নিন্দনীয় ঝগড়া ও বিতর্কের ক্ষতি


১. মহা কল্যাণ হতে বঞ্চিত হওয়া।

 আল্লামা আওযায়ী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি কামনা করেন, তখন তাদের উপর ঝগড়া-বিবাদ চাপিয়ে দেন এবং তাদের কাজের থেকে বিরত রাখেন।

মুয়াবিয়া ইবনে কুরাহ বলেন, তোমরা ঝগড়া-বিবাদ থেকে বেচে থাক! কারণ, তা তোমাদের আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেয়।

২. ইলম থেকে বঞ্চিত।


উবাদাহ ইবনে সামেত রা. হতে বর্ণিত,
فعن عبادة بن الصامت أن رسول الله خرج يخبر بليلة القدر، فتلاحى رجلان من المسلمين فقال: «إنِّي خَرَجْتُ لِأخْبِرَكُمْ بلِيلْةِ القَدْرِ -أي: ليعينها-، وَإِنَّهُ تَلَاحَى فُلَانٌ وَفُلَانٌ فَرُفِعَتْ، وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْراً لَكُمْ، الْتَمِسُوهَا فِي السَّبْعِ وَالتِّسْعِ وَالخَمْسِ»
অর্থ, ওবাদাহ ইবনে সামেত রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কদর রজনী সম্পর্কে খবর দিতে আমাদের নিকট বের হন, তারপর দুই মুসলমিনকে দেখেন, তারা দুইজন ঝগড়া করতেছে। আমি তোমাদের নিকট বের হয়েছিলাম তোমাদের কদর রজনী সম্পর্কে সংবাদ দিতে। কিন্তু অমুক অমুক লোক ঝগড়া করতে থাকলে তার ইলম তুলে নেয়া হয়। হতে পারে এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। তোমরা সাতাশ, উনত্রিশ ও পঁচিশ তারিখ রজনীতে কদর রজনীকে তালাশ কর।[18]


৩. উম্মতের ধ্বংস।

فعن أبي هريرةعن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «دَعُونِي مَا تَرَكْتكُمْ، إنَمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ سُؤَالهمْ وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ»
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের উম্মতরা অধিক প্রশ্ন করা ও তাদের নবীদের সাথে বিরোধ করার কারণে ধ্বংস হয়েছে।

ওমর রা. যিয়াদ ইবনে হাদীরকে জিজ্ঞাসা করে বলে, তুমি কি জান কোন জিনিষ ইসলামকে ধ্বংস করে? সে বলল, না। তারপর বলল, ইসলাম ধ্বংস করে আলেমদের পদস্খলন, মুনাফেকদের বিবাদ করা আল্লাহর কিতাব বিষয়ে এবং ভ্রষ্ট ইমামদের ফায়সালা দেয়।
وعن ابن عباس قال : «إنما هلك من كان قبلكم بالمراء والخصومات في الدين»
অর্থ, ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, তোমাদের পূর্বের লোকেরা দ্বীনের ব্যাপারে বিবাদ করার কারণে ধ্বংস হয়েছে।

৪. অন্তরকে কঠিন করে ও শত্রুতা সৃষ্টি করে।

ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, ঝগড়া বিবাদ করা মানুষের অন্তরকে কঠিন করে দেয় এবং পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা তৈরি করে।

অনেক মানুষ আছে কেবল মজলিশে বিতর্ক করার কারণে তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। যার কারণে তারা একে অপরের সাথে কথা বলে না, একজন অপরজনকে দেখতে যায় না। এ কারণে মনীষীরা বিতর্ক করা থেকে সতর্ক করেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তোমার জুলুমের জন্য তুমি ঝগড়াটে হওয়াই যথেষ্ট। আর তোমার গুণার জন্য তুমি বিবাদ কারী হওয়াই যথেষ্ট।

মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুছাইন বলেন, ঝগড়া দ্বীনকে মিটিয়ে দেয়, মানুষের অন্তরে বিদ্বেষ জন্মায়।


আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান বলেন, বিবাদ প্রাচীন বন্ধুত্বকেও ধ্বংস করে, সুদৃঢ় বন্ধনকে খুলে দেয়, কমপক্ষে তার চড়াও হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে যা হল, সম্পর্কচ্ছেদের সবচেয়ে মজবুত উপায়।

ইব্রাহীমে নখয়ী আল্লাহ তায়ালার এ বাণীর তাফসীরে বলেন,
﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ طُغۡيَٰنٗا وَكُفۡرٗاۚ وَأَلۡقَيۡنَا بَيۡنَهُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِۚ كُلَّمَآ أَوۡقَدُواْ نَارٗا لِّلۡحَرۡبِ أَطۡفَأَهَا ٱللَّهُۚ وَيَسۡعَوۡنَ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَسَادٗاۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ﴾ [المائدة:64]
আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বাঁধা’। তাদের হাতই বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তার দু’হাত প্রসারিত। যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং তোমার উপর তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বাড়িয়েই দিচ্ছে। আর আমি তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত শত্রতা ও ঘৃণা ঢেলে দিয়েছি। যখনই তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন। আর তারা জমিনে ফ্যাসাদ করে বেড়ায় এবং আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। [সূরা মায়দো: ৬৪]


৫. পদস্খলনের কারণ:

মুসলিম ইবনে ইয়াসের বলেন, তোমরা ঝগড়া-বিবাদ পরিহার কর। কারণ, তা হল আলেমের মূর্খতার মুহূর্ত। শয়তান এ মুহূর্তেই তার পদস্খলন কামনা করে।

৬. সম্মানহানী:

কোন এক আরব বলছিল, যারা মানুষের সাথে বিবাদ করে তাদের সম্মান নষ্ট হয়। যে বেশি ঝগড়া করে সে তা অবশ্যই বুঝতে পারে।

ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন,

قَالُوا سَكتَّ وَقَدْ خُوصِمْتَ، قُلْتُ لَهُمْ

إنَِّ الجَوَابَ لبابِ الشَّرِّ مِفْتَاحُ

وَالصَّمْتُ عَنْ جَاهِلٍ أَوْ أَحمَقٍ شَرَفٌ

وَفيِهِ أَيْضاً لصِوْنِ العِرْضِ إصِلَاحُ

أَمَا تَرَى الُأسَد تُخَشى وَْهَي صامِتَةٌ

وَالكلْبُ يخْسَى لَعَمْرِي وَهْوَ نَبَّاحُ
তুমি চুপ থাকলে অথচ তোমার সাথে বিতর্ক করা হচ্ছে! আমি তাদের বললাম উত্তর দেয়া অন্যায়ের দরজার চাবি স্বরুপ। কোন জাহেল বা আহমকের কথার উত্তর দেয়ার চেয়ে চুপ থাকা মর্যদাকর। এছাড়াও তাতে রয়েছে ইজ্জত সংরক্ষনে নিশ্চয়তা। তুমি কি দেখনা বাঘ চুপ থাকে অথচ তাকে সবাই ভয় করে। আর কুকুরকে সবাই ঘৃণা করে অথচ সে সব সময় ঘেউ ঘেউ করতেই থাকে।

আলেমদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ


যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا تَعَلَّمُوا العِلْمَ لِتُبَاهُوا بِهِ العُلَمَاءَ، وَلَا لِتُمَارُوا بِهِ السُّفَهَاءَ، وَلَا تَخَيَّرُوا بِهِ المَجَالِسَ، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَالنَّارَ النَّارَ»

অর্থ, তোমরা আলেমদের সাথে বড়াই করা এবং মূর্খদের সাথে বিতর্ক করার উদ্দেশ্যে ইলম শিক্ষা করো না এবং ইলম দ্বারা মজলিশসমূহকে বিতর্কিত করো না। যে ব্যক্তি ইহা করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম জাহান্নাম।[19]

অপর এক হাদিসে কা‘ব বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

«مَنْ طَلَبَ العِلْمَ لِيُجَارِيَ بهِِ العُلَمَاءَ، أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ، أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ؛ أَدْخَلَهُ الله النَّارَ»

অর্থ, যে ব্যক্তি আলেমদের সাথে বিতর্ক করা এবং জাহেলদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ করা অথবা মানুষকে তার প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।[20]



[19] ইবনে মাযাহ : ২৫৪
[20] তিরমিযি : ২৬৪৫



Top