হাদীস নং ১



হযরত ইসহাক (রঃ)...... হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে থেকে সত্তর হাজার (৭০,০০০) লোক বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাঁরা হবে এমন লোক, যারা (ইহুদী-নাসারাদের শিরিকি) ঝাড়ফুঁকের (বা মন্ত্র-তন্ত্রের) শরণাপন্ন না হয় (1) , কুযাত্রা (বা অশুভ লক্ষণে) বিশ্বাস করে না এবং সর্বদা তাহাদের পালনকর্তা উপর ভরসা রাখে।


রেফারেন্সঃ (সহীহ্‌ বুখারী, হাদীসঃ ৬০২৮)

Note :
আল-কোরআন বা হাদিসের কোন দোয়া ঝাড়ফুক বা তাবিজ ব্যাবহারে  ক্ষতি নেই। কারন এটা সুস্থতার জন্য একটা উসীলা মাত্র যেমন ওষুধ খেলে মানুষ সুস্থ হয়।

তাবিজ - ঝাড়ফুক জায়েজ ও নাজায়েজ সম্পর্কে শরীয়তের 
বিধান :



হাদীস নং ২

হযরত ইব্‌ন আবূ মারিয়াম (র)...... হযরত সাহল বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের সত্তর লক্ষ লোক বিনা বিচারে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরা একে অপরের সাথে এভাবে সম্পৃক্ত করবে যে, এদের সর্ব প্রথমটি যেমন জান্নাতে প্রবেশ করবে সর্বশেষ জনও তেমনি জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রত্যেকের চেহারা পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল হবে।”

রেফারেন্সঃ

১। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুর রেকাক, باب يدخل الجنة سبعون ألفا بغير حساب খন্ডঃ ৫, পৃ. ২৩৯৬, হাদীসঃ ৬১৭৭
২। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুল বদয়িল খলকে, باب ما جاء في صفة الجنة وأنها مخلوقة খন্ডঃ ৩, পৃ. ১১৮৬, হাদীসঃ ৩০৭৫
৩। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুর রেকাক, باب صفة الجنة و النار খন্ডঃ ৫, পৃ. ১৯৮, হাদীসঃ ২১৯
৪। মুসলিমঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুল ঈমান, باب الدليل على دخول طوائف الخ খন্ডঃ ১, পৃ. ১৯৮, হাদীসঃ ২১৯
৫। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল-মুসনাদ, খন্ডঃ ৫, পৃ. ৩৩৫, হাদীসঃ ২২৮৩৯ 
৬। তাহের আল কাদরীঃ মাকামে মাহমুদ, পৃ. ৬৪

হাদীস নং ৩

হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে: “আমার প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার উম্মত বিনা হিসাবে কোনো শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রত্যেক হাজারের সাথে আরও সত্তর হাজার করে। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা (নিজের কুদরতের দ্বারা) তাঁর মুষ্টি থেকে ৩ মুষ্টি (পরিমাণ) লোক জান্নাতে ঢেলে দিবেন।”

রেফারেন্সঃ

১। তিরমিযীঃ আস্‌ সুনান, কিতাবু সিফাতুল কিয়ামাহ্‌, باب ما جاء في الشفاعة ২/৬৬, হাদীসঃ ২৪৩৭;
২। তিরমিযীঃ আল-জামেউস্‌ সহীহ্‌, আবওয়াবু সিফাতুল কিয়ামতে ওয়ার রেকাক..., باب في الشفاعة খন্ডঃ ৪, পৃ. ৬২৬, হাদীসঃ ২৪৩৭ 
৩। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুর রেকাক, باب يدخل الجنة سبعون ألف بغير... الخ ২/৯৬৮, হাদীসঃ ৬১৭৫
৪। মুসলিমঃ আস্‌ সহীহ্‌ কিতাবুল ঈমান, باب يدخل الجنة سبعون ألفا بغير حساب ১/১১৬, ১১৭, হাদীসঃ ২১৬-২২০
৫। ইবনে মাজাহঃ আবওয়াবুয যুহুদ, باب صفة أمة محمد صلى الله عليه وسلم পৃ. ৩২৬, হাদীসঃ ৪৩২৮
৬। ইবনে মাজাহঃ আস্‌ সুনান, কিতাবুয্‌ যুহুদ, باب صفة محمد খন্ডঃ ২, পৃ. ১৪৩৩, হাদীসঃ ৪২৮৬ 
৭। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল মুসনাদ ২/৩৫২, ৩৫৯, ৪০০, ৪৫৬ 
৮। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল মুসনাদ ৬/১৯৭
৯। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল মুসনাদ ৪/১৬, ৪৩৬, ৪৪১
১০। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল মুসনাদ ৫/২৫০, ২৬৮, ২৮০, ৪১৩
১১। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল মুসনাদ, খন্ডঃ ৫, পৃ. ২৬৮, হাদীসঃ ২২৩০৩
১২। ইবনে আবী শায়বাহঃ আল-মুসান্নাফ ১১/৪৭১
১৩। ইবনে আবী শায়বাহঃ আল-মুসান্নাফ, খন্ডঃ ৬, পৃ. ৩১৫, হাদীসঃ ৩১৭১৪
১৪। বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান ১/২৫১, ২৫২, হাদীসঃ ২৬৮
১৫। ইবনে আবু আসেমঃ আস্‌ সুন্নাহ, খন্ডঃ ১, পৃ. ২৬০, হাদীসঃ ৫৮৮, ৫৮৯ 
১৬। ইবনু হিব্বানঃ আস্‌ সহীহ্‌, খন্ডঃ ১৬, হাদীসঃ ৭২৪৬
১৭। তাবারানীঃ আল-ম’জামুল কবির, খন্ডঃ ২, হাদীসঃ ১৪১৩
১৮। তাবারানীঃ আল-ম’জামুল কবির, খন্ডঃ ৪, হাদীসঃ ৩৮৮২
১৯। তাবারানীঃ আল-ম’জামুল কবির, খন্ডঃ ৮, হাদীসঃ ৭৫২০, ৭৬৬৫, ৭৬৭২
২০। আবু নয়ীমঃ হিন্দয়াতুল আউলিয়া, পৃ. ৩০২
২১। আজরীঃ আশ শরীয়াহ, পৃষ্ঠাঃ ৩৪৩
২২। ইবনে কাসীরঃ তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ১/৩৯৪
২৩। মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/৩৬৩
২৪। মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীসঃ ৫২০০ 
২৫। তাহের আল কাদরীঃ শাফায়াতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ৩৩ নং পরিচ্ছেদ— ‘নবী করীম (সঃ)-এর শাফায়াতের বিনিময়ে হিসাব ও শাস্তি ছাড়া লোকদের জান্নাতে যাওয়ার বর্ণনা’, পৃ. ৫৩

[বিঃদ্রঃ উপরোক্ত হাদীস শরীফে মহান আল্লাহ পাকের মুষ্টি (রূপক অর্থে) থেকে পরিপূর্ণ তিন মুষ্টি পরিমাণ উম্মতে মুহম্মদীর জান্নাতে প্রবেশ সম্পর্কে এটাই বুঝানো হয়েছে যে— সত্তর হাজার বিনা হিসাবী জান্নাতী উম্মতের সাথে আরো সত্তর হাজার উম্মতের জান্নাতে প্রবেশের পরও আরো এত অত্যাধিক পরিমাণ উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে যে তা ধারণার বাইরে। আল্লাহই তাদের সংখ্যা এবং সেই মুষ্টির বিশালতা সম্পর্কে অধিক অবগত।]


হাদীস নং ৪

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে পাক (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন— আমাকে সত্তর হাজার এমন লোক দেয়া হবে যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে। যাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল হবে, তাঁদ্র সকলের হৃদয় একজন মাত্র লোকের হৃদয়ের মত একাকার হয়ে যাবে (অর্থাৎ একক সত্তায় বিলীন হয়ে যাবে)। তখন আমি আম্র রবের নিকট আরও অধিক চাইতে থাকব। অতঃপর তিনি আমার জন্য প্রতি হাজারের সাথে সত্তর হাজার করে বাড়ানোর সুযোগ করে দিবেন (অর্থাৎ ৭০,০০০ x ৭০,০০০ = ৪,৯০০,০০০,০০০ বা এর চাইতেও বেশী)। হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা এ সুসংবাদ সম্ভবতঃ গ্রামীন জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে জুটতে পারে। নগ্ন পায়ে যারা চলাফেরা করে এমন লোকদেরও তা মনে হয় হাতছাড়া হবে না।

রেফারেন্সঃ

১। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল-মুসনাদ, খন্ডঃ ১, পৃ. ৬, হাদীসঃ ২২
২। আবু ইয়ালাঃ আল-মুসনাদ, খন্ডঃ ১, পৃ. ১০৪, হাদীসঃ ১১২
৩। ইবনে কাসীরঃ তাফসীরুল কুরআনীল আযীম, খন্ডঃ ১, পৃ. ৩৯৩
৪। তাহের আল কাদরীঃ মাকামে মাহমুদ, পৃ. ৬৮

হাদীস নং ৫

এক দীর্ঘ হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রসূলে আকরাম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, 
............ (কিয়ামত দিবসে অন্যান্য সকল নবীগণ (আঃ) যখন মানুষকে ফিরিয়ে দিবেন এবং রসূলে পাক (সঃ০-এর শাফায়াতের জন্য তাদেরকে তাঁর কাছে যেতে বলবেন) “তখন সমস্ত লোক নবী করীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বলবে, হে মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি আল্লাহর প্রিয় রাসূল এবং সর্বশেষ নবী। আপনার উসিলায় মহান আল্লাহ উম্মতের পূর্বাপর সকল গুনাহ্‌ ক্ষমা করেছেন। এখন আপনি মহান আল্লাহর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি আমাদের এ কঠিন অবস্থা অবলোকন করছেন না? তখন আমি একটু এগিয়ে যাব এবং মহান আরশের নীচে অবস্থান করব। আমার রবের নিকট সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। এ অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসার দ্বারা এতো উত্তমভাবে আমার জন্যে উন্মুক্ত হবে, যে কারও জন্যে হয়তো বা কখনো হবে না। এ অবস্থার এক পর্যায়ে আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনি নূরানী মস্তক উত্তোলন করুন। আপনি আবেদন করুন, আপনার প্রার্থনা মঞ্জুর হবে। আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। অতঃপর আমি স্বীয় মস্তক উত্তোলনের পর বলবো, হে আল্লাহ! আমার উম্মত, আমার উম্মত। তখন আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের যে সব লোকদের জান্নাতের ডান পার্শ্বের তোরণ (দরজা) দিয়ে জান্নাতে দাখিল করুন যাদের কোন বিচারকার্য নেই।”

রেফারেন্সঃ

১। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুত তাফসীর, باب ذرية من حملنا مع نوح... ألخ খন্ডঃ ৪, পৃ. ১৭৪৫-১৭৪৭, হাদীসঃ ৪৪৩৫
২। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুল আম্বিয়া, باب قول الله : ولقد أرسلنا نو حا... ألخ খন্ডঃ ৩, পৃ. ১২১৫-১২১৬, হাদীসঃ ৩১৬২
৩। বুখারীঃ আস্‌ সহীহ্‌, কিতাবুল আম্বিয়া, باب قول الله : واتخذ الله إبراهيم خليلا খন্ডঃ ৩, পৃ. ১২২৬, হাদীসঃ ৩১৮২
৪। মুসলিমঃ আস্‌ সহীহ্‌ কিতাবুল ঈমান, باب أدني أهل الجنة منزلة فيها খন্ডঃ ১, পৃ. ১৮৪, হাদীসঃ ১৯৪
৫। আহমদ বিন হাম্বলঃ আল-মুসনাদ, খন্ডঃ ২, পৃ. ৪৩৫, হাদীসঃ ৯৬২৩ 
৬। তিরমীযীঃ আস্‌ সহীহ্‌ খন্ডঃ ৪, হাদীসঃ ২৪৩৪
৭। ইমাম গাজ্জালীঃ আখিরাত, পৃ. ৭৯-৮১
৮। সহীহ তাখ্রীজ তাহাভীয়া, হাদীসঃ ১৯৮
৯। যিলালুল জান্নাত, হাদীসঃ ৮১১
১০। তাহের আল কাদরীঃ মাকামে মাহমুদ, পৃ. ৬৫

হাদীস নং ৬

হযরত ইমরান ইব্‌ন মায়সারা (রঃ)...... ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 
(এক সময়) আমার সামনে অতীতের সকল নবী ও উম্মতকে পেশ করা হল। (দেখলাম) কোন নবী কয়েকজন উম্মতকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। কোন নবীর সঙ্গে রয়েছে দশজন উম্মত। কোন নবীর সঙ্গে পাঁচজন আবার কোন নবী একা একা যাচ্ছেন। নজর দিলাম, হঠাৎ দেখি অনেক বড় একটি দল। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! ওরা কি আমার উম্মত? তিনি বললেন, না। তবে আপনি উর্ধ্বলোকে নজর দিন। আমি নজর দিলাম, হঠাত দেখি অনেক বড় একটি দল। ওরা আপনার উম্মত। আর তাদের সামনে রয়েছে সত্তর হাজার লোক। তাদের কোন হিসাব হবে না। হবে না তাদের কোন আযাব। আমি বললাম, তা কেন? তিনি বললেন, “তারা কোন দাগ লাগাতো না, ঝাড়ফুঁকের শরণাপন্ন হত না এবং কুযাত্রা মানত না। আর তারা কেবল প্রতিপালকের উপরই ভরসা করত। তখন উক্কাশা ইব্‌ন মিহ্‌সান নবী করীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি একে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত কর। এরপর আরেক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমার জন্য দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উক্কাশা তো দোয়ার ব্যাপারে তোমার চেয়ে অগ্রগামী
হয়ে গিয়েছে।

রেফারেন্সঃ (সহীহ বুখারী, হাদীসঃ ৬০৯৮)


হাদীস নং ৭

হযরত আবদুর রহমান ইবন আবি বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: 
“নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আমাকে আমার সত্তর হাজার উম্মতকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” অতঃপর ওমর রা. বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি তাঁর নিকট আরও অতিরিক্ত প্রার্থনা করেন নি? জবাবে তিনি বললেন: “আমি তাঁর নিকট আরও অতিরিক্ত প্রার্থনা করেছি, অতঃপর তিনি আমাকে প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে আরও সত্তর হাজার প্রবেশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” অতঃপর ওমর রা. বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি তাঁর নিকট আরও অতিরিক্ত প্রার্থনা করেন নি? জবাবে তিনি বললেন: “আমি তাঁর নিকট আরও অতিরিক্ত প্রার্থনা করেছি, অতঃপর তিনি আমাকে আরও অনুরূপ সংখ্যক প্রবেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” আর (হাদীসের একজন বর্ণনাকারী ইমাম আহমদের উস্তাদ) আবদুল্লাহ ইবন বকর তাঁর সম্মুখের জায়গা প্রশস্ত করে দেখান। আর আবদুল্লাহ বললেন: আর তিনি তাঁর দুই বাহু সম্প্রসারিত করলেন। আর তা আবদুল্লাহ তার হাত দিয়ে মাটি পূর্ণ করলেন। আর হিশাম বলেন: আর এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, যার সংখ্যা সম্পর্কে জানা যায় না।”
দলীলঃ (আহমদ ১/১৯৭)

হাদীস নং ৮

আরেকটি হাদীস যা হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” অতঃপর ইয়াযিদ ইবনুল আখনাস আস-সুলামী বললেন: আল্লাহর কসম! আপনার উম্মতের মধ্যে তারা তো মাছির পালের মধ্যে লাল-হলুদ-সাদা মাছির মত। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্তর হাজারের এবং প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজারের; আর তিনি আমার নিকট আরও তিন অঞ্জলি বৃদ্ধির কথা বলেছেন।” তিনি বলেন: হে আল্লাহর নবী! আপনার হাউযের প্রশস্ততা কতটুকু? জবাবে তিনি বলেন: “‘আদন থেকে ‘আম্মান পর্যন্ত মধ্যকার দূরত্বের মত, আরও বেশি প্রশস্ত, আরও বেশি প্রশস্ত— বলতে বলতে তিনি তাঁর হাত দ্বারা ইঙ্গিত করেন, তিনি বলেন, তাতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ঝর্ণধারাসমূহ রয়েছে।” তিনি আবার জিজ্ঞাসার সুরে বললেন: হে আল্লাহর নবী! আপনার হাউয কোন ধরনের? জবাবে তিনি বললেন: দুধের চেয়ে অনেক বেশি সাদা, মধুর চেয়ে অনেক বেশি মিষ্টি এবং মেশকের চেয়ে অনেক বেশি সুগন্ধময়; যে ব্যক্তি একবার তার থেকে পান করবে, সে ব্যক্তি পরবর্তীতে আর কোনো দিন পিপাসার্ত হবে না এবং কোনো দিন তার চেহারা মলিন হবে না।”
দলীলঃ (আহমদ ২/২৫০)




হাদীস নং ৯

হযরত রিফা‘আ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: 
“আমরা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আগমন করতে লাগলাম, এমনকি যখন আমরা ‘আল-কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছালাম, তখন আমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক তাদের পরিবার-পরিজনের নিকট যাওয়ার জন্য তাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতে শুরু করল এবং তিনি তাদেরকে অনুমতি প্রদান করলেন; অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ভাষণ দেয়ার জন্য) দাঁড়ালেন, তারপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করলেন, অতঃপর তিনি বললেন: “লোকজনের কী অবস্থা হল, গাছের যে অংশ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সম্পৃক্ত, অপর অংশের চেয়ে তাদের নিকট গাছের সেই অংশ অধিক অপছন্দনীয়; আর আমরা সেই সময় সম্প্রদায়ের সকল লোককে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলাম। জনৈক ব্যক্তি বলল: এর পরেও যে ব্যক্তি আপনার নিকট অনুমতি চাইবে, সে তার বোকামীর জন্যই চাইবে; অতঃপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তিনি বললেন: “যখন আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিব, তখন যে বান্দা মনে-প্রাণে এই সাক্ষ্য দিয়ে মারা যাবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, অতঃপর ঠিক সেই অনুযায়ী সে কাজ করে, তাহলে সে জান্নাতের পথেই চলে; আর তিনি বলেন: “আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার (৭০,০০০) উম্মত বিনা হিসাবে কোন শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর আমি অবশ্যই আশা করি যে, তারা তাতে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা এবং তোমাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী-পরিজন ও সন্তান-সন্ততীর মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতের মধ্যে আবাসগৃহ তৈরি করবে; আর তিনি বললেন: যখন রাতের অর্ধেক অতিবাহিত হয় অথবা তিনি বলেছেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং তারপরে বলেন: আমি আমার বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করব না; কে আছো আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব; কে আছো আমার নিকট দো‘আ করবে, আমি তার দো‘আ কবুল করব; কে আছো আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব, এভাবে করে শেষ পর্যন্ত উষার আলো উদ্ভাসিত হয়ে সকাল হয়ে যাবে।”
দলীলঃ 

১. আহমদ ৪/১৬, 
২. আত-তায়ালাসী ১/২৭, 
৩. ইবনু খুযাইমা পৃ. ১৩২, 
৪. ইবনু হিব্বান ১/২৫৩, 
৫. তাবারানী, আল-কাবীর ৫/৪৩, 
৬. আন-নেহায়া ২/১০৮

হাদীস নং ১০

হযরত আবূ সা‘ঈদ আল-আনমারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর প্রতি হাজার উম্মত সুপারিশ করবে আরও সত্তর হাজার উম্মতের জন্য; অতঃপর আমার প্রতিপালক তাঁর দুই হাতের তালু দ্বারা তিন মুষ্টি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” কায়েস অনুরূপ বলেছেন; অতঃপর আমি আবূ সা‘ঈদকে বললাম: আপনি কি এই হাদিসটি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন? জবাবে সে বলল: হ্যাঁ, আমি আমার নিজ কানে শুনেছি এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে; আবূ সা‘ঈদ বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “আর এটা আল্লাহ চায় তো তিনি আমার উম্মতের (সকল) মুহাজিরকে শামিল করবেন এবং আল্লাহ তার বাকিটা পূর্ণ করবেন আমাদের বেদুঈনদের মধ্য থেকে।”
দলীলঃ (ইবনু আবি ‘আসেম, আস-সুন্নাহ ২/৩৮৫, আল-ইসাবা)

হাদীস নং ১১
--------------
হযরত যায়েদ ইবন সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আবূ সালামকে বলতে শুনেছেন, আমার নিকট হযরত ‘আমের ইবন যায়েদ আল-বাকালী হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত ‘উতবা ইবন আবদ আস-সুলামী (রাঃ)কে বলতে শুনেছেন:
“জনৈক আরব বেদুইন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করল, তারপর সে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনার হাউযটি কোন ধরনের, যার ব্যাপারে আপনি আলোচনা করেন? জবাবে তিনি বলেন: “তা হল বায়দা থেকে বসরা পর্যন্ত দূরত্বের মত বিস্তৃত; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য তার প্রান্তদেশকে সম্প্রসারিত করবেন, ফলে তাঁর সৃষ্ট কোন মানুষ জানতে পারবে না তার দুই প্রান্তের সীমানা কোথায়; তিনি (উতবা) বলেন: অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলেন; অতঃপর তিনি (নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেন: “হাউযের কিনারে ঐসব মুহাজির ফকীরগণ ভিড় করবে, যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে লড়াই করে এবং আল্লাহ তা‘আলার পথে মৃত্যুবরণ করে।” আর (উতবা বা আরব বেদুইন বলেন) আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার কোন এক প্রান্তে অবতরণ করাবেন, অতঃপর আমি তার থেকে পান করব; অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, বিনা হিসাবে আমার সত্তর হাজার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে; অতঃপর প্রত্যেক হাজার আরও সত্তর হাজারের ব্যাপারে সুপারিশ করবে; অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাতের তালুর মাধ্যমে (আমার উম্মতের মধ্য থেকে) তিন মুষ্টি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলেন; তারপর তিনি (নবীজী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বলেন: প্রথম সত্তর হাজারকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততী ও আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারে সুপারিশ করার সুযোগ দিবেন।” আর (উতবা বা আরব বেদুইন বলেন) আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে শেষ তিন মুষ্টির কোন একটার মধ্যে শামিল করবেন। আর আরব বেদুঈন বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তাতে কি ফলমূল আছে? জবাবে তিনি বললেন: না, তাতে ‘তুবা’ নামক একটি বৃক্ষ আছে, তা ফিরদাউস নামক জান্নাতের উপযোগী। সে বলল: আমাদের দেশের কোন বৃক্ষের সাথে তার সাদৃশ্যতা রয়েছে? জবাবে তিনি বললেন: তোমাদের দেশের কোন গাছের সাথেই তার মিল নেই, তবে তুমি কি শাম দেশে গিয়েছ? জবাবে সে বলল: না, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন: “নিশ্চয়ই তা শাম দেশের ‘জূযা’ নামক বৃক্ষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তা এক কাণ্ডের উপর অঙ্কুরিত উদ্ভিদ এবং তার উপরিভাগ ছড়িয়ে যায়।” সে বলল: তার মূলের বড়ত্ব কী পরিমাণ? তিনি বললেন: “যদি পরিপূর্ণ চার বছরের তোমার পরিবারের একটি উট অনবরত সে বেষ্টনীতে ভ্রমণ করে, তবে সেটার কণ্ঠনালী বৃদ্ধ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু তার শেষ পর্যন্ত যেতে পারবে না।” সে বলল: তাতে কি আঙ্গুর ফল থাকবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে বলল: তার মধ্যকার আঙ্গুরের কাঁদি বা গুচ্ছের বড়ত্ব কেমন? তিনি বললেন: “বিরামহীন গতিতে চলমান একটি কাকের এক মাসের রাস্তার সমপরিমাণ।” সে বলল: তার দানার বড়ত্ব কেমন? তিনি বললেন: তোমার পিতা কি কখনও বড় ধরনের পাহাড়ী বকরা (পুরুষ ছাগল) জবাই করেছে? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: “অতঃপর সে কি তার চামড়া খসিয়েছে, তারপর তা তোমার মাকে দিয়ে বলেছে যে, তুমি এটা আমাদের জন্য প্রক্রিয়াজাত কর, তারপর তার থেকে আমাদের জন্য একটি বালতি প্রস্তুত কর, যাতে আমরা তা থেকে তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারি? সে বলল: হ্যাঁ। (অর্থাৎ সেটার দানা এতটাই বড় হবে।) সে বলল: “নিশ্চয়ই এই দানা আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে পরিতৃপ্ত করবে? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হ্যাঁ, তোমার গোটা বংশধরকে পরিতৃপ্ত করবে।”
দলীলঃ (আল-মু‘জামুল আওসাত (المعجم الأوسط), ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৬, তাবারানী, আল-ফাসাবী, আল-মা‘রেফাতু ওয়াত তারিখ (المعرفة و التاريخ), ২/৩৪১)

হাদিস নং ১২ 

তিবরানী, বায়হাকী, আবূ নয়ীম ও ইবনে আসাকির কালতান ইবনে আসেম (রাঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, 
আমরা নবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করল। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি তাওরাত পড়েছ? সে বললঃ হ্যাঁ। আবার প্রশ্ন করলেনঃ ইনজীলও পড়েছ? সে বললঃ হ্যাঁ। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি তাওরাত ও ইনজীলে আমার আলোচনা পেয়েছ? লোকটি বললঃ হ্যাঁ হুবহু আপনার অভ্যাস ও আপনার আপাদমস্তক অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল যে, এই শেষ নবী আমাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবেন। আপনার আবির্ভাবের পর আমাদের আশংকা হয় যে, আপনিই হয়তো সেই নবী। কিন্তু অনেক চিন্তা-ভাবনার পর জানা গেল যে, আপনি সেই নবী নন। কেননা, আমাদের কিতাবে আছে যে, সেই নবীর সঙ্গে সত্তর হাজার উম্মত এমন থাকবে যে যারা বিনা হিসাবে-নিকাশে বেহেশত পাবে। আপনার সঙ্গে সামান্য লোক রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেই আল্লাহর কসম, যাঁর কব্জায় আমার প্রাণ। আমিই সেই প্রতিশ্রুত নবী। বিনা হিসাবে যারা বেহেশতে যাবে, তারা আমারই উম্মত। আর তারা সত্তর হাজার কেন, সত্তর হাজারেরও অনেক বেশি হবে।
দলীলঃ (খাসায়েসুল কুবরা, ১ম খন্ড, পৃ. ৩০)

হাদীস নং ১৩

হযরত হুযাইফা (রাঃ) বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দৃষ্টির আড়াল হলেন। তারপর আর বের হলেন না। এমনকি আমরা ধারণা করলাম, তিনি বুঝি আর বেরই হবেন না। যখন বের হলেন, তখন এমনই এক সেজদা দিলেন যে, আমরা ধারণা করলাম যে ঐ অবস্থায় বুঝি তাঁর জান কবজ হয়ে গেছে। এরপর যখন তিনি মাথা উঠালেন, তখন বললেন— আমার প্রভু আমার উম্মত সম্পর্কে আমার পরামর্শ চাইলেন— আমি তাদের সাথে কি ব্যবহার করতে পারি। আমি উত্তর দিলাম, আপনি যা চাইবেন, হে প্রভু! তারা তো আপনারই সৃষ্টি, আপনারই বান্দা। এরপরও তিনি দ্বিতীয় বার আমার অভিমত চাইলেন। আনিও আগের মতই জবাব দিলাম। তখন তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি আপনাকে আপনার উম্মতের ব্যাপারে শরমিন্দা করব না। আরও জানালেন যে, সর্ব প্রথম আমার উম্মত থেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে ৭০ হাজার লোক। প্রতি হাজারের সাথে আরও ৭০ হাজার করে— তাদের হিসেব-নিকেশ হবে না। তারপর আমার কাছে বলে পাঠালেন, দোয়া করুন, কবুল হবে। তখন আমি তাঁর দূতকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার প্রভু কি আমি যা চাইব তা-ই দিবেন? তিনি বললেন, আপন্র কাছে আমাকে তো দিতেই পাঠিয়েছেন। হ্যাঁ, আমার প্রভু আমাকে দিয়েছেন, তবে ফখর করি না। আমার আগে পিছে কোন গুনাহ নাই বলে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, অথচ আমি চলছি ফিরছি, সুস্থ সবলভাবে বেঁচে আছি। আমাকে এ নিশ্চয়তাও দিয়েছেন যে, আমার উম্মত ভুখা থাকবে না অথবা পরাজিত হবে না। আর আমাকে জান্নাতের কাওসার দিয়েছেন যা আমার চৌবাচ্চায় বইবে, আমাকে দিয়েছেন ইজ্জত ও বিজয় আর এমন এক ভীতি সঞ্চারী প্রভাব যা আমার উম্মতের এক মাসের পথ আগে থেকে শত্রুর মনে ত্রাসের সঞ্চার করবে। আমাকে আরও মর্যাদা দিয়েছেন যে, আমি সর্বপ্রথম নবী যিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আমি ও আমার উম্মতের জন্য হালাল করে দিয়েছেন যেগুলোর ব্যাপারে পূর্ববর্তীদের উপর কঠোরতা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের জন্য কোন অসুবিধা রাখেন নি।
দলীলঃ 
১। মাজমাউয্‌ যাওয়ায়েদ, খঃ ১০, পৃ. ৬৪
২। সাইয়্যেদ ইউসুফ হাশেম রেফায়ীঃ আহ্‌লে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দলীল, ২য় অধ্যায়, নবী মুহাম্মদের (সঃ) সাথে আল্লাহর পরামর্শ, পৃ. ২৫-২৬


হাদীস নং ১৪

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানবমন্ডলীকে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে। তখন একজন ঘোষক এই ঘোষণা করবে যে— এ সকল লোকেরা কোথায় যারা (রাতে) আরামের বিছানা থেকে নিজেদের পাশকে দূরে রেখেছিল? তখন অল্পসংখ্যক লোক উঠে দাঁড়াবে এবং তারা বিনা হিসেবে জান্নাতের প্রবেশ করবে। অতঃপর অবশিষ্ট সকল মানুষ হতে হিসেব নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।
দলীলঃ (বায়হাকীঃ শোআবুল ঈমান, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীসঃ ৫২০৮)

[বিঃদ্রঃ উপরোক্ত হাদীসে অল্পসংখ্যক বলতে শুধুমাত্র কঠোর রিয়াযত-সাধনাকারী, রাত্রি বেলায় আল্লাহর স্মরণকারী এবং ইবাদতকারী লোক-কেই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য হাদীস শরীফে বর্ণিত ৭০ হাজার বা ৭০ লক্ষ লোক এখানে উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ এই বিশেষ ইবাদতকারী বান্দাগণ উক্ত বিশাল (৭০ হাজার বা ৭০ লক্ষ) উম্মতেরই অংশ।]

হাদীস নং ১৫

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মতের চার লক্ষ ব্যক্তিকে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আনাদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করুন। তখন তিনি বললেন, ‘এ পরিমাণ’-এই বলে তিনি উভয় হাত একত্রিত করে মুষ্টি (দু’হাতের করতল) একত্রিত করলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করুন। এবারও রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ (দু’হাতের) মুষ্টি একত্রিত করে দেখিয়ে দিলেন, আরও এ পরিমাণ। তখন হযরত উমর (রাঃ) বললেন, হে আবু বকর! আমাদের নিজ নিজ অবস্থায় থাকতে দাও। তখন আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে উমর! এতে তোমার কি ক্ষতি যদি আল্লাহ ইচ্ছে করেন। তবে তাঁর সব সৃষ্ট মাখ্‌লুককে তিনি এক মুষ্টিতেই জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন (অর্থাৎ দু’হাতের সম্মিলিত মুষ্টির দরকার হবে না)। এ কথা শুনে তখন রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উমর সত্যি বলেছে।
দলীলঃ (শরহে সুন্নাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীসঃ ৫২৪০)


Top