“হে মানবগোষ্ঠী! আমি তোমাদেরকে একজন পরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক মুত্তাকী।” (সূরা হুজরাতঃ১৩)
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻟَّﺎ ﻳَﻨۡﻬَﻯٰﻜُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻦِ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢۡ ﻳُﻘَٰﺘِﻠُﻮﻛُﻢۡ ﻓِﻲ ﭐﻟﺪِّﻳﻦِ ﻭَﻟَﻢۡ ﻳُﺨۡﺮِﺟُﻮﻛُﻢ ﻣِّﻦ
ﺩِﻳَٰﺮِﻛُﻢۡ ﺃَﻥ ﺗَﺒَﺮُّﻭﻫُﻢۡ ﻭَﺗُﻘۡﺴِﻄُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻴۡﻬِﻢۡۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﭐﻟۡﻤُﻘۡﺴِﻄِﻴﻦَ ٨
﴾ [ ﺍﻟﻤﻤﺘﺤﻨﺔ : ٨ ]
‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। {সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮}
إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
অর্থাৎ”আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম”। (সূরা মুমতাহিনা, আয়াত-৯)
“যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উত্তম।” (সুরা নিসাঃ ৫৮)
অন্য আয়াতে ইয়াহুদীদের প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাঁর রাসুলকে নির্দেশ দিয়েছেন এই বলে যেঃ
“যদি ফয়সালা করেন তবে ন্যায়ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুবিচারকারীকে ভালবাসেন।” (মায়িদাঃ ৪২)
অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া মাত্র। বানী পৌঁছে দিয়ে শক্তি-প্রয়োগ চলে না।আমাদের এর বেশি কাজ নেই , শক্তি প্রয়োগ পরের কথা। তবে কেউ আক্রমণ করলে প্রতিহত করা ইসলামে দায়িত্ব। (সূরা নাহল, আয়াত-৮২)
তোমার পালনকর্তার পথের দিকে আহবান কর প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা ও ভাল উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে আলোচনা কর উত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল, আয়াত-১২৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম করেছে।” [সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে। অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে।” [সূরা তওবা, আয়াত: ৬]
“তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত:১৫]
আল্লাহ ইরশাদ করেন,
﴿ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺴُﺒُّﻮﺍْ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺪۡﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻴَﺴُﺒُّﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺪۡﻭَۢﺍ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﻋِﻠۡﻢٖۗ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ
ﺯَﻳَّﻨَّﺎ ﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﻋَﻤَﻠَﻬُﻢۡ ﺛُﻢَّ ﺇِﻟَﻰٰ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣَّﺮۡﺟِﻌُﻬُﻢۡ ﻓَﻴُﻨَﺒِّﺌُﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ
١٠٨ ﴾ [ ﺍﻻﻧﻌﺎﻡ : ١٠٨ ]
‘তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের
তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’।
{সূরা আল আন‘আম, আয়াত : ১০৮}
♦ইসলাম কেবল সেই সমস্ত কাফির মুশরিকের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করতে বলে যারা মুসলমান ও ইসলামের ক্ষতি করত্র চায় আর ইসলামের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে নিরিহ অমুসলিমকে মারতে বলে নি। যেমন
আয়াতের ভাষ্য হলো – ‘অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না, ওরা মুসলমানদের অমঙ্গল কামনা করে ।’ [৩/১১৮]
এ ধরণের একই কথা বলা হয়েছে এই আয়াতগুলিতেও – ৪/১৪৪; ৫/৫১,৫৭; ৬০/১ ।
তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে – ‘....নিশ্চয় কাফেরগণ তোমাদের শত্রু ।’ [৪/১০১]
– ‘যে আল্লাহর, ফিরিস্তাদের, রাসূলদের, জিব্রাইলের ও মিকাঈলের শত্রু হয়, [সে জানিয়া রাখুক] আল্লাহ কাফিরদের শত্রু ।’ [২/৯৮]
হাবীব ইবন অলীদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন,
« ﺍﻧْﻄَﻠِﻘُﻮﺍ ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺗُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻣَﻦْ ﻛَﻔَﺮَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ،
ﺃَﺑْﻌَﺜُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺗَﻐُﻠُّﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﺒُﻨُﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻤَﺜِّﻠﻮﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﻭَﻟِﻴﺪًﺍ، ﻭَﻟَﺎ
ﺗَﺤْﺮِﻗُﻮﺍ ﻛَﻨِﻴﺴَﺔً، ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌْﻘِﺮُﻭﺍ ﻧَﺨْﻠًﺎ »
‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি- (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোন গাছ উৎপাটন করবে না।’ [আবদুর রাযযাক ইবনে হুমাম, মুসান্নাফ : ৯৪৩০]
এদিকে মু'তার যুদ্ধে রওনার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন :
« ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻭَﻻَ ﺻَﻐِﻴﺮًﺍ ﺿَﺮَﻋًﺎ ﻭَﻻَ ﻛَﺒِﻴﺮًﺍ ﻓَﺎﻧِﻴًﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﻄَﻌُﻦَّ ﺷَﺠَﺮَﺓً ﻭَﻻَﺗَﻌْﻘِﺮُﻥَّ ﻧَﺨْﻼً ﻭَﻻَ ﺗَﻬْﺪِﻣُﻮﺍ ﺑَﻴْﺘًﺎ ».
'তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’ [মুসলিম : ১৭৩১]
আরেক হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻛَﺎﻥَ ﺇﺫَﺍ ﺑَﻌَﺚَ ﺟُﻴُﻮﺷَﻪُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟﺼَّﻮَﺍﻣِﻊِ ».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।’ [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়]
আবূ বকর রাদিআল্লাহু আনহুও একই পথে হাঁটেন। আপন খিলাফতকালে প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণ করতে গিয়ে তিনি এর সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিআল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন,
‘হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না,বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) অনুরূপ করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না।আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে।
[মুখতাসারু তারীখি দিমাশক : ১/৫২; তারীখুত তাবারী]
কোনো মুসলিম যদি কোনো অমুসলিমের প্রতি অন্যায় করেন, তবে রোজ কিয়ামতে খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিপক্ষে লড়বেন বলে হাদীসে এসেছে। একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺃَﻟَﺎ ﻣَﻦْ ﻇَﻠَﻢَ ﻣُﻌَﺎﻫِﺪًﺍ، ﺃَﻭِ ﺍﻧْﺘَﻘَﺼَﻪُ، ﺃَﻭْ ﻛَﻠَّﻔَﻪُ ﻓَﻮْﻕَ ﻃَﺎﻗَﺘِﻪِ، ﺃَﻭْ ﺃَﺧَﺬ
‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ [আবূ দাঊদ : ৩০৫২]
অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﻌَﺎﻫَﺪًﺍ ﻟَﻢْ ﻳَﺮِﺡْ ﺭَﺍﺋِﺤَﺔَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ ﺗُﻮﺟَﺪُ ﻣِﻦْ ﻣَﺴِﻴﺮَﺓِ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ
ﻋَﺎﻣًﺎ»
‘যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্তকোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে’।[বুখারী : ৩১৬৬]
আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবী বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﻌَﺎﻫِﺪًﺍ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﻛُﻨْﻬِﻪِ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ »
‘যে ব্যক্তি চুক্তিতে থাকা কোনো অমুসলিম হত্যা করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন’।
[আবূ দাঊদ : ২৭৬০; নাসাঈ : ৪৭৪৭, শাইখ
আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
বিভিন্ন সাদকা মুসলিমদের উপরই কেবল ধার্য হইবে। অমুসলিমদের উপর নামে মাত্র জিযিয়া ছাড়া অন্য কোন কিছু ধার্য করা যাবেনা।
যতদিন তাহারা (অমুসলিমগণ) ইসলামীরাষ্ট্রের সন্ধিকৃত এলাকায় বসবাস করিবে, তাহাদের উপর জিযিয়া ব্যতীত আর কিছুই ধার্য হইবে না। (মুয়াত্তা মালিক :: যাকাত অধ্যায়)
“আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ নুফায়লী (র.)...মু'আয (রা) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মু'আয (রা)-কে ইয়ামনে প্রেরণ করেন, তখন তাঁকে এরূপ নির্দেশ দেন যে, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট হতে এক দীনার অথবা এক দীনার মূল্যের মু'আফিরী নামক কাপড়, যা ইয়ামনে উৎপন্ন হয় (তা জিযিয়া হিসাবে গ্রহণ করবে)।” (সুনান আবু দাউদ: কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব অধ্যায়। হাদিস নং ৩০৩৮)
কিছু হাদিসে আমরা মুহাম্মদ সাঃ এর সময়কার কিছু জিনিসের মূল্য দীনারে উল্লেখ করতে দেখি।
সুনানে নাসাঈ শরীফ :: কাসামহ্ অধ্যায় : অধ্যায় ৪৫ :: হাদিস ৪৮০৫-এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আমলে ছোট বড় মিলিয়ে ১০০ উটের মূল্য ৮০০ দিনার পর্যন্ত হতো।
একশত উটনীর মূল্য= ৮০০ দীনার হলে
একটির গড় মূল্য = ৮ দীনার।
সে সময় আরব দেশে উট অত্যন্ত সহজলভ্য ছিলো।
সেযুগে ভালো উটের দাম ছিলো প্রায় ৮ দীনার ।
আর এ যুগে ভালো উটের দাম - ৪০০ ডলার।
সুতরাং ৮ দিনার=৪০০ ডলার
অতএব ১ দিনার= ৪০০/৮=৫০ ডলার
এটা বাৎসরিক জিজিয়া । তাহলে মাসিক জিজিয়া হবে = ৫০/১২=৪.১৭ ডলার।
''আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর জিম্মিদের (অর্থাৎ জিম্মাধীন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। (তারা কোন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবিলম্বে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া (কর) যেন চাপানো না হয়।'' [সহীহ বুখারি (ইফা) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) । নাম্বার: ৩৪৩৫]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻣَﻦ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔۡﺴَۢﺎ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﻧَﻔۡﺲٍ ﺃَﻭۡ ﻓَﺴَﺎﺩٖ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽِ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﻗَﺘَﻞَ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴﻌٗﺎ
ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﺣۡﻴَﺎﻫَﺎ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺂ ﺃَﺣۡﻴَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴﻌٗﺎۚ ﴾ [ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٣٢ ]
‘যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনসৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৩২}
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻭَﭐﻟۡﻔِﺘۡﻨَﺔُ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻘَﺘۡﻞِۚ ﴾ [ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٩١ ]
‘আর ফিতনা হত্যার চেয়ে কঠিনতর’।
{সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯১}
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﻮﻧُﻮﺍْ ﻗَﻮَّٰﻣِﻴﻦَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺷُﻬَﺪَﺁﺀَ ﺑِﭑﻟۡﻘِﺴۡﻂِۖ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺠۡﺮِﻣَﻨَّﻜُﻢۡ ﺷَﻨََٔﺎﻥُ
ﻗَﻮۡﻡٍ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌۡﺪِﻟُﻮﺍْۚ ﭐﻋۡﺪِﻟُﻮﺍْ ﻫُﻮَ ﺃَﻗۡﺮَﺏُ ﻟِﻠﺘَّﻘۡﻮَﻯٰۖ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮُۢ ﺑِﻤَﺎ
ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٨ ]
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﻮﻧُﻮﺍْ ﻗَﻮَّٰﻣِﻴﻦَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺷُﻬَﺪَﺁﺀَ ﺑِﭑﻟۡﻘِﺴۡﻂِۖ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺠۡﺮِﻣَﻨَّﻜُﻢۡ ﺷَﻨََٔﺎﻥُ
ﻗَﻮۡﻡٍ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌۡﺪِﻟُﻮﺍْۚ ﭐﻋۡﺪِﻟُﻮﺍْ ﻫُﻮَ ﺃَﻗۡﺮَﺏُ ﻟِﻠﺘَّﻘۡﻮَﻯٰۖ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَۚ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮُۢ ﺑِﻤَﺎ
ﺗَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ٨ ﴾ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٨ ]
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮)
সর্বশেষে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: বল, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও
তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না। তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ করব না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’।
[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪]