হলক এবং তাকছিরের ১৭টি মাদানী ফুল
============
হজ্ব ও ওমরায় ইহরাম খোলার সময় মাথা মুন্ডন করার ব্যাপারে নবী করীম صَلَّی اللہُ   تَعَالٰی    عَلَیْہِ    وَاٰلِہٖ وَسَلَّم     এর দুইটি ইরশাদ মোবারক:

﴾১﴿ “মাথা মুন্ডন করার ক্ষেত্রে  প্রতিটি চুলের  বিনিময়ে একটি   নেকী  (মিলবে)   এবং  একটি  গুনাহ  ক্ষমা  করে দেয়া হবে।”(আত্‌তারগীব ওয়াত্‌তহীব, ২য় খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা)    ﴾২﴿    “মাথা    মুন্ডনের    সময়    যে    চুল    মাটিতে  পড়বে।     তা    তোমার      জন্য    কিয়ামতের       দিন    নূর হবে।”(প্রাগুক্ত)      ﴾৩﴿    কোরবানী    হতে      অবসর    হয়ে পুরুষেরা  কিবলার   দিকে     মুখ  করে    হলক   তথা  মাথা মুন্ডন    করবে।    অর্থাৎ   সম্পূর্ণ   মাথা      মুন্ডাবে   অথবা তাকসীর করবে। অর্থাৎ কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ মাথার চুল আঙ্গুলের গিরা বরাবর কেটে নিবে।

দুই  তিন স্থান  থেকে   কাঁচি   দ্বারা  কিছু চুল  কেটে  নিলে যথেষ্ট  হবে না।    ﴾৪﴿  হলক   করুন কিংবা তাকছির, তা ডান   দিক    হতে  শুরু  করবেন।  ﴾৫﴿  ইসলামী  বোনেরা শুধুমাত্র      তাকসীর     করাবেন।     অর্থাৎ      মাথার       এক  চতুর্থাংশের   প্রতিটি   চুল   হাতের   আঙ্গুলের   এক   গিরা  পর্যন্ত  কাটিয়ে   নিবে  অথবা   নিজেই   কাঁচি   দ্বারা   কেটে নিবে।  তাদের   জন্য   মাথা  মুন্ডানো   হারাম।   (বাহারে  শরীয়াত,   ১ম    খন্ড,    ১১৪২    পৃষ্ঠা)    (স্মরণ   রাখবেন! মহিলাদের  জন্য  পর  পুরুষ দ্বারা   চুল কাটানো এমনকি তার    সামনে    নিজের    চুল    দেখানো     (প্রকাশ     করাও জায়েয  নেই।)  ﴾৬﴿  হ্যাঁ!   চুল  যেহেতু  ছোট  বড়   হয়ে থাকে, তাই এক গিরা হতে কিছু বেশী কাটাবেন। যাতে মাথার এক চতুর্থাংশের সকল চুল কমপক্ষে এক গিরার সমান কাটা যায়। ﴾৭﴿ এখন আপনার ইহরাম হতে বের হয়ে   আসার  সময় চলে এসেছে,   তাই   আপনি মুহরিম ব্যক্তি  (অর্থাৎ  ইহরাম  পরিহিত  ব্যক্তি)  নিজের  অথবা  অন্যের   মাথা   মুন্ডন   কিংবা   কসর   করতে   পারবেন।  যদিও  অপর   ব্যক্তিটি    মুহরিম  (ইহরাম   ওয়ালা)   হয়ে থাকে।   ﴾৮    হলক   অথবা   তাকছিরের    পূর্বে   যদি   নখ কাটেন অথবা  চেহারায় খত্‌ বানান,  তাহলে কাফ্‌ফারা  আবশ্যক    হয়ে পড়বে।  এই অবস্থায় মাথা মুন্ডানোর  পর   মোঁচ   কাটা   নাভীর   নিচের   লোম   পরিষ্কার   করা  মুশতাহাব।     ﴾৯﴿  হলক  অথবা  তাকসীরের   সময়  হল কোরবানীর    দিন সমূহ।  অর্থাৎ জুলহিজ্জা মাসের  ১০, ১১,  ১২ তারিখ। তবে উত্তম হল জিলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখ।  যদি  ১২  তারিখ   পর্যন্ত  হলক অথবা  কছর  না করে    থাকেন,    তাহলে      দম      আবশ্যক    হয়ে    যাবে।  (আলমগিরী, ১ম  খন্ড,  ২৩১ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড,     ৬১৬       পৃষ্ঠা)     ﴾১০﴿     যার     মাথায়     চুল     নেই, সৃষ্টিগতভাবে  মাথায় টাক   আছে তারও নিজের  মাথার  উপর  ক্ষুর  টেনে  নেওয়া   ওয়াজিব।    (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,   ২৩১   পৃষ্ঠা)   ﴾১১﴿    যদি   কারো     মাথার       উপর ফোঁড়া অথবা জখম  ইত্যাদি থাকে, যার  কারণে মাথা মুন্ডন করা সম্ভব হচ্ছে  না, আর চুলও এত বড় হয়নি যে,   কাটা  সম্ভব  হবে। তাহলে এ  অপারগতার কারণে তার মাথা মুন্ডানো এবং  চুল কাটার হুকুম  বিলুপ্ত  হয়ে  গেল।   তার  জন্যও  মাথা  মুন্ডানো   এবং   চুল  কাটানো ব্যক্তির  মত  সকল   জিনিস  হালাল  হয়ে    যাবে।     তবে উত্তম  হল,  সে যেন কোরবানীর  দিন সমূহ শেষ  হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকে। (প্রাগুক্ত)

﴾১২﴿   হলক  অথবা   কছর    মীনা   শরীফের   মধ্যে  করা সুন্নাত,  আর  হেরমের  সীমানার  মধ্যে  করা  ওয়াজিব।  যদি  হেরমের   সীমানার  বাহিরে   করেন,   তাহলে   ‘দম’ ওয়াজিব     হবে।     (মীনা     হেরমের     সীমানার     ভিতরে  অবস্থিত।)  ﴾১৩﴿    হলক   অথবা  তাকছিরের  সময়  এই তাকবীরটি  পড়তে  থাকুন  এবং   বাক্যটি   শেষ  হলেও পড়ুন:

اَللہُ   اَکْبَرُطاَللہُ اَکْبَرُط     لَآاِلٰہَ  اِلَّا   اللہُ وَاللہُ  اَکْبَرُط اَللہُ اَکْبَرُطوَلِلہِ الْحَمْدُ

﴾১৪﴿  (হলক বা  তাকসীর থেকে)   অবসর   হওয়ার পর শুরু   এবং   শেষে   দরূদ    শরীফ    পড়ে     এই    দোআটি পড়ুন:

اَللّٰھُمَّ  اَثْبِتْ  لِيْ    لِکُلِّ  شَعْرَةٍ  حَسَنَةً   وَّامْحُ    عَنِّيْ    بِهَا  سَيِّئَةً وَّارْفَعْ لِيْ بِهَا عِنْدَکَ دَرَجَةً ط

অনুবাদ:   ইয়া   আল্লাহ!   প্রতিটি   চুলের   বিনিময়ে   তুমি  আমার জন্য একটি নেকী লিখে দাও এবং একটি গুনাহ মুছে  দাও, আর প্রতিটি  চুলের বিনিময়ে আমার  একটি মর্যাদা বৃদ্ধি  কর।  (ইহ্‌ইয়াউল   উলুম, ১ম    খন্ড, ৩৪৩ পৃষ্ঠা)

﴾১৫﴿  ইফরাদ   হজ্বকারী   যদি    কোরবানী  করতে  চায়,  তাহলে তার জন্য মুশতাহাব হল; হলক অথবা তাকছির কোরবানীর    পর    করাবে।    আর    যদি    হলকের    পরে  কোরবানী করে থাকে  তাহলেও   কোন অসুবিধা   নেই। আর   ‘তামাত্তো’  ও    ‘কিরান্তুকারীর  জন্য    হলক   অথবা তাকছির   কোরবানীর পরে  করা  ওয়াজিব।  যদি  হলক অথবা  তাকছির পূর্বে করে  নেয়    তাহলে   দম ওয়াজিব হবে।  (বাহারে শরীয়াত,   ১ম খন্ড, ১১৪২ পৃষ্ঠা) ﴾১৬﴿ চুল মাটির  নিচে দাফন করে দিন, আর সবসময় শরীর থেকে যে সকল     বস্থ  যেমন: চুল (লোম ইত্যাদি), নখ, চামড়া আলাদা হলেই  তা দাফন করে দিন।  (প্রাগুক্ত, ১১৪৪ পৃষ্ঠা) ﴾১৭﴿ হলক অথবা তাকছির  হতে অবসর হওয়ার পর এখন স্ত্রী সহবাস করা, উত্তেজনা  সহকারে তাকে   ছোঁয়া,   চুমু খাওয়া,  লজ্জাস্থান  দেখা ব্যতীত যে  সকল   কাজ   ইহরামের   কারণে    হারাম   ছিল    তা    সব  হালাল হয়ে গেল।

(প্রাগুক্ত)

صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب!                              صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی  مُحَمَّد

Top