হজ্বের কোরবানীর ৭টি মাদানী ফুল
﴾১﴿ দশ তারিখে বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপের পর কোরবানীর স্থানে তাশরীফ নিয়ে যাবেন এবং কোরবানী করবেন। ইহা ঐ কোরবানী নয়, যা ঈদুল আযহার সময় করা হয় বরং হজ্বের শোকরিয়া স্বরূপ ‘হজ্বে কিরানকারী’এবং ‘তামাত্তোকারীর’ উপর এটা ওয়াজিব, যদিও সে ফকির হোক, আর ‘হজ্জে ইফরাদকারীর’জন্য এই কোরবানী মুশতাহাব যদিও সে ধনী হোক। ﴾২﴿ এখানেও প্রাণীর জন্য ঐ শর্তসমূহ প্রযোজ্য, যা ঈদুল আযহার কোরবানীর জন্য প্রযোজ্য। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪০ পৃষ্ঠা) যেমন ছাগল (এর হুকুমের মধ্যে ছাগী, দুম্বা, দুম্বী এবং ভেড়া, ভেড়ী সব অন্তর্ভূক্ত) এক বৎসর বয়সী হতে হবে। এর চেয়ে কম বয়সী হলে কোরবানী জায়েয হবে না। এক বছরের চাইতে বেশী বয়সী হলে জায়েয বরং উত্তম। হ্যাঁ তবে দুম্বা কিংবা ভেড়ার ছয় মাসের বাচ্চা যদি এতবড় হয় যে, দূর থেকে দেখতে এক বছর বয়সী মনে হয়, তাহলে তা দ্বারা কোরবানী জায়েয হবে। (দুররে মুখতার, ৯ম খন্ড, ৫৩৩ পৃষ্ঠা) স্মরণ রাখবেন! সাধারণত ছয় মাসের দুম্বার কোরবানী জায়েয নয়। (জায়েয হওয়ার জন্য) তা এতটুকু মোটা তাজা ও উঁচু হওয়া জরুরী যে, দূর থেকে দেখতে যেন এক বছরের পশুর মত লাগে। যদি ৬ মাস নয় বরং এক বছর থেকে ১ দিন কম বয়সী দুম্বা অথবা ভেড়ার বাচ্চা যদি দূর থেকে ১ বছর বয়সীর মত না লাগে, তবে তা দ্বারা কোরবানী হবে না। ﴾৩﴿ যদি পশুর কানের তিন ভাগের এক অংশের বেশী কাটা হয়ে থাকে, তাহলে মূলত কোরবানী আদায় হবে না, আর যদি তিন ভাগের এক অংশ কিংবা তার চেয় কম কাটা হয়ে থাকে বা কান ছেড়া হয় অথবা কানের মধ্যে ছিদ্র থাকে, এধরনের কোন সাধারণ দোষত্রুটি থাকলে, তাহলে এ ধরনের প্রাণী দ্বারা কোরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে মাকরূহ (তানযিহী) হবে। ﴾৪﴿ যদি যবেহ করতে জানেন, তাহলে নিজেই কোরবানী করবেন, কারণ ইহাই সুন্নাত। অন্যথায় যবেহের সময় উপস্থিত থাকবেন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪১ পৃষ্ঠা) অন্যকেও কোরবানী করার জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারেন। ﴾৫﴿ উট দ্বারা কোরবানী করা উত্তম। কারণ আমাদের প্রিয় আক্বা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বিদায় হজ্বের সময় নিজের হাত মোবারক দ্বারা ৬৩টি উট নহর (জবেহ) করেছেন, আর নবী করীম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অনুমতিক্রমে অবশিষ্ট উট গুলো হযরত মাওলা আলী کَرَّمَ اللہُ تَعَالٰی وَجۡہَہُ الۡکَرِیۡم নহর করেন। (মুসলিম, ৬৩৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১২১৮) অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে যে, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট ৫টি অথবা ৬টি উট আনা হয়। তখন উট গুলোর মাঝেও এক ধরনের অবস্থা ছিল, আর তারা এভাবে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল, যেন প্রতেকটি উটই চাচ্ছিল যে, প্রথমে আমার নহর হওয়ার সৌভাগ্য মিলে যায়। (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ২১১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৭৬৫)
হার এক ভি আরজু হে পেহলে মুঝকো জবেহ ফরমায়ে
তামাশা কর রহে হে মরনে ওয়ালে ঈদে কোরবা মে। (যওকে না’ত)
﴾৬﴿ উত্তম হচ্ছে যে, জবেহ করার সময় পশুর সামনের দুই হাত (পা), পিছনের এক পা বেঁধে নিন। জবেহ করার পর খুলে দিন। এই কোরবানী করে আপনার নিজের এবং সকল মুসলমানের হজ্ব ও কোরবানী কবুল হওয়ার (জন্য) দোআ করুন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪১ পৃষ্ঠা) ﴾৭﴿ দশ তারিখে কোরবানী করা উত্তম। ১১ ও ১২ তারিখেও কোরবানী করতে পারেন। কিনত্মু ১২ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে কোরবানীর সময় শেষ হয়ে যায়।
হাজী এবং ঈদুল আযহার কোরবানী
============
প্রশ্ন: হাজী সাহেব-সাহেবার উপর ঈদুল আযহার কোরবানী করা ওয়াজিব নাকি ওয়াজিব নয়?
উত্তর: মুকীম (স্থানীয়) ধনী হাজীর উপর ওয়াজিব, মুসাফির হাজীর উপর ওয়াজিব নয়। যদিও সে ধনী হোক। ঈদুল আযহার কোরবানী হেরেম শরীফের মধ্যে করা জরুরী নয়। নিজ দেশেও কাউকে বলে করিয়ে নিতে পারেন। অবশ্য দিন, তারিখ সময়ের খেয়াল রাখতে হবে যে, যেখানে কোরবানী করা হবে ওখানে এবং যেখানে কোরবানী দাতা আছেন সেখানেও উভয় স্থানে কোরবানীর দিন হতে হবে। মুকীম হাজীর উপর কোরবানী ওয়াজীব হওয়ার ব্যাপারে “আলবাহরুর রাঈক” কিতাবের মধ্যে রয়েছে: যদি হাজী সাহেব মুসাফির হয়, তবে তার উপর কোরবানী ওয়াজিব নয়। অন্যথায় সে (অর্থাৎ মুকীম হাজী) মক্কাবাসীর ন্যায় এবং (ধনী হওয়া অবস্থায়) তার উপর কোরবানী ওয়াজিব। (আল বাহরুর রাঈক, ২য় খন্ড, ৬০৬ পৃষ্ঠা) ওলামায়ে কেরাম যেই হাজীর উপর কোরবানী ওয়াজিব না হওয়ার কথা বলেছেন, তা দ্বারা ঐ হাজী উদ্দেশ্যে যিনি মুসাফির। সুতরাং ‘মাবসূত’ কিতাবে রয়েছে: কোরবানী শহরবাসীদের উপর ওয়াজিব, হাজীগণ ছাড়া, আর এখানে শহরবাসী দ্বারা মুকীম উদ্দেশ্য এবং হাজীগণ দ্বারা মুসাফির উদ্দেশ্য। মক্কাবাসীদের উপর কোরবানী ওয়াজিব যদিও তারা হজ্ব করে।
(আল মবসূত লিস্সারাখসী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১২তম পর্ব, ২৪ পৃষ্ঠা)
কোরবানীর টোকেন
===========
আজকাল অনেক হাজী সাহেব-সাহেবানরা ব্যাংকে কোরবানীর টাকা জমা করিয়ে টোকেন সংগ্রহ করে থাকেন। আপনি এরকম করবেন না। এসব যে কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোরবানী করানোর ক্ষেত্রে সরাসরি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা তামাত্তোকারী এবং কিরানকারীর জন্য এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব যে, প্রথমে রমী তথা কংকর নিক্ষেপ করবে। অতঃপর কোরবানী করবে। এরপরে হলক করবে। যদি এই ধারাবাহিকতার বিপরীত করে থাকে, তাহলে দম ওয়াজিব হয়ে যাবে। এখন ঐ প্রতিষ্ঠানকে আপনি টাকা জমা দিয়েছেন তারা যদি আপনার নামে কোরবানী দেওয়ার সময়ও যদি জানিয়ে দেয় তারপরও আপনার নিকট এ কথার সংবাদ পাওয়া সীমাহীন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে যে, আপনার কোরবানী সময়মত হয়েছে কিনা? যদি আপনি কোরবানীর পূর্বেই হলক তথা মাথা মুন্ডন করিয়ে থাকেন তাহলে আপনার উপর ‘দম’ ওয়াজিব হয়ে যাবে। যে হাজী সাহেব এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোরবানী করাতে চায় তাকে এই ইখতিয়ার দেওয়া যায় যে, যদি তিনি নিজের কোরবানীর সঠিক সময় জানতে চায় তাহলে ৩০টি প্রাণীর উপর নিজের একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করে নিবে। অতঃপর তাকে বিশেষ পাশ দেওয়া হয়, আর তিনি গিয়ে সকলের কোরবানী সমূহ আদায় করার অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে পারেন। তবে এখানেও এই ত্রুটির সম্ভাবনা রয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক লক্ষ লক্ষ প্রাণী ক্রয় করে এবং এগুলোর প্রত্যেকটি ত্রুটিমুক্ত হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। অধিকাংশ (হজ্ব) ব্যবস্থাপকরাও সম্মিলিতভাবে কোরবানীর ব্যবস্থা করে থাকে, কিন্তু এক্ষেত্রেও অনেকের সুদঘুষের মত লেনদেনের খুব জঘন্য কালো হাত থাকে। সর্বোপরি যথার্থ এটাই হবে যে, নিজ কোরবানী নিজের হাতেই করা।
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد