❏ চল্লিশা বা চেহলাম পালন সম্পর্কে


প্রথমত: যে কোন আমল করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া যে উত্তম কাজ এতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর কারো কোন দ্বিমত নেই। দ্বিতীয়ত: মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৩ দিন পর থেকে যেকোন দিন গরীব-মিসকীন ও মুমিন মুসলমানদেরকে খাবার খাওয়ানো উত্তম কাজ হিসেবে হানাফী-সুন্নী মুসলমান তথা সকলের কাছেই ইহা স্বীকৃত। মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৪০ দিনের সময় ছাড়াও যে কোন দিন সওয়াব রেছানীর মাহফিল ও যিয়াফত করা যেতে পারে। তবে ৪০ দিনের সময় মিলাদ মাহফিল করা, কোরআন খতম করা, দান-সদকা করা ইত্যাদি আমল শেষে গরীব-মিসকীন ও মুসলমানদের মাঝে সাধ্য অনুযায়ী খাবার বিতরন করার পিছনে কিছু মাহাত্ব্য রয়েছে। যেমন:- হযরত আদম (عليه السلام) কে ৪০ বছর পর্যন্ত খামির অবস্থায় রাখা হয়েছিল। অত:পর ৪০ বছরে এটা শুকিয়ে ছিল। মায়ের পেটে শিশু প্রথম ৪০ দিন বীর্য অবস্থায় থাকে, অত:পর ৪০ দিন জমাট বাধা রক্ত অবস্থায়, অত:পর ৪০ দিন মাংশপিন্ড অবস্থায় থাকে। ৪০ দিন পর্যন্ত মায়ের নেফাছ থাকে। ৪০ বছর বয়সে মানুষের বয়স পরিপক্ব হয়। অধিকাংশ নবীগণ (عليه السلام) এর নবুয়াত প্রচারের দ্বায়িত্ব ৪০ বছর বয়সে দেওয়া হয়েছে। হযরত মূসা (عليه السلام) কে তূর পাহাড়ে ৪০ দিন অবস্থান করেছিলেন। নবীগণের পবিত্র রুহসমূহ সক্রিয়ভাবে তাঁদের কবর শরীফে ৪০ দিন থাকে (বায়হাক্বী) ইত্যাদি (আল্লাহর নবীগণ স্ব স্ব মাজার পাকে স্বশরীরে জিবীত এটাই ছহীহ্ হাদিস মোতাবেক প্রসিদ্ধ। তবে অন্য হাদিসে আছে কেহ সালাম দিলে রুহ মুবারক ফিরিয়ে দেন তথা সালামের উত্তর প্রদানের জন্য রুহ মুবারক কে দুনিয়া মুখি করে দেন। ফলে সালামের উত্তর প্রদান করেন। এই দৃষ্টিকোন থেকে বায়হাক্বীর হাদিসটি গ্রহণযোগ্য।)। যেমনঃ


❍ হাদিস শরীফে আছে,


وَأَخْرَجَ ابْنُ حِبَّانَ فِي تَارِيخِهِ وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وأبو نعيم فِي الْحِلْيَةِ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ نَبِيٍّ يَمُوتُ فَيُقِيمُ فِي قَبْرِهِ إِلَّا أَرْبَعِينَ صَبَاحًا


“হযরত আনাস (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: এমন কোন নবী ইন্তেকাল করেননি, যিনি ইন্তিকালের পরে স্বীয় মাজারে ৪০ দিন অবস্থান করেননি।”


অর্থাৎ আল্লাহর নবীগণ (عليه السلام) ইন্তেকালের পরেও ৪০ তিনাদের স্ব স্ব মাজার শরীফে ৪০ দিন সক্রিয়ভাবে অবস্থান করেন। (আল্লাহই সর্বোজ্ঞ)


❍ এখানে ৪০ দিনের একটা গুরুত্ব পাওয়া যায়। এবার সাধারণ মানুষের কবরে ৪০ দিন ফেতনার বিষয়ে ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) হাদিস উল্লেখ করেন,

ذَكَرَ الرِّوَايَةَ الْمُسْنَدَةَ عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ: قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ فِي مُصَنَّفِهِ، عَنِ الحارث بن أبي الحارث، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ: يُفْتَنُ رَجُلَانِ مُؤْمِنٌ وَمُنَافِقٌ، فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيُفْتَنُ سَبْعًا، وَأَمَّا الْمُنَافِقُ فَيُفْتَنُ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا. 

-“উবাইদ ইবনে উমাইর (رضي الله عنه)  বলেন, দুই শ