আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমতুল্লাহি ওবারাকাতুহ
শরু করছি পরম করুণাময় সেই প্রেমময় জাল্লে জালালু আহাদময় অসীমদয়ালু আল্লাহ সুবাহানু তাআলা ও তার পেয়ারে নূরময় হাবীবশাফেয়ীন মুজনেবিন রাহমাতালাল্লিল আলামিন আহমদ মোস্তফা মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) উনার উপর দুরুদ পেশ করে এবং আমার দাদাহুজুর আক্তার উদ্দিন শাহ ও আমারমূর্শীদ কেবলা দয়ালমোখলেছ সাই এর সরণে...
(প্রসঙ্গ সাহাবীদের সমালোচনা করা নিষেধ)
আজকাল আহলে বায়াত ও গুরুবাদী নামে কিছুভন্ড আছে যারাসাহাবীদের শানে সমালোচনা থেকে শুরু করে সাহাবীদের গাল মন্দকরে থাকে তারাযে ভ্রান্ত তা এ হাদীস থেকেপরিষ্কার হয়ে গেল বর্তমান আমাদের দেশেকিছু পীরদের দরবারে এই জগন্যতম আকীদাতারা অন্তরে পোষণকরে নিয়েছে যা আমাদের সাধারণ মুসলিমগণ দিন দিন শিয়াদের আকীদায় অর্ন্তভুক্ত হচ্ছে আর সেই পীর নামক ভন্ডরা সাধারণ মুসলিমদের মুরীদ করে তাদের অন্তরে সাহাবীদের ভালবাসাকে অসম্মান করছেতারা মাওলা আলী(রা:)প্রতি এতই দরদ ভালবাসা দেখায়যে মনে হচ্ছেপৃথিবীতে আর কোনমুসলিম আহলে বাইতেভালবাসে না...এই আকাদীধারী যত দরবারএবং মুসলিম পাবেনতাদের কাছ থেকেদুরে সড়ে থাকুনএবং অপরকে রাখতেএই পোষ্টটি শেয়ার করুন....
কোরআনের আলোকে সাহাবা-ই কেরামের মর্যাদা
মহান আল্লাহ পাক প্রিয়নবী রসূলে আকরামসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র প্রিয় সহচরসাহাবা-ই কেরামকে যে মযার্দার আসনে আসীন করেছেন,পৃথিবীর ইতিহাসে তা সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। বহু আয়াত ও হাদীসশরীফ দ্বারা তাঁদের মযার্দা প্রকাশ পায় । নিম্নে কতিপয়আয়াত উপস্থাপনের প্রয়াস পাচ্ছি ।
মহান মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন–
لَايَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى
অর্থাৎ,তোমাদের মধ্যেসমান নয় ঐসব লোক যারা মক্কাবিজয়ের পূর্বে ব্যয়ও জিহাদ করেছে, তারা মর্যাদায় ঐসব লোক অপেক্ষা বড়, যারা মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় ও জিহাদকরেছে এবং তাদেরসবার সাথে আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন । [সূরা হাদীদঃ আয়াত ১০]
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِنْ لَا يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, ঈমানআন,যেমন অপরাপর লোকেরা ঈমান এনেছে’, তখন তারাবলে আমরা কি নির্বোধদের মত ঈমানআনব? শুনছো ! তারাইহলো নির্বোধ, কিন্তু তারা জানেনা । [সূরা বাকারাঃ আয়াত১৩]
এ আয়াতে এটাই বলা হয়েছে যে, যার ঈমান সাহাবা-ই কেরামের ঈমানের মত নয়, সে মুনাফিক এবং বড় বোকা। এ আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন সাহাবী ফাসিক বা কাফিরহতে পারেন না এবং সকল সাহাবীর জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের ওয়াদা করেছেন । এটাওপ্রমাণিত হল যে, নেক্কার বান্দাদের মন্দ বলা মুনাফিকদের কুপ্রথা । যেমন-রাফেযী (শিয়া) সম্প্রদায় সাহাবা-ই কেরামকে খারেজীগণ ‘আহলে বায়তকে, গা্য়রে মুক্বাল্লিদগণ ইমামআবু হানিফাকে এবং ওহাবীগণ আল্লাহর প্রিয়ওলীদেরকে মন্দ বলে।
হাদীসের আলোকে সাহাবা-ই কেরামের মর্যাদা
সাহাবা-ই কেরামের ফযিলতসম্পর্কে অনেক হাদীসশরীফ বর্ণিত আছে । তন্মধ্যে কয়েকটি এখানে উদ্ধৃত হল –
عنابی سعید الخدری رضی اللہ تعالی عنہ قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم ولا تسبوا اصحابی فلو انّ احدکم انفق مثل احد ذھبا ما بلغ مدّ احدھم ولا نصفہ-
অর্থাৎ,হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর থেকেবর্ণিত,তিনি বলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহিওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-“আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলনা । তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও খয়রাতকরে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদ্কা করার সমানওহতে পারেনা;বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা ।” [বুখারীঃ১ম খন্ড-৫১৮ পৃষ্ঠা,তিরমিযীঃ২য় খন্ড-২২৫ পৃষ্ঠা]
عنعبد اللہ بن المغفل رضی اللہ عنہ قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم فی اصحابی لا تتخذو انتم عرضا من بعدی فمن احبھم فبحبی احبھم ومن ابغضھم فببغضی ابغضھم –
অর্থাৎ,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকেবর্ণিত, তিনি বলেন, হুজুর আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন – “আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর , তাঁদেরকে ভৎর্সনা ও বিদ্রূপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণতকর না। যে আমার সাহাবীকে মহব্বত করল,সে আমারমুহাব্বতে তাঁদেরকে মুহাব্বত করল এবং যে তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকরল, সে আমারপ্রতি বিদ্বেষ পোষণের কারনে তাঁদের প্রতিবিদ্বেষ পোষণ করল”। [তিরমিযি শরীফ,২য়-২২৫]
عنابن عمر رضی اللہ تعالی عنہ قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلّم اذا رایتم الذین یسبّون اصحابی فقولوا لعنۃ اللہ علی شرّکم-
অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বণির্ত, তিনি বলেন, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “যখন তোমরা এ ধরনের লোক দেখবে, যারা আমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তখন তাদের উদ্দেশে বলে দাও, তোমাদের অনিষ্টের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক”। [তিরমিযী ২য় খন্ড-২২৫ পৃঃ]
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু
নাম: ‘আলী’, উপনাম- ‘আবুল হাসান’, উপাধি-‘আসাদুল্লাহ’। পিতা– ‘আবু তালেব’। বাল্যকাল থেকে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুরাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র তত্ত্বাবধানে বড় হন। সম্পর্কের দিক থেকে তিনি প্রিয়রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র চাচাতো ভাই এবং হুজুরের কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা’র স্বামী ছিলেন। তিনিই কিশোরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাবুক অভিযান ব্যতীত সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তিনি বীরত্ত্বের পরিচয় দেন। ৩৫ হিজরী সনের ২৪ যিলহজ্ব তিনি ইসলামের ৪র্থ খলীফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাগর, জ্ঞান শহরেরপ্রধান ফটক এবং বেলায়েতের সম্রাট হিসেবে খ্যাত। আহলে বায়তের অন্যতম সদস্য হযরতআলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহানআল্লাহ এরশাদ করেন-
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيراً
অর্থাৎ, “হে নবীর পরিবারবর্গ! আল্লাহ তো এটাই চান যে, তোমাদের থেকে প্রত্যেক অপবিত্রতা দূরীভূত করে দেবেন এবং তোমাদেরকে পবিত্র করে খুব পরিচ্ছন্ন করে দেবেন”। [সূরা আহযাব-৩৩]
এ প্রসঙ্গে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন –
لایحبّ علیاً منافق، و لا یبغضه مومن
অর্থাৎ, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে মুনাফিক্ব ভালবাসবেনা এবং কোন মু’মিন আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে ঘৃণা করতে পারেনা।[মুসনাদে আহমদ]
গদীরে খুম-এ ,রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাওলা আলীর হাত তুলে ধরে ইরশাদকরেন –
منکنت مولاہ فعلی مولاہ
অর্থাৎ, “আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা”। [তিরমিযী শরীফ ২১৩-২১৪ পৃঃ]
উল্লেখ্য, শিয়াগণ এ হাদীসের অপব্যাখ্যা করেও নানাবিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। তারা এর অপব্যাখ্যার ভিত্তিতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক্ব , হযরত ওমর ও হযরতওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম’র খিলাফতকে অস্বীকার করে। তারা ‘মাওলা’ মানেবলে আমীর, ইমামবা খলীফা।কিন্তু এটা তাদের মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জঘন্য ভুল ব্যাখ্যা। এখানে ‘মাওলা’ মানে ‘প্রিয়’, ‘সাহায্যকারী’। [সাওয়াইক্বে মুহরিক্বাহ্ ও আসাহহুস সিয়ার ইত্যাদি]
বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে “ঐতিহাসিক গদীর-ই খুম’র ঘটনা” নামকপুস্তিকায়, লিখেছেন মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান।