اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ وَالصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامُ عَلٰی سَیِّدِ الْمُرْسَلِیْنَ ط
اَمَّا   بَعْدُ   فَاَعُوْذُ    بِا  للهِ   مِنَ  الشَّیْطٰنِ  الرَّجِیْمِ  ط   بِسْمِ  اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ ط

অযুর পদ্ধতি

দরূদ শরীফের ফযীলত
=============
সুলতানে    দো-আলম,     নূরে     মুজাস্সাম,    শাহে     বনী আদম, রাসূলে মুহ্তাশাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ  করেন: “যে  ব্যক্তি দিনে  ও রাতে  আমার প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি সহকারে তিনবার করে দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলার উপর (নিজ  বদান্যতায়) দায়িত্ব যে, তিনি তার ঐ  দিন ও ঐ রাতের গুনাহ ক্ষমা করে   দিবেন।   (আল  মুজামুল    কবীর  লিত   তিবরানী,  ১৮তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯২৮)

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                             صَلَّی اللهُ  تَعَالٰی عَلٰی  مُحَمَّد

হযরত       ওসমান     গণি     رَضِیَ     اللّٰہُ      تَعَالٰی      عَنْہُ      এর নবী-প্রেম

একদা  হযরত  সায়্যিদুনা  ওসমান  গণি  رَضِیَ   اللّٰہُ   تَعَالٰی عَنْہُ  এক  জায়গায়  পৌঁছে  অযুর  জন্য  পানি    চাইলেন এবং    অযু      করলেন     আর    আপনা     আপনিই      মুচকি হাসলেন। তারপর সঙ্গীদেরকে বললেন: “আপনারা কি জানেন!  আমি  কেন  মুচকি  হাসলাম?”  অতঃপর  তিনি  নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বললেন:

একদা হুযুর পুরনূর  صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم এই জায়গায়  অযু  করেছিলেন  এবং   অযু   শেষ  করে  তিনি  মুচকি  হেসেছিলেন   এবং  সাহাবায়ে   কিরামদের  عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان  উদ্দেশ্যে  ইরশাদ  করেন:  “তোমরা  কি  জান,  আমি কেন হেসেছি?” তদুত্তরে সাহাবায়ে কেরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان     আরয   করলেন:    “আল্লাহ্   তাআলা    ও    তাঁর রাসূল  صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ই  এ বিষয়ে ভাল জানেন।”  প্রিয়   মুস্তফা  صَلَّی  اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیۡہِ  وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم ইরশাদ   করেন:    “যখন    মানুষ   অযু   করে   তখন   হাত ধোয়ার  সময়  হাতের  গুনাহ্,   মুখমন্ডল   ধোয়ার   সময় মুখমন্ডলের   গুনাহ্,  মাথা   মাসেহ্  করার  সময়  মাথার গুনাহ্, আর পা ধোয়ার সময়  পায়ের  গুনাহ সমূহ্  ঝরে যায়।  (মুসনাদে   ইমাম আহমদ  বিন হাম্বল, খন্ড    ১ম, পৃষ্ঠা ১৩০, হাদীস নং-৪১৫)

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!            صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

প্রিয়    ইসলামী      ভাইয়েরা!    আপনারা    দেখলেন    তো! সাহাবায়ে কিরাম     عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان নবী করীম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  এর প্রতিটি অভ্যাস  ও  সুন্নাতকে নিজের        জীবনে       বাস্তবায়ন        করতেন।       পাশাপাশি উপরোক্ত        বর্ণনা        থেকে        গুনাহ্        ঝরে        যাওয়ার  ব্যবস্থাপত্রটাও  জানা   গেলো।   اَلْحَمْدُ  لِلّٰہِ  عَزَّوَجَلَّ   অযুর মধ্যে  কুলি  করার  দ্বারা মুখের গুনাহ, নাকে পানি দিয়ে নাক সাফ  করার দ্বারা নাকের গুনাহ্, মুখমন্ডল ধোয়ার দ্বারা  চোখের  পলক     সহ  পুরো  চেহারার    গুনাহ্,   হাত ধোয়ার দ্বারা হাতের গুনাহের  সাথে সাথে নখের নিচের গুনাহ্, মাথা ও কান মাসেহ্ করার দ্বারা মাথার গুনাহের সাথে   সাথে    কানের   গুনাহ্    আর   পা   ধোয়ার   কারণে পায়ের গুনাহের সাথে সাথে নখের নিচের গুনাহ্ সমূহ্ও ঝরে যায়।

গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার ঘটনা

اَلْحَمْدُ    لِلّٰہِ    عَزَّوَجَلَّ   অযুকারীর   গুনাহ্   ঝরে   যায়,    এই প্রসঙ্গে এক ঈমান তাজাকারী ঘটনা বর্ণনা করে হযরত আল্লামা আব্দুল ওয়াহ্হাব শা’রানী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন:  একদা  সায়্যিদুনা   ইমামে  আযম   আবূ  হানীফা رَحۡمَۃُ       اللّٰہ     ِتَعَالٰی     عَلَیہِ      কুফার      জামে     মসজিদের অযুখানায়  আসলেন,    তখন  তিনি  এক    যুবককে   অযু  করতে  দেখলেন।  তিনি  তার   অযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে ফোঁটা  ফোঁটা  পানি  ঝরতে  দেখে  বললেন:   হে    বৎস! তুমি   পিতা-মাতার   নাফরমানী   থেকে   তাওবা   করো।  তৎক্ষণাৎ    যুবকটি   বললো:     আমি    তাওবা   করলাম।  অপর ব্যক্তিকে দেখলেন,  তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে অযুর ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। তিনি رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  তাকে       বললেন:      হে      আমার      ভাই!       তুমি      যেনার (ব্যভিচারের)    গুনাহ্    থেকে    তাওবা   করো।    লোকটি  বললো:      “আমি     তাওবা     করলাম”।     অন্য      একজন লোকের অযুর পানি ঝরতে দেখে তিনি তাকে বললেন: “মদপান   ও  গান-বাজনা   শুনা   থেকে   তাওবা  করো।” লোকটি   বললো:  “আমি  তাওবা   করলাম।”  সায়্যিদুনা ইমামে আযম আবূ হানীফা   رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ    এর কাশ্ফের     কারণে    মানুষের    দোষ-ত্রুটি     প্রকাশ     হয়ে  যেতো। এইজন্য  তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে  তাঁর কাশফ   বিলুপ্ত     হয়ে    যাওয়ার   জন্য     দোয়া   করলেন। আল্লাহ্ তাআলা দোয়া  কবুল  করলেন। এরপর    থেকে  অযুকারীর গুনাহ্ ঝরে যাওয়ার দৃশ্য  তাঁর  চোখে পড়া বন্ধ হয়ে গেলো। (আল মীযানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা)

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!            صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

অযুর সাওয়াব
=======
আমলের প্রধান শর্ত হলো নিয়্যত, যদি কারো আমলের মধ্যে     ভাল    নিয়্যত   না   থাকে,      তবে   তার   সাওয়াব  পাবেনা। একই অবস্থা অযুর মধ্যেও।

যেমনিভাবে-  দা’ওয়াতে ইসলামীর  প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান   মাকতবাতুল    মদীনা    কর্তৃক    প্রকাশিত     ১২৫০    পৃষ্ঠা  সম্বলিত  কিতাব  “বাহারে  শরীয়াত”   (সংশোধিত)   এর ১ম     খন্ডের   ২৯২      পৃষ্ঠায়   বয়েছে;   অযুতে   সাওয়াব  পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলার হুকুম পালনের নিয়্যতে অযু   করাটা   জরুরী,   অন্যথায়     অযু   হয়ে   যাবে,   তবে সাওয়াব পাবে না। আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ  বলেন:   অযুর   মধ্যে   নিয়্যত   না   করার   অভ্যস্থ   ব্যক্তি  গুনাহগার হবে, এতে নিয়্যত করাটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া  (সংকলিত)  ,   ৪র্থ   খন্ড,   ৬১৬ পৃষ্ঠা)

সম্পূর্ণ শরীর পবিত্র হয়ে গেলো!
=================
দুইটি হাদীসের সারাংশ হচ্ছে: “যে ব্যক্তি بِسْمِ الله পাঠ করে  অযু  করলো,   তার  পা   থেকে  মাথা  পর্যন্ত  সম্পূর্ণ শরীর পবিত্র হয়ে গেলো।” আর যে ব্যক্তি بِسْمِ الله পাঠ করা ছাড়া অযু করলো তার ততটুকু শরীর পাক হলো, যতটুকুর  উপর   পানি   প্রবাহিত  হয়েছে।   (সুনানে  দারু  কুতনী,         ১ম        খন্ড,        ১০৮-১০৯        পৃষ্ঠা,          হাদীস নং-২২৮-২২৯)

হযরত  সায়্যিদুনা  আবু     হুরায়রা   رَضِیَ   اللہُ    تَعَالٰی  عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; রহমতে  আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে  আকরাম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “হে আবু হুরায়রা (رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ) ! যখন তুমি অযু করো   তখন  بِسْمِ  اللهِ  وَالْحَمْدُ  لِلّٰه  বলো।  যতক্ষণ   পর্যন্ত তোমার  অযু  অবশিষ্ট  থাকবে,  ততক্ষণ  পর্যন্ত  তোমার  ফেরেস্তা   অর্থাৎ    (কিরামান    কাতেবীন)   তোমার   জন্য নেকী  লিখতে    থাকবে।”  (আল  মু’জামুস  সগীর     লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৮৬)

অযু অবস্থায় শোয়ার ফযীলত

হাদীসে    পাকে   বর্ণিত     রয়েছে:    “অযু   অবস্থায়   শোয়া ব্যক্তি        একজন       রোযাদার       ইবাদাতকারীর      মত।” (কানুযুল  উম্মাল,   ৯ম    খন্ড,    ১২৩  পৃষ্ঠা,  হাদীস   নং- ২৫৯৯৪)

অযু অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ
===================
সুলতানে  মদীনা, হুযুর صَلَّی اللهُ   تَعَالٰی عَلَیۡہِ      وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত আনাস رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ   কে ইরশাদ করেন: “বৎস!    সম্ভব     হলে    সবসময়   অযু     অবস্থায়   থাকো। কেননা,  ‘মালাকুল মওত’   অযু অবস্থায় যাঁর রূহ  কবজ করেন তাঁর  শাহাদাতের মর্যাদা নসীব হবে।” (শুয়াবুল  ঈমান,   ৩য়  খন্ড,  ২৯     পৃষ্ঠা,    হাদীস-২৭৮৩)  আমার আক্বা,  আ’লা  হযরত,  ইমাম  আহমদ  রযা  খাঁন  رَحۡمَۃُ  اللّٰہ  ِتَعَالٰی  عَلَیہِ  বলেন:  “সব  সময়  অযু  অবস্থায়  থাকা  মুস্তাহাব।”

বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থাপত্র
======================
আল্লাহ্  তাআ’লা হযরত সায়্যিদুনা  মুসা কালীমুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ  الصَّلوٰۃُ  وَالسَّلام   কে   ইরশাদ  করেন:   “হে মুসা!   অযুবিহীন   অবস্থায়   যদি    তোমার     নিকট   কোন মুসীবত  আসে, তাহলে  এর  জন্য   তুমি   নিজেই দায়ী। (শুয়াবুল  ঈমান,  ৩য়  খন্ড,  ২৯  পৃষ্ঠা,  হাদীস-২৭৮২)  ফতোওয়ায়ে  রযবীয়ায়  বর্ণিত  রয়েছে:  সব  সময়  অযু  অবস্থায়     থাকা    ইসলামের     (একটি      উত্তম)    সুন্নাত।  (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া  (সংকলিত)  ,  ১ম   খন্ড,   ৭০২ পৃষ্ঠা)

সব সময় অযু অবস্থায় থাকার সাতটি ফযীলত

আমার   আক্বা,   আ’লা  হযরত,   ইমামে  আহলে  সুন্নাত, ইমাম আহমদ   রযা খাঁন رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی  عَلَیہِ  বলেন:  কোন  কোন  আরেফিন  رَحِمَہُمُ  اللہُ  تَعَالٰی  বলেছেন:  যে  সব   সময় অযু  সহকারে  থাকে, আল্লাহ্ তাআলা  তাঁকে সাতটি  মর্যাদা  দান  করেন।  (১)  ফিরিস্তাগণ  তাঁর  সঙ্গ  লাভ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। (২) ‘কলম’ তাঁর নেকী লিখতে থাকে।  (৩) তাঁর অঙ্গগুলো   তাসবীহ্ পাঠ করে (৪) তার  তাকবীরে উলা বা প্রথম  তাকবীর  হাতছাড়া হয়  না। (৫) নিদ্রা গেলে আল্লাহ্  তাআলা কিছু  ফিরেস্তা প্রেরণ  করেন,  যাঁরা  তাকে  মানুষ  ও  জ্বীনের  অনিষ্টতা  থেকে   রক্ষা করেন (৬)    মৃত্যুর যন্ত্রণা  তাঁর উপর সহজ হয়।   (৭)  যতক্ষণ  পর্যন্ত  অযু  সহকারে  থাকবে আল্লাহ্ তাআলার   নিরাপত্তায়   থাকবে।   (প্রাগুক্ত,   ৭০২-৭০৩  পৃষ্ঠা)

