হাজীদের জন্য ইশ্কের পূঁজি থাকা জরুরী
=======================
সৌভাগ্যবান হাজীরা! হজ্বের জন্য যেভাবে প্রকাশ্য পুঁজির প্রয়োজন হয়, অনুরূপ অপ্রকাশ্য পুঁজিও খুবই প্রয়োজন। আর ঐ পূঁজি হল একমাত্র গভীর ইশক ও মুহাব্বত, আর প্রকাশ্য কথা যে, ইহা আশিকানে রাসুলদের নিকট পাওয়া যায়। ঘটনা: ছরকারে বাগদাদ, হুজুরে গাউছে পাক رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর দরবারে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলে তিনি رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে সম্ভোধন করে বললেন: এই ব্যক্তি এখনই বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে এক কদমে আমার নিকট এসেছে যেন সে আমার কাছ থেকে ইশকের আদব সমুহ শিক্ষা গ্রহণ করে। (আখবারুল আখয়ার, ১৪ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক। اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
আশিকে রাসুলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন!
==================
سُبۡحٰنَ اللہ عَزَّوَجَلَّ একজন কারামত ধারী ওলি ও আপন অন্তরে ইশ্কের পুঁজি অর্জনে তার চেয়ে উচ্চ স্তরের অপর ওলির দরবারে হাজেরী দিয়ে থাকেন। আর আমরা কোন স্তরে ও কাতারের শামিল হই। তাই আমাদের উচিৎ কোন আশিকে রাসুল এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ইশ্কের আদাব সমুহ শিখে নেয়া। অতঃপর “সফরে মদীনা”শুরু করা।
পেহলে হাম শিখে করিনা, পির মিলে মুরিশদ ছে সিনা,
চল পড়ে আপনা সফিনা আওর পৌঁছ যায়ে মদীনা।
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় হাজীরা! এখনই আমি আপনাদের নিকট খোদা তালাশকারী ও আশেকানে মুস্তফা ও মুজতবা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ইশক ও মুহাব্বতের দিওয়ানা হাজীদের অন্তর কাঁপানো দু’টি আশ্চর্য ও অমূল্য কাহিনী উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। উহা পড়ুন এবং মুহাব্বতে খোদা ও ইশ্কে মুস্তফাصَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তে মত্ত হতে থাকুন এবং আন্দোলিত হোন:
রহস্যময় হাজী
=======
হযরত সায়্যিদুনা ফুজাইল বিন আয়াজ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: আরাফাতের ময়দানে মানুষেরা একত্রিত হয়ে দোয়াতে লিপ্ত ছিল, তখন আমার দৃষ্টি একজন যুবকের উপর পড়ল। যিনি মাথা নত করে লজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি বললাম: যুবক! তুমিও দোআ কর। সে বলল: আমার ঐ কথার ভয় হচ্ছে যে, যে সময় টুকু আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তা হয়ত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি কোন মুখে দোআ করব। আমি বললাম: তুমিও দোআ কর। যেন আল্লাহ তাআলা তোমাকেও ঐ দোআ প্রার্থনাকারীদের দোআর বরকতে কামিয়াব করেন। হযরত সায়্যিদুনা ফুজাইল رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যে মাত্র সে দোআর জন্য হাত উঠানোর চেষ্টা করল। তার উপর এমন এক কম্পণভাব সৃষ্টি হয়ে গেল যে, একটি বিকট আওয়াজ মুখ থেকে বের হল ও চটপট করতে করতে পড়ে গেল এবং তার শরীর থেকে রূহ বের হয়ে গেল। (কাশফুল মাহজুব, ৩৬৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
জবেহ হওয়া হাজী
==========
হযরত সায়্যিদুনা জুন্নুন মিসরী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: আমি মিনা শরীফের ময়দানে একজন যুবক দেখলাম। সে আরামে বসে ছিল। যখন মানুষের কোরবানী করতে ব্যস্ত ছিল। এমন সময়ে সে শব্দ করে বলে উঠল: হে আমার প্রিয় আল্লাহ! তোমার সকল বান্দা কোরবানী করতে লিপ্ত রয়েছে। আর আমিও তোমার দরবারে আমার প্রাণকে কোরবাণী দিয়ে দিতে চাই। হে আমার মালিক! আমাকে কবুল কর। একথা বলে নিজ আঙ্গুল গলায় ঘুরাল এবং চটপট করতে করতে পড়ে গেল। আমি তখন নিকটে গিয়ে দেখলাম, সে নিজ প্রাণকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। (কাশফুল মাহজুব, ৩৬৪ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
ইয়ে এক জান্ কিয়া হে আগর হু কড়োঢো
তেরে নাম পর সব কো ওয়ারা করো মে। (সামানে বখশিশ)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
নিজের নামের সাথে হাজী লাগানো কেমন?
