গােপন পরমার্শ সম্পর্কে অবহিত হওয়াঃ
❏ ইমাম বায়হাকী ও আবু নঈম (رحمة الله) হযরত মুছা ইবনে উকবা ও উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তারা বলেন, নবী করিম (ﷺ) ও বনী কেলাবের পক্ষে দিয়ত সম্পর্কে আলােচনা করতে বনী নবীর গােত্রে তাশরীফ নিলেন যাতে বনী নযীর থেকে সহযােগীতা পাওয়া যায়। তারা বলল, হে আবুল কাসেম! আপনি বসুন এবং খাবার গ্রহণ করুন। আর আমাদের পক্ষ থেকে দিয়ত ও সাহায্যের টাকা নিয়ে যান।
রাসূল ও তাঁর সাহাবীদের নিয়ে একটি দেওয়ালের ছায়ার নীচে কিছুক্ষণ আরাম করেছেন। ওদিকে বনী নযীর এটাকে রাসূল (ﷺ) কে হত্যার মােক্ষম সুযােগ মনে করে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত করল যে, অমুক ইহুদী দালানে উঠে রাসূল (ﷺ) মাথার উপর প্রকান্ড পাথর নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যা করে ফেলবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এ সংবাদ ওহী দ্বারা অবগত করে দেন। তিনি সেখান থেকে সাহাবীদের নিয়ে উঠে চলে যান।
❏ তখন এই আয়াত নাযিল হয়,
অর্থ: হে মু'মিনগণ তােমাদের উপর আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতের আলোচনা কর, যখন এক সম্প্রদায় তােমাদের প্রতি তাদের হাত প্রসারিত করেছিল। ●৪৩৬ (সূরা মায়েদা, আয়াত নং ১১)
_____________________________
৪৩৬. সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৪৮
হারানাে জন্তুর সন্ধানঃ
❏ ইমাম আহম ইবনে হাম্বল (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, এক অন্ধকার রাতে আমার উট হারিয়ে যায়। আমি রাসূল (ﷺ) কাছে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তােমার কি সমস্যা? আমি বললাম, আমার উট হারিয়ে গিয়েছে। তিনি বললেন, ঐ যে তােমার উট। যাও, নিয়ে এসাে। তিনি যেদিকে বলেছেন আমি সেদিকে গেলাম কিন্তু উট পাইনি। আবার হুযুর এর কাছে চলে আসলাম। তিনি পুনরায় আগের মত বললেন, আমি আবার সেদিকে গেলাম, কিন্তু উট পাইনি। আবার হুযুরের কাছে চলে আসলাম। এবার তিনি আমার সাথে গেলেন আর আমরা উটের পাশে গেলাম। তিনি আমাকে উট অৰ্পন করলেন।
তারপর আমি উট নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম আর উট খুবই অলস ও ধীরগতি সম্পন্ন ছিল। আমি বলতে লাগলাম আমার মা চিন্তিত হােক, আমার ভাগ্যে এমন পড়েছে, যা সামনের দিকে পা বাড়াতে পারছে না। রাসূল (ﷺ) এ কথা শুনে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি বলেছ? আমি তাঁকে উটের দূর্বলতা ও অলসতার কথা জানালাম। তিনি উটের পেছনের অংশে দুররা দিয়ে একটি আঘাত করলেন, ফলে উট এমন দ্রুত বেগে চলতে লাগল যে, আমি এর উপর আরােহণ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছি এবং এর নিয়ন্ত্রনের রশি আমার আয়ত্বের বাইরে চলে গেল। ●৪৩৭
_____________________________
৪৩৭. সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড: ১ম পৃ:৩৭৪
মুনাফিকের ষড়যন্ত্র ফাঁসঃ
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) শতঃ তাবুক থেকে ফেরার পথে দলে থাকা কয়েকজন মুনাফিক তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল। তারা পরামর্শ করল যে, নবী (ﷺ) কে উপত্যকার রাস্তা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে। এ জন্য তারা মুখে কাপড় বেঁধে প্রস্তুতি গ্রহণ করলাে।
রাসূল (ﷺ) ঐ উপত্যকায় পৌঁছে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) কে আদেশ দেন যে, ওদেরকে এই উপত্যকা থেকে সরিয়ে দাও। হুযাইফা স্বীয় প্রতিরক্ষা ঢাল নিয়ে গিয়ে তাদের সওয়ারীদের উপর আক্রমন করে তাদেরকে পলায়ন করতে বাধ্য করল। তখন তারা মুখ বাঁধা ছিল। আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে দিলেন এবং তারা বুঝতে পারল যে, রাসূল (ﷺ) কি তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। তখন তারা দ্রুত এসে অন্যান্য সৈন্যদের সাথে যােগ দিল।
হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) ফিরে আসলে রাসূল (ﷺ) তাকে বলেছিলেন, তুমি কি চিনেছ তারা কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল যে, যখন আমি এই উপত্যকার রাস্তা দিয়ে যাবে তখন তারা আমাকে উহা থেকে ফেলে দেবে।
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ইবনে ইসহাক থেকে উপরােক্ত রেওয়ায়েত বর্ণনা করে, এতটুকু অতিরিক্ত বলেন যে, নবী করিম (ﷺ) বলেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে ঐ মুনাফিকদের নাম, পিতার নাম সহ অবহিত করে দিয়েছেন। আর আমি তােমাদেরকে এদের নাম সম্পর্কে অবহিত করে দেবাে। অতএব তিনি হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) কে তাদের বার জনের নাম বর্ণনা করেন। ●৪৩৮
_____________________________
৪৩৮.ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৬৩
ভন্ডনবী আসওয়াদ আনসীর মৃত্যু সংবাদঃ
