে    যায়।    ইহরাম     পরিধানকারী    ইসলামী     ভাইকে ‘মুহরিম’, আর ইসলামী বোনকে ‘মুহরিমা’ বলা হয়।

ইহরামে নিম্নের কাজসমূহ হারাম
==================
﴾১﴿  ইসলামী ভাই কোন সেলাই  করা কাপড়  পরিধান করা।   ﴾২﴿   মাথায়  টুপি  কিংবা  উড়না,  ইমামা  কিংবা রুমাল   ইত্যাদি   পরিধান   করা।   ﴾৩﴿    পুরুষেরা    মাথায় কাপড়ের  গাইট  উঠানো।  (ইসলামী    বোনেরা   মাথায় চাদর    জড়ানো    এবং     তাদের    জন্য      মাথায়      উপর কাপড়ের গাইট উঠানো নিষেধ নয়। ﴾৪﴿ পুরুষের জন্য হাত  মোজা  পরিধান   করা।   (তবে   ইসলামী  বোনদের জন্য  নিষেধ  নয়।)      ﴾৫﴿     ইসলামী  ভাই  এমন  কোন  মোজা  কিংবা জুতা   পরিধান  করতে  পারবে  না, যাতে  নিজ পায়ের মধ্য ভাগ(অর্থাৎ পায়ের মধ্যভাগের খোলা অংশ)     গোপন      হয়ে     যায়।     (পাতলা     চপ্পল    পরতে পারবেন।)   ﴾৬   ﴿   শরীর,  পোষাক  কিংবা   চুলে  সুগন্ধি  লাগানো।    ﴾৭﴿        বিশুদ্ধ    সুগন্ধি      যেমন    এলাচী    লং, দারুচিনি,  জাফরান   এসব   বস্থ  খাওয়া    কিংবা  আঁচলে  বেঁধে    নেয়া।    এসব    বস্থ    যদি    কোন    খাদ্যে     কিংবা  তরকারী    ইত্যাদিতে  দিয়ে   পাকানো   হয়ে  থাকে,  এর পর তা থেকে যদি সুগন্ধিও ছড়ায় তারপরও খাওয়াতে তা   কোন    অসুবিধা    নেই।     ﴾৮﴿      সহবাস   করা,    চুমু খাওয়া,    শরীর   স্পর্শ   করা,    আলিঙ্গন      করা,    (অর্থাৎ জড়িয়ে    ধরা)    স্ত্রীর    লজ্জাস্থানের    প্রতি    দৃষ্টি    দেয়া।  শেষোক্ত     ৪টি     কাজ     অর্থাৎ     সহবাস     ছাড়া     বাকী  কাজগুলো  উত্তেজনা বশত  হতে  হবে।  ﴾৯﴿   লজ্জাহীন  (ফাহেশা)  কথাবার্তা  বলা  ,  অথবা   ঐরূপ  কাজ  করা,  আর যে কোন গুনাহ করা সর্বদা হারাম ছিল, আর এখন আরো   বেশী   হারাম    হয়ে    গেল।   ﴾১০﴿   কারো   সাথে দুনিয়াবী লড়াই     কিংবা  ঝগড়া করা। ﴾১১﴿  জঙ্গলের পশু  শিকার  করা  অথবা  এর  শিকারে  কোন  প্রকারের  সাহায্য    সহযোগীতা    করা,    তার    মাংস    কিংবা    ডিম  ইত্যাদি  ক্রয়   করা,  বিক্রি  করা  অথবা   খাওয়া।    ﴾১২﴿ নিজের নখ কাটা কিংবা অন্যের নখ কেটে দেয়া, অথবা অন্যের  দ্বারা নিজের নখ   কাটানো।  ﴾১৩﴿ মাথা  কিংবা দাড়ির   খত    বানানো,   বগল    পরিষ্কার   করা,   নাভীর নিচের চুল উঠিয়ে নেয়া  বা    পরিষ্কার  করা, বরং   মাথা থেকে পা পর্যন্ত কোন অঙ্গ থেকে কোন চুল তুলে নেয়া। ﴾১৪﴿   রং   কিংবা   মেহেদীর    হিজাব     লাগানো।    ﴾১৫﴿  জয়তুন  কিংবা  তিলের  তেল,  চাই  ঐ  তৈল  সুগন্ধিহীন  হোক,  চুলে কিংবা শরীরে লাগানো। ﴾১৬﴿ কারো মাথা মুন্ডিয়ে   দেয়া।  চাই  সে  ইহরামে  হোক  বা  না   হোক। (হ্যাঁ,  তবে   ইহরাম   থেকে   বের  হওয়ার   সময়  ঘনিয়ে আসল,  তাহলে  এখন  সে নিজের কিংবা  অন্যের  মাথা মুন্ডাতে   পারবে।)   ﴾১৭﴿    উকুন    মেরে   ফেলা,   ফেলে দেয়া,  কিংবা  অন্য  কাউকে  মারার  প্রতি  ইশারা  করা,  কাপড়   গুলোকে     তাদের   মেরে   ফেলার   জন্য   ধোয়া কিংবা  তাপে    দেওয়া,   উকুন  মারার   উদ্দেশ্যে    মাথায় কোন   প্রকারের  ঔষধ  ব্যবহার  করা। মূলতঃ যে কোন  ভাবে   তা (উকুন)  ধ্বংস করার  কারণ  হওয়া। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১০৭৮, ১০৭৯ পৃষ্ঠা)

ইহরাম অবস্থায় নিচের কাজ সমূহ করা মাকরূহ
==========================
﴾১﴿  শরীরের   ময়লা    পরিষ্কার  করা।   ﴾২﴿  চুল   কিংবা  শরীর      সাবান  ইত্যাদি   দ্বারা  ধৌত  করা।  ﴾৩﴿  চিরুনী ব্যবহার  করা।  ﴾৪﴿   এমন  ভাবে   চুলকানো   যাতে  চুল  (লোম,    কেশ)    ঝড়ে     পড়ার     কিংবা     উকুন    পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা  থাকে। ﴾৫﴿ জামা কিংবা  শেরওয়ানী ইত্যাদি   পরিধানের   মত   করে   কাঁধের   উপর   ঝুলিয়ে  নেয়া।    ﴾৬﴿    জেনে    বুঝে    সুগন্ধির    ঘ্রাণ    নেয়া।    ﴾৭﴿  সুগন্ধিযুক্ত    ফল    কিংবা    পাতা     যেমন   লেবু,   পুদিনা,  নারঙ্গী ইত্যাদির ঘ্রাণ নেওয়া। (খাওয়ার মধ্যে এসবের কোন  অসুবিধা নেই)  ﴾৮﴿   আতর  বিক্রেতার দোকানে এই  নিয়্যতে   বসা,  যেন  সুগন্ধি  আসে।   ﴾৯﴿   চড়ানো  সুগন্ধি হাত দ্বারা স্পর্শ করা। যদি হাতে না  লাগে তখন মাকরুহ  হবে, অন্যথায়  হারাম হবে। ﴾১০﴿ এমন কোন বস্থ খাওয়া  কিংবা পান করা, যার মধ্যে খুশবু পড়েছে তা মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। না হয় তা রান্না হয়েছে নতুবা আর  ঘ্রাণ   দূরীভূত  হয়ে  গেছে।  ﴾১১﴿   কা’বা  শরীফের গিলাপের   ভিতর   এভাবে   প্রবেশ   করা   যাতে   গিলাপ  শরীফ   মাথা  কিংবা  মুখমন্ডলে লেগে যায়। ﴾১২﴿ নাক ও মুখের কোন অংশ কাপড় দ্বারা ঢেকে  রাখা।  ﴾১৩﴿   সেলাইহীন   কাপড়   রিপু   করা,   কিংবা   পাট্টা   (তালি)  লাগানো   কাপড়   পরিধান   করা।   ﴾১৪﴿   বালিশে   মুখ  রেখে উপুড় হয়ে শয়ন করা। (ইহরাম ছাড়াও উপুড় হয়ে শয়ন করা নিষেধ রয়েছে,  হাদীস  শরীফে এভাবে শয়ন করাকে জাহান্নামীদের নিয়ম বলা হয়েছে।) ﴾১৫﴿ তাবীজ,  যদিও   তা  সেলাইহীন    কাপড়ে     বেঁধে  নেয়া হোক না কেন, তা শরীরে জড়ানো মাকরুহ হবে। হ্যাঁ, যদি   সেলাইহীন   কাপড়ে  বাঁধা  তাবীজ   বাহু    ইত্যাদি কোন  জায়গায়     না    বেঁধে  বরং  গলাতে   ঝুলিয়ে   নেয়, তাহলে কোন অসুবিধা  নেই। ﴾১৬﴿ মাথা কিংবা  মুখের উপর পাট্টি বাঁধা। ﴾১৭﴿ বিনা প্রয়োজনে শরীরের উপর পাট্টি বাঁধা। ﴾১৮﴿  কোন রকম  সাজ সজ্জা   গ্রহণ করা। ﴾১৯﴿ চাদর জড়িয়ে তার  মাথায় গিরা দিয়ে দেয়া যদি মাথা খোলা থাকে। অন্যথায় হারাম হবে। ﴾২০﴿ লুঙ্গির (তাহবন্দের) উভয় পার্শ্বে গিরা দিয়ে দেয়া। ﴾২১﴿ টাকা ইত্যাদি      রাখার     নিয়্যতে     পকেটযুক্ত     বেল্ট       বাঁধার অনুমতি   আছে। তবে শুধু তাহবন্দকে শক্ত করে  চেপে ধরার নিয়্যতে বেল্ট কিংবা রশি ইত্যাদি বাঁধা মাকরূহ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১০৭৯, ১০৮০ পৃষ্ঠা)

ইহরাম অবস্থায় নিন্মে বর্ণিত কাজ সমূহ জায়িয
==========================
﴾১﴿      মিসওয়াক       করা।       ﴾২﴿      আংটি       পরা।       ﴾৩﴿  সুগন্ধিবিহীন সুরমা লাগানো  কিন্তু  মুহরিম ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন  ছাড়া   তা   ব্যবহার করা মাকরূহে তানযিহি। (সুগন্ধিযুক্ত   সুরমা    একবার    অথবা    দুইবার     লাগালে ‘সদ্‌কা’ দিতে  হবে, আর তিনবার লাগালে  ‘দম’   দিতে হবে।  ﴾৪﴿     ময়লা  দুরীভুত  করা  ছাড়া  গোসল   করা। ﴾৫﴿   কাপড়   ধৌত  করা  (তবে  উকুন  মারার  উদ্দেশ্য  করলে  হারাম   হবে।) ﴾৬﴿ মাথা   কিংবা  শরীর  আসতে আসতে   চুলকানো  যেন    চুল(লোম,   কেশ)  না  পড়ে। ﴾৭﴿   ছাতা   ব্যবহার   করা   কিংবা   কোন   কিছুর   ছায়ায়  বসা।  ﴾৮﴿   চাদরের  আচল   সমূহকে  তাহবন্দের  মধ্যে গুছিয়ে নেয়া। ﴾৯﴿ দাড়কে টানাটানি করা। ﴾১০﴿ ভাঙ্গা নখকে পৃথক  করা। ﴾১১﴿   ফোঁড়া   ফেঁটে দেয়া। ﴾১২﴿  চোখে পড়া  চুলগুলো পৃথক করা।  ﴾১৩﴿ খতনা করা।  ﴾১৪﴿  লোম    না   মুন্ডিয়ে   শিঙ্গা   লাগানো।  ﴾১৫﴿   চিল, কাক       ইঁদুর,        টিকটিকি,        গিরগিটি,       সাপ,       বিচ্ছু, চারপোকা,     মশা,     মাছি    ইত্যাদি    দুষ্টু     ও    কষ্টদায়ক প্রাণীদের মেরে ফেলা। (হারমের মধ্যেও এদের মারতে পারবেন।) ﴾১৬﴿ মাথা কিংবা মুখ ব্যতিত অন্য যেকোন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হলে পাট্টি বাঁধা। ﴾১৭﴿  মাথা কিংবা  গালের    নিচে  বালিশ  রাখা।  ﴾১৮﴿   কাপড়  দ্বারা  কান ঢেকে  রাখা।  ﴾১৯﴿  মাথা  কিংবা  নাকের  উপর  নিজের  কিংবা    অন্যের    হাত    রাখা।    (কাপড়    কিংবা    রুমাল  রাখতে পারবে না।)  ﴾২০﴿  থুথনির নিচে দাড়ির উপর কাপড়   চলে   আসা। ﴾২১﴿ মাথার   উপর  ছেনি (ধাতুর তৈরী   থালা)  অথবা  চাউলের  বশতা   বহন  করা  বৈধ। কিনত্মু   মাথার  কাপড়ের  গাইট  উঠানো  হারাম,   তবে মুহরিমা    মহিলা    উভয়টি    করতে    পারবে।   ﴾২২﴿   যে  খাদ্যে এলাচী, দারুচিনি,  লং ইত্যাদি পাকানো হয়েছে,  যদি তার সুগন্ধি আসে, তখনও জায়িয। (যেমন কুরমা, বিরয়ানী, জর্দ্দা ইত্যাদি) তা ভক্ষণ করা কিংবা পাকানো ছাড়া   যে  খাদ্যে   কিংবা  পানিতে    সুগন্ধি   ঢেলে   দেয়া হয়েছে   তবে   তা     সুঘ্রাণ    ছড়ায়   না,   তাহলে   খাওয়া জায়িয। ﴾২৩﴿ ঘি অথবা চর্বি, ভাজা তেল অথবা বাদাম কিংবা   নারিকেল   অথবা    কদু   ইত্যাদির    তৈল,   যাতে কোন    খুশবু    দেয়া    হয়নি,     তা     চুলে    কিংবা     শরীরে লাগানো।﴾২৪﴿   এমন জুতা পরা  বৈধ, যা  পায়ের  মধ্য ভাগের   জোড়া অর্থাৎ  পায়ের মধ্যভাগের  বের হওয়া  বড় হাঁড়কে আবৃত  করে না।    (তাই  মুহরিমের  জন্য  এতেই   অধিক    নিরাপত্তা     রয়েছে    যে,   পাতলা   চপ্পল পরিধান করা।) ﴾২৫﴿ সেলাাই বিহীন কাপড়ে জড়িয়ে তাবীজ  গলায়  পড়া।  ﴾২৬﴿     গৃহপালিত  প্রাণী  যেমন: উট,   ছাগল,  মুরগী,  গাভী    ইত্যাদিকে   জবেহ  করা  ও  তার মাংস   রান্না করা,  খাওয়া   সব বৈধ। তাদের    ডিম ভাঙ্গা, ভুনা করা খাওয়া সব জায়িয।

পুরুষ ও মহিলার ইহরামের পার্থক্য
====================
উপরে     বর্ণিত    ইহরামের   পদ্ধতিতে   মহিলা   ও    পুরুষ উভয়ে  একই ও অভিন্ন।  তবে ইসলামী বোনদের জন্য আরো  কিছু  কাজ    বৈধ  রয়েছে।     আজকাল  ইহরামের নামে সেলাই করা ‘স্কার্ফ’ বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। না জানার        কারণে        অনেক        ইসলামী        বোনেরা        ঐ  কাপড়কেই  ইহরাম  মনে   করে    থাকে।   মূলত   এমন নয়।   যতটুকু   সম্ভব   সেলাই   করা   কাপড়ই   পরিধান   করুন।     হ্যাঁ!    যদি    উলেস্নখিত    ‘স্কার্ফ’কে     শরয়ীভাবে জরুরী   মনে  না  করে   এবং     এমনিতেই  পড়তে  চায়,  তবে এক্ষেত্রে কোন বাধা নেই।

﴾১﴿ মাথা  ঢেকে রাখা। বরং  ইহরাম   ব্যতিত নামাযেও  এবং গাইরি   মাহরাম  (যার মধ্যে  খালু,  ফুফা,  বোনের জামাই,    মামার    সন্তানেরা,   চাচার     সন্তানেরা,   ফুফীর  সন্তানেরাও  খালার  সন্তানগণ  এবং  বিশেষত  দেবর  ও  ভাশুর   অন্তর্ভূক্ত)  এর  সামনে  (পূর্ণ  পর্দা   করা)  ফরয। গাইরি মাহরামের সামনে মহিলারা মাথা খোলা অবস্থায় চলে আসা,  কিংবা খুবই পাতলা চিকন ওড়না কাপড় পরা,    যা  দ্বারা  চুলের   কালো  সৌন্দর্য্য     ঝিলিক   মেরে ভেসে   উঠে,    ইহরাম    কালীন    ছাড়াও   হারাম,     আর  ইহরামে  অত্যাধিক হারাম।    ﴾২﴿ মুহরিমা  মহিলা যখন মাথা   ঢেকে রাখতে  পারে, তখন তার  জন্য কাপড়ের  গাট্টি  (বোঝা) বহন আরো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জায়েয হবে।  ﴾৩﴿     সেলাই   করা    তাবিজ  গলায়  কিংবা   হাতে বেঁধে  নেয়া। ﴾৪﴿  কা’বা শরীফের গিলাফে    এমনভাবে প্রবেশ করা  যাতে  তা  মাথার উপরে থাকে,   তবে যেন  তা  মুখে   না   আসে।   কেননা     মহিলাদের  জন্যও  মুখে কাপড়      দেয়া    হারাম।    (আজকাল    কা’বা     শরীফের গিলাফে লোকেরা খুব বেশী করে সুগন্ধি ছিটিয়ে থাকে, তাই      ইহরাম       অবস্থায়        খুববেশী      সতর্ক       থাকতে  হবে।)﴾৫﴿     হাত      মোজা,    মোজা    কিংবা    সেলাইযুক্ত  কাপড় পরিধান করা।﴾৬﴿ ইহরামের অবস্থায় (কাপড় দ্বারা  ভালোভাবে) মুখ আবৃত   করা   মহিলাদের  জন্যও হারাম।   তবে  গাইরে   মাহরামদের   থেকে  বাঁচার  জন্য কোন     (হাত)     পাখা     ইত্যাদি     মুখের     সামনে     (ঢাল  হিসেবে) রাখবে।  (বাহারে শরীয়াত, ১ম  খন্ড,  ১০৮৩ পৃষ্ঠা)﴾৭﴿    ইসলামী   বোনেরা    পি-কেপ   (টুপি    বিশিষ্ট) নেকাবও   পরতে   পারবেন।   কিন্তু   এ   ব্যাপারে   সতর্ক  থাকা   খুবই   জরুরী  যে,  চেহারার    সাথে  যেন  স্পর্শ  না হয়।  এতে  (অর্থাৎ  ঐ  ধরনের      নেকাব  ব্যবহার)  এই সংশয় সম্ভাবনা থাকে যে, বাতাস জোরে প্রবাহিত হলে নেকাব   চেহারার  সাথে  একেবারে  লেগে  যেতে    পারে অথবা বেখেয়ালে ঘাম    ইত্যাদি ঐ  নেকাব দ্বারা মুছতে থাকা।   সুতরাং  এ  ব্যাপারে  খুবই  কঠোর  সতর্ক    দৃষ্টি  রাখা আবশ্যক।

ইহরামের ৯টি উপকারী সতর্কতা
==================
﴾১﴿ ইহরাম (ইহরামের কাপড়) ক্রয় করার সময় খুলে ভালো      করে      দেখে      নিন,      অন্যথায়      যাত্রা      কালে  পরিধানের সময় সাইজে ছোট-বড় হল (অথবা ছেড়াঁ ফাটা    পড়ল)    তখন    আপনি     খুবই    কঠিন   সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ﴾২﴿ যাত্রার কিছুদিন পূর্ব থেকেই ঘরে    ইহরাম  বাঁধার   (প্রেক্টিস)  অনুশীলন    করুন।  ﴾৩﴿ উপরিভাগের চাদর (বড়) তোয়ালে জাতীয় কাপড়ের এবং তাহবন্দ (নিন্মভাগের কাপড়) মোটা সুতি জাতীয় কাপড়ের নিন। اِنۡ شَآءَ اللہ  عَزَّوَجَلّ নামাযেও সহজতা হবে   এবং মীনা শরীফ ইত্যাদি   স্থানে বাতাসে উড়ার   সম্ভাবনাও   খুব   কম   থাকবে।   ﴾৪﴿    ইহরাম    ও   বেল্ট ইত্যাদি বেঁধে ঘরে কিছু সময়ের জন্য (প্রতিদিন) একটু একটু চলাফেরা   করুন, যাতে এর (প্রেক্টিস)   অনুশীলন  হয়ে     যায়।   অন্যথায়    যথা    সময়ে    বেঁধে   চলাফেরার  ক্ষেত্রে  তাহবন্দ  খুব  টাইট   হওয়া    অথবা  খুলে  যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যা কালীণ অবস্থায় আপনার খুবই সমস্যা  হতে পারে। ﴾৫﴿ বিশেষ করে (তাহবন্দ) মোটা ও    উন্নত  মানের  সুতি  জাতীয়  কাপড়ের  বেঁছে   নিন। অন্যথায়  পাতলা  কাপড়   হলে  আর  এমতাবস্থায় ঘাম এলে     তাহবন্দ    ভিজে    গাঁয়ের     সাথে    লেগে     যাওয়া  অবস্থায়     উরু     ইত্যাদি     অঙ্গের     রং    প্রকাশ    পাওয়ার সম্ভাবনা    থাকে।    অনেক    সময়    তাহবন্দের    কাপড়  এতই  পাতলা হয় যে,   ঘাম না  আসলেও  উরু   ইত্যাদি অঙ্গের    রং   বাহির   থেকে  চমকাতে  থাকে।  দা’ওয়াতে ইসলামীর    প্রকাশনা    প্রতিষ্ঠান    মাকতাবাতুল      মদীনা কর্তৃক     প্রকাশিত      ৪৯৬      পৃষ্ঠা       সম্বলিত     “নামাযের  আহকাম”   নামক  কিতাবের ১৯৮ পৃষ্ঠায়  রয়েছে:  যদি  (নামাযী)   এমন  পাতলা  কাপড়   পরিধান  করে   যাতে শরীরের  ঐ  অংশ  দেখা  যায়  যা  নামাযে  ঢাকা  ফরয।  অথবা চামড়ার  রং   প্রকাশ পায়  তাহলে    নামায হবে  না।   (ফতোওয়ায়ে   আলমগীরী,   ১ম   খন্ড,   ৫৮  পৃষ্ঠা) আজকাল    পাতলা    কাপড়ের    ব্যবহার   খুব   দ্রুততার সাথে     বেড়ে      চলেছে।        এমন      পাতলা     কাপড়ের পায়জামা পড়া যাতে উরু কিংবা চতরের স্থানের কোন অংশ চমকাতে  দেখা যায়, যদিও  তা নামাযের  বাইরে  হয়,     তার    পরও   (এরূপ)    পরিধান    করাাটা    হারাম। (বাহারে  শরীয়াত, ১ম খন্ড,  ৪৮০  পৃষ্ঠা) ﴾৬﴿   নিয়্যত   করার     পূর্বে      ইহরামের     (কাপড়ের)      উপর     সুগন্ধি লাগানো   সুন্নাত।    অবশ্যই  লাগান  (এতে   কোন  বাধা  নেই),  কিন্তু   লাগানোর  পরে   আতরের  শিশি   বেল্টের   পকেটে     রাখবেন    না।    অন্যথায়   নিয়্যত     করার   পর পকেটে    হাত   দিলে    খুশবু     (হাতে)    লাগার    সম্ভাবনা রয়েছে।    ‘সদ্‌কা’   দিতে   হবে।   যদি    আতরের    ভেজা  ইত্যাদি কিছু না লাগে, হাত থেকে শুধু মাত্র খুশবু আসে তাহলে কোন   কাফ্‌ফারা দিতে  হবে  না।   পকেটে  যদি রাখতেই হয়, তবে পস্নাসটিক জাতিয় কিছুতে মুড়িয়ে  খুব সতর্কতা  পূর্ণ  স্থানে   রাখবেন।    ﴾৭﴿ উপরের চাদর ঠিক করার সময় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে  হবে, যেন তা   নিজের   অথবা   অন্য   কোন   মুহরিম   ব্যক্তির   মুখে  কিংবা     মাথায়   গিয়ে    না   পড়ে।     ﴾৮﴿   কিছু    মুহরিম  ইহরামের তাহবন্দ নাভীর নিচে করে বেঁধে থাকে, আর তার  উপরের  চাদর   অসতর্কতায়  পেট   থেকে  বারবার সরে যায়।  যার দ্বারা নাভীর নিচের কিছু অংশ সকলের সামনে প্রকাশিত হয়ে যায়। আর তিনি নিজে এর কোন পরওয়াই করেন না। অনুরূপ কতেক মুহরিম ব্যক্তি পথ চলা   ফেরায়   কিংবা   উঠা   বসায়   অসতর্কতার   কারণে  অনেক    সময়ে   তাদের   রান   ইত্যাদি    অঙ্গও   মানুষের সামনে প্রকাশিত হয়ে যায়। তাই মেহেরবানী করে এই মাসআলাকে স্মরণ রাখবেন যে, নাভীর নিচ  থেকে হাঁটু পর্যন্ত    শরীরের    এই   পরিপূর্ণ    অংশ   সতর,   আর   এর থেকে    আংশিক    অংশও   শরীয়াতের   অনুমতি   ছাড়া   অন্যের সামনে    খোলা হারাম। সতরের  এই মাসআলা শুধু ইহরামের  সাথে নির্দিষ্ট   নয়  বরং   ইহরাম  ছাড়াও অন্যের সামনে নিজের সতর খুলে দেয়া কিংবা অন্যের সতর    দেখা   স্পষ্ট      হারাম।    ﴾৯﴿   অনেক   মুহরিমদের ইহরামের   তাহবন্দ নাভির  নিচে  পরিধান  করে থাকে,  আর  অসতর্কতার  কারণে  مَعَاذَ   اللہ  عَزَّوَجَلَّ    অন্যদের উপস্থিতি নাভীর নিচথেকে গোপনাঙ্গের সীমা পর্যনেন্তর মধ্যকার     কিছু     অংশ     খোলা     থেকে     যায়।     বাহারে  শরীয়াতে  রয়েছে:  নামাযে    নাভীর  নিচ  থেকে   বিশেষ অঙ্গের    মূল     গোড়া    পর্যন্ত    স্থানের     মধ্য    হতে    এক চতুর্থাংশ পরিমাণ স্থান যদি খোলা   থাকে, তবে   নামায হবে না। বর্তমানে এমন অনেক দুঃসাহসী গুনাহগারকে দেখা  যায়,  যারা  মানুষের সামনে   হাঁটু বরং   উরু  পর্যন্ত খোলা    রাখে।    এ   ধরনের   কাজ    (নামায   ও     ইহরাম ছাড়াও) হারাম,   আর  এর অভ্যস্ত   ব্যক্তি ফাসিক বলে গণ্য হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৮১ পৃষ্ঠা)

ইহরামের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সাবধানতা
======================
যে     সকল   কাজ   ইহরামে   নিষিদ্ধ  রয়েছে,  যদি   কোন অপারগতায় কিংবা ভুলক্রমে তা হয়ে যায়,  তবে গুনাহ হবেনা   বরং    ঐ   ভুলের    জন্য   যে   জরিমানা   নির্ধারিত রয়েছে, তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। চাই এ সকল কাজ অনিচ্ছাকৃত হোক, ভুলবশত হোক, ঘুমন্ত অবস্থায় হোক, কিংবা  অপর  কেউ জোর  পূর্বক করিয়ে  থাকুক। (প্রাগুক্ত, ১০৮৩ পৃষ্ঠা)

মাই ইহরাম বাঁধো করে হজ্ব ও ওমরা
মিলে লুতফে সা’ঈ সাফা আওর মারওয়া।

صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب!                             صَلَّی اللہُ تَعَالٰی  عَلٰی  مُحَمَّد

Top