নিজেদের মারাত্মক পরিণতির কথাউপলব্ধি করে আমরবিন সা’আদনির্দেশ দিল, সবাইমিলে চারিদিক থেকেহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ)কে লক্ষ্যকরে তীর নিক্ষেপ করো। নির্দেশমত ইয়াযীদী বাহিনীনবী (সঃ) এরদৌহিত্রকে চারিদিক থেকেঘিরে বৃষ্টির মততীর নিক্ষেপ করতেলাগলো।ফলে চারিদিক থেকেতীর এসে হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)কে আঘাতহানতে লাগলো। কোনটাঘোড়ার গায়েও লাগছিল, কোনটা তাঁর নিজেরগায়ে পড়ছিল। এভাবেযখন তীরের আঘাতেতার পবিত্র শরীরঝাঁঝরা হয়ে ফিনকিদিয়ে সারা শরীরথেকে রক্ত বেরহতে লাগলো, তখনতিনি (রাঃ) বারবার মুখে হাতদিয়ে বললেন, বদবখতের দল! তোমরাতো তোমাদের নবীপাক (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরলেহাজও করলে না। তোমরানিজের নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরবংশধরকে হত্যা করেছ। এভাবে যখনতিনি আর একবারমুখের উপর হাতদিলেন, তাঁর চোখেরসামনে আর একদৃশ্য ভেসে উঠল। তিনিদেখতে পেলেন, স্বয়ংহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম হাতেএকটি বোতল নিয়েদাঁড়িয়ে আছেন। হযরতআলী মর্তুজা (রাঃ) ও হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা(রাঃ)ও পার্শ্বে আছেনআর বলছেন,
হুসাইন! আমাদের দিকে তাকাও, আমরা তোমাকে নিতেএসেছি।
হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)এর কাপড়রক্তে ভিজে যাচ্ছিল আরহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম সেইরক্ত বোতলে ভরেনিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন,
হেআল্লাহ পাক! হুসাইনকে পরমধৈর্য ধারণের ক্ষমতাদান করুন।
আল্লাহ্ ! আল্লাহ্ ! নবী পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র নিজেররক্তে রঞ্জিত হয়েগেলেন। শরীর থেকেরক্ত বের হয়েগিয়ে একেবারে রক্তশূন্য হয়েগেলেন এবং আঘাতেআঘাতে জর্জরিত হয়েঘোড়া থেকে পড়েগেলেন। যে মুহূর্তে হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ) ঘোড়া থেকে পড়েগেলেন, আল্লাহ পাকেরআরশ দুলিয়ে উঠলো, ফাতিমাতুয্ যাহরা (রাঃ) এর আত্মা ছটফটকরতে লাগলো, হযরতআলী (রাঃ)এররূহ মুবারক থেকে‘আহ’ শব্দ বেরহলো। সেই হুসাইন(রাঃ) পতিত হলেন, যাকে প্রিয় নবীছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাঁধেনিতেন। ঘোড়া থেকেপড়ে যাওয়ার পরকমবখত্ সীমার, হাওলাবিন ইয়াযীদ, সেনানবিন আনাস প্রমুখবড় বড় জালিমএগিয়ে আসলো এবংহযরত ইমাম হুসাইন(রাঃ)এর শরীরেরউপর চেপে বসলো।সীমার বুকের উপরবসলো। হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) বুকেরউপর সীমারকে দেখেবললেন, আমার নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ঠিকইবলেছেন,
একহিংস্র কুকুর আমারআহলে বাইতের রক্তেরউপর মুখ দিচ্ছে’, আমার নানাজান (ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম)এরকথা মুবারক ষোলআনা সত্য, তুমিইআমার হত্যাকারী। আজজুমার দিন। এসময় লোকেরা আল্লাহপাকের দরবারে সিজদারত। আমারমস্তকটা তখনই আমারশরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করো, যখন আমিও সিজদারত থাকি।
আহ ! দেখুন, হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) জীবনসায়াহ্নের সেই মুহূর্তেও পানিপান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি, নিজেরছেলেমেয়েকে দেখার জন্যআরজু করেননি, সেইসময়ও কোন আকাঙ্খা বাআরজু থাকলে এটাইছিল যে, আমারমাথা নত হলেযেন আল্লাহ পাকেরসমীপেই নত হয়।সে সময়ও তিনি(রাঃ) বাতিলের সামনেমাথা নত করেননি । সেসময়ও তিনি (রাঃ) সিজদা করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন, নামাযপড়ে দেখিয়েছেন, দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হুসাইন (রাঃ) আঘাতেজর্জরিত হয়ে মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও নামাযত্যাগ করেন নি। তিনি (রাঃ) দুনিয়াবাসীকেএটাই যেন বলতেচেয়েছিলেন, আমাকে যদিভালবাসেন, আমার জিন্দেগী থেকেশিক্ষা গ্রহণ করুন। হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ) সিজদায় মাথারাখলেন এবং سبحان ربى الاعلى ‘সুবহানা রব্বিইয়াল আ’লা’ তাসবীহপাঠ করে বললেন,
মাওলা! যদি হযরত ইমামহুসাইন (রাঃ)এরকুরবানী আপনার দরবারেগৃহীত হয়, তা’হলে এরছওয়াব (নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) এরউম্মতের উপর বখশিশকরে দাও ।
হযরতইমাম হুসাইন (রাঃ)এর মস্তকমুবারক যখন শরীরথেকে বিচ্ছিন্ন করেফেলল, তখন তাঁরঘোড়া স্বীয় কপালকেতাঁর (রাঃ) রক্তেরঞ্জিত করল এবংদৌড়ে চলে যেতেলাগল, তখন সীমারলোকদেরকে বলল, ঘোড়াটিকে ধরো, কিন্তু যতজন লোকঘোড়াটি ধরতে এগিয়েগেল, সে সবাইকেআক্রমণ করল এবংদাঁত আর পাদিয়ে জখম করেওদেরকে শেষ করেদিল। সতের জনলোককে এভাবে খতমকরল। শেষ পর্যন্ত সীমারবলল, ছেড়ে দাও, দেখি কি করে? ঘোড়া ছুটে গিয়েতাঁবুর কাছে গেলএবং কান্না ওচিৎকার করতেলাগলো।
তথ্যসূত্র
- কারবালা প্রান্তরে(লেখকঃ খতিবে পাকিস্তান হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ শফী উকাড়বী(রহঃ))