ইলম বা জ্ঞান দু’ প্রকার। যথা-
(১) ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান (ইন্দ্রিয় শক্তির বাইরে)
(২) ইলমে শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান।
******Analysis "Word From Al-Quran"******
(আল-কোরআন থেকে শাব্দিক বিশ্লেষণ)
“ইলম” ও “গায়েব” শব্দ দু’টি একটি অপরটির সাথে আরবি ব্যাকরণের আল-ইদ্বাফার নিয়ম অনুসারে,
** “মুদ্বাফ” ও “মুদ্বাফু ইলাইহ” হিসেবে, অর্থাৎ “ইলমুল গাইব” আকারে কুরআন মজীদের একটিমাত্র জায়গায় রয়েছে (সূরা নাজম: ৩৫)।
** কখনো কখনো (মোট তিনবার) কুরআন মজীদে “আনবাউল গাইব” কথাটিও এসেছে সূরা আলে ইমরান: ৪৪,
সূরা হুদ: ৪৯ ও
সূরা ইউসূফ: ১০২।
“আনবাউ” শব্দটি “নাবা” শব্দের বহুবচন - যার অর্থ হলো, খবর, বার্তা, সংবাদ ইত্যাদি। সুতরাং “আনবাউল গায়েব” মানে, অতীন্দ্রিয় সংবাদাদি।
আবার --
** কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহপাকের আযীমুশ্ শানে “আলিমুল গায়েব” কথাটি মোট ১৩ (তেরো) বার এবং
** “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি মোট চারবার
সূরা আল- মায়েদা: ১০৯ ও ১১৬,
সূরা তাওবা: ৭৮
সূরা সাবা: ৪৮
নং আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এবার আসুন, প্রাসঙ্গিক শব্দগুলো নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করি
** “আলিম” শব্দটির আক্ষরিক বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, জ্ঞানী বা জান্তা। এটি একটি ইসমু ফায়েল বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য - যা ধর্মীয় জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও অহরহ ব্যবহৃত হয়। আর “আল্লামু” শব্দটি আলিম শব্দের ইসমু মুবালাগাহ (Hyperbole) - যার আভিধানিক অর্থ হলো, মহাজ্ঞানী।
** “গায়েব” শব্দটি মুফরাদ বা ওয়াহিদ, অর্থাৎ একবচনবাচক একটি শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে, “গুয়ূব”। সুতরাং আলিমুল গায়েব-এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, গায়েবজান্তা; আর আল্লামুল গুয়ূব-এর আভিধানিক অর্থ হলো, সকল গায়েব সম্পর্কে মহাজ্ঞানী;
** অর্থাৎ “আলিমুল গায়েব” কথাটি সাধারণ অর্থ বোঝাচ্ছে; আর “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি ব্যাপক অর্থ বোঝাচ্ছে।
--------------------------
আল্লাহ পাক হলেন সত্বাগত ভাবে প্রকৃত ইলমে গায়েবের মালিক। এই সব আয়াতে সেগুলোই শুধু বলা হয়েছে:-
~~ANAM 50,59.
~~ARAAF 188,
~~AN NAMOL 65,
~~HUD 31,
~~YOUSOF 20,
~~JHIN 25,26)
`````````````````````````````` ``````````
আল্লাহ তার মনোনিত নবী-রাসুল দের গায়েব জানিয়েছেন তাই ওনারা গায়েব জানেন :-
~~AL IMRAN 179,44.
~~NISA 113.
~~HUD 49.
~~YOUSOF 102.
~~JHIN 27.
~~TAKVIR 24)
গায়েব সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর আকিদা যে মুলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তা হল :-
১) মহান আল্লাহ তাআলা সত্ত্বাগত ভাবেই জ্ঞানী । তিনি অবগত না করালে কেউ একটি অক্ষরও জানতে পারে না ।
২) আল্লাহ তাআলা হুযুর আলঅইহিস সালাম ও অন্যান্য আম্বিয়া কেরাম (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর আংশিক অদৃশ্য বিষয়াদি জ্ঞান দান করেছেন ।
৩) হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টিকূল থেকে বেশী ।
হাদিস ও বিখ্যাত মুহাদ্দিসিন,মুফাসসিরিন ও মুজাদ্দিনগনের কিতাবের আলোকে :-
♦'মিশকাত শরীফের প্রথম খণ্ডে কিতাবুত দাওয়াতের ذكر الله والتقرب শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী শরীফের সুত্রে হযরত আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ-
فَاذَا اَحْبَبْتُه‘ فَكُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يُبْصِرُبِهِ وَيَدَهُ الَّتِىْ يَبْطِش بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِىْ يَمْشِىْ بِهَا
(আল্লাহ তাআলা ফরমান, সেই প্রিয় বান্দাকে যখন আমি ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যদ্বারা তিনি শুনেন, চোখ হয়ে যাই, যদ্বারা তিনি দেখেন, হাত হয়ে যাই, যদ্বারা কোন কিছু ধরেন এবং পা হয়ে যাই যদ্বারা তিনি চলাফেরা করেন।)'
♦মক্কায় অবস্থান করা অবস্থায় হাজার মাইল
দূরের বাইতুল মাকদিসের পূর্ণ হালাত
দেখে দেখে কাফেরদের প্রশ্নের জবাব
দিয়েছিলেন। {বুখারী-১/৫৪৮}
♦হাবশা, মুতা আর বাইতুল
মাকদিসতো দূনিয়ার স্থান। আমাদের
নবীতো মদীনায় বসে থেকে জান্নাত ও
জাহান্নাম দেখেছেন। {বুখারী-১/
৭৭,১০৩,১২৬,১৪৪,১৬৪}
♦' অদৃশ্য বিষয় সমূহের মধ্যে সর্বাধিক অদৃশ্য হলো আল্লাহর সত্ত্বা। হযরত মুসা (আঃ) যখন আল্লাহকে স্ব-চক্ষে কামনা করেছিলেন, তখন বলা হয়েছিলঃ لَنْ تَرَانِىْ (তুমি আমাকে দেখতে পাবেনা) আর যখন মাহবুব আলাইহিস সালাম মিরাজের সময় স্বীয় পবিত্র চর্মচক্ষু মুবারক দ্বারা আল্লাহকে দেখলেন তখন সৃষ্টি জগৎ কি তাঁর দৃষ্টির আড়ালে গোপন থেকে যেতে পারে।
খোদাই যখন আপনার দৃষ্টি থেকে গোপন রইল না তখন কিইবা আছে যা অদৃশ্য থাকতে পারে? আপনার প্রতি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের) কোটি কোটি দুরুদ।
♦মিরকাত শরহে মিশকাতের الايمان بالقدر অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদের শেষে উল্লেখিত আছেঃ
كَمَا اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وْسَلَّمَ رَ اهُ فِى الدُّنْيَالِاِنْقِلَابِه نُوْرًا
(হুযুর আলাইহিস সালাম ইহ জগতেই আল্লাহকে দেখেছিলেন, কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজেই নুরে পরিণত হয়েছিলেন।)'
♦মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ মিরকাতে শাইখ আবু আবদুল্লাহ; সিরাজী কর্তৃক সংকলিত কিতাবে আকায়িদ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ-
اَلْعَبْدُ يَنْقُلُ فِى الْاَحْوَالِ حَتَّى يُصِيْرَ اِلَى نَعْتِ الرُّوْحَانِيَّةِ
(বান্দার আধ্যাত্মির পরিবর্তন হতে থাকে শেষ পর্যন্ত যখন রুহানীয়তের গুণ প্রাপ্ত হয় তখনিই গায়ব সম্পর্কে অবগত হয়।)
♦''মেরকাতের আর এক জায়গায় উক্ত কিতাবে আকায়িদ গ্রন্থের বরাত দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছেঃ-
يَطَّلِعُ الْعَبْدُ عَلَى حَقَائِقِ الْاَشْيَاءِ وَيَتَجَلَّى لَهُ الْغَيْبُ وَغَيْبُ الْغَيْبِ
কামিল বান্দা যাবতীয় বস্তুর নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্য সম্পর্কে অবিহিত হন এবং তার কাছে অদৃশ্যের বিষয়ও প্রকাশিত হয়ে যায়।
♦''হুযুর গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ-
نَظَرْتُ اِلَى بِلَادِ اللهِ جَمْعًا-كَخَرْدَلَةٍ عَلَى حُكْمِ اتِّصَالِىْ
(আমি আল্লাহ তাআলার সমস্ত শহরগুলোকে এভাবে দেখেছি যেমন কয়েকটি তৈলবীজ পরস্পর সন্নিবেশিত হয়ে আছে।)
♦শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত যুবদাতুল আসরার গ্রন্থে হযরত গাউছে পাকের (রহমতুল্লাহে আলাইহে) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য উক্তির বর্ণনা দিয়েছেনঃ-
(গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ হে সাহসীভক্তগণ হে আমার সন্তানগণ এসো আমার এ অকুল সমুদ্র থেকে কিছু আহরণ কর। খোদার কসম নেককার ও বদকার লোকদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হয় আর আমরা চোখের কোনা লওহে মাহফুজের দিকে নিবদ্ধ থাকে। আমি আল্লাহ তাআলার অপার জ্ঞান সমুদ্রে ডুব দিয়ে থাকি।)''
♦আল্লামা জামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত نفحات الانس কিতাবে হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (কুঃসিঃ) এর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। উক্তিটি হলোঃ-
(হযরত আযীযান (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন যে একদল আওলিয়া কিরামের সামনে পৃথিবীটা দস্তরখানার মত আর আমি মনে করি আঙ্গুলের নখের মত। কোন বস্তুই তাদের দৃষ্টি বহির্ভূত নয়।)
♦বুখারী শরীফের بَدْءِ الْخَلْقِ শীর্ষক আলোচনায় ও মিশকাত শরীফের দ্বিতীয় খণ্ডের بَدْءِ الْخَلْقِ وَذِكْرُ الْاَنْبِيَاءِ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উমর (রাদিয়াআল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিতঃ
قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ لْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِ لَهُمْ وَ اَهْلُ النَّارِ مَنَازِ لَهُمْ حَفِظَ ذلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
অর্থাৎঃ হুযুর আলাইহিস সালাম এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন সেখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে আদি সৃষ্টির সংবাদ দিচ্ছিলেন এমন কি বেহেশতবাসী ও দোযখবাসীগণ নিজ নিজ মনযিলে বা ঠিকানায় পোঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব স্মরন রাখতে পেরেছেন তিনি তো স্মরন রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।
♦এখানে হুযুর আলাইহিস সালাম দু’ধরনের ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেনঃ
১) বিশ্ব সৃষ্টির সূচনা কিভাবে হলো এবং
২) এর সমাপ্তি কিভাবে হবে।
অর্থাৎ রোযে আযল (সৃষ্টির ঊষালগ্ন) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক অণু-পরমাণুর পুঙ্খাণুপুঙ্খরূপে বর্ননা দিয়েছেন।
♦মিশকাত শরীফের اَلْمُعْجِزَاتِ অধ্যায়ে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে আযর ইবনে আখতাব থেকে একই কথা বর্নিত, তবে এতে এতটুকু অতিরিক্ত আছেঃ
فَاَخْبَرْنَا بِمَاهُوْ كَائِنٌ اِلى يَوْمِ الْقِيَمَةِ فَاعْلَمْنَا اَخْفَظُنَا
(আমাদেরকে সেই সমস্ত ঘটনাবলীর খবর দিয়েছেন যে গুলো কিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে থাকবে। আমাদের মধ্যে সব চেয়ে আলিম হলেন তিনি, যিনি এ সব বিষয়াদি সর্বাধিক স্মরন রাখতে পেরেছেন।)
♦ মিশকাত শরীফের اَلْفِتنٌ শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফের বরাত দিয়ে হযরত হুযাইফা (রাদিয়াআল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিত হয়েছেঃ
مَاتَرَكَ شَيْأً يَكُوْنُ فِىْ مَقَامِه اِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ اِلَّا حَدَّثَ بِه حَفِظَهُ مَنْ حَفِطَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيْهُ
অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সে জায়গায় কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, সব কিছুর খবর দিয়েছেন, কোন কিছুই বাদ দেননি। যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা সব স্মরন রেখেছেন, আর অনেকে ভুলেও গেছেন।
♦মিশকাত শরীফের ‘ফযায়েলে সায়্যিদুল মুরসালীন’ শীর্ষক অধ্যায়ে ‘মুসলিম শরীফের’ বরাত দিয়ে হযরত ছওবান (রাদিয়াআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণনা করা হয়েছেঃ-
اِنَّ اللهَ زَوى لِىَ الْاَرْضَ فَرَءَيْتُ مَشَارِقَ الْاَرْضِ وَمَغَارِبَهَا
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে গোটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করেছেন, যে আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত ও পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করেছি।
♦মিশকাত শরীফের ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়ে হযরত আবদুর রহমান ইবন আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ-
আমি আল্লাহ তা’আলাকে সুন্দরতম আকৃতিতে দেখেছি। তিনি স্বীয় কুদরতের হাতখানা আমার বুকের উপর রাখলেন, যার শীতলতা আমি স্বীয় অন্তঃস্থলে অনুভব করেছি। ফলে, আসমান যমীনের সমস্ত বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়েছি।
♦শহরে মাওয়াহেবে লদুনিয়ায়’ (হযরত আল্লামা যুরকানী (রহতুল্লাহে আলাইহে) প্রণীত) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত আছেঃ-
اِنَّ اللهَ رَفَعَ لِىْ الدُّنْيَا فَاَنَا اَنْظُرُ اِلَيْهَا وَاِلى مَهُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلى يَوْمِ الْقِيَمَةِ كَاَنَّمَا اَنْظُرُ اِلَى كَفِّىْ هذَا
অর্থাৎঃ আল্লাহ তা’আলা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি এ দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা’কিছু হবে এমন ভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।
♦মিশকাত শরীফের মাসাজিদ অধ্যয়ে তিরমিযী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত আছেঃ
فَتَجَلَّى لِىْ كُلُّ شَيْئٍ وَعَرَفْتُ
তখন প্রত্যেক কিছু আমার কাছে উন্মুক্ত হয়েছে এবং আমি এগুলো চিনতে পেরেছি।
♦ মসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলে হযরত আবুযর গিফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ-
لَقدْ تَرَكْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ وَما يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ اِلَّا ذَكَرَلَنَا مِنْهُ عِلْمًا
(হুযুর আলাইহিস সালাম আমাদেরকে এমনভাবে অবহিত করেছেন যে, একটা পাখীর পালক নড়ার কথা পর্যন্ত তার বর্ণনা থেকে বাদ পড়েনি।
♦ মিশকাত শরীফের ‘ফিতনা’ নামক অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে হযরত হুযাইফা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ- (হুযুর আলাইহিস সালাম পৃথিবীর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য কোন ফিতনা পরিচালনাকারীর কথা বাদ দেননি যাদের সংখ্যা তিনশত কিংবা ততোধিক হবে এমন কি তাদের নাম তাদের বাপের নাম ও গোত্রের নামসহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন।)'
♦বুখারী শরীফের-
كِتَابُ الْاِعْتِصَامِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ এ ও খাযেনে لَا تَسْئَلُوْا عَنِ الْاَشْيَاءِ اِنْ تُبْدَ لَكُمْ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে- (একদিন হুযুর আলাহিস সালাম মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। অতপর কিয়ামতের উল্লেখপূর্বক এর আগে যে সমস্ত ভয়ানক ঘটনাবলী ঘটবে, সে সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। এরপর তিনি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘যার যা খুশি জিজ্ঞাসা করতে পার।’ খোদার শপথ, এ জায়গা অর্থাৎ এ মিম্বরে আমি যতক্ষণ দন্ডয়মান আছি, ততক্ষণ তোমরা যা জিজ্ঞাসা কর না কেন, আমি অবশ্যই উত্তর দেব।’ জনৈক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আরয করলেন, ‘পরকালে আমার ঠিকানা কোথায়?’ ইরশাদ ফরমালেন জাহান্নামের মধ্যে।
আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা’ দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ‘আমার বাপ কে’? ইরশাদ করেন, হুযাফা।’ এর পর তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বার বার ইরশাদ ফরমান, জিজ্ঞাসা করো, জিজ্ঞাসা করো।
♦ মিশকাত শরীফের ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়ে হযরত আবুযর গিফারী (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে।
عُر ضَتْ عَلَىَّ اَعْمَالُ اُمَّتِىْ حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا فَوَجَدْت فِىْ مَحَاسِنِ اَعْمَالِها الْاَذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيْقِ
(আমার সামনে আমার উম্মতের ভালমন্দ সমূহ পেশ করা হয়েছে। আমি তাদের নেক আমল সমূহের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সমূহ অপসারনের মত পূণ্য কাজও লক্ষ্য করেছি।
♦মিশকাত শরীফের ‘মুজিযাত’ অধ্যায়ে হযরত আবু হোরায়রা (রাদিয়াআল্লাহ আনহু) থেকে বর্ণিত আছে-
فَقَالَ رَجُلُ تَاللهِ اِنْ رَئَيْتُ كَالْيَوْمِ ذِئْبٌ يَتَكَلَّمُ فَقَالَ الذِّئْبُ اَعْجَبُ مِنْ هذَا رَجُلٌ فِى النَّخْلَاتِ بَيْنَالْحَرَّتَيْنِ يُخْبِرُ كُمْ بِمَا مَضى وَمَاهُوَ كَائْنٌ بَعْدَكُمْ
জনৈক শিকারী আশ্চর্য হয়ে বললো নেকড়ে বাঘকে আজ যেরুপ কথা বলতে দেখলাম সেরুপ ইতিপূর্বে আর কখনো দেখিনি। তখন নেকড়ে বাঘ বলে উঠলো এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো-ঐ দুই উন্মুক্ত প্রান্তরের মধ্যবর্তী মরুদ্যানে (মদিনায়) একজন সম্মানিত ব্যাক্তি (হুজুর আলাইহিস সালাম) আছেন, যিনি তোমাদের নিকট বিগত ও অনাগত ভবিষ্যতের বিষয় সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশন করেন।..
♦আবূল ইয়ামান (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। সা’দ (রাঃ) সেখানে বসা ছিলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এক ব্যাক্তিকে কিছু দিলেন না। সে ব্যাক্তি আমার কাছে তাদের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় ছিল। তাই আমি বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ্! অমুক ব্যাক্তিকে আপনি বাদ দিলেন কেন? আল্লাহ্র কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ (মু’মিন) না মুসলিম? তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি, তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম, আপনি অমুককে দানের ব্যপারে বিরত রইলেন? আল্লাহ্র কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ ‘না মুসলিম?’ তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর তার সম্পর্কে যা জানি তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও সেই জবাব দিলেন। তারপর বললেনঃ ‘সা’দ! আমি কখনো ব্যাক্তি বিশেষকে দান করি, অথচ অন্য লোক আমার কাছে তার চাইতে বেশি প্রিয়। তা এ আশঙ্কায় যে (সে ঈমান থেকে ফিরে যেতে পারে পরিণামে), আল্লাহ্ তা’আলা তাকে অধোমুখে জাহান্নামে ফেলে দেবেন।
★এ হাদীস ইউনুস, সালিহ, মা’মার এবং যুহরী (রহঃ)-এর ভাতিজা যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইলমে গায়েব কুরআন এর আয়াত দ্বারা প্রমান :-
আয়াত নং 1:-
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
(@) وَعَلَّمَ ادَمَالْاَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ
(এবং আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন । অতঃপর সে সমস্ত বস্তু ফিরিশতাদের কাছে উপস্থাপন করলেন ।)
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ
وَمَعْنَى تَعْلِيْمِه اَسْمَاءِ الْمُسَمِّيَاتِ انَّهُ تَعَالَى اَرَاهُ الاَجْنَاسَ الَّتِىْ خَلَقَهَا وَعَلَّمَهُ اَنَّ هذَا اِسْمُه‘ فَرَسٌ وَهذَا اِسْمُه‘ بَعِيْرٌ وَهذَا اِسْمُهَ كَذَا وَعَنْ اِبْنِ عَبَّسٍ عَلَّمَهُ اِسْمَ كُلِّ شَئْىٍ حَتّ الْقَصْعَةَ وَالْمَغْرَ فَةَ
(হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়ার অর্থ হচ্ছে-আল্লাহ তাআলা তাঁকে তাঁর সৃষ্ট সব কিছু দেখিয়েছেন এবং বলে দিয়েছিন যে এটার নাম ঘোড়া ঐটার নাম উট এবং ওটার নাম অমুক । হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে তাঁকে প্রত্যেক কিছুর নাম, শিখিয়ে দিয়েছেন এমন কি পেয়ালা ও কাঠের চামচের নাম পর্যন্ত ।
(a) তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একই কথা বলা হয়েছে তবে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে যে-
وَقِيْلَ عَلَّمَ ادَمَ اَسْمَاءَ الْمَلَئِكَةِ وَقِيْلَ اَسْمَاءَ ذُرِّيَّتِه وَقِيْلَ عَلَمَّهُ اللَّغَاتَ كُلَّهُا
(কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত ফিরিশতাদের নাম কারো মতে তার সন্তান সন্ততিদের নাম আবার কারো মতে সমস্ত ভাষা শিখানো হয়েছিল)
(b) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে কবীরে লিখা হয়েছেঃ-
قَوْلُه اَىْ عَلَّمَهُ صفَاتَ الْاَشْيَاءِ وَنَعُوْ تَهَا وَهُوَ الْمَشْهُوْرُ اَنَّ الْمُرَالدَ اَسْمَاءُ كُلِّشَئْىِ مِنْ خَلْفٍ مِنْ اَجْنَاسِ الْمُحَدَثَاتِ مِنْ جَمِيْعِ اللُّغَاتِ الْمُخْتَلِفَةِ الَّتِىْ يَتَكَلَّمُ بِهَا وَلَدُ ادَمَ الْيَوْمَ مِنَ الْعَرَبِيَّةِ وَالْفَارِسِيَّةِ وَالرُّوْ مِيَّةِ وَغَيْرِهَا
(আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও অবস্থাদি শিক্ষা দিয়েছেন । এ কথাই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে যে সৃষ্টবস্তু দ্বারা বোঝানো হয়েছে অচিরন্তন প্রত্যেক বস্তুর নাম সমূহ যেগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রচলিত হবে ও যে নামগুলো আজ পর্যন্ত আদম সন্তান সন্ততিগণ আরবী ফার্সী রুমী ইত্যাদি ভাষায় ব্যবহার করে আসছে ।
(c) কাযী আয়ায (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর শেফা শরীফ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসিমুর রিয়ায এ উল্লেখিত আছেঃ-
اِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَرْضَتْ عَلَيْهِ الْخلَائِقُ مِنْ لَّدْنِ اَدَمَ اِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ فَعَرَفَهُمْ كُلُّهُمْ كَمَا عَلَّمَ اَدَمَ الْاَلسْمَاءَ كُلَّهَا
অর্থাৎ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে আরম্ভ করে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশজাত আওলাদকে হুযুর আলাইহিস সালামের সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের সবাইকে চিনেছিলেন যেমনিভাবে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সবকিছুর নাম শিখানো হয়েছিল।
আয়াত নং 2 :-
وَيَكُوْنَ لرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
(এ রসুল তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সাক্ষী হবেন ।)
(a) তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতেন ব্যাখায় লিখা হয়েছে :-
ثُمَّ يُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَيُسْئَلُهُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِصِدْقِهِمْ
(অতঃপর কিয়ামতের দিন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে। এর পর আল্লাহ তাআলা তাকে তার উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন তিনি তাদের পবিত্রতা ও সত্যতার সাক্ষ্য দিবেন )
(b) তাফসীরে মাদারেকে ২য় পারার সূরায়ে বাকারার এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হইয়াছেঃ-
فَيُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ فَيُسْئَلُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِعَدَ الَتِهِمْ وَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَعْلَمُبِعَدَا لَتِكُمْ
অর্থাৎ অতঃপর হুযুর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) আহবান করা হবে তার উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তিনি স্বীয় উম্মতের সাফাই বর্ণনা করবেন এবং তাদের ন্যায় পরায়ণ ও যথার্থ হওয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালাম আপনাদের যথার্থতা সম্পর্কে অবগত আছেন!
আয়াত নং 3 :- وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيْدًا
অর্থাৎ যে মাহাবুব (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি আপনাকে এদের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে আনব
(a) তাফসীরে নিশাপুরীতে” এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছে ।
لِاَنَّ رُوْحَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ شَاهِدٌ عَلَى جَمِيْعِ الْاَرْوَاحِ وَالْقُلُوْبِ وِالنَّفُوْسِ بِقَوْلِه عَلَيْهِ السَّلَامُ اَوَّلُ مَاخَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ
অর্থাৎ এটা এ কারনে যে হুজুর আলাইহিস সালামের রুহ মোবারক সমস্ত রুহ দিল ও সত্তা সমুহকে দেখতে পান । কেননা তিনিই বলেছেন- আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করেছেন’ তা হলো আমার নূর ।
(b) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছেঃ-
وَاعْلَمْ اَنَّهُ يُعْرَضُ عَلَى النَّبِىْ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْمَالُ اُمَّتِهِ غَدَوْةً وَعَشِيَّةً فَيَعْرِ فُهمْ بِسِيْمَاهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَلِذَالِكَ يَشْهَدُ عَلَيْهِمْ
হুজুর আলাইহিস সালামের কাছে তার উম্মতের আমলসমূহ সকাল বিকাল পেশ করা হয়। তাই তিনি উম্মকতকে তাদের চিহ্ন দৃষ্টে চিনেন ও তাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অবগত হন। এজন্য তিনি রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যপারে সাক্ষ্য দিবেন ।
(c) তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছেঃ
اَىْ شَاهِدً عَلَى مَنْ اَمَنَ بِالْاِيْمَانِ وَعَلَى مَنْ كُفُرَ بِالْكُفْرِ وَعَلَى مَنْ نَافَقَ بِالنِّفَاقِ
অর্থাৎঃ হুজুর আলাইহিস সালাম মুমিনদের জন্য তাদের ঈমানের’ কাফেরদের জন্য তাদের কুফরীর জন্য ও মুনাফিকদের জন্য মুনাফেকীর সাক্ষী।
''এ আয়াত ও তাফসীর সসূহ দ্বারা বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আদিকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকের কুফর, ঈমান, কপটতা, আমল ইত্যাদি সব কিছুই জানেন। এ জন্যইতো তিনি সকলের জন্য সাক্ষী। একেইতো বলে ‘ঈলমে গায়ব’ বা অদৃশ্য জ্ঞান।'
আয়াত নং 4:-
وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَئْىٍ مِّنْ عِلْمِه اِلَّا بِمَاشَاءَ
অর্থাৎ তারা তাঁর জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছুই পায় না, তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছে করে।
আয়াত নং 5:-
مَاكَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللهُ
অর্থাৎ হে সাধারন লোকগন এটা আল্লাহর শান নয় তোমাদেরকে ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ রসুলগনের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করে তাকে এ অদৃশ্য জ্ঞান দানের জন্য মনোনিত করেন ।
(a) তাফসীরে খাযেনে আছে:-
لَكِنَّ اللهَ يَصْطَفِىْ وَبَخْتَارُ مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يُّشَاءُ فَيُطْلِعُه‘ عَلَى بَعْضِ عِلْمِ الْغَيْبِ
অর্থাৎঃ কিন্ত আল্লাহ রসূলগণের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে করেন, মনোনীত করেন, আংশিক ইলমে সম্পর্কে তাঁদেরকে অবহিত করেন।
(b) জুমুলে উল্লেখিত আছে:-
اَلْمَعْنَى لَكِنَّ اللهَ يَجْتَبِىْ اَنْ يَصْطَفِىَ مِنْ رُسُلِه مَنْيَّشَاءُ فَيُطْلِعُه‘ عَلَى الْغَيْبِ
অর্থাৎঃ আয়াতের অর্থ হলো- আল্লাহ তাআলা রসুলগনের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন তাকে মনোনীত করেন। অতপর তাকে গায়ব সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন।''
আয়াত নং 6:-
(হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ সম্বলিত ।)
আয়াত নং 7:-
(এবং লওহে মাহফুজে যা কিছু লিখা আছে কুরআনে তার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে । এতে কোন সন্দেহ নেই ।'''
আয়াত নং 8::-
আমি এ কিতাবে (কুরআনে) কিছু বাদ দিইনি কুরআন করীমে সমস্ত অবস্থার বিবরণ রয়েছে ।
আয়াত নং 9 :-
(এবং শুষ্ক ও আর্দ্র এমন কিছুই নেই, যা উজ্জ্বল কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়নি ।)
আয়াত নং 10 :-
এবং হে মাহবুব আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে আমরাতো কৌতুক ও খেলা-তামাশা করছিলাম)
ব্যাখ্যা :-
তাফসীরে দুররে মনসুর ও তাবরীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছেঃ
হযরত ইবনে আব্বস রাদিআল্লাহ আনহু থেকে এ আয়াত وَلَئِنْ سَالتَهُمْ الخ অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে যে, জনৈক মুনাফিক বলেছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ দিচ্ছেন অমুক ব্যক্তির উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে আটকা পড়েছে। অদৃশ্য বিষয় তাঁর কীই বা জানা আছে?)
''''''''''''''''''''''এ আয়াত ও তাফসরি থেকে একথাই জানা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালামের অদৃশ্য জ্ঞানকে অস্বীকার করা মুনাফিকদেরই কাজ। সেটাকে কুরআন কুফর বলে আখ্যায়িত করেছে।''''
আয়াত নং 11:-
وَمَاهُوَعَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ
(এ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।)
আয়াত নং 12:-
وَعَلَّمْنهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا
আমি (আল্লাহ) তাঁকে (হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে) আমার ইলমে লদুনী দান করেছি)।
(a) তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছেঃ-
يَعْنِى الْاِخْبَارُ بِالْغَيُوْبِ وَقِيَلَ الْعِلْمُ اللَّدُنِىْ مَاحَصَلَ لِلْعَبْدِ بِطَرِيْقِ الْاِلْهَامِ
অর্থাৎ হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। কেউ বলেছেন ইলমে লদুনী হলো এমন এক বিশেষ জ্ঞান যা বান্দা ইলহামের মাধ্যমে অর্জন করেন।)
(b) 'তাফসীরে খযেনে আছেঃ-
اَىْ عِلْمَ الْبَاطِنِ اِلْهَامًا
অর্থাৎঃ হযরত খিযির আলাইহিস সালামকে আমি ইলহামের মাধ্যমে বাতেনী ইলম দান করেছি।
আয়াত নং 13:-
فَلَا يُظْهِرُ عَلى غَيْبِه اَحَدًا اِلَّمَنِ ارْتَضى مِنْرَّسُوْلٍ
অর্থাৎ (আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রসুলগন ছাড়া কউকেও তাঁর অদৃশ বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন না।'''
আয়াত নং 14:-
ইব্রাহিম (আ) সম্পর্কে বলেছেন :-
وَكَذَلِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْت السَّموتِ وَالْاَرْضِ
(আমি এ রূপেই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে ভূ মণ্ডল ও নভোমন্ডলে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহী অবলোকন করাই।'')'
আয়াত নং 15 :-
''হযরত ইউসুফ (আঃ) বলেছিলেন-
لَا يَا تِيْكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِه اِلَّا نَبَّئْتُكُمَا بِتَاوِيْلِه
অর্থাৎ তোমাদের কাছে খাবার আসার আগে এর বিবরণ বলে দিতে পারবো।
(a) তাফসীরে রূহুল বয়ান ‘কবীর’ ও ‘খাযেনে’এর তাফসীরে উল্লেখিত আছে আমি তোমাদেরকে বিগত ও আনাগত দনেরর খাওয়া-দাওয়ার যাবতীয় অবস্থা বলে দিতে পারি। বলতে পারি খাদ্যশস্য কোথা হতে আসলো এবং এখন কোথায় যাবে। তাফসীরে কাবীরে আরও উল্লেখ করেছে আমি বলতে পারি, এ খাবার গ্রহণের ফলে উপকার হবে, না ক্ষতি হবে। এ সমস্ত বিষয়ে সম্পর্কে তিনিই বলতে পারেন, যিনি প্রতিটি অনু-পরমানুর খবর রাখেন।
(b) 'তিনি (হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম) আরও বলেন ذلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِىْ رَبِّىْ এটা আমার জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্র। তাহলে এখন বলুন হুযুর আলাইহসি সালামের জ্ঞনের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত। হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞান হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমূ্দ্রের এক বিন্দু মাত্র।
আয়াত নং 16:-
হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন:-
وَاُنَبِّئُكُ بِمَا تَأكُلُوْنَ وَمَاتَدَّخِرُوْنَ فِىْ بُيُوْتِكُمْ
তোমরা নিজ নিজ ঘরে যা কিছু খাও এবং যা কিছু সঞ্চিত রাখ, আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি।)'''''''