....হযরত মন্সুর হাল্লাজ (রঃ) ...
একরাতে নজরে আসলো পুরো জেলখানায়
৩০০ বন্দি আটক আছে । তাদের
উদ্দেশ্যে হাল্লাজ বলল , "বন্দিরা !!
তোমাদেরকে কি আমি মুক্ত করে দিব?"
বন্দিরা ঃ নিজেকে কেন মুক্ত
করছনা ?
হাল্লাজ ঃ আমি আল্লাহর
গোলামি করছি। আমি সত্য উদ্ধারের
প্রহরি। আমি যদি চাই একটি ইশারায়
তোমাদের বাঁধন খুলে দিতে পারি।
অতঃপর তিনি শাহাদাৎ
আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা দিলেন
এবং সঙ্গে সঙ্গে বন্দিদের হাতের
বাধন দু টুকরো হয়ে গেল।
বন্দিরা ঃ আমরা এখন কথায় যাবো?
গেট তো তালাবদ্ধ।
হাল্লাজের ইশারার
সাথে সাথে দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হল
এবং বন্দিরা বের হয়ে গেল ।
যাওয়ার আগে তারা বলল "হুজুর !!
আপনি কি আমাদের সাথে যাবেন
না ?"
হাল্লাজ ঃ না । আমি আল্লাহর
রহস্যে আবদ্ধ।
পরদিন সকালে।
কারারক্ষীরা ঃ বন্দিরা কোথায়
গিয়েছে ?
হাল্লাজ ঃ আমি তাদের মুক্ত
করে দিয়েছি।
কারারক্ষীরা ঃ তুমি কেন যাওনি?
হাল্লাজ ঃ খোদা আমাকে তিরস্কার
দিবে তাই যাইনি।
এই খবর তৎক্ষণাৎ খলিফার
কানে পৌছালো। এবং খলিফা তার
বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার হুকুম
দিলেন।
তারা হাল্লাজকে তিনশো বার
লাঠি পেটা করেছিল।
এবং প্রতিটা আঘাতে হাল্লাজের
হৃদয় থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল
"বাবা মন্সুর ! ভয় পেওনা"
পরে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়।
তেরটি ভারি লোহার শিকল বহন
করে মন্সুর হাল্লাজ খুব অহংকারের
সাথে মঞ্চে হেঁটে যায় । " বাব আল
তাক" নামক মৃত্যুদণ্ডের
মঞ্চে আসলো এবং কাঠের তক্তায়
চুমু খেলেন ও তার অপর পা রাখলেন।
তারা উপহাস করে বলল "কি মন্সুর ,
কেমন লাগছে ?"
হাল্লাজ ঃ যিনি সত্য (হক)
তিনি নিজে যে এই মঞ্চে উঠবেন......
তাকে প্রশ্ন করা হল "হে মন্সুর !
সুফিসম কি ?"
হাল্লাজ ঃ যার কিছুটা(ছোট) অংশ
তোমরা দেখছ।
তারা প্রশ্ন করল "তাহলে বৃহৎ
অংশটা কি ?"


হাল্লাজ ঃ যেটা পর্যন্ত
তোমরা পৌছাতে পারবেনা।
অতপর তার পবিত্র হাত
দুটো কেটে ফেলা হয়। হাল্লাজ
হাঁসতে লাগলো এবং বলল , "একজন
বন্দির হাত কেটে ফেলা খুবই সহজ
বেপার । আনাল হক"
খেপে গিয়ে জালেমরা তার কদম
মোবারক ক্ষতবিক্ষত করলো।
হাল্লাজ আবার হাসল এবং বলল , "এই
পা জোড়া দিয়ে আমি জগত ভ্রমন
করেছি। আমার আরেক
জোড়া পা আছে যা দিয়ে আমি এখনও
দোজাহান ভ্রমন করছি। যদি পার
তাহলে সে পায়ে আঘাত কর দেখি"
তৎক্ষণাৎ তিনি তার কাটা হাত
দিয়ে তার সারা মুখমণ্ডলে রক্ত
মাখিয়ে নিলেন।
জালেমরা জিজ্ঞেস করলো "এ
কাজটি তুমি কেন করলে ?"
হাল্লাজ ঃ প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
আমি বুঝতে পারছি আমার মুখ
ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
তোমরা ভাবতে পারো যে আমার মুখ
ভয়ে ফ্যাকাসে হয়েছে। আমার
মুখে রক্ত মেখে দিলাম যেন আমার
লাল চেহারা তোমাদের
চোখে ভেশে ওঠে।বীরের
প্রসাধনী হচ্ছে তার নিজের রক্ত।
অতঃপর তার চোখ
দুটি উপড়ে ফেলা হয়। কেউ কেউ তার
জন্য কেঁদেছিলেন। অনেকেই পাথর
মেরেছিলেন। তারা উদগ্রীব ছিলেন
জিহ্বা কাটার জন্য।
হাল্লাজ বলল, ঃ "একটু ধৈর্য ধর, একটু
সময় দাও কথা বলার ! হে খোদা (অঝর
নয়নে)!! আমাকে অত্যাচারের
কারনে তাদেরকে বর্জন
করোনা আমার দোহাই
এমনকি তোমার রহমত থেকে বঞ্ছিত
করোনা। সমস্ত প্রশংশা তোমার,
আমার পা বিক্ষত করেছে কারন
আমি তোমার পথে পদস্থাপন
করেছিলাম। এবং যদিও তারা আমার
শিরচ্ছেদ করে ক্ষমা করে দিও
ওগো দয়াময়।"


তারপর তারা হাল্লাজের কান
এবং নাক কেটে ফেলে।
জিহ্বা কেটে ফেলার
আগে হাল্লাজের শেষ কথা ছিল _
"স্রষ্টাকে ভালবাসা নিজের
থেকে আলাদা নয়"
"যারা বিশ্বাস করেনা তাহাতে ,
তারা দ্রুত খোঁজ করে। যারা বিশ্বাস
করে তারা ধৈর্যের সাথে খোঁজ
করে। জেনে রেখো এটাই সত্য।"
সঙ্গে সঙ্গে তার
জিহ্বা কেটে ফেলা হয় এবং সন্ধার
নামাজের সময় তার শিরচ্ছেদ করা হয়
(ইন্নালিল্লাহে ...)
তার গর্দান কাটার সময়ও হাল্লাজ
হাসি মুখে ছিলেন।
অতঃপর আল্লাহর খেলা শুরু হল।
চারিদিক থেকে আওয়াজ
ভেসে আসতে লাগলো, রক্তের
কণাগুলো "আনাল হক , আনাল হক"
জিকির করতে লাগলো যা ছিল
অনেক বেশি প্রকট। উজির
খলিফা সবাই ঘাবড়ে গেলেন
এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ
এবং রক্ত পুড়িয়ে দিলেন কিন্তু
তাতেও লাভ হয়নি। অবশেষে শেষ
উপায়
বলতে জালেমরা ছাইগুলো তিগ্রিস
নামক বাগদাদের সেই
নদীতে নিক্ষেপ করলেন
রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আল্লাহর
গজব কি মানুষের
পক্ষে সামলানো সহজ? এতেই
বোঝা যায় তারা কত বড় নাফরমান
কাফের ছিলেন। বাগদাদ শহর
প্লাবিত হতে লাগলো যেন কেয়ামত
হয়ে যাচ্ছিল । এবং প্রতিটি পানির
ফোটা যেন জিকির করছিল
"আনাল হক আনাল হক আনাল হক"
হযরত মন্সুর হাল্লাজ (র) বলেছিলেন
"আনাল হক" অর্থাৎ "আমি সত্য"।
সত্যি তিনি যে মহান তার প্রমান
দিয়ে গেছেন অসংখ্যবার

যা দুনিয়ার বুকে বিরল। হাল্লাজ
জীবিত থাকতেই একদিন তার এক
ভক্তকে বলেছিলেন এই দিনের আগাম
ভবিষ্যৎ । এবং এর থেকে পরিত্রাণ
এর উপায় ও বলে গিয়াছিলেন।
অতঃপর তার সেই মুরিদ
খলিফা কে জানালেন
এবং হাল্লাজের কথা মত হাল্লাজের
পরিধানের বস্ত্র নদিতে রাখলেন
এবং সেই বাগদাদ জাতি আল্লাহর
গজব থেকে পরিত্রাণ পেলেন। ২৮
মার্চ ৯১৩ খ্রিস্টাব্দে জগত শ্রেষ্ঠ
আল্লাহর বন্ধু হযরত মন্সুর আল
হাল্লাজ (রঃ) শহীদ হন।
(সংগৃহীত)



Top