আর " প্রত্যেক সুন্নাহই হাদীস কিন্তু সকল হাদীসই সুন্নাহ নয়।" অর্থাৎ দ্বীনের উপর চলার জন্য উম্মত সকল হাদীসকেই অনুসরন করতে পারবে না যদিও সেই হাদীসটি "সহীহ্ " হয়। কেননা অনেক সহীহ্ হাদীস আছে যা অন্য সহীহ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে বা তা পূর্বের বিধান ছিল কিন্তু পরবর্তীতে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর হুকুম দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে ।
নিম্নে কিছু হাদীস উদাহারন স্বরুপ তুলে ধরলামঃ
১. সহীহ্ বুখারীর কিতাবুল জানায়েযের ১৩০৭ থেকে ১৩১৩ নং হাদীস সমূহ । এসব হাদীসে জানাযা বহন করে নিয়ে যেতে দেখলে সকলকে দাঁড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে । অথচ এই বিধান এই বিধান অন্যান্য সহীহ্ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে ।
( উমদাতুল কারী ৬/১৪৬)
২. ইসলামের প্রথম যুগে নামাযরত অবস্থায় কথা বলা, সালাম দেওয়া , সালামের উত্তর দেওয়া সবই বৈধ ছিল । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়।
( সহীহ্ বুখারী হা. নং- ১১৯৯, ১২০০)
৩. ইসলামের প্রথম যুগে বিধান ছিল যে, আগুনে রান্নাকৃত খাদ্য গ্রহন করলে উযু ভেঙ্গে যাবে । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায় ।
( সহীহ্ বুখারী, হা.নং- ২০৮)
৪. নবীজী ( সঃ) হিজরতের পর মদীনায় ১৬/১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়।
( সহীহ্ বুখারী হা. নং- ৭২৫২)
এগুলো সবই সহীহ্ হাদীস কিন্তু সুন্নাহ নয়। অর্থাৎ এই হাদীসগুলো উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয়।
৫. এমন অনেক হাদিস আছে যার বিধান নবীজী (সঃ) এর সঙ্গে নির্দিষ্ট । উম্মতের জন্য তার উপর আমল করা বৈধ নয়। যেমনঃ বহু হাদিসে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর ১১টি বিবাহের কথা এবং মহর দেওয়া ছাড়া বিবাহ করার কথা এসেছে। তো এগুলো হাদিস বটে কিন্তু উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয় ।
( সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ ১১/ ১৪৩-২১৭)
৬. হাদীসে এমন অনেক আমলের কথা বর্ণিত আছে যা রসূলুল্লাহ (সঃ) কখনো কোন বিশেষ প্রয়োজনে করেছেন । যেমনঃ কোমরে ব্যথা থাকার কারনে কিংবা এস্তেন্জা করার স্থানে বসার দ্বারা শরীরে বা কাপড়ে নাপাকি লাগার অশংঙ্কায় তিনি সারা জীবনে মাত্র ২বার দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন। কিন্তু হাদিসের বর্ণনায় এসব কারনের কথা উল্লেখ নেই । শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে পেশাব করার কথা আলোচিত হয়েছে। তো এই হাদিসের উপর আমল করে কি দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে সুন্নাহ বলা যাবে ??? অনুরুপভাবে রসূলুল্লাহ (সঃ) ইহরাম অবস্থায় এবং রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
( সহীহ্ বুখারী, হা.নং- ১৯৩৮)
তাই বলে কি ইহরাম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানোকে সুন্নাহ বলা যাবে ???
৭. কাজটি বৈধ একথা বুঝানোর জন্যও রসূলুল্লাহ (সঃ) অনেক কাজ করেছেন।যেমনঃতিনি একবার তার নাতনী উমামা বিনতে যয়নবকে কোলে নিয়ে নামায পড়িয়েছেন।( সহীহ্ বুখারী,হা. নং- ৫১৬)
আবার তিনি রোযা অবস্থায় তার এক স্ত্রীকে চুম্বন করেছেন ।
( সহীহ্ বুখারী ,হা.নং- ১৯২৮) ।
এই উভয় ঘটনাই হাদিসে এসেছে । এর দ্বারা রসূলুল্লাহ (সঃ) বুঝাতে চেয়েছেন যে, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শিশ্ত কোলে নিয়ে নামায পড়া বা পড়ানো যেতে পারে এবং রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা বৈধ, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না । তাই বলে কি সব সময় শিশ্ত কোলে নিয়ে নামায পড়ানোকে কিংবা রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা সুন্নাহ বলা যাবে ???
উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, " আহলে হাদীস " নামটিই সঠিক নয় । কারন রসূলুল্লাহ (সঃ) কোন বর্ননায়ই উম্মতকে হাদীস মানতে বলেন নাই , বলেছেন " সুন্নাহ " মানতে । তারপরও যারা নিজেদেরকে " আহলে হাদীস " বলে দ্বাবী করে তাদের উচিৎ ১১টি বিবাহ করা, মহর ছাড়া বিবাহ করা, ইহরাম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা, দাঁড়িয়ে পেশাব করা ইত্যাদিকে সুন্নাত মনে করে আমল করা ।
অনুরুপভাবে জীবনে মাত্র ৩দিন মসজিদে এসে তারাবীহ এর নামায পড়া , নামাযরত অবস্থায় কথা বলা , সালাম দেওয়া , সালামের উত্তর দেওয়া । কারন এগুলোও তো হাদিসে এসেছে । কিন্তু তারা এসব করবে না । তাহলে হাদীস মানার দাবীদার হয়ে এসব হাদিসের উপর আমল না করে কিভাবে তারা আহলে হাদীস হল ???
আসল কথা হলো, তারা নিজেদেরকে "আহলে হাদীস " বললেও বাস্তবে মুখবাজি( বাগাড়ম্বরি ) ছাড়া কিছুই না ।
অপর দিকে রসূলুল্লাহ (সঃ) যেহেতু উম্মতকে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে বলেছেন তাই সকল মাযহাব অনুসারীগন হাদিসের শুধুমাত্র সুন্নাহ অংশের অনুসরন করি এবং নিজেদেরকে " আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আহ " বলে পরিচয় দিই । অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সঃ) এর সুন্নাত মানি এবং সাহাবায়ে কেরামের জামা'আতকে অনুসরন করি ।
মূলকথা"আহলেহাদীস" নামটিইসঠিকনয়, এটিএকটিবিভ্রান্তনাম ।