প্রশ্নঃ রাসুল (ﷺ) কি আমাদের মত মানুষ?
উত্তরদাতাঃ মাসুম বিল্লাহ সানি



  • হাদিসগুলো সংক্ষেপে দেখে নেই



হাদিস ১

হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
عن عبدالله بن عمرو رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لست كاحد منكم
প্রিয়নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদের কারো মত নই।” 
● বুখারী শরীফ- কিতাবুস সিয়াম- ১ম খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা – হাদীস ১৮৪০
● মুসলিম শরীফ ১৫৮৭
● আবু দাউদ শরীফ/১৩৭

হাদিস ২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست مثلكم
হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনুরূপ নই।”
● বুখারী শরীফ, কিতাবুস সিয়াম, ১ খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা।
● ফতহুল বারী ৪/১৬৪

হাদিস ৩

হযরত আবূ সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
عن ابي سعيد رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست كهيتكم
রাসুলে কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি আকৃতিগতভাবে তোমাদের মত নই।” 
(বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৫)

হাদিস ৪

হযরত আবূ হুরায়রা(رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ليكم مثلي
হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে আমার অনুরূপ কে রয়েছে?” 
(বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৭)

হাদিস ৫

উম্মুল মু'মেনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,... তাঁরা (সাহাবীগণ) আরজ করলেন, "কিন্তু আপনি বিরতিহীন সওম পালন করছেন? তিনি (ﷺ) বললেনঃ তোমাদের আমার মতো না। (আমি যখন রাত্রি যাপন করি) আমার প্রতিপালক আমাকে খাওয়ান এবং পান করান।"
[সহিহ বুখারীঃ, হাদিস ১৮৭]

হাদিস ৬

খলীফাতুল মুসলিমিন, হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, لم ارقبله و لا بعده مثله
অর্থ : আমি হুজুর পাক (ﷺ) এর পূর্বে এবং পরে তাঁর মত আর কাউকে দেখিনি!”
● তিরমীযিঃ ২য় খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা- হাদীস নম্বার ৩৬৩৭

অসংখ্য হাদিস থেকে মূল বিষয়বস্তু একত্রে দেয়া হলঃ

🕋 এক বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
...."তোমাদের কে আছো আমার মত?”
🕋 অপর বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
....”আমি তোমাদের কারো মত না!"
🕋 অপর বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
....”তোমাদের কেহ আমার অনুরূপ (সাদৃশ্য) না,
আমি যখন রাতে ঘুমাই তখন আল্লাহ্‌ তা'য়ালা আমাকে আহার করান এবং পান করান!“

তথ্যসূত্রঃ

সহিহ বুখারী, হাদিস ৩: ১৮২
সহিহ বুখারী, হাদিস ৩: ১৮৩
সহিহ বুখারী, হাদিস ৩: ১৮৪
সহিহ বুখারী, হাদিস ৩: ১৮৫
সহিহ বুখারী, হাদিস ৩: ১৮৭
সহিহ বুখারী, হাদিস ৩: ১৮৮

—————­————————­——————­—



  • হাদিসগুলো সম্পূর্ণ দেখে নেই



 🕋 আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, (কোন এক) মাসের শেষভাগে নাবী বিরতিহীন সওম রাখলেন এবং আরো কতিপয় লোকও বিরতিহীনভাবে সওম রাখল। এ সংবাদ নাবী (ﷺ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ যদি আমার এ মাস প্রলম্বিত হত, তবুও আমি এভাবে বিরতিহীন সওম পালন করতাম। যাতে অধিক কষ্টকারীরা তাদের কষ্ট করা ত্যাগ করে। আমি তো তোমাদের মত নই, আমার প্রতিপালক আমাকে আহার করান এবং পান করান। সুলায়মান ইবনু মুগীরাহ আনাস (رضي الله عنه)-এর সূত্রে নাবী (ﷺ) থেকে হুমায়দ-এর অনুসরণ করেছেন।

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)
(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ৯৪/ কামনা, হাদিস নম্বরঃ ৭২৪১)

 🕋 আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বিরতিহীন সওম পালন করতে নিষেধ করলেন। সহাবীগণ বললেন, আপনি বিরতিহীন সওম পালন করছেন? তিনি বললেনঃ তোমাদের কে আছ আমার মতো? আমি তো রাত কাটাই যাতে আমার প্রতিপালক আমাকে খাওয়ান ও পান করান। কিন্তু তারা যখন বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানাল, তখন তিনি তাদেরসহ একদিন, তারপর আর একদিন সওম পালন করলেন। তারপর তারা নতুন চাঁদ দেখতে পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ যদি চাঁদ আরো (কয়দিন) পরে উদিত হত, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের (সওম) বাড়াতাম। তিনি যেন তাদেরকে শাসন করছিলেন। 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)
১.সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ৯৪/ কামনা (كتاب التمنى), হাদিস নম্বরঃ ৭২৪২। 
২.সহীহ বুখারী (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ [1841]
অধ্যায়ঃ ২৩/ সাওম বা রোজা (كتاب الصوم)]
(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৮) 

🕋 আবূ হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা ইফতার না করে লাগাতার সওম রেখো না। তখন মুসলিমদের মধ্য হতে জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো: হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো ইফতার না করে লাগাতার সওম রাখেন। উত্তরে নাবী (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ? আমি রাত কাটাই তাতেই আমার রব আমাকে খাওয়ান ও পান করান। কিন্তু তাঁরা লাগাতার সওম রাখা থেকে বিরত হলো না। ফলে তাদের সঙ্গে নাবী (ﷺ)ও দু’দিন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছিলেন) দু’ রাত লাগাতার সওম রাখলেন। এরপর তারা নতুন চাঁদ দেখতে পেলেন। তখন নাবী (ﷺ) বললেন, যদি চাঁদ (আরও কয়েক দিন) দেরী করে উঠত, তাহলে আমিও (লাগাতার সওম রেখে) তোমাদের সওমের সময়কে বাড়িয়ে দিতাম, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য। (বিসাল অর্থ পানাহার না করেই বিরতিহীনভাবে সওম পালন করা)

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)
১.ইবনে হাজার আসকালানীঃ বুলুগুল মারাম / অধ্যায়ঃ পর্ব - ৫ঃ সিয়াম (كتاب الصيام), হাদিস নম্বরঃ ৬৬২, 
২.বুখারী ৬৭০১, 
৩.মুসলিম ১৬৪২,
৪.তিরমিযী ১৫২৭, 
৫.নাসায়ী ৩৮৫২, ৩৮৫৩, ৩৮৫৪, 
৬.আবূ দাউদ ২৩০১, 
৭.আহমাদ ১১৬২৭, ১১৭১৭, ১২৪৭৮

🕋 ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) খেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কউ যদি সাওমে বেসাল করতে চায় , তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন , ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো সাওমে বেসাল পালন করেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের মত নই। আমি এভাবে রাত যাপন করি যে, আমার জন্য একজন আহারদাতা রয়েছেন যিনি আমাকে আহার করান, একজন পানীয় দানকারী আছেন যিনি আমাকে পান করান।

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)
[সহীহ বুখারী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২৩/ সাওম বা রোজা (كتاب الصوم), হাদিস নম্বরঃ ১৮৪৩]



  • ইমামগণের বক্তব্যঃ



▶হযরত ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) বলেন–
والله ياسين مثلك لم يكن
في العالمين وحق من انباك
অর্থ – আল্লাহ পাকের কসম ! হে ইয়াসিন (ﷺ), সারা জাহানে আপনার কোন মেছাল নাই !”
● কাসীদায়ে নু’মান লি ইমাম আবু হানীফা -৩৭ নং পংক্তি।

▶যেমন কবি বলেছেন–
محمد بشر ليس كالبشر ياقوت حجر ليس كالحجر
অর্থ – হুজুর পাক (ﷺ) বাশার তবে তিনি অন্য বাশারের মত নন, যেমন ইয়াকুত পাথর, অন্য পাথরের মত নয়।”
Top