❏ হযরত দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যেই রাতে আসওয়াদ আনসী (ভন্ড নবী) কে হত্যা করা হল সেই রাতে রাসূল (ﷺ)'র পরে কাছে আসমান থেকে ওহীর মাধ্যমে সংবাদ এসে গেল। তিনি আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন এবং বললেন, আজ রাত আসওয়াদ আনসীকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে এক মুবারক ব্যক্তিই হত্যা করেছে যে মুবারক পরিবারের সন্তান। প্রশ্ন করা হল, সে কে? তিনি বললেন, ফিরােজ। ফিরােজ সফলতা লাভ করল। ●৪৩৯
_____________________________
৪৩৯. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৬৪
কবর আযাবের সংবাদঃ
❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল (ﷺ) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, এই দুই জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে আর কোন কঠিন (গুনাহের) কাজের জন্য তাদের আযাব দেওয়া হচ্ছেনা। অতঃপর তিনি বললেন, হ্যা, তাদের আযাবের কারণ হল, তাদের একজন পরনিন্দা করে বেড়াত, অপরজন তার পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না। বর্ণনাকারী বলেন- এরপর তিনি একটি তাজা (খেজুরের) ডাল নিয়ে তা দু'খণ্ডে ভেঙ্গে ফেললেন আর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে/গেড়ে দিলেন। এরপর বললেন, আশা করা যায় যে, এ দুটি ডাল শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাদের আযাব লঘু করা হবে। ●৪৪০
_____________________________
৪৪০. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:১৮৪, হদিস নং ১২৯৫।
মুনাফিকদের স্বরূপ উম্মােচনঃ
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা রাসূল গল্প আমাদেরকে খােত্বা (বক্তব্য) দিচ্ছিলেন। তিনি বক্তব্যের মধ্যে বললেন,
ان منکم منافقين فمن سمیت فليقم قم يا فلان قم يا فلان حتی عد ستا وثلاثين
তােমার মধ্যে কতিপয় মুনাফিক রয়েছে। আমি যার নেবাে সে যেন উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তিনি এক একজনের নাম নিতে নিতে চব্বিশ জনের নাম নিয়েছিলেন।
❏ হযরত সাবিত বুনানী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার মুনাফিকরা একত্রিত হয়ে কথা বলতেছিল। রাসূল (ﷺ) বললেন, তােমাদের অনেক লোক একত্রিত হয়ে এরূপ সেরূপ বলেছ। তােমরা উঠ, আল্লাহর কাছে তাওবা ও এস্তেগফার কর। আমিও তােমাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবাে। কিন্তু তারা একজনও উঠেনি। তিনি তাদেরকে এভাবে তিনবার বলেছেন। তারপর বললেন, তােমরা উঠ, আমি তােমাদের নাম ধরে ধরে ডাক দিচ্ছি। অতঃপর তিনি নাম ধরে ডাকা আরম্ভ করলে মুনাফিকরা লাঞ্ছিত হয়ে মুখ ঢেকে চুপে চুপে চলে গেল। ●৪৪১
_____________________________
৪৪১. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১৭৪।
কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা
❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত আবু যায়েদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ায়ে মিম্বরে উঠে খােতবা দেওয়া আরম্ভ করলেন। যােহর ওয়াক্ত পর্যন্ত খােতবা দিতে থাকেন। যােহরের সময় মিম্বর থেকে নেমে যােহরের নামায পড়ে আবার মিম্বরে উঠে খােত্ব দেওয়া আরম্ভ করলেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত খােত্বা দিলেন। এই ভাষণে তিনি অতীতে যা কিছু ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে সবকিছু বর্ণনা দিয়েছিলেন। যে যতবেশী স্মরণ রাখতে পেরেছে সেই হল বড় জ্ঞানী। ●৪৪২
_____________________________
৪৪২. ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:১৮৪
ওফাতের দিন সম্পর্কে সংবাদ প্রদানঃ
❏ ইবনে আসাকের (رحمة الله) হযরত মকহুল (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, সােমবারের রােযা কখনাে ত্যাগ করবেনা। কেননা সােমবার আমি জন্মলাভ করেছি, সােমবারে আমার নিকট প্রথম ওহী প্রেরণ করা হয়েছে, সােমবারে আমি হিজরত করেছি এবং সােমবারেই আমি ইন্তেকাল করবাে। ●৪৪৩
_____________________________
৪৪৩ ইমাম সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:২য় পৃ:৪৭২
পথে সংঘটিত ঘটনার সংবাদ প্রদান
❏ হযরত আবু সুহাইম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি মদীনা শরীফে যাওয়ার পথে একজন সুন্দরী মহিলা দেখেছি। আমি তার সাথী হয়ে গেলাম এবং লােকেরা যখন রওয়ানা হল তখন আমি তাদের সাথে চলতে লাগলাম। আমি মদীনায় এসে নবী করিম এর হাতে বাইয়াত হওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ালে তিনি তাঁর হাত মােবারক নিয়ে নেন এবং ইশারায় আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, এই হাত একজন মুহরিম মহিলাকে স্পর্শ করেছে। নবী হাত এই হাতকে স্পর্শ করা উচিত হবে না। আমি প্রতিজ্ঞা করলাম এবং তাঁকে নিশ্চিত করলাম যে, আগামীতে এ ধরণের ভুল আর হবেনা। এরপর তিনি আমাকে বাইয়াত করে ধন্য করেছেন। ●৪৪৪
_____________________________
৪৪৪. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:২১৪
সমাপ্ত