প্রথম পর্বের পর :-
০৮. উম্মুল মু’মিনীন হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মা আলাইহাস সালাম
পরিচিতিঃ পিতা খুযায়মা ইবনুল হারিছ, বনু হিলাল গোত্রের লোক ছিলেন । উনাকেও উম্মুল মাসাকিন বলা হতো ।
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে নিকাহ মুবারকঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মা আলাইহাস সালাম-উনার ইতিপূর্বে দু’টি বিবাহ হয়। উনার দ্বিতীয় স্বামী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাহাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু তিনি উহুদের জিহাদে শাহাদত প্রাপ্ত হলে হিজরী ৪ সনে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয।
বিছাল শরীফঃ হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মা আলাইহাস সালাম রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে হিজরী ৪ সনে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মাত্র দুই কি তিন মাস জীবিত ছিলেন । অত:পর তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। (ইছাবা)
ফযীলত ও মর্যাদাঃ তিনি গরীব দু:খীদেরকে অত্যধিক দান খয়রাত করতেন । এজন্য উনাকে “উ¤মুল মাছাকীন” (দরিদ্রদের মাতা) বলে ডাকা হতো । সুবহানাল্লাহ !
উ¤মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার পরে তিনিই এই সৌভাগ্য লাভ করেন যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হায়াত মুবারকে ও উপস্থিতিতে তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন এবং স্বয়ং রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জানাযায় ইমামতি করেন। সুবহানাল্লাহ ! (উসুদুল গাবা, ইছাবা)
০৯. উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুওয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম
পরিচিতিঃ তিনি ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের সর্দ্দার-এর কন্যা । হিজরী ৫ সনে বনু মুস্তালিকের অভিযানে এই গোত্রের পরাজয়ের পর তিনি যুদ্ধ বন্দিনী হিসাবে মুসলমানদের হস্তগত হন। উনার পূর্ব স্বামী মুসাফি‘ বিন ছাফওয়ান আল-মুস্তালাকী এই জিহাদে নিহত হয়েছিল (উসুদুল গাবা,ইছাবা) . তিনি বিপন্ন হয়ে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় ।
যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধবন্দীনীদের মুক্তিঃ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যখন শুনলেন যে হযরত জুয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম-উনাকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিকাহ করেছেন, উনারা এর স¤মান স্বরূপ বনু মোস্তালিক গোত্রের সমস্ত যুদ্ধবন্দী ও বন্দিনী বিনা পণে মুক্ত করে দেন । এজন্য বলা হতো, কোন মহিলা হযরত জুয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম-উনার মত উনার গোত্রের জন্য এতটা সৌভাগ্য আনয়ন করতে পারে নি (উসুদুল গাবা). সুবহানাল্লাহ ! উনার পিতাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দরবার শরীফে হাযির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন । (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বিছাল শরীফঃ হিজরী ৫৬ সালে প্রায় ৭০ বৎসর বয়সে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু-উনার খিলাফত আমলে তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক হয় ।
ফযীলত ও মর্যাদাঃ হযরত জুয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম অত্যন্ত ইবাদত গুজার ছিলেন । তিনি খুব বেশী নফল নামায পড়তেন এবং নফল রোযা রাখতেন। উনার সুদীর্ঘ সময় নফল নামায সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে।[সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, অন্যান্য সীরত গ্রন্থ]
১০. উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালামউম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে খুবই মহব্বত করতেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন অন্তিম রোগে শায়িত, হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম ক্রন্দন করে বললেন: হে আল্লাহ পাক-উনার রসুল ! আপনার সমস্ত কষ্ট যদি আমার উপর আপতিত হতো ! অন্যান্য উম্মুহাতুল মু’মিনীনগণ ইহা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উত্তরে বললেন: আল্লাহ পাক-উনার কসম ! তিনি সত্য বলেছেন। সুবহানাল্লাহ ! (ইছাবা)
তিনি দানশীলা ছিলেন । উনার একটি বাড়ী ছিল যা তিনি উনার হায়াত মুবারকেই দান করে দেন (তাবাকাত). তিনি যখন প্রথমে মদীনা শরীফে আসেন, উনার কানের স্বর্ণের রিংগুলি অন্যান্য উম্মুহাতুল মু’মিনীনগণকে এবং সাইয়্যিদাতুন নিসাঈ আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম-উনাকে হাদিয়া হিসাবে দিয়ে দেন (যারকানী) . সুবহানাল্লাহ !
