লাব্বাইকের অর্থের প্রতি খেয়াল রাখুন
======================
এদিক   সেদিক তাকাতে তাকাতে, অন্য  মনস্ক হয়ে  না পড়ে      যথাসাধ্য      খুশু      ও      খুজুর      সাথে      (অন্তরের  একনিষ্টতা  ও  বিনয়ের  সাথে)  এর  অর্থের  প্রতি  লক্ষ্য  রেখে  লাব্বায়িক পড়া   উচিত। ইহরামকারী লাব্বায়িক বলার সময় আপন প্রিয় রব আল্লাহ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে   আরজ    করে:    লাব্বায়িক   অর্থাৎ   “আমি   হাজির  হয়েছি”,  আপন   মা-বাবাকে   কেউ  যদি  এই  শব্দগুলো  বলে   তখন   সে   অবশ্যই      গভীর    মনোযোগের   সাথে  বলবে।     অতএব   আপন    সৃষ্টিকর্তা   আল্লাহ   তাআলার নিকট  আরজ  করা  ও  দয়া  লাভে  ধন্য  হওয়ার  ক্ষেত্রে  কেমন বিনয়ীভাব  ও সুক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা চায়। এ ব্যাপারটি প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তিরই বুঝে আসবে। এ  বিষয়ে   হযরত সায়্যিদুনা   আল্লামা  আলী ক্বারী   رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: এক ব্যক্তি  “লাব্বাইক” এর বাক্যগুলো পড়বেন আর বাকীরা তার  সাথে সাথে পড়বে। এটা  মুশতাহাব    নয়    বরং     প্রত্যেক      ব্যক্তি     স্বয়ং     নিজেই তালবীয়া    পড়বে।    (আল    মাসলাকুল    মুতাকাসসিত  লিলকারী: ১০৩ পৃষ্ঠা)

লাব্বাইক বলার পরের একটি সুন্নাত
=================
লাব্বাইক থেকে অবসর হয়ে দোআ প্রার্থনা করা সুন্নাত যেমনি ভাবে হাদীস শরীফে রয়েছে; তাজেদারে মদীনা صَلَّی  اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم  যখন  লাব্বাইক  থেকে অবসর   হতেন,    তখন    আল্লাহ   তাআলার   নিকট   তাঁর সন্তুষ্টি   ও  জান্নাতের   প্রার্থনা  করতেন।  আর    জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতেন। (মুসনাদে ইমাম শাফেয়ী,   ১২৩ পৃষ্ঠা)    নিঃসন্দেহে     আমাদেরই     প্রিয়    আক্বা,    মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর  প্রতি   আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট এতে কোন   সন্দেহ নেই। তিনি صَلَّی اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم     নিশ্চিত জান্নাতি।  বরং   আল্লাহ তাআলা   এর   রহমতে   ও    দানক্রমে     তিনি   জান্নাতের মালিক।     তবে      এই      সকল     দোআ     আরো      অনেক হিকমতের সাথে সাথে  উম্মতের শিক্ষা  গ্রহণের জন্যে। যেন আমরাও সুন্নাত বুঝে দোআ করে নিই।

লাব্বাইকের ৯টি মাদানী ফুল
================
﴾১﴿ উঠতে বসতে, চলতে   ফিরতে, অযু   অবস্থায়,   অযু বিহীন অবস্থায়, মোট কথা সর্বাবস্থায় ‘লাব্বাইক’ বলতে থাকবেন। ﴾২﴿   বিশেষত  উচুঁ  স্থানে চড়তে, ঢালু স্থানে নামার   সময়  বা  সিঁড়িতে   উঠার   সময়  কিংবা   নামার সময়,    দুই   কাফেলা    পরস্পর   সাক্ষাৎ   হলে,    সকাল, বিকাল,  শেষরাতে  এবং  পাঁচ  ওয়াক্ত  নামাজের  পরে,  মোট    কথা     প্রত্যেক    অবস্থার     পরিবর্তনে     লাব্বাইক  বলবেন।   ﴾৩﴿   যখনই  লাব্বাইক   পড়া   শুরু    করবেন, কমপক্ষে   তিনবার   পড়বেন।    ﴾৪﴿     মু’তামির    অর্থাৎ ওমরাকারী    আর   ‘তামাত্তু’হজ্বকারীরাও   ওমরা     করার সময় যখন কা’বা শরীফের তাওয়াফ শুরু করবে তখনই হাজরে   আসওয়াদকে   প্রথমবার   চুমু   দিয়ে   লাব্বাইক  বলা ত্যাগ করবেন। ﴾৫﴿ ‘মুফরিদ’ ও ‘কারিন্তু লাব্বাইক বলা জারি রেখে  মক্কা শরীফে অবস্থান   করবে। কেননা তার লাব্বাইক ও তামাত্তু হজ্বকারী যখন হজ্বের ইহরাম বাঁধবে, তাঁর লাব্বায়িক ধ্বনি  জুলহিজ্জার দশম দিবসে  জমরাতুল   আকাবাতে   (অর্থাৎ   বড়   শয়তানে)   প্রথম  বার  কংকর    নিক্ষেপ  করার  সময়েই    শেষ  হবে।   ﴾৬﴿ ইসলামী  ভাইয়েরা উচ্চ আওয়াজে  লাব্বাইক বলবেন,   তবে  এতটুকু   বড়  আওয়াজ   না   হওয়া  চাই  যা   দ্বারা নিজের  কিংবা অন্যের কষ্ট  হয়। ﴾৭﴿ ইসলামী বোনেরা যখন লাব্বায়িক বলবেন, খুবই নিন্মস্বরে বলুন আর এই কথা সর্বদার জন্য ইসলামী  ভাই ও  ইসলামী    বোনেরা অন্তরে  গেথে  নিবেন  যে,   হজ্ব  ব্যতীতও  আপনি  যখন  কিছু পড়বেন তাতে  এতটুকু আওয়াজ করা প্রয়োজন, যা   নিজের   কানে   শুনেন।  যদি  বদির  কিংবা  পরিবেশ গত কারণে শুনা না যায়, তখন কোন ক্ষতি নেই।  তবে এতটুকু শব্দে  আদায় করতে হবে, যেন  কোন অসুবিধা না  হলে   নিজ    কানে  শুনা  যাবে।  ﴾৮﴿  ইহরামের  জন্য নিয়্যত   করা  শর্ত।  যদি  নিয়্যত  ছাড়া লাব্বায়িক  বলা হয় ইহরাম হবেনা। অনুরূপভাবে একা নিয়্যতও যথেষ্ট হবে না। যদি না আপনি লাব্বায়িক কিংবা তদস্থলে তার সমার্থ   জ্ঞাপক  কোন  বাক্য  বলেন।   (আলমগিরী,   ১ম  খন্ড,  ২২২  পৃষ্ঠা)   ﴾৯﴿  ইহরামের  জন্য   একবার   মুখে লাব্বায়িক  বলা  জরুরী।  আর    যদি  তদস্থলে  سُبۡحٰنَ  اللّٰہِ  কিংবা اَلۡحَمۡدُلِلّٰہِ কিংবা لَآ اِلٰـہَ اِلَّا الـلّٰـہُ কিংবা অন্য কোন শব্দে   জিকরুল্লাহ  করে থাকেন, আর ইহরামের   নিয়্যত করে   নিন,   তাহলে   ইহরাম   সম্পন্ন   হয়ে   যাবে।   কিন্তু  লব্বায়িক বলাই সুন্নাত। (প্রাগুক্ত)

করো খুব ইহরাম মে লাব্বায়িক কি তাকরার
দে হজ্ব তা শরফ হার বরছ রব্বে গাফ্‌ফার।

اٰمِين  بِجا  هِ  النَّبِيِّ  الْاَمين          صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب!                              صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی  مُحَمَّد

নিয়্যত প্রসঙ্গে জরুরী নির্দেশনা
=================
মনে   রাখবেন!   অন্তরের   ইচ্ছাকেই   নিয়্যত   বলা   হয়।  নামাজ, রোজা, ইহরাম যাই হোকনা কেন, যদি অন্তরে  ইচ্ছা  বিদ্যমান না থাকে। শুধু মুখে নিয়্যতের  শব্দাবলী উচ্চারণ করাতে নিয়্যত আদায় হবে না। আর এ কথাও ভালভাবে    মনে    রাখা    চাই    যে,    নিয়্যতের    শব্দাবলী  আরবী      ভাষায়      বলা      আবশ্যক      নয়।       নিজ       নিজ মাতৃভাষায়ও  বলা   যেতে  পারে।   বরং   শব্দাবলী   মুখে  উচ্চারণ করাও  বাধ্যতামুলক  নয়।  শুধু অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট হবে। তবে মুখে উচ্চারণ করে নেয়া উত্তম।

আর  আরবী  ভাষায়   হলে    অধিক   উত্তম।  কেননা  ইহা আমাদেরই মাক্কী  মাদানী সুলতান, নবী করীম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মাতৃ মধুর প্রিয় ভাষা। আরবী ভাষায় যখন আপনি  নিয়্যতের  শব্দাবলী বলবেন  তখন তার অর্থও অবশ্যই আপনার স্মৃতিতে থাকা চাই।

Top