দ্বিগুণ সাওয়াব

নিঃসন্দেহে       শীত,       দূর্বলতা,       সর্দি,      কাঁশি,       কফ, মাথা-ব্যথা   ও   অসুস্থ  অবস্থায়  অযু  করা  খুবই  কষ্টকর হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ  অবস্থায় যাঁরা অযু করবে তাঁরা পবিত্র হাদীসের হুকুম অনুসারে  দ্বিগুণ  সাওয়াব পাবে। (আল   মুজামুল     আওসাত  লিত   তাবারানী,  ৪র্থ  খন্ড,  ১০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৩৬৬)

শীতের মধ্যে অযু করার ঘটনা

হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণি رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ  তাঁর গোলাম   হুমরানের   কাছে   অযুর   জন্য   পানি   চাইলেন  এবং   শীতের    রাতে     বাইরে    যাবার    জন্য   চাইলেন।  হুমরান বললেন: আমি পানি নিয়ে এসেছি,  তিনি   যখন হাত  মুখ  ধৌত  করলেন,  তখন  আমি  আরয  করলাম:  আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে নিরাপদে রাখুক।  আজকের রাতে অনেক ঠান্ডা, এতে তিনি বললেন: আমি আল্লাহ্র  রাসূল, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللهُ  تَعَالٰی  عَلَیۡہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছ থেকে শুনেছি: “যে বান্দা পরিপূর্ণ অযু করে আল্লাহ্ তাআলা তার আগের ও পরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” (মুসনাদে বয্যার, ২য়  খন্ড, ৭৫   পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪২২।  বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠা)

অযুর পদ্ধতি (হানাফী)

অযুর    সময়    কা’বা    শরীফের    দিকে    মুখ      করে    উঁচু জায়গায় বসা মুস্তাহাব। অযুর জন্য নিয়্যত করা সুন্নাত। নিয়্যত না করলেও অযু হয়ে যাবে, কিন্তু সাওয়াব পাবে না।   অন্তরের  ইচ্ছাকে   “নিয়্যত”  বলে।  অন্তরে   নিয়্যত  করার   সাথে  সাথে   মুখে  উচ্চারণ  করাও  উত্তম।  মুখে  এভাবে   নিয়্যত    করুন   যে,   আমি    আল্লাহ্       তাআলার নির্দেশ   পালনার্থে    পবিত্রতা    অর্জন   করার   জন্য    অযু করছি। بِسْمِ الله পড়ে নিন”। এটাও সুন্নাত। বরং  بِسْمِ اللهِ  وَالْحَمْدُ    لِلّٰه বলে নিন। এর  কারণে আপনি যতক্ষণ   অযু   অবস্থায়    থাকবেন   ততক্ষণ   ফিরিস্তাগণ    আপনার জন্য   নেকী  লিখতে   থাকবেন।   (আল  মু’জামুস  সগীর লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮৬)

এখন উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করুন। (পানির   নল   বন্ধ   করে)   উভয়   হাতের   আঙ্গুলগুলোও  খিলাল করে নিন। কমপক্ষে তিনবার করে ডানে বামে, উপরে    নিচে   দাঁতগুলো   “মিসওয়াক     করুন।   প্রত্যেক বারে   মিসওয়াক   ধুয়ে  নিন।  হুজ্জাতুল   ইসলাম  ইমাম মুহাম্মদ    বিন  মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ    গাযালী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی    عَلَیہِ     বলেন:  মিসওয়াক  করার   সময়    নামাযে ক্বিরাত   পাঠ   ও   আল্লাহর   যিকিরের   জন্য   মুখ   পবিত্র  করার   নিয়্যত  করা  উচিত।”    (ইহ্ইয়াউল    উলুম,   ১ম খন্ড,   ১৮২  পৃষ্ঠা)  অতঃপর    ডান   হাতে    তিন   অঞ্জলী পানি      নিয়ে     (প্রতি      বারে     পানির     নল     বন্ধ     করে) এমনভাবে তিনবার কুলি করবেন যেন প্রতিবারে মুখের ভিতরের পুরো জায়গায় পানি প্রবাহিত হয়। রোজাদার না হলে   গড়গড়াও করে নিন।  তারপর  ডানহাতেরই তিন অঞ্জলী পানি (প্রতিবারে আধা অঞ্জলী পানি যথেষ্ট) দিয়ে (প্রতিবারে পানির নল বন্ধ করে) তিনবার নাকের ভিতর নরম মাংস পর্যন্ত পানি পৌঁছাবেন। রোযাদার না হলে নাকের মূল (গোড়া) পর্যন্ত   পানি  পৌঁছিয়ে   দিন। বাম  হাতের  সাহায্যে  নাক    পরিষ্কার  করে   নিন   এবং  ছোট আঙ্গুল নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করান। তিনবার পুরো মুখমন্ডল এমনভাবে ধুয়ে নিন, যেখান থেকে স্বাভাবিক ভাবে  মাথার   চুল  গজায়   সেখান  থেকে   চিবুকের  নিচ  পর্যন্ত এবং এক  কানের লতি থেকে অপর কানের লতি পর্যন্ত  পুরো  সীমায়  পানি  প্রবাহিত  করুন।  যদি  দাঁড়ি  থাকে     এবং   আপনি   ইহরাম   পরিধানকারী   না    হউন, তাহলে  (পানির  নল  বন্ধ  করে)  এভাবে দাঁড়ি খিলাল   করুন    যে,   আঙ্গুল   গুলো     গলার    দিক   থেকে    প্রবেশ  করিয়ে     সামনের     দিক     থেকে     বের     করিয়ে     দিন।  অতঃপর   আঙ্গুলের   মাথা   থেকে   শুরু   করে   কনুই   সহ তিনবার    ডান   হাত   ধৌত  করুন,  এভাবে  বাম   হাতও ধৌত করুন।  উভয়হাত অর্ধ বাহু  পর্যন্ত ধোয়া মুস্তাহাব। {অধিকাংশ লোক  অঞ্জলিপূর্ণ পানি  নিয়ে  হাতের  কোষ  হতে তিনবার এমনভাবে পানি   ছেড়ে দেয় যেন  কনুই পর্যন্ত    পানি   প্রবাহিত    হয়ে  যায়।  এরকম  করা  উচিত নয়।  কারণ  এতে   কনুই  ও   বাহুর    চতুর্পাশ্বে  পানি   না পৌঁছার  আশঙ্কা  থাকে।  অতএব  বর্ণিত   নিয়মেই  হাত  ধৌত    করবে।    এতে    কনুই      পর্যন্ত    অঞ্জলীপূর্ণ    পানি প্রবাহিত  করার   প্রয়োজন    নেই  বরং   (শরয়ী   অনুমতি ছাড়া)  এরকম করা পানির অপচয়।}অতঃপর (পানির নল  বন্ধ  করে)  মাথা   মাসেহ   এভাবে  করুন    যে,     দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত আঙ্গুলীদ্বয় বাদ দিয়ে দুই হাতের  বাকি তিন তিন আঙ্গুল সমূহ পরস্পর মিলিয়ে নিন এবং কপালের   চুল  অথবা  চামড়ার   উপর    রেখে  পিছনের  অংশ পর্যন্ত  এমনভাবে টেনে নিয়ে  যাবেন যেন  হাতের তালুগুলো   মাথা  থেকে  পৃথক  থাকে।   তারপর  হাতের তালুগুলো পিছন থেকে   কপাল   পর্যন্ত এমনভাবে টেনে আনবেন  যেন  বৃদ্ধাঙ্গুলী   ও শাহাদাত আঙ্গুলীদ্বয় মাথার সাথে স্পর্শ না হয়। অতঃপর শাহাদাত আঙ্গুলীদ্বয় দ্বারা দুই   কানের     ভিতরের    অংশ   এবং    বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়    দ্বারা কানের           বাহিরের         অংশ         মাসেহ         করুন         এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলীদ্বয়  দুই    কানের   ছিদ্রে  প্রবেশ  করিয়ে  দিন  এবং  আঙ্গুলগুলোর  পিঠ  দিয়ে ঘাড়ের    পিছনের অংশ মাসেহ করুন। কিছু কিছু লোক গলা ধৌত করে, হাতের কনুই    ও    কব্জিদ্বয়    মাসেহ    করে   থাকেন।   এটা   কিন্তু সুন্নাত   নয়।   মাথা    মাসেহ    করার    পূর্বে      পানির   নল  ভালভাবে   বন্ধ  করার  অভ্যাস  গড়ে      তুলুন।  অনর্থক পানির   নল     খোলা    রাখা   কিংবা   অর্ধেক    বন্ধ    রাখার (কারণে  ফোঁটা ফোঁটা  পানি ঝরতে  থাকে) এটা   গুনাহ্ ও অপচয়।  অতঃপর প্রথমে ডান পা,  তারপর  বাম পা প্রত্যেকবার       আঙ্গুল       হতে       শুরু      করে      গোড়ালির উপরিভাগ   পর্যন্ত  তিনবার   ধৌত   করুন।তবে    মুস্তাহাব হলো,  অর্ধ  গোছা   পর্যন্ত    তিনবার   ধৌত    করা।   উভয় পায়ের   আঙ্গুল   সমূহ   খিলাল   করা   সুন্নাত।   খিলালের  সময়  পানির   নল   বন্ধ  রাখুন।   পায়ের   আঙ্গুল   খিলাল করার    মুস্তাহাব   পদ্ধতি  হচ্ছে,  বাম  হাতের  কনিষ্ঠাঙ্গুল দ্বারা   প্রথমে   ডান   পায়ের   কনিষ্ঠাঙ্গুল   থেকে   বৃদ্ধাঙ্গল  পর্যন্ত  তারপর  সে  বাম  হাতেরই  কনিষ্ঠাঙ্গুল  দ্বারা  বাম  পায়ের  বৃদ্ধাঙ্গল থেকে  কনিষ্ঠাঙ্গুল   পর্যন্ত  খিলাল  করা। হুজ্জাতুল   ইসলাম   ইমাম   মুহাম্মদ   বিন    মুহাম্মদ    বিন মুহাম্মদ  গাযালী  رَحۡمَۃُ  اللّٰہ  ِتَعَالٰی   عَلَیہِ   বলেন:  “অযুর মধ্যে প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় যেন এ আশা করা হয়    যে,   আমার   এ   অঙ্গের    গুনাহ্   বের    হয়ে   (ঝরে) যাচ্ছে।” (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা)

