দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহে নূর
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ‘সুরা কাহাফ’ পাঠ করবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহ তার জন্য নূর দ্বারা আলোকিত থাকবে।” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৯৯৬)
কা’বা পর্যন্ত নূর
অপর বর্ণনায় রয়েছে;“যে ব্যক্তি জুমার রাতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতে) ‘সুরাতুল কাহাফ’ পাঠ করবে, তার জন্য সেখান থেকে কা’বা শরীফ পর্যন্ত নূর দ্বারা আলোকিত হবে।” (সুনানে দারমী, ২য় খন্ড, ৫৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪০৭)
সূরা হা-মীম আদ্ দুখান এর ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে সূরা হা-মীম আদ্ দুখান পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।” (আল মুজামুল কবীর লিত্ তাবরানী, ৮ম খন্ড, ২৬৪পৃষ্ঠা, হাদীস-৮০২৬) অপর বর্ণনায় রয়েছে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮৯৮)
৭০ হাজার ফিরিশতার ক্ষমা প্রার্থনা
নবী করীম, রউফুর রহীম, রহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাতে ‘সূরা হা-মীম আদ দুখান’ পাঠ করবে, তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৮৯৭)
সমস্ত গুনাহের ক্ষমা
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত;প্রিয় আক্বা, উভয় জগতের দাতা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ফযরের নামাযের পূর্বে তিনবার-اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনার চেয়েও অধিক হয়। (আল মু’জামুল আউসাত লিত তাবারানী, ৫ম খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৭১৭)
জুমার নামাযের পর
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের ২৮ তম পারার সূরা জুমার দশম আয়াতে ইরশাদ করেন:
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর যখন নামায শেষ হলো, তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো আর আল্লাহ্কে খুব স্মরণ করো! এ আশায় যে, সাফল্য লাভ করবে।
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদীرَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে খাযাইনুল ইরফানের মধ্যে বলেন:‘জুমার নামাযের পর জীবিকা অর্জনের কাজে লিপ্ত হওয়া, কিংবা জ্ঞানার্জন, রোগীর সমবেদনা, জানাযায় অংশগ্রহণ, আলিম ওলামাদের সাক্ষাৎ ও অনুরূপ সৎকাজের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে পূণ্য অর্জন করো।’
ইলমে দ্বীনের মজলিশে শরীক হওয়া
জুমার নামাযের পর ইলম চর্চার মজলিসে অংশগ্রহণ করা মুস্তাহাব। যেমনিভাবে- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ এর বাণী হচ্ছে: “এই আয়াতে শুধুমাত্র বেচা-কেনা এবং দুনিয়াবী উপার্জন উদ্দেশ্য নয় বরং জ্ঞান অর্জন করা, আপন ভাইদের সাথে সাক্ষাত করা, রোগীদের সেবা করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা এবং এই ধারণের অন্যান্য সৎকাজ।” (কিমিআয়ে সাআদাত, ১ম খন্ড, ১৯১ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জুমার নামায আদায় করা ওয়াজীব হওয়ার জন্য ১১টি শর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটিও বাদ পড়লে জুমার নামায ফরয হবে না। এরপরও যদি কেউ জুমার নামায আদায় করে তাহলে হয়ে যাবে। প্রত্যেক বিবেকবান, সুস্থ বিবেক সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য জুমার নামায আদায় করা উত্তম। অপ্রাপ্ত বয়স্ক জুমার নামায আদায় করলে তা নফল হিসাবে গণ্য হবে কেননা তার উপর জুমা ফরয নয়। (রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা)