সৈয়দুশ্‌ শোহদা হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের ৫ তারিখে মদিনা শরীফে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পর সরকারে মদিনা (সাঃ) তাঁর কানে আযান দিয়ে দুআ করেছিলেন। সাত দিন পর আকিকা করে ‘হুসাইন’ নাম রাখা হয়েছিল। হাদিস শরীফে বর্নিত আছে,

 আল হাসনু ওয়াল হুসাইনু ইসমানে মান আহলিল জান্নাত
-অর্থাৎ “হাসান ও হুসাইন জান্নাতী নাম সমূহের মধ্যকার দুটি নাম।

এর আগে আরবের জাহিলিয়াত যুগে এ দু’নামের প্রচলন ছিল না।

হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) হুযুর আকরাম (সাঃ) এর খুবই প্রিয় ছিলেন। তাঁদের ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্নিত আছে। হুযুর (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-

 ইন্নাল হাসানা ওয়াল হুসাইনা হুমা রাইহানি মিনাদ্দুনিয়া।
- অর্থাৎ “নিশ্চয়ই হাসান-হুসাইন দুনিয়াতে আমার দুটি ফুল"।


আপন সন্তান থেকেও তিনি তাঁদেরকে অধিক ভালবাসতেন।
হযরত আল্লামা জামী (রঃ) বর্ননা করেন, একদিন সরকারে দোআলম (সাঃ) হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) কে ডানে ও স্বীয় সাহেবজাদা হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) কে বামে বসিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় জিবরাইল (আঃ) উপস্থিত হয়ে আরজ করিলেন-ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ! আল্লাহ তাআলা এ দুজনকে আপনার কাছে এক সাথে রাখতে দিবেন না। ওনাদের মধ্যে একজনকে ফিরিয়ে নিবেন। অতএব আপনি এ দু’জনের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পছন্দ করেন। হুযুর (সাঃ) ফরমাইলেন, যদি হুসাইনকে নিয়ে যায়, তাহলে ওর বিরহে ফাতেমা ও আলীর খুবই কষ্ট হবে এবং আমার মনটাও ক্ষুণ্ণ হবে, আর যদি ইব্রাহীমের ওফাত হয় তাহলে সবচেয়ে দুঃখ একমাত্র আমিই পাবো। এজন্য নিজে দুঃখ পাওয়াটাই আমাই পছন্দ করি। এ ঘটনার তিনদিন পর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ইন্তেকাল করেন।

এরপর থেকে যখনই হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) হুযুর (সাঃ) এর সমীপে আসতেন, হুযুর ওকে মুবারকবাদ দিতেন, ওর কপালে চুমু দিতেন এবং উপস্থিত লোকদেরকে সম্বোধন করে বলতেন- আমি হুসাইনের জন্য আপন সন্তান ইব্রাহীমকে কুরবানি দিয়েছি। (শাওয়াহেদুন নবুয়ত)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন এমন অবস্থায় বাইরে তাশরীফ আনলেন যে, উনার এক কাঁধের উপর হযরত হাসান এবং অন্য কাঁধের উপর হযরত হুসাইনকে বসিয়ে ছিলেন। এভাবেই আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন এবং ইরশাদ করলেন-
من احبهما فقد احبنى ومن ابغضهما فقد ابغضنى
অর্থ: ‘যে এ দু’জনকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করলো। আর যে এদের সাথে দুশমনী করলো, সে আমার সাথে দুশমনী করলো।’

হযরত উম্মুল ফজল বিনতে হারিছ (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) (হযরত আব্বাস (রাঃ) এর স্ত্রী) বলেন, আমি একদিন নবী করিম (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে ইমাম হুসাইন (রাঃ)কে তার কোলে দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, হুযূর (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যাপার কি ? তিনি ফরমালেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে এ খবর দিয়ে গেলেন-ان امتى ستقتل ابنى هذا‘নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ শিশুকে শহীদ করবে।’ হযরত উম্মুল ফজল (রাঃ) বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে আরয করলাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ, এ শিশুকে শহীদ করবে! হুযূর (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন, ‘হ্যাঁ! জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) ওর শাহাদাত স্থলের লাল মাটিও এনেছেন।


হযরত ইবনে সা’দ (রাঃ), হযরত শা’বী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আলী (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) জঙ্গে সিফফীনের সময় কারবালার পথ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই জায়গার নাম জানতে চাইলেন। লোকেরা বললো, এ জায়গার নাম কারবালা। কারবালার নাম শুনামাত্র তিনি এত কান্নাকাটি করলেন যে, মাটি চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছিল। অতঃপর ফরমালেন, আমি একদিন হুযূর (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে হাজির হয়ে দেখতে পেলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কেন কাঁদছেন? ফরমালেন, এইমাত্র হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম এসে আমাকে খবর দিয়ে গেলেন-
ان ولدى الحسين يقتل بشاطئ الفرأت بموضع يقال له كربلا
আমার ছেলে (দৌহিত্র) হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।’ ।

— সাওয়ায়িকে মুহার্‌রাকা



Top