আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমতুল্লাহি ওবারাকাতুহ
শরু করছি পরম করুণাময় সেই প্রেমময় জাল্লে জালালু আহাদময় অসীমদয়ালু আল্লাহ সুবাহানু তাআলা ও তার পেয়ারে নূরময় হাবীবশাফেয়ীন মুজনেবিন রাহমাতালাল্লিল আলামিন আহমদ মোস্তফা মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) উনার উপর দুরুদ পেশ করে এবং আমার দাদাহুজুর আক্তার উদ্দিন শাহ ও আমারমূর্শীদ কেবলা দয়ালমোখলেছ সাই এর সরণে...
(প্রসঙ্গ মাইকদিয়ে আযান দেওয়াযায়েয বা বেদাতে হাসনাহ)
আমাদের দেশে মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফ্যতনা ফ্যসাদ সৃষ্টি হচ্ছেযার কারন ইসলামিক দল উপদল গুলিএই ফ্যতনা ফ্যসাদের জন্য সাধারণ মুসলিম দিন দিন বিভ্রান্ত হচ্ছে তেমনি একটিদল মাইক দিয়েআযান দেওয়া বা মাইক দিয়ে ইবাদতকরলে নাকি হারামহবে সেই বিষয়নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ.
হালাল হারাম:-আমি কোরান হাদীস ইজমা কিয়াসফিকহে উসূল বা কোন মাযহাবের ইমামগণ কোন ফতোয়া দেথতে পাইনি যে কোন বিষয় অর্ধেক হালাল বা অর্ধেক হারাম যদি এটা হারামহয় তাহলে তো সর্বক্ষেত্রেই হারাম আর হালাল হলে সর্বক্ষেত্রেই হালালআমি সেই সকল ভাইদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম কোন বিষয়হালাল হারাম হলে কি সেটা সর্বক্ষেত্রে হবে নাকি কিছু কিছূক্ষেত্র হবে...?যাক এবার মূল কথায়আসা যাক..
আযান:-মুয়াজ্জিন কর্তৃক প্রার্থনার উদ্দেশ্য দিনের নির্ধারিত সময়ে ৫ বার আহবান করাকে আযানবলা হয়,আযানশব্দের মূল অর্থহলো শোন বা কাউকে অবগত করানো আর সেই অবগতকরানো টা যত সুন্দর বা যত উচ্চ স্বরে মানুষের কাছে আল্লাহর বাণীপৌছানো যায় ততই ভাল কারণ রাসূল(সা:)নিজেই উচ্চস্বরে আযান দেওয়ার জন্য নিজেই তাগিদদিয়েছেন তারই দ্বারার পরিপ্রেক্ষিতে মানূষ আজ যন্ত্রের মাধ্যমে দূর দূরান্ত থেকে আযানের ধ্বনি পৌছে দিচ্ছে এতে হালাল হারামের কি বিষয় সেটাইমাথায় আমার ঢুকছেনা যা হোকএবার কিছু আমি ফতোয়ার দলিল ও হাদীস পেশ করব
ফতোয়ায়ে আলমগীরী ইস:ফা: ১ম খন্ড ১৫১ পৃ:-সেখানে বলা আছে যদি কোনব্যক্তি কোন বাগানবা ক্ষেতে থাকেআর সে যদি কোন শহর বা গ্রামের নিকট থাকেতাহলে তার জন্যসেই শহর বা গ্রামের আযান যতেষ্ট পাঠকগণ খুব মনোযোগ সহকারে খেয়াল করুনশহর থেকে একটিবাগান বা ক্ষেতকতটুকু দুরত্ব হতে পারে মিনিমাম ১ থেকে ২ কিলোমিটার হবে নিশ্চয় তো কোন মানূষ যদি মসজিদ থেকে মাইকবিহিন আযান দেয় তাহলে সে কি শুনতে পাবে আপনারাই বলেন তাহলে এখানথেকেই বুঝা যায় আযানের ধ্বনি কে মানুষের কাছে পৌছেদেওয়ার জন্য কোনমাধ্যম ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছেনতুবা শহর বা গ্রাম এর দুরত্বটা আসতো না
দিত্বীয়ত-১৫০ পৃ: ১০ নং মাসাআলা বলা আছে কোন মুসল্লি যদি মসজিদে এসে আস্তে আযান দেয় আর সেই আযানযদি অন্য কেউ শুনতে না পাই তাহলে পুনরায় অন্যমুসল্লি এসে জোড়েবা উচ্চ স্বরেআযান দিবে দেখেনপাঠগণ এখানে ও আযান কে উচ্চস্বরে দেওয়ার ঘোষনা আসল
তৃতীয়ত-১৫৪ পৃ: বলা আছে উচু যায়গায় দাড়িয়ে উচ্চ স্বরেআযান দেওয়া সূন্নাত তবেই প্রতিবেশীরা ভালভাবে শূনতেপারবে দেখেন এখানেও আযান কে উচ্চ স্বরে দেওয়ার এবং প্রতিবেশীগণ যেন ভালভাবে শুনতে পায় সেই ব্যবস্তা করতে হাবে এখন আপনারাই বলেন একজন ইমামের আওয়াজ মাইক বিহীনকতদুর শুনতে পাবেআপনাদের কাছে আমি অধমের প্রশ্ন সূতরাং এখান থেকেএ এটা প্রতীয়মান হয়যে মাইকদিয়ে আযান দিলেসেটা প্রতিবেশীরা যেমন শুনতে পাবে তেমনিআল্লার বাণী সকল মানুষের কাছে পৌছেযাবে আর না হলে মানুষের আযানের শব্দ শুনা নিয়েবিভ্রন্ত হতে হবে।
এবার আসূণ হাদিস শরীফ থেকে কিছু দলিল নিয়ে আলোচনা করি
তিরমিযী হাদীস শরীফে আযানঅধ্যায়ে বলা আছে হাদীসটি নিম্নরুপ
০১.সাইদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবন সাইদ আল-উমাবী (র:)আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রা:)থেকে বর্ণিত যে সকাল হলে আমি রাসূল (সা:)ওনারকাছে আসলাম এবং তাকে আমার সপ্নের কথা বললাম তিনিবললেন এটি নিশ্চয় সত্য সপ্ন তুমিবিলালের সঙ্গে দাড়াওতার আওয়াজ তোমার চেয়ে উচ্চ এবং দীর্ঘ তোমাকে সপ্নেযা বলে দেওয়াহয়েছে তাকে তা বলে দাও সে সেই ভাবে ডাক দিবে-পাঠকগণ এখানেখেয়াল করুন আযানদেওয়া নিয়ে এক সাহাবী সপ্নে যা দেখেলেন বিল্লাল (রা:)ও তা দেখলেন আর সেই সাহাবী রাসূল (সা:)ওনারকাছে সপ্নে আযানদেওয়ার কথাটি খূলেবললে রাসূল বললেনতোমার থেকে বিল্লালের স্বর অনেক উচ্চএবং দীর্ঘ দেখেনরাসূল (সা:)এই হাদীসে উচ্চ কন্ঠেআযান দেওয়া সাহাবীকে নিয়োগ করলেন আর সেই সাহাবী কে করলেন না এখানথেকে কি প্রমান হয় না যে আযানের জন্য উচ্চকন্ঠ বা মাধ্যম ব্যবহার করা যায়েযকারন এখানে দুই সাহাবীর মধ্যেই তো ব্যাপারটি পরিষ্কার হলো যার আওয়াজ যত উচু তাকেই নিয়োগ করলেন আর যার আওয়াজ নিচু তাকেনিয়োগ করলেন না কত সুন্দর ফায়সালা আল্লাহ সবাইকে বুঝারতৌফিক দান করুক.
০২.রাসূল (সা:) বলেছেন মুয়াযিনের আযানের আওয়াজযত দুরত্ব যাবেঠিক ততটুকু দুরত্ব অনযায়ী তার গুনাহমাফ করা হবে সুবাহানাল্লাহ-দেখেন পাঠকগণ এখানে আযানের ধ্বনিকে দুরত্বের সাথে তুলনাকরা হয়েছে আর বর্তমান যমানায় মাইকবিহীন আপনি কত দুরত্বে পার করবেনআপনারাই বলেন-সূনানে নাসাই শরীফ-৬৪৬ নং হা:-ই: ফা:
০৩. রাসূল (সা:) বলেছেন যখন আযান দিবেউচ্চ স্বরে আযানদিবে কারণ জ্বিনমানূস ফেরেশতা পাথরনদী নালা গাছপালা যে কোন বস্তুআযানের ধ্বনি শুনবেকিয়ামতের দিন তারামুয়াজিনের জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে সুবাহানাল্লাহ-মুসনাদে আহমদ-৩৩৮ ইস:ফা: পাঠকগণ এখানেদেখেন আযানের ধ্বনিযতদুর যাবে আর সেখানকান বস্তুরা সেই ধ্বনি শুনতে পারেতারা সাক্ষ্য প্রদান করবে তো এখন আপনারাই বলেন মাইকবিহীন আওয়াজ কত দুর যেতে পারে. এ রকম অনেক অসংখ্য হাদীস আছে যা আমি অধম লিখে শেষ করতে পারবো না
এবার আসূন যারা বেদাত বলেন মাইকে আযান দেওয়া কে নিয়ে সেটি একটু আলোচনা করি
বিদাত কি-বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া(লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩.বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫)
বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯, মিরকাত শরীফ)
বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ
(১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬)
শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। সুতরাং সহজ ভাবে বলতে গেলে বিদআত হল নতুন সৃষ্টি.যার কোন নমুনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ছিল না.নতুন আবিষ্কৃত জিনিসটি ভালও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে.যদি ভাল হয় তথা কোরআন সুন্নাহ ইজমা ও কিয়াসের বিরোধী না হয় তাহলে তা জায়েয এবং এতে উত্তম প্রতিদান রয়েছে যেমন হাদীস শরীফে আছে--যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথার প্রচলন করবে তার জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে,এবং যারা এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান রয়েছে এতে লোকেরা যত আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব দেওয়া হবে (মুসনাদে আহমদ-১ম খন্ড-১৬১ পৃ:)অন্যদিকে বলা আছে যদি নতুন আবিষ্কৃত কাজটি খারাপ বা শরীয়ত বিরোধী কাজ হয় তাহলে তা হারাম হবে যেমন হাদীস শরীফে আছে--আর যে ব্যক্তি ইসলামে একটি খারাপ প্রথা চালু করবে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করবে ,তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না (মুসনাদে আহমদ-১ম খন্ড-১৬০ পৃ:)আশা করি বুঝতে পেরেছেন উত্তম বিদাতের জন্য সওয়াব নির্ধারিত তা হাদীসে প্রমান হলো আর মাইক দিয়ে আযানের ধ্বনি মানষের কাছে পৌছে দেওয়া হলো উত্তম বেদাত যার জন্য সওয়াব নির্ধারিত তাই এটাকে হারাম বলার কোন উপেক্ষা রাখেনা যারা বলে থাকেন তারা বেখূব ছাড়া আর কিছুই না আর সব বেদাত যদি ভ্রান্ত হয় তাহলে রাসূল (সা:)ওনার আমলে কোরান কি এ রকম ছিল পাঠ্য আকারে ছিলনা তাহলে এটা কি হারাম হবে নাউযুবিল্লাহ রাসূল (সা:)ওনার আমলে তো তারাবী নামায জামাত আকারে ছিলনা এখন তা জামাত আকরে পড়া হচ্ছে তাহলে সে টা কি হারাম হবে নাউযুবিল্লাহ রাসূল (সা:)ওনার যামানায় তো ইন্টারনেট মেবাইল ছিলনা তাই বলে এগুলি উত্তম কাজে ব্যবহার করা কি হারাম হবে সবচেয়ে বড় দলিল হলো আমার রাসূল (সা:)যেখানে স্বয়ং শুয়ে আছেন মদীনায় ওনার মসজিদে নববীতে কত সুমধুর কন্ঠে আযান হচ্ছে যিনি সকল বিষয়ে পূতপবিত্র ওনি কিছু বলছেন না এ ব্যপারে আর আমাদের দেশে আপনি নতুন করে পন্ডিত জন্মাইছেন মাইক দিয়ে আযান দেওয়া হারাম বাহ কত সুন্দর মুজাদ্দেদ আপনি ভাবতে অবাক লাগে যা হোক পাঠকগণ আশা করি এই দলিল গুলোর বিত্তিতে আমি যে আলোচনা গুলি করলাম আপনারা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন মাইক দিয়ে আযান দেওয়া বেদাতে হাসনাহ যা উত্তম বেদাত এবং তার জন্য সওয়াব নির্ধারিত-আল্লাহ সুবহানু তাআলা সকলকে সঠিক জ্ঞ্যান দান করুক এটাই অধমের কামনা-আমিন-প্রচারে-মোখলেছিয়া সূন্নী খানকা শরীফ