হিজরী ৩৫ সনে শত্র“রা যখন হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার গৃহ অবরোধ করে এবং খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম কিছু খাদ্য নিয়ে হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার গৃহের দিকে অগ্রসর হন । কিন্তু শত্র“রা উনাকে বাধা দান করে । অত:পর তিনি হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম-উনাকে দিয়ে এই খাদ্য দ্রব্যগুলি হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম-উনার নিকট পৌঁছাতে সমর্থ হন। সুবহানাল্লাহ !
তিনি বহু সংখ্যক হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন । বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, দূর দুরান্তর থেকেও অনেক মহিলা তা’লীম গ্রহণ করার জন্য উনার নিকট আগমন করতেন । সুবহানাল্লাহ ! সূত্র : উসুদুল গবা, ইছাবা, তাবাকা, অন্যান্য সীরত গ্রন্থ।
১১. উম্মুল মু’মিনীন হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম
পরিচিতিঃ পিতার নাম শামউন, ইহুদী সম্প্রদায়ভূক্ত । বনু কুরায়জা গোত্রের আল-হাকাম ছিল উনার স্বামী ।
ইসলাম গ্রহণ ও রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে বিবাহ মুবারক বনু কুরায়জা গোত্র বিশ্বাসঘাতকতা করলে, অন্যান্যদের ন্যায় উনার স্বামী অভিযুক্ত হয়ে নিহত হয় এবং তিনি যুদ্ধ বন্দিনী হয়ে পড়েন । অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার বিবাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় ।
বিছাল শরীফঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করার পর উনার বিছাল শরীফের কয়েক মাস পূর্বে (এক বর্ণনামতে ১০ মাস) তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় চার বছর তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সান্নিধ্যে থাকেন ।
পরিচিতিঃ তিনি ছিলেন ইহুদী হুয়াই বিন আখতাবের কন্যা। ইতিপূর্বে উনার দু’টি নিকাহ হয়েছিল। উনার দ্বিতীয় স্বামী কিনানা বিন আল-হুক্বায়ক খায়বরের জিহাদে নিহত হয় ।
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে নিকাহ মুবারকঃ খায়বর বিজয়ের পরে যখন যুদ্ধ বন্দিনীগণকে একত্রিত করা হলো, হযরত দাহিয়া কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু এসে বললেন : হে আল্লাহ পাক-উনার রসুল ! যুদ্ধ বন্দিনীগণ হতে আমাকে একজন দান করুন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন : আপনি যে কোন একজন নিয়ে যান। তিনি হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম-উনাকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । ছাহাবায় কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনারা এতে আপত্তি উত্থাপন করে বললেন: তিনি বনু কুরাইজা ও বনু নাদ্বিরের সর্দ্দারের আহলিয়া ছিলেন । উনাকে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভিন্ন অন্য কেউ গ্রহণ করা ঠিক হবে না। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুরোধ অনুযায়ী হযরত দাহিয়া কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু-উনাকে অন্য যুদ্ধ বন্দিনী দেয়া হলো এবং হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম-উনাকে মুক্ত করে দেয়ার পর উনার সাথে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ !
বিছাল শরীফঃ হিজরী ৫৬ সালে প্রায় ৭০ বৎসর বয়সে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু-উনার খিলাফত আমলে তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক হয় ।
ফযীলত ও মর্যাদাঃ হযরত জুয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম অত্যন্ত ইবাদত গুজার ছিলেন । তিনি খুব বেশী নফল নামায পড়তেন এবং নফল রোযা রাখতেন। উনার সুদীর্ঘ সময় নফল নামায সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে।[সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, অন্যান্য সীরত গ্রন্থ]
১০. উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম
পরিচিতিঃ তিনি ছিলেন ইহুদী হুয়াই বিন আখতাবের কন্যা। ইতিপূর্বে উনার দু’টি নিকাহ হয়েছিল। উনার দ্বিতীয় স্বামী কিনানা বিন আল-হুক্বায়ক খায়বরের জিহাদে নিহত হয় ।
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে নিকাহ মুবারকঃ খায়বর বিজয়ের পরে যখন যুদ্ধ বন্দিনীগণকে একত্রিত করা হলো, হযরত দাহিয়া কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু এসে বললেন : হে আল্লাহ পাক-উনার রসুল ! যুদ্ধ বন্দিনীগণ হতে আমাকে একজন দান করুন । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন : আপনি যে কোন একজন নিয়ে যান। তিনি হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম-উনাকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । ছাহাবায় কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনারা এতে আপত্তি উত্থাপন করে বললেন: তিনি বনু কুরাইজা ও বনু নাদ্বিরের সর্দ্দারের আহলিয়া ছিলেন । উনাকে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভিন্ন অন্য কেউ গ্রহণ করা ঠিক হবে না। ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুরোধ অনুযায়ী হযরত দাহিয়া কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু-উনাকে অন্য যুদ্ধ বন্দিনী দেয়া হলো এবং হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম-উনাকে মুক্ত করে দেয়ার পর উনার সাথে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ !
বিছাল শরীফঃ হিজরী ৫০ সনে ৬০ বৎসর বয়স মুবারকে তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয় । তিনি উনার পরিত্যক্ত স¤পদের এক তৃতীয়াংশ উনার বোনের ছেলের জন্য উইল করে যান।
ফযীলত ও মর্যাদাঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম অত্যন্ত বুদ্ধিমতি ও আলিম মহিলা ছিলেন । খয়বরের জিহাদের পূর্বে হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম স্বপ্নে দেখেন যে, উনার কক্ষে চন্দ্র উদিত হয়েছে । তিনি এই স্বপ্নের কথা উনার পিতাকে জানালে উনার পিতা উনার মুখে খুব জোরে আঘাত করে, যাতে উনার মুখে দাগ পড়ে যায়। অত:পর পিতা উনাকে বলে : তুমি আরবদের ক্ষমতার নীচে তোমার গর্দ্দান প্রসারিত করে দিবে । সুবহানাল্লাহ ! যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়, তখন উনার মুখে উক্ত দাগ দেখে এ স¤মন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন ।
ফযীলত ও মর্যাদাঃ উ¤মুল মু’মিনীন হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার ও পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারিণী ছিলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন । সুবহানাল্লাহ ! সুত্র : উসুদুল গাব, ইছাবা
১২. উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম
তিনি ছিলেন ঈসায়ী ধর্মাবলম্বীঃ পরিচিতি ও রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে বিবাহ মুবারক নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিসরের শাসনকর্তা মুকাওকিস-এর নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে একখানা পত্র লিখেন। তিনি ছিলেন একজন ঈসায়ী ধর্মাবলম্বী আলেম, রোম সম্রাটের প্রশাসক রূপে নিয়োজিত । মুকাউকিস হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পত্র যথাযথ স¤মানের সাথে গ্রহণ করে এই মর্মে জবাব দেন : আমি আপনার পত্র পাঠ করেছি এবং যা কিছু আপনি বলেছেন তা অনুধাবন করেছি । আমার জানা আছে যে, এখনও একজন নবীর আবির্ভাব অবশিষ্ট রয়েছে এবং তিনি আসবেন । কিন্তু আমার ধারণা ছিল যে, তিনি শাম (সিরিয়া) দেশে আবির্ভূত হবেন । আমি আপনার পবিত্র পত্র-বাহক-উনার প্রতি স¤মান প্রদর্শন করেছি । হাদিয়া স্বরূপ আপনার জন্য দু’টি মেয়ে প্রেরণ করছি । এরা দুই সহোদরা এবং নিতান্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের । ইহা ছাড়া দুলদুল নামক একটি বাহন ও কিছু কাপড় হাদিয়া হিসাবে পাঠানো হচ্ছে। এই দুইটি মেয়ের মধ্যে ছিলেন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম এবং উনার বোন হযরত সীরিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। উনারা ছিলেন ঈসায়ী ধর্মাবলম্বী। ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম-উনাকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিকাহ করেন এবং উনার বোন হযরত সীরিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-উনাকে হযরত হাস্সান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাকে হাদিয়া হিসাবে প্রদান করেন ।
বিছাল শরীফঃ হিজরী ১৬ সালে মুহররম মাসে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম-উনার খিলাফত কালে মদীনা শরীফে তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন। হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার জানাযার নামায পড়ান । (উসুদুল গাবা)
ফযীলত ও মর্যাদাঃ হিজরী ৮ সনে হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম-উনার রেহেম শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার একটি পুত্র সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেন । নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক রেখেছিলেন হযরত ইব্রাহীম আলাইহাস সালাম। তিনি খুব ছোট অবস্থায় বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । ঐতিহাসিক বালাজুরীর বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ১৮ মাস হায়াত মুবারকে ছিলেন । উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ব্যতীত অপর কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের রেহেম শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আর কোন সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেন নি । সুবহানাল্লাহ ! হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন উনার পুত্র হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি জীবিত থাকলে ছিদ্দীক্ব এবং নবীর মর্তবা লাভ করতেন। সুবহানাল্লাহ ! (খাছায়েছুল কুবরা)।
বর্ণিত আছে যে, হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম মিসরের আনসানা অঞ্চলের হাফন নামক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন । হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম-উনার সুপারিশক্রমে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাফন বাসিদের খারাজ (ভূমি কর) মাফ করে দিয়েছিলেন । ইহা উ¤মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া ক্বিবতিয়া আলাইহাস সালাম-উনার স¤মানার্থে করা হয়েছিল । সুবহানাল্লাহ ! সুত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, সিয়ারুচ্ছাহাবা, খাছায়েছুল কুবরা, অন্যান্য সীরত গ্রন্থ
১৩. উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম
পরিচিতিঃ তিনি বিধবা ছিলেন । হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আহলিয়া হযরত উম্মুল ফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার বোন ছিলেন । (উসুদুল গাবা)
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে নিকাহ মুবারকঃ কথিত আছে যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার অনুরোধেই এই নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। তখন হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম-উনার বয়স মুবারক ছিল ৫১ বছর। বিখ্যাত যোদ্ধা হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু-উনার আপন খালা ছিলেন এই হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম। এই নিকাহ মুবারক ছিল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সর্বশেষ নিকাহ মুবারক। এই নিকাহ মুবারকের পর পরই হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন । সুবহানাল্লাহ !
বিছাল শরীফঃ হিজরী ৫১ সনে প্রায় ৯৫ বৎসর বয়স মুবারকে সারাফ নামক স্থানে তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন । এখানেই রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়েছিল । হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার জানাযার নামায পড়ান।
ফযীলত ও মর্যাদাঃ উম্মুল মু’মিনীন হয়রত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার উচ্চশিত প্রশংসা করতেন । তিনি বলেন : হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম অত্যন্ত খোদাভীরু এবং আত্মীয় স্বজনের হক স¤পর্কে অত্যন্ত সজাগ । উনার অভ্যাস ছিল দাস-দাসী ক্রয় করে মুক্ত করে দেয়া । এজন্য তিনি মাঝে মাঝে টাকা কর্জ করতেন। একবার তিনি খুব বড় অঙ্কের টাকা কর্জ করেন । উনাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে পরিশোধ করবেন, উত্তরে তিনি বললেন : কোন লোকের যদি সদিচ্ছা থাকে যে সে ধারকৃত টাকা পরিশোধ করবে, তবে আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইহা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন (তাবাকাত). সুবহানাল্লাহ ! তিনি নারী জাতীর আদর্শ ছিলেন। ধার্মিকতা ও চরিত্র সংশোধনের জন্য তিনি নারী সমাজকে উপদেশ দিতেন । [সূত্র : উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, অন্যান্য সীরত গ্রন্থাবলী]
পর্যালোচনাঃ পৃথক পৃথকভাবে উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগন উনাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক আলোচনা দ্বারা ইহা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, উনারা সকলই বিশেষ বিশেষ গুণাবলীতে গুণান্বিতা ছিলেন। তদুপরি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে উনাদের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে । এ বিষয়ে সমস্ত উম্মতে হাবীবীর ইজমা‘ হয়েছে যে, যে মাটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-জিসিম মুবারক স্পর্শ করে আছে (অর্থাৎ উনার রওজা শরীফের মাটি) তা আরশে মু‘য়াল্লা থেকে অধিকতর মর্যাদার অধিকারী । সুবহানাল্লাহ !