পৃথক কতিপয় প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: যদি মুহরিমের মাথা ফেটে যায় কিংবা মুখে আঘাত হয়, আর বাধ্য হয়ে সে মুখ কিংবা মাথায় পাট্টি বেঁধে থাকে। তার উপর কোন গুনাহ আছে কি না?
উত্তর: বাধ্য হয়ে করলে কোন গুনাহ নেই। তবে জুরমে গাইরে ইখতিয়ারীরও কাফ্ফারা দিতে হবে। তাই যদি দিনে রাতে কিংবা তার চেয়ে বেশী সময়ে এত চওড়া পাট্টি বেঁধে থাকে যে, মাথার এক চতুর্থাংশ কিংবা তার অধিক কিংবা মুখ ঢেকে গেল, তখন দম দিতে হবে। আর তার কম হলে সদ্কা আবশ্যক হবে। ইহা ছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গে কিংবা মহিলারা মাথায় বাধ্য হয়ে ইহা বেঁধে নিলে কোন ক্ষতি নেই।
প্রশ্ন: তামাত্তু ও কিরানকারী হজ্বের অপেক্ষায় আছে, আর এই সময়কালে সে ওমরা করে নিতে পারবে কি না?
উত্তর: কিরানকারীর ইহরাম এখনও অবশিষ্ট আছে, ইহা তো সে করতেই পারে না। আর মুতামাত্তু ব্যক্তি প্রসঙ্গে ওলামায়ে কিরামগণ মতভেদ করেছেন। তবে উত্তম হল এই যে, সে যতবার মনে চায় নফলী তাওয়াফ করে নিবে। আর যদি ওমরা করে নেয় তখন কতিপয় ওলামার মতে ইহা দ্বারা কোন ক্ষতি হবে না। তবে হজ্বের আহকাম থেকে অবসর হয়ে তামাত্তুকারী কিংবা কিরান কিংবা মুফরিদ কেউ ওমরা করে নিতে পারবে। স্মরণ রাখুন! আইয়্যামে তাশরিকে (অর্থাৎ ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩) জুলহিজ্জাহ মাসের উক্ত পাঁচ দিনে ওমরা করা মাকরূহে তাহরিমী, আর যদি ওমরা করে থাকে দম আবশ্যক হবে।
প্রশ্ন: আরব শরীফের বিভিন্ন জায়গা, যেমন: দামাম এবং রিয়াদ ইত্যাদিতে বসবাসকারী যারা মীকাত থেকে বাহিরে বসবাস করে, তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি নেই। তারা পুলিশকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত থেকে অতিক্রম করে ইহরাম বাঁধে এবং হজ্ব করে, তাদের জন্য কি হুকুম?
উত্তর: (১) আইন এর বিরোধীতা করে নিজেকে নিজে লাঞ্চনায় উপস্থাপন করা বৈধ নয়। (২) ইহরাম ব্যতীত মীকাত থেকে সামনে অতিক্রম করার কারণে আওফ (অর্থাৎ মীকাত পর্যন্ত পুনরায় ফিরে এসে ইহরাম বাঁধা) অথবা দম ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ যদি পূর্বের অবস্থায় হজ্ব অথবা ওমরা করে নিল তবে দম ওয়াজিব হবে এবং গুনাহগার হবে এবং যদি এখন হজ্ব কিংবা ওমরা এর কার্যসমূহ শুরু করা ব্যতীত ঐ বছরে মীকাত পর্যন্ত ফিরে এসে যে কোন প্রকারের ইহরাম বাঁধে, তবে দম বাতিল হয়ে যাবে, আর না হলে হবে না।
প্রশ্ন: হজ্ব ওমরার সাঈর পূর্বে মাথা মুন্ডিয়ে নিল কয়েক দিন অতিবাহিত হয়ে গেল কি করবে?
উত্তর: হজ্বের মধ্যে মাথা মুন্ডানোর সময় সাঈর পূর্বেই হয়ে থাকে অর্থাৎ (মাথা) মুন্ডানোর পূর্বে সাঈ করা সুন্নাতের পরিপন্তুী সুতরাং কেউ যদি সাঈর পূর্বে মাথা মুন্ডিয়ে ফেলল, তবে কোন সমস্যা নেই এবং কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও অতিরিক্ত কিছু সাব্যস্ত হবে না। কেননা সাঈর জন্য কোন শেষ সময় নির্ধারিত নয়। তবে যদি সাঈ করা ব্যতীত ঘরে ফিরে আসে তাহলে ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে দম সাব্যস্ত হবে, অতঃপর যদি সে ফিরে এসে সাঈ করে নেয়, তবে দম বাতিল হয়ে যাবে বরঞ্চ উত্তম হচ্ছে যে, সে দম দিবে। কেননা এটার মধ্যে ফকীরদের উপকার রয়েছে। এই হুকুম তখনই হবে, যখন মাথা মুন্ডানো নিজের সময় অর্থাৎ আয়্যামে নহরে দশ তারিখের কংকর নিক্ষেপ করার পর করিয়ে ছিল, যদি কংকর নিক্ষেপ করে অথবা আয়্যামে নহরের পরে মাথা মুন্ডিয়ে ছিল, তাহলে দম ওয়াজিব হবে। অতঃপর যদি সম্পূর্ণ অথবা তাওয়াফ এর অধিকাংশ অর্থাৎ চার চক্কর দিয়েছিল, তাহলে ইহরাম থেকে বের হয়ে যাবে, না হলে নয়। কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার কারণেও সাঈ বাতিল হবে না। কেননা এটা ওয়াজিব। সুতরাং তাকে সাঈ করতে হবে।
প্রশ্ন: যে ব্যক্তি ইফরাদ হজ্ব এর নিয়্যত করেছে, কিন্তু ওমরা করে ইহরাম খুলে ফেলেছে তার উপর কাফ্ফারা আবশ্যক হবে কি এবং এখন সে কি করবে?
উত্তর: হজ্বের ইহরাম ওমরা করে খুলে ফেলা বৈধ নয় এবং এভাবে করলে ঐ ব্যক্তি ইহরাম থেকে বাহির হবে না বরঞ্চ এখন ও সে মুহরিম থাকবে। তার জন্য আবশ্যক যে, সে হজ্বের কর্মসমূহ আদায় করার পর ইহরাম খুলে ফেলবে। হজ্বের আহকাম সমূহ আদায় করা ব্যতীত ইহরাম খুলে ফেলার নিয়্যত করে নেয়া যথেষ্ট নয়। সুতরাং যখন তার ইহরাম অবশিষ্ট থাকবে তখন যদি নিষিদ্ধ বিষয় গুলো থেকে একটি করার কারণে কাফ্ফারা আবশ্যক হবে। তবে কাফ্ফারা শুধু একটাই অপরিহার্য হবে, যদিওবা ইহরাম নিষিদ্ধ হওয়ার সমস্ত কার্যাবলি করে ফেলে। যেমন: সেলাই করা কাপড় পরিধান করে নিল, খুশবু লাগিয়ে নিল, মাথা মুন্ডায়ে নিল ইত্যাদি। এ সমস্ত কাজের জন্য একটাই দম আবশ্যক হবে। এখন তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে সেলাইকৃত কাপড় খুলে পূনরায় সেলাইবিহীন ইহরামের কাপড় পরিধান করবে, তাওবা করবে এবং পূর্বের হজ্বের ইহরামের নিয়্যত করে হজ্বের আরকান সমূহ পূর্ণ করবে।
প্রশ্ন: যে ব্যক্তি ঈদুল আযহার কুরবানী করতে চায়, সে যদি জিলহজ্জের চাঁদ উদিত হওয়ার পর ইহরাম বাঁধে, তবে নখ এবং অপ্রয়োজনীয় চুল ইত্যাদি কাটবে কিনা? কেননা এই দিনগুলোতে তার জন্য নখ ইত্যাদি না কাটা মুশতাহাব। তার জন্য কোন আমল করাটা উত্তম?
উত্তর: হাজীর যদি প্রয়োজন হয়, তবে তার জন্য নখ ও চুল কাটা মুশতাহাব, স্বরণ রাখবেন! যদি এত দিন অতিবাহিত হয়ে গেল যে, এখন নখ এবং চুল কাটা ব্যতীত ইহরাম বেঁধে নিলে চল্লিশ (৪০) দিন হয়ে যাবে, তবে এখন কাটা আবশ্যক কেননা চল্লিশ (৪০) দিন থেকে অতিরিক্ত দেরী করা গুনাহ।
প্রশ্ন: তবে কি ১৩ই জিলহজ্জ থেকে ওমরা শুরু করে দেওয়া হবে?
উত্তর: জ্বি, না। আইয়্যামে তাশরীক অর্থাৎ ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ই জিলহজ্জ এই পাঁচ দিনে ওমরার ইহরাম বাঁধা মাকরূহে তাহরীমি। যদি বাঁধে তবে দম অপরিহার্য হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৫৪৭ পৃষ্ঠা)
১৩ তারিখের সূর্যাসেন্তর পর ইহরাম বাঁধাতে পারে
প্রশ্ন: মক্কার বসবাসকারী যারা এই বছর হজ্ব করেনি তারও কি এই দিবস গুলোতে (অর্থাৎ ৯ থেকে ১৩) ওমরা করতে পারবে না?
উত্তর: তাদের জন্যও এই দিনগুলোতে ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরা করা মাকরূহে তাহরীমি। আফাকী, হিলস্নী এবং মীকাতী সবার জন্য আসল নিষেধাজ্ঞা হল এই দিনগুলোতে ওমরার ইহরাম বাঁধা। ওমরার সময় সারা বছর কিন্তু পাঁচ দিন ওমরা বাঁধা মাকরূহে তাহরীমি, আর যদি ৯ তারিখের পূর্বে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় এই পাঁচ দিনে ওমরা করলে সমস্যা নেই এবং এই অবস্থায় মুশতাহাব হচ্ছে এই দিনগুলো (৯ থেকে ১৩) অতিবাহিত করে ওমরা করা। (লুবাবুল মানাসীক, ৪৬৬ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: আশহুরী হজ্বে (হজ্বের মাস সমূহে) যদি কেউ হিলস্নী অথবা হারমী ওমরাও করে এবং হজ্বও করে তবে এর ব্যাপারে কি হুকুম রয়েছে?
উত্তর: এভাবে হজ্বকারীর উপর দম সাব্যস্ত হবে, কেননা তাকে হজ্বে ইফরাদ করার অনুমতি রয়েছে যার মধ্যে ওমরা অন্তর্ভূক্ত নয়। ররঞ্চ সে শুধু ওমরা করতে পারবে।
প্রশ্ন: ইহরামে খাওয়ার পূর্বে ও পরে হাত ধৌত করা কেমন? না ধোইলে ময়লা পেটে যাবে এবং পরে না ধোইলে হাত পিচ্ছিল এবং দুর্গন্ধযুক্ত থেকে যাবে, কি করা যায়?
উত্তর: উভয় বার সাবান ইত্যাদি ব্যতিত হাত ধোয়ে নিন, যদি কোন অমোচনীয় কালি অথবা পিচ্ছিলতা হাতে লেগে থাকে, তবে প্রয়োজনে কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। কিন্তু লোম যেন না ভাঙ্গে এই ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করুন।
প্রশ্ন: ওযু করার পরে মুহরিম ব্যক্তির রুমাল দ্বারা হাত পরিস্কার করা কেমন?
উত্তর: মুখে কাপড় লাগাতে পারবে না। শরীরের (পুরুষেরা মাথায়ও) অপর অঙ্গ সমূহেও এভাবে সতর্কতার সাথে পরিস্কার করে নিবেন, যেন ময়লাও না থাকে আর লোম ও টপকে না পড়ে।
প্রশ্ন: মুহরিমা মুখে এমন নেকাব লাগাল যা দ্বারা তার চেহারা স্পর্শ হয় না, তার অনুমতি আছে কিনা?
উত্তর: যদি চেহারায় স্পর্শ না হয়, তখন নেকাব লাগাতে পারবে। তারপরও তাতে কয়েকটি মাসআলার সৃষ্টি হয়। যেমন বাতাস চলল কিংবা ভুলে নিজ হাত নেকাবে লেগে যায় এবং কিছুক্ষণের জন্য নেকাব সমস্ত চেহারায় লেগে যায়, তখন তার সদকা দেয়া আবশ্যক হবে।
প্রশ্ন: হলক করানোর সময় মুহরিম নিজ মাথায় সাবান লাগাবে কিনা?
উত্তর: সাবান লাগাবেন না। কেননা তখন ময়লা বের হবে, আর ইহরামকালীন ময়লা দূরীভূত করা হারাম।
প্রশ্ন: ঋতুগ্রস্থ মহিলা ঋতুকালীন ইহরামের নিয়্যত করতে পারে কিনা?
উত্তর: করতে পারে। তবে ইহরামের নফল নামায আদায় করতে পারবে না, আর তাওয়াফও পবিত্র হওয়ার পরে করবে।
প্রশ্ন: সেলাইযুক্ত চপ্পল পরিধান করা কেমন?
উত্তর: পায়ের মধ্যখানে উচ্চ অংশটি আবৃত না হলে জায়িয হবে।
প্রশ্ন: ইহরাম অবস্থায় গিরা বা সেপ্টিপিন অথবা বোতাম লাগানো কেমন?
উত্তর: সুন্নাতের পরিপন্তুী। লাগানো ব্যক্তি মন্দ কাজ করল, অবশ্য দম ইত্যাদি ওয়াজিব নয়।
প্রশ্ন: সাধারণত হাজীগণ সতর্কতাবশতঃ একটি দম আদায় করে থাকে, এটা কেমন হয়, আর যদি পরে জানা হয় যে, বাস্তবেই একটি দম ওয়াজিব হয়েছিল। তখন ঐ সতর্কতাবশতঃ দম তার জন্যে যথেষ্ট হবে কিনা?
উত্তর: ওয়াজিব হওয়ার পরে আদায় করল, তাই যথেষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু সতর্কতা মূলক দম দেয়ার পর দম ওয়াজিব হল তাহলে যথেষ্ট হল না।
প্রশ্ন: মুহরিম নাক কিংবা কানের ময়লা দূরীভূত করতে পারবে কিনা?
উত্তর: অযুর মধ্যে নাকের নরম হাড্ডি পর্যন্ত প্রতিটি লোমে পানি পৌছানো সুন্নাতে মুআক্কাদা এবং গোসলের মধ্যে ফরয। অতএব নাকের ময়লা জমে শুকিয়ে গেলে তা বের করতে হবে, আর চোখের পলকের মধ্যে পাপড়ী শুকিয়ে গেছে সেটাও অযু এবং গোসলের মধ্যে ধোয়া ফরয। কিন্তু এই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে লোম না ভাঙ্গে। থাকল কানের ময়লা পরিষ্কার করা। এর অনুমতি কেউ দেয়নি। অতএব এটার হুকুম সেটাই যা শরীরের রয়েছে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার করা মাকরূহে তানযিহী। কিন্তু এই সর্তকতা জরুরী যে লোম বা চুল না ঝড়ে।
প্রশ্ন: নিজ জীবিত পিতা মাতার জন্যে ওমরা করতে পারে কিনা?
উত্তর: করতে পারে। ফরয নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত হোক কিংবা কোন নফলী কাজের, প্রত্যেক প্রকারের সাওয়াব জীবিত হোক কিংবা মৃত সকলকে ইছালে সাওয়াব করতে পারে।
প্রশ্ন: ইহরাম অবস্থায় উকুন মারার কাফ্ফারা বর্ণনা করুন।
উত্তর: নিজের উকুন নিজের শরীর কিংবা কাপড়ে মেরে ফেলল কিংবা নিক্ষেপ করে দিল। তখন উকুন একটি হলে রুটির একটি টুকরা, আর দুই কিংবা তিনটি হলে এক মুষ্টি আনাজ আর এর চেয়ে বেশী হয়, তাহলে সদকা। উকুন গুলো মারার জন্য মাথা অথবা কাপড় ধৌত করল অথবা রোদে দিল তখন সেটাই কাফ্ফারা যা মারার মধ্যে রয়েছে। অন্য কেউ তার আদেশে তার উকুন মারল তখনও মুহরিমের উপর কাফ্ফারা রয়েছে। যদিও দমনকারী ইহরামের অবস্থায় না হয়। মাটি ইত্যাদিতে পড়ে থাকা উকুন, অন্যের শরীরে অথবা কাপড়ের উকুন মারাতে তার উপরে কোন হুকুম নেই। যদি ঐ ব্যক্তিও মুহরিম হয়।