জগতের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি না হলে আরশ ও ফরশ, লওহ ও কলম, বেহেশত ও দোযখ, গাছ ও পাথর এবং অন্যান্য সকল সৃষ্টি অস্তিত্ব পেতো না। এর সমর্থনে অনেক হাদীস বিরাজমান।

হাদীস নং-১
হাকিম নিজ ‘মোসতাদরেক’, বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল আন্ নবুওয়া’, তাবরানী নিজস্ব ‘কবীর’, আবূ নুয়াইম তাঁর ‘হিলইয়া’, এবং ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দিমাশক’ পুস্তকে উদ্ধৃত করেন হযরত আমীরুল মো’মেনীন ফারুকে আ’যম (রা:)-এর বাণী: “হুযূর পূর নূর (দ:) বলেন যে মহান আল্লাহ বলেছেন, আদম (আ:) যখন গন্দুম খেলেন, তখন তিনি আরয করেন, এয়া আল্লাহ! মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়াস্তে আমায় মাফ করুন। এমতাবস্থায় আল্লাহ বলেন, ওহে আদম! তুমি কীভাবে তাঁর কথা জানলে যেহেতু আমি তাঁকে এখনো সৃষ্টি করি নি? আদম (আ:) উত্তর দেন, এয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে সৃষ্টি করে আমার মাঝে রূহ ফোঁকার পরে আমি মাথা তুলে দেখতে পাই আরশে লেখা রয়েছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (দ:)’। তাই আমি বুঝতে পারি যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় কারো নাম-ই আপনার নামের পাশে আপনি যুক্ত করেছেন। অতঃপর আল্লাহ বলেন, ওহে আদম! তুমি সত্য বলেছ। নিশ্চয় মহানবী (দ:) আমার সবচেয়ে প্রিয়ভাজন, আর তাই তুমি যখনই তাঁর অসিলায় আমার কাছে চেয়েছ, তখনই আমি তোমায় ক্ষমা করেছি। রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।” (ইমাম সুবকী কৃত ’আশ্ শিফাউস্ সিকাম’ এবং শেহাবউদ্দীন খাফাজী প্রণীত ‘নাসীম আর-রিয়াদ’ বইগুলোতেও বর্ণিত)

হাদীস নং-২
হাকিম তাঁর ‘মোসতাদরেক’ গ্রন্থে এবং আবূ শায়খ নিজ ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী’ পুস্তকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ:)-কে বলেছেন, ওহে ঈসা! মহানবী (দ:)-এর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো। রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে আমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।” ((ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী রচিত ‘শিফাউস্ সিকাম’ ও শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী প্রণীত ‘ফতোওয়া’ এবং ইবনে হাজর রচিত ‘আফদাল আল-কুরআন’ গ্রন্থগুলোতেও উদ্ধৃত)

হাদীস নং-৩
ইমাম দায়লামী নিজ ‘মুসনাদ আল-ফেরদউস’ কেতাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “রাসূলে খোদা (দ:) বলেছেন যে হযরত জিবরীল আমীন (আ:) তাঁর কাছে আসেন এবং উদ্ধৃত করেন আল্লাহর বাণী, ‘আমি (খোদা স্বয়ং) আপনাকে (রাসূল-এ-পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে) সৃষ্টি না করলে বেহেশত বা দোযখ সৃষ্টি করতাম না’।”

হাদীস নং-৪
ইবনে আসাকির উদ্ধৃত করেন হযরত সালমান ফারিসী (রা:)-কে, যিনি বলেন: “হযূর পূর নূর (দ:)-এর কাছে জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী, ‘(হে রাসূল) আপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আমি সৃষ্টি করি নি। আমি বিশ্বজগত ও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না, যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”

হাদীস নং-৫
ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর আসকালানী বলেন, “এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত করে যে মহানবী (দ:)-কে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহতা’লা আসমান-জমিন, বেহেশ্ত-দোযখ, চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।”

এই বিষয়ে আরও অনেক আহাদীস আছে যা ইমাম আহমদ রেযা খান সাহেব তাঁর ‘তাজাল্লী আল-এয়াকীন বি আন্না নাবিই-ইয়ানা সাইয়্যেদিল মুরসালীন’ শিরোনামের চমৎকার গ্রন্থে সংকলন করেছেন; আর নিঃসন্দেহে সত্যপন্থী বুযূর্গানে দ্বীন ও উলামাবৃন্দ মহানবী (দ:)-কে ’হযরত আদম (আ:) ও বিশ্বজগত সৃষ্টির কারণ’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন। তাঁদের এ সব বাণী সংকলন করলে বিশালাকৃতির বই হবে। এর মধ্য থেকে কিছু বাণী উদ্ধৃত করা হলো:

উদ্ধৃতি-১
ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন: আল্লাহতা’লা যখন হযরত বাবা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ তিনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”এয়া আল্লাহ! আপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন ’আবূ মোহাম্মদ’ (মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (দ:)-এর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম (আ:) জিজ্ঞেস করেন, “এয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?” আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী (দ:)-এর জন্ম। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং জমিনে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। আমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।”


উদ্ধৃতি-২
সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর ‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন: “প্রিয়নবী (দ:) হলেন সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ (অসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না।”

উদ্ধৃতি-৩
ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর কৃত ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।”

উদ্ধৃতি-৪
ইমাম বুসিরী (রহ:)-এর কাব্যের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন: “হুযূর করীম (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল হতো না। হযরত আদম (আ:)-কে আল্লাহ বলেন, ‘মহানবী (দ:) অস্তিত্বশীল না হলে আমি তোমোকে সৃষ্টি করতাম না। হযরত আদম (আ:) হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা, আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে সৃষ্ট। তাই হযরত আদম (আ:)-কে যেহেতু রাসূলে খোদা (দ:)-এর অস্তিত্বের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী (দ:)-এর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, সকল অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন বিশ্বনবী (দ:)।”

উদ্ধৃতি-৫
কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা খালেদ আযহারী মন্তব্য করেন: “রাসূলে পাক (দ:)-এর কারণেই দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।”

উদ্ধৃতি-৬
মোল্লা আলী কারী লেখেন: ”রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগত অস্তিত্ব পেতো না এবং আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল থাকতো না।”


সুত্র :-(মুফতী জা’ফরউদ্দীন আল-বিহারী রেযভী সাহেব কৃত ”না’ফি’ইল বাশার ফী ফাতাওয়ায়ে জা’ফর” শীর্ষক ফতোওয়াগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। সংকলক হলেন মোহাম্মদ আকদস (যুক্তরাজ্য)। রাওয়ালপিণ্ডির শায়খ রহীম বখশ সাহেবের এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এটি লিখা । মুফতী সাহেব ১৩২৪ হিজরী সালের ১৫ই রজব তারিখে প্রশ্নটি হাতে পান এবং জবাব দিয়েছিলেন। মুফতী সাহেব ছিলেন ইমাম আহমদ রেযা খান সাহেবের প্রথম দিককার ছাত্র।
www.sunnah.org
www.sunnipedia.com



Top