কুরআন কারীমের আয়াত গোপন করার পরিণাম
সুরা: আল বাকারাহ্
আয়াত নং ১৫৯-১৬০
انَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنْ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمْ اللهُ وَيَلْعَنُهُم...ْ اللَّاعِنُونَ (১৫৯) إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (১৬০)
অনুবাদ:
আয়াত নং ১৫৯:- নিশ্চয় যারা গোপন করে, যা বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য; কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সেই সব লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণেরও।
আয়াত নং ১৬০:- তবে যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সব লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।
এই আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন, যারা মানুষের হেদায়েতের কথা কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পর তা গোপন করে, সেই সব লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত তবে যারা তওবা করে এবং কিতাবের মধ্যে বর্ণিত তথ্যাদি মানুষের কাছে বর্ণনা করে, সে সব লোকের তওবা আল্লাহ কবুল করেন।
ইব্নু কাসীর (রহঃ) ১৫৯-১৬০ নং আয়াতের বর্ণনায় বলেন, এখানে ঐসব লোককে ভীষণভাবে ধমক দেয়া হয়েছে যারা আল্লাহ তা'আলার কথাগুলো এবং শরীয়তের বিষয়গুলো গোপন করতো। কিতাবীরা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রশংসা বিষয়ক কথাগুলো গোপন করে রাখতো। এ জন্যেই এরশাদ হচ্ছে যে, সত্যকে গোপনকারীরা অভিশপ্ত।
*** বিশুদ্ধ হাদীসের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: 'যে ব্যক্তি শরীয়তের কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় এবং তা সে গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো হবে।' হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন: এই আয়াতটি না থাকলে আমি একটি হাদিসও বর্ণনা করতাম না। হযরত বারা বিন আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেন: আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সঙ্গে একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: কবরের মধ্যে কাফিরের কপালে এত জোরে হাতুড়ী মারা হয় যে, মানব ও দানব ছাড়া সব প্রাণী ওর শব্দ শুনতে পায় এবং ওরা সবাই তার প্রতি অভিশাপ দেয়। অভিসম্পাতকারীগণ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করে থাকে। এ কথার অর্থ এটাই। অর্থাৎ সব প্রাণীর অভিশাপ তাদের ওপর রয়েছে।
হাদীস শরীফে রয়েছে যে, আলেমের জন্যে প্রত্যেক জিনিসই ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে- এমন কি সমুদ্রের মাছও (ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে), এই আয়াতের মধ্যে রয়েছে যে, যারা 'ইলম'-কে গোপন করে আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ, সব মানুষ ও প্রত্যেক অভিসম্পাতকারী অভিসম্পাত করে থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক বাকশক্তিহীন (জীব) অভিসম্পাত দান করে থাকে। এরপর আল্লাহ তা'আলা ঐসব মানুষকে অভিশপ্তদের মধ্য হতে বের করে নেন যারা তাদের এ কাজ হতে বিরত হয় এবং সম্পূর্ণরূপে সংশোধিত হয়। আর পূর্বে যা গোপন করেছিল এখন তা প্রকাশ করে দেয়। সেই 'তওবা' কবুলকারী দয়ালু আল্লাহ এসব মানুষের তওবা কবুল করেছেন। (তাফসির ইব্নু কাসির ১ম, ২য় ও ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৬৫)