অযুর অবশিষ্ট পানির মধ্যে ৭০টি রোগের শিফা
==========================
লোটা  ইত্যাদিতে  অযু  করার  পর   বেঁচে  যাওয়া  পানি   দাঁড়িয়ে পান করার মধ্যে শিফা রয়েছে। যেমনিভাবে- আমার   আক্বা,    আ’লা  হযরত,    ইমামে  আহলে  সুন্নাত মাওলানা শাহ্  ইমাম   আহমদ রযা  খাঁনرَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ     “ফতোওয়ায়ে      রযবীয়া      (সংকলিত)     ”র     ৪র্থ খন্ডের, ৫৭৫ থেকে ৫৭৬  পৃষ্ঠায়   বর্ননা করেন: অযুর  বেঁচে   যাওয়া পানির  জন্য শরয়ী  ভাবে মর্যাদা   রয়েছে  এবং নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  থেকে  প্রমাণীত।  হুযুর  صَلَّی  اللهُ  تَعَالٰی  عَلَیۡہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم   অযু   করার    পর       অবশিষ্ট   বেঁচে    যাওয়া   পানি দাঁড়িয়ে পান করে ছিলেন এবং একটি হাদীসের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে   যে, সেটা  পান করা  ৭০টি  রোগের জন্য   শিফা   স্বরূপ।   তবে   সেটা   ঐ   বিষয়ে   যমযমের  পানির  সাথে  সামঞ্জস্য রাখে,   এই ধরণের  পানি   দ্বারা ইস্তিন্জা   করা  উচিত   নয়।   তানবিরুল  আবছার     নামক কিতাবে  অযুর  আদবের   মধ্যে   এটাও   বর্ণিত  হয়েছে;  অযু করার পর অযুর অবশিষ্ট পানি  কিবলার দিকে মুখ করে   দাঁড়িয়ে   পান  করে   নিন।  আল্লামা   আব্দুল   গণি নাবুলুছি  رَحۡمَۃُ  اللّٰہ    ِتَعَالٰی   عَلَیہِ  বলেন:  আমি   পরীক্ষা  করে  দেখেছি যে,  যখন আমি   অসুস্থ  হই,  তখন   অযুর অবশিষ্ট পানি দ্বারা শিফা (আরোগ্য) লাভ করি। নবীয়ে রহমত,  শফিয়ে  উম্মত,  মুস্তফা  জানে  রহমত  صَلَّی  اللهُ  تَعَالٰی  عَلَیۡہِ   وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم  এর   সঠিক   নবুয়তি  চিকিৎসার মধ্যে পাওয়া ইরশাদের  উপর   ভরসা   করে  আমি  এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছি।

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!            صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যায়
===================
পবিত্র হাদীসে বর্ণিত আছে: “যে  ব্যক্তি   ভালভাবে অযু  করলো  অতঃপর  আসমানের   দিকে  দৃষ্টি    দিলো  এবং কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করলো, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা করে সেটা  দিয়ে    জান্নাতে প্রবেশ  করতে  পারবে।” (সুনানে দারমী, ১ম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭১৬)

দৃষ্টিশক্তি কখনো দূর্বল হবে না
==================
যে  ব্যক্তি  অযু করার পর আসমানের  তাকিয়ে “সূরায়ে কদর” পাঠ   করবে,  اِنۡ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ তার  দৃষ্টিশক্তি কখনো   দূর্বল   হবে  না।  (মাসায়িলুল  কোরআন,   ২৯১ পৃষ্ঠা)

অযুর পর “সুরায়ে কদর” পড়ার ফযীলত
=================
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি অযু  করার  পর একবার ‘সূরা কদর’ পাঠ করবে,  তাকে  সিদ্দীকীনদের  এবং  যে  ব্যক্তি  দুইবার  পাঠ   করবে   তাকে  শহীদদের মর্যাদা দান   করা হবে।   আর যে  ব্যক্তি  তিনবার (সূরা   কদর)   পাঠ   করবে,   তাকে   আল্লাহ্   তাআলা   হাশরের ময়দানে     নবীদের   সাথে   হাশর   করাবেন।”   (কানযুল উম্মাল, ৯ম  খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৬০৮৫।  আল  হাভী  লিল  ফতোওয়ায়ে  লিস  সুয়ূতী,  ১ম  খন্ড,  ৪০২  পৃষ্ঠা)

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!            صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

অযুর     পর    পাঠ   করার   দোয়া   (শুরু   ও   শেষে     দরূদ শরীফ)
===================
যে অযু করার পর এই কলেমাটি পড়বে:
سُبْحٰنَكَ  اللّٰہُمَّ  وَبِحَمْدِكَ  اَشْهَدُ  اَنْ  لَّاۤ  اِلٰهَ  اِلَّا  اَنْتَ  اَسْتَغْفِرُكَ  وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ ــ
অনুবাদ: তোমার  সত্ত্বা পবিত্র আর হে আল্লাহ্!  তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। তোমার    কাছে     ক্ষমা     প্রার্থনা     করছি     এবং     তোমার দরবারে তাওবা করছি।

তখন  এর উপর মোহর   লাগিয়ে  আরশের   নীচে রেখে  দেওয়া    হয়   এবং   কিয়ামতের   দিন  এটা  পাঠকারীকে দিয়ে   দেওয়া   হবে।   (শুয়াবুল   ঈমান,   ৩য়   খন্ড,   ২১  পৃষ্ঠা, নাম্বার- ২৭৫৪)

অযুর পর এ দোয়াটি    পড়ে  নিন (শুরু ও শেষে   দরূদ শরীফ)
=================
اَللّٰہُمَّ     اجْعَلْنِیْ     مِنَ    التَّوَّابِیْنَ    وَاجْعَلْنِیْ    مِنَ    الْمُتَطَہِّرِیْنَ অনুবাদ:          হে         আল্লাহ্!          আমাকে         বেশি         বেশি তাওবাকারীগণের   মধ্যে  শামিল  করো  এবং   পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করো। (জামে তিরমিযী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৫)

Top