====================
সম্মানিত হাজীগণ! আপনারা দেখলেন তো! হজ্ব এভাবেই হওয়া চাই। আল্লাহ তাআলা এ দুইজন বরকতময় হাজীদের ওসিলায় আমাদেরকে প্রশান্ত অন্তর নছীব করুন। মনে রাখবেন! প্রত্যেক ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ইখলাছ শর্ত। আফসোস! এখন ইলমে দ্বীন এবং উত্তম সঙ্গ থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারণে আমাদের অধিকাংশ ইবাদত রিয়াকারীর আওতাভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে এখন আমাদের সকল কাজে লোক দেখানো, লৌকিকতার প্রবেশ অবশ্যই বুঝা যাচেছ। অনুরূপ এখন হজ্বের মত অত্যাধিক পূণ্যময় ইবাদতও লৌকিকতার ফাঁদে পড়ে যাচেছ। যেমন: আমাদের অনেক ভাই হজ্ব পালন করার পরে নিজেকে নিজে হাজী বলে। এবং নিজ কলমে নিজ নামের পূর্বে হাজী লিখে থাকে। হয়ত আপনি মনে করতে পারেন তাতে ক্ষতি কি? হ্যাঁ! বাস্তবে তাতে কোন ক্ষতিও নেই। যখন মানুষেরা আপনাকে নিজ ইচ্ছায় হাজী সাহেব বলে সম্বোধন করবে। তবে হে প্রিয় হাজীরা ! নিজ মুখে নিজেকে হাজী সাহেব বলায় নিজ ইবাদত কে নিজে প্রচার করা ব্যতীত আর কি হতে পারে? একটি ছোট হাস্যরস দ্বারা তা বুঝে নিন।
হাস্যরস
====
ট্রেন ঝক ঝক করে নিজ গন্তব্যের দিকে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। আর তাতে দুই ব্যক্তি কাছাকাছি বসা ছিল। একজন কথা শুরু করতেই জিজ্ঞাসা করল। জনাব আপনার নাম কি? উত্তর দিলেন: হাজী শফিক। আর আপনার নাম কি? দ্বিতীয়জন জিজ্ঞাসা করল: প্রথম ব্যক্তি উত্তর দিল “নামাযী রফিক”। হাজী সাহেব খুবই আশ্চার্য হল এবং জিজ্ঞাসা করল! হে নামাযী রফিক! ইহা তো খুবই আশ্চর্য জনক নাম মনে হচ্ছে। নামাযী ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল।
আপনি বলুন; কতবার আপনি হজ্ব পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন? হাজী সাহেব বলল: اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ! বিগত বছরেই তো হজ্বে গমন করেছিলাম। নামাযী ব্যক্তি তখন বলতে শুরু করলেন: আপনি জীবনে মাত্র একবার হজ্বে বায়তুল্লাহর সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরে নির্দ্বিধায় নিজে নিজেকে হাজী বলতে লাগলেন, আর আপনার কৃত হজ্বের প্রচার করতে লিপ্ত হয়ে গেলেন। আর আমি তো অনেক বছর থেকে ধারাবাহিক দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুবই গুরুত্ব সহকারে পালন করে আসছি। তাই আমি যদি নিজে নিজেকে ‘নামাযী’ বলে থাকি, তাতে অবাক হওয়ার কি আছে!
হজ্বের সাইন বোর্ড লাগানো কেমন?
================
আপনারা হয়ত বুঝে গেছেন। বর্তমানে তো লৌকিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আশ্চার্য তামাশা যে, যখন হাজী সাহেব হজ্বে আসা-যাওয়া করে তখন কোন প্রকারের ভাল ভাল নিয়্যত ব্যতিরেকে পূর্ণ দালান ঝিলমিল বাতি দ্বারা সাজানো হয়। আর ঘরে ‘হজ্ব মোবারক’নামে হজ্বের বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়। বরং তাওবা! তাওবা!! দেখা যায় কোথাও কোথাও হাজী সাহেব তো ইহরাম পরিহিত অবস্থায় সুন্দর সুন্দর ছবি উঠায়। অবশেষে এগুলো কি? পলাতক হতভাগা পাপী উম্মত হয়ে, নিজ আক্বা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে এভাবে ধুম ধাম করে যাওয়া আপনি কি উচিৎ মনে করেন? না, কখনো না। বরং কান্না রত অবস্থায় আফসোস করতে করতে কম্পমান ভীত হৃদয়ে নম্র অবস্থায় হাজেরী দেওয়াই উচিত।
আঁচুও কি লড়ি বন রহি হো, আওর আহো ছে পাটতা হো সিনা।
বিরদে লব হো ‘মদীনা মদীনা’, জব চলে চুয়ে তৈয়্যবা সফীনা।
জব মদীনে মে হো আপনি আমদ, জব মে দেখো তেরা সব্জ গুম্বদ।
হিচকিয়া বান্দ কর রোও বে হদ, কাশ! আজায়ে এয়্যছা করিনা।
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
বসরা থেকে পায়ে হেঁটে হজ্বে সফর!
==============
ভাল ভাল নিয়্যত ব্যতিরেকে শুধুমাত্র নফসের স্বাদে পড়েও আত্নতৃপ্তির কারণে নিজ ঘরের উপর ‘হজ্ব মোবার’এর সাইন বোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার ইত্যাদি লাগানো ব্যক্তিরা এবং নিজ হজ্বের ডাকাঢোল পিটিয়ে খুব চর্চাকারীরা একটি উঁচুস্থরের ঘটনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। যেমন; হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান ছওরী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হজ্বের জন্য বসরা নগরী থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা করলেন। কেউ তাঁকে আরজ করল: আপনি رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সাওয়ারীতে আরোহন করছেন না কেন? তিনি বললেন: পলাতক কোনো গোলাম! যখন তার মুনিবের দরবারে সন্ধির জন্য উপস্থিত হয়, তখন তাকে কি আরোহী হয়ে আসা উচিত? আমি এই মাথায় দিয়ে চলার মত পবিত্র ভূমিতে যেতে খুব বেশী লজ্জা অনুভব করছি। (তানবীহুল মুগতাররীন, ২৬৭ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
আরে যায়েরে মদীনা! তু খুশি ছে হাস রাহা হে
দিল গমজাদা জো পা তা তু কুছ ওর বাত হোতি!
আমি তাওয়াফের যোগ্য নই
==============
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ নকল করেন: এক বুযূর্গ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে প্রশ্ন করা হল: আপনি কি কখনো কা’বা শরীফের ভিতরে প্রবেশ করেছেন? (তিনি বিনয় প্রকাশ করে) বলেন: কোথায় বাইতুল্লাহ শরীফ আর কোথায় আমার নোংরা পা! আমি তো আমার পা গুলোকে বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করারও উপযুক্ত মনে করি না। কেননা এটা তো আমি জানি যে, এই পা কোথায় কোথায় এবং কেমন কেমন জায়গা অতিক্রম করেছে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদ্কায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
উন্ কে দিয়ার মে তু কেয়ছে চলে পিরে গা?
আত্তার তেরী জুরআত! তু জায়ে গা মদীনা!!(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৩২০ পৃষ্ঠাা)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد