হাদীসে বলা হয়েছে ,
আবুল ইয়ামান হাকাম ইব্ন নাফি (র)……..নবী (সাঃ) এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মুসলমান ব্যক্তির উপর যে সকল বিপদ-আপদ আপতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ্ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৪৫)


আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্নিত যে, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ্ তার গুনাওসমূহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৪৬)

কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির উদাহরণ হল সে শস্যক্ষেত্রের নরম চারা গাছের ন্যায়, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেক বার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের উদাহরণ, সে যেন ভূমির উপর কঠিনভাবে স্থাপিত বৃক্ষ, যাকে কোন ক্রমেই নোয়ানো যায় না। অবশেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উৎপাটিত হয়ে যায়। যাকারিয়্যা তাঁর পিতা কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত তিনি নবী (সাঃ) থেকে আমাদের কাছে এরূপ বর্ণনা করেছেন।( বুখারী ::: হাদিস ৫৪৮) । আবূ 

হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি মুসীবতে লিপ্ত করেন।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৪৯)
কাবীসা (র) ও বিশর ইব্ন মুহাম্মদ (র)……… আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) এর চাইতে অধিক রোগ যাতনা ভোগকারী অন্য কাউকে দেখিনি। (হাদিস ৫৫০)

মুহাম্মদ ইব্ন ইউসুফ (র)…….আব্দুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) এর পীড়িত অবস্থায় তাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললামঃ নিশ্চয়ই আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে, এটা এ জন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে। তিনি বললেনঃ হাঁ! যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, তার উপর থেকে গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে যায়, যে ভাবে বৃক্ষ থেকে ঝরে যায় তার পাতাগুলো।((সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫১)

আবদান (র)………..আব্দুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমাদের দু’ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু আক্রান্ত হই। আমি বললামঃ এটি এজন্য যে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুন সাওয়াব তিনি বললেনঃ হাঁ ব্যাপারটি এমনই। কেননা যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, চাই তা একটি কাঁটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যে ভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫২)


আবূ মুসা আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, রোগীর সেবা কর এবং কয়েদীকে মুক্ত কর।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস
বারা’ ইব্ন আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের সাতটি জিনিসের আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, মোটা ও পাতলা এবং কারুকার্য খচিত রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে এবং কাস্সী ও মিয়সারা কাপড় ব্যবহার করতে। আর তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ আমরা যেন জানাযার অনুসরন করি রোগীর সেবা করি এবং বেশি বেশি সালাম করি।(বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫৪)

জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি ভীষনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তখন নবী (সাঃ) ও আবূ বকর (রা) পায়ে হেঁটে আমার খোজ খবর নেওয়ার জন্য আমার নিকট আসলেন। তাঁরা আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। তখন নবী (সা) অযূ করলেন। তারপর তিনি তাঁর অবশিষ্ট পানি আমার পায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে দেখলাম, নবী (সা) উপস্থিত। আমি নবী (সা) কে বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সম্পদের ব্যাপারে আমি কি করবো? আমার সম্পদের ব্যাপারে কি পদ্ধতিতে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহন করবো? তিনি তখন আমাকে কোন উত্তর দিলেন না। অবশেষে মীরাসের-আয়াত নাযিল হল।(বুখারী :৭খন্ড:: হাদিস ৫৫৫)

মুসাদ্দাদ (র)…………..আতা ইব্ন আবূ রাবাহ্ (র) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ইব্ন আববাস (রা) আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাবো না? আমি বললামঃ অবশ্যই। তখন তিনি বললেনঃ এই কৃষ্ণ বর্নের মহিলাটি, সে নবী (সা) এর নিকট এসেছিল্ তারপর সে বললঃ আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার ছতর খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। নবী (সা) বললেনঃ তুমি যদি চাও, ধৈর্য ধারন করতে পার। তোমার জন্য্ থাকবে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করি, যেন তোমাকে নিরাময় করেন। মহিলা বললঃ আমি ধৈর্য ধারন করবো। সে বললঃ তবে যে সে অবস্থায় ছতর খূলে যায়। কাজেই আল্লাহ্র নিকট দু’আ করুন যেন আমার ছতর খুলে না যায়। নবী (সা) তাঁর জন্য দু’আ করলেন। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫৬)।

আতা (র) থেকে বর্নিত আছে যে, তিনি সেই উম্মে যুফার (রা) কে দেখেছেন কা’বার গিলাফ ধরা অবস্থায়। সে ছিল দীর্ঘ দেহী কৃষ্ণ বর্নের এক মহিলা।(বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫৭)

আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (র)………..আনাস ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা) কে বলেত শুনেছি যে, আল্লাহ বলেছেনঃ আমি যদি আমার কোন বান্দাকে তার অতি প্রিয় দু’টি জিনিসের ব্যাপারে পরীক্ষায় ফেলি, আর সে তাতে ধৈর্য ধারন করে, তাহলে আমি তাকে সে দু’টির বিনিময়ে দান করবো জান্নাত। আনাস (রা) বলেন, দু’টি প্রিয় জিনিস বলে তার উদ্দেশ্য হল সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়। অনুরুপ বর্ননা করেছেন আশ্াস ইব্ন জাবির ও আবূ যিলাল (র) আনাস (রা)-এর সূত্রে নবী (সা) থেকে।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫৮)

আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় আসলেন, তখন বকর ও বিলাল (রা) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁদের কাছে গেলাম এবং বললামঃ হে আব্বাজান! আপনি কেমন অনুভব করছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন অনুভব করছেন? আবূ বকর (রা)-এর অবস্থা ছিল, তিনি যখন জ্বরে আক্রান্ত হতেন আবৃত্তি করতেনঃ “সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজনের মধ্যে, আর মৃত্যু অপেক্ষমান থাকে তার জুতার ফিতার চেয়ে সন্নিকটে।” বিলাল (রা)-এর জ্বর যখন থামত তখন তিনি বলতেনঃ “হায়! আমি যদি লাভ করতাম একটি রাত কাটানোর সুযোগ এমন উপত্যকায় যে আমার পাশে আছে উযখির ও জালীল ঘাস। যদি আমার অবতরণ েহতো কোন দিন মাজিন্নার কূপের কাছে। হায়! আমি কি কখনো দেখা পাব শামা ও তাফীলের।” আয়েশা (রা) বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে তাকে এদের অবস্থা জানালাম। তখন তিনি দু’আ করে বললেনঃ হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যে রূপে তুমি আমাদের কাছে মক্কা প্রিয় করে দিয়েছিলে কিংবা সে অপেক্ষা আরো অধিক প্রিয় করে দাও। হে আল্লাহ! আর মদীনাকে উপযোগী করে দাও এবং মদীনার মুদ্দ ও সা’ এর ওযনে বরকত করে দাও। আর এখানকার জ্বরকে স্থানান্তরিত করে জুহ্হফা এলাকায় স্থাপন করে দাও।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৫৯)


উসামা ইবন যায়েদ (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা) এর এক কন্যা (যায়নাব) তার কাছে সংবাদ পাঠিয়েছেন, এসময় উসামা, সা’দ ও সম্ভবতঃ উবায় (রা) নবী (সা) এর সংগে ছিলেন। সংবাদ ছিল এ মর্মে য (যায়নাব বলেছেন) আমার এক শিশু কন্যা মৃত্যু শয্যায় শায়িত। কাজেই আপনি আমাদের এখানে আসুন। উত্তরে নবী (সা) তার কাছে সালাম পাঠিয়ে বলে দিলেনঃ সব আল্লাহর এখতিয়ার। তিনি যা চান নিয়ে নেন, আবার যা চান দিয়ে যান। তাঁর কাছে সব কিছুরই একটা নির্ধারিত সময় আছে। কাজেই তুমি র্ধৈযধারন কর এবং উত্তম প্রতিদানের আশায় থাকো। তারপর আবারো তিনি নবী (সা) এর কাছে কসম ও তাগিদ দিয়ে সংবাদ পাঠালে নবী (সা) উঠে দাড়ালেন। আমরাও দাড়িয়ে গেলাম। এরপর শিশুটিকে নবী (সা) এর কোলে তুলে দেওয়া হলো। এ সময় তার নিঃশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছিল। নবী (সা) এর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। সা’দ (রা) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ এটা রহমত। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা করেন তার অন্তরে এটিকে স্থাপন করেন। আর আল্লাহ তাঁর মেহেরবান বান্দাদের প্রতিই মেহেরবানী করে থাকেন। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৬১)


আনাস (রা) থেকে বর্নিত যে, এক ইয়াহুদীর ছেলে নবী (সা) এর খেদমত করত। ছেলেটির অসুখ হলে নবী (সা) তাকে দেখতে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহন করো। সে ইসলাম গ্রহন করলো। সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (র) তাঁর পিতা থেকে বর্ননা করেছেন যে, আবূ তালিব মৃত্যুমুখে পতিত হলে নবী (সা) তার কাছে এসেছিলেন।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ৭ :: অধ্যায় ৭০ :: হাদিস ৫৬৪)

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (র) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি ভীষন জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তার গায় আমার হাত বুলালাম এবং বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন হা। আমি এমন কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হই, যা তোমাদের দু’জনের হয়ে থাকে। আমি বললামঃ এটা এ জন্য যে, আপনার জন্য প্রতিদানও হল দ্বিগুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন হাঁ! এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ যে কোন মুসলিম ব্যক্তির উপর কোন যন্ত্রনা, রোগ ব্যাধি বা এ ধরনের অন্য কিছু আপতিত হলে তাতে আল্লাহ তাঁর গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, যে ভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে ফেলে।(হাদিস ৫৭৫)
মুসলিম ইব্ন ইবরাহীম (রা) ….. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আদম সন্তানের বয়স বাড়ে আর তার সাথে দুটি জিনিসও বৃদ্ধি পায়; ধন-সম্পদের মহব্বত ও দীর্ঘায়ুর আকাঙ্খা

আনাস ইবন মালিক (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দুঃখ দৈন্যে নিপতিত হওয়ার কারনে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এমন একটা কিছু করতেই হয়, তা হলে সে যেন বলেঃ হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন পর্যন্ত আমার জন্য জীবিত থাকা কল্যানকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যানকর হয়।
Top