হাত উঠানো ও হাত বাধার পদ্ধতি
মুফতি লুৎফুর রহমান কাসিমী
তাকবীরেতাহরীমার সময় হাত উঠানোর পদ্ধতি
হাদিস-১
إذا صلى كبر ورفع يديه
তিনি (সঃ) যখন নামাজ পড়তেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং হাত উঠাতেন….
বুখারী-৭৩৭
হাদিস-২
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا قام إلى الصلاة استقبل القبلة ورفع يديه وقال الله أكبر
তিনি (স) যখন নামাযে দাড়াতেন তখন কিব্লামুখী হয়ে হাত উঠাতেন এবং আল্লাহ আকবর বলতেন।
সুনান ইবনু মাজাহ- ৮০৩
হাদিস-৩
كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِإِذَا افْتَتَحَ الصَّلاةَ
তিনি (স) যখন নামাজ শুরু করতেন তখন কাধ পর্যন্ত দু’হাত উঠাতেন......
বুখারী-৭৩৫
হাদিস-৪
قام إلى الصلاة رفع يديه حتى كانتا بحيال منكبيهوحاذى بإبهاميه أذنيه ثم كبر
তিনি (স)যখন নামাজ পড়তেন তখন হাত দু’টি কাঁদের উপরে উঠাতেন এবং বদ্ধাংগুলি কান পর্যন্ত পোছাতেন..
আবু দাউদ-৬২১
হাদিস-৫
إذاكبر رفع يديه حتى يحاذي بهما أذنيهوإذا ركع رفع يديه حتى يحاذي بهما أذنيه وإذا رفع رأسه من الركوع فقال سمع الله لمن حمده
তিনি (স) যখন তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’হাত ঊঠাতেন ...
মুসলিম-৩৯৩/৩৯৪
হাদিস-৬
كان إذا افتتح الصلاة رفع يديه على قريب من أذنيه ثم لا يعود
তিনি (স) যখন তাকবীর দিতেন তখন হাত দু’টি কানের কাছাকাছি উঠাতেন...
আবু দাউদ-৬৪০
হাদিস-৭
إذا كبر لا فتتاح الصلوت رفع يديه حتي يكون ابها ما ه شحمتي اذنيه
যখন তিনি (সঃ) নামায শুরু করার জন্য তাকবীর দিতেন এবং দু’হাত উঠাতেন তখন তাঁর দু’টি বদ্ধাংগুলি কানের লতি পর্যন্ত উঠে যেত ...
আবু দাউদ-৬২৭
হাদিস-৮
بهما فروع أذنيه إذا كبر رفع يديه حتى يحاذي
তিনি (স) যখন তাকবীর দিতেন তখন দু’হাত কানের উপরি ভাগ পর্যন্ত উঠাতেন
মুসলিম-৮৬৫
হাদিস-৯
يرفع يديه إذا كبر وإذا ركع وإذا رفع رأسه من الركوع حتى يبلغ بهما فروع أذنيه
যখন তাকবীর (তাহরীমা) দিতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন দু’টি হাত কানের উপরি ভাগ পর্যন্ত উঠাতেন।
আবু দাউদ-৬৩৫
হাদিস-১০
إذا قمتم إلي الصلوت فارفعو ايديكم و لا تخا لفوا إذا نكم ثم قولو ا الله اكبر .....و إن لم تزدو ا علي التكبير أجزاتكم
মহানবীর নির্দেশ; তোমরা যখন নামায পড় তখন তোমদের হাতগুলো কান বরাবর উঠাও...।
তাবরানী-৩/২১৮
পর্যালোচনাঃ
১। উপরের হাদিস ১ ও ২ তে শুধুমাত্র হাত উঠানোর কথা এসেছে। (হাত শব্দের আরাবি শব্দটি হাইলাট করা আছে)।
২। পরবর্তী (৩-১০) হাদিসগুলো থেকে প্রমানিত হলো যে তাকবীরে তাহরীমার সময় মহানবী (সঃ) তিন ভাবে হাত উঠিয়েছেনঃ
এক. কাধ পর্যন্ত (হাদিস ৩ ও ৪ এর হালাইটেড শব্দ)
দুই. কানের কাছাকাছি অথবা কানের লতি পর্যন্ত (হাদিস ৫, ৬ ও ৭ এর হালাইটেড শব্দ) এবং
তিন. কানের উপরি ভাগ পর্যন্ত (হাদিস ৮,৯ ও ১০ এর হালাইটেড শব্দ)।
৩। হাদিস বিশারদগন উপরোক্ত হাদিস সমূহকে ছহিহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
৪। হানাফি মাজহাবে কানের লতি থেকে উপর পর্যন্ত হাত উঠানো সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য সুন্নাত পদ্ধতি। তাতে একি সাথে বেশীর ভাগ হাদিসের (হাদিস ৪-১০) উপর আমল হচ্ছে।
৫। অন্যান্য মাজহাবে কেউ শুধু কাঁধ বা কানের লতি পর্যন্ত হাত উটানোকে সুন্নাত হিসেবে গ্রহন করেছেন।
৬। শেখ আলবানিসহ যারা কোন মাযহাবের অনুসারী নন তারা কাঁধ ও কান পর্যন্ত হাত উটানোর দু’টি পদ্ধতিকেই সঠিক মনে করেন। (দেখুন শেখ আলবানির ‘রাসুলের নামাজ-৩৫)
হাত বাধার পদ্ধতি
নির্দেশনা
১। নীচের হাদিস সমূহ দু’ভাগে বিভক্ত;
১ম ভাগের হাদিস সমূহে শুধুমাত্র মহানবী (স) কিভাবে হাত বাধতেন তার বর্ণনা।
২য় ভাগে রয়েছে হাত কোথায় রাখতেন তার বর্ণনা। এবং ২য় ভাগের হাদিস সমূহের প্রত্যেকটিই উছূলে হাদিসের মানদণ্ডে ছহিহ হিসেবে সকলের (মুহাদ্দিসগন) নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ এ হাদিস সমূহের উপর দুর্বলতার অভিযোগ রয়েছে। কেউ বলেছেন গ্রহণ করা যাবে আবার কেউ বলেছেন গ্রহণ করা যাবেনা। হাদিসের (সনদের) দুর্বলতা বেশী হলে গ্রহণ করা যাবেনা বরং তলনামুলক ভাবে যে হাদিসটি সনদের দিক থেকে বিশুদ্ধ সেটি গ্রহণ করতে হবে।
হাদিস-১
عن سهل بن سعد قال
كان ناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة قال أبو حازم لا أعلمه
إلا ينمي ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم قال إسماعيل ينمى ذلك ولم يقل ينمى
নামাযে লোকদেরকে ডান হাত বাম বাহুরউপর রাখার নির্দেশ দেয়া হত ...।
বুখারী-২১০, নাসায়ী-১/১৪১, দারকুতনী-১০৭, বায়হাকী-২/২৮, ১/২১০
হাদিস-২
আ’ছিম ইবনু কোলাইব (রা) বলেন;
رأيت النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يصلي ، فأخذ شماله بيمينه . ولفظ مسلم
ثم وضع يده اليمنى على اليسرى ... الحديث
আমি মহানবীকে (স) দেখেছি যে, নামাযে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরেছেন। মুসলিমের বর্ণনায়; তিনি (স) ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছেন।
আহমাদ-৫/৩৩৬, মুওয়াত্তা-১/১৭৪, আবু উয়ানাহ-২/৯৭, বায়হাকী-২/২৮,১৭৮
হাদিস-৩
وائل بن حُجر رضي الله عنه قال عن
قلت : لأنظرن إلى صلاة رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كيف يصلي ؛ فنظرت إليه : فقام ، فكبَّر ،ورفع يديه حتى حاذتا أذنيه ، ثم وضعيده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد
ওয়াইল ইবনু হুজর (রা) বলেন, অবশ্যি আমি রাসুলুল্লাহ (স) কিভাবে নামায পড়েন তা প্রতক্ষ্য করতাম। অতপর আমি দেখলাম যে, তিনি নামাযে দাড়ালেন, তাকবীর দিলেন, হাত দু’টি কানের কাছাকাছি ঊঠালেন অতপর ডান হাত বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখলেন......। আবু দাউদ-১/১১৫, নাসায়ী-১/১৪১, দারিমী-১/৩১৪, ইবনু খুজাইমাহ-২/৫৪, ৪৮০,২৪৩, ইবনু হাব্বান-৪৮৫, বায়হাকী-২/২৭,২৮,১৩২, আহমাদ-৩১৮
হাদিস-৪
كان صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يضع اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد
واضعاً يمينه على شماله
وقد أخرجه ابن أبي شيبة عن وكيع بزيادة
تحت السرة
তিনি (স) ডান হাত বাম হাতের পিঠ, কব্জি এবং বাহুর উপর রাখতেন।
উমদাতুর রিআয়াহ -১/১৩৫
হাদিস-৫
زائدة عن عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل بلفظ
وضعيده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد...
ওয়াইল থেকে বর্ণীত, তিনি (স) ডান হাত বাম হাতের পিঠ, কব্জি এবং বাহুর উপর রাখতেন।
আহমাদ-৪/৩১৯, বায়হাকী-২/৩০, ১/২১২
হাদিস-৬
قَبِيْصَةَ بن هُلْب عن أبيه قال
كان رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَؤُمُّنا ، فيأخذ شماله بيمينه
কাবিছা বিন হুলব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন; রাসুলুল্লাহ (স) নামাজ পড়াতেন এবং ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
তিরমিজী-২/৩২, ইবনু মাজাহ-১/২৭০, আহ মাদ-৫/২২৫ এই হাদিসটি ‘হাসান’
হাদিস-৭
وقد رواه سفيان الثوري عن سماك بلفظ
সুফিয়ান সাউরী সিমাক থেকে বর্ণনা করেন;
واضعاً يمينه على شماله
ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন।
বায়হাকী-২/২৯, দারকুতনী-১০৭
হাদিস-৮
عن عبد الله بن مسعود
أن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كان يأخذ شماله بيمينه في الصلاة
আব্দল্লাহ ইবনু মাসুউ’দ (রা) থেকে বর্ণিত; মহানবী (স) নামাজের মধ্যে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
দারকুতনী-১০৬
দেখুন, উপোরক্ত হাদিস সমূহে কোথায় হাত রাখতে হবে, বুকের উপর, না নাভীর উপর অথবা নাভীর নীচে তার কোন উল্লেখ নাই। কিন্তু এ কথা সুস্পষ্ট যে মহানবী (স) ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালু, কব্জি ও বাহু ধরতেন তথা ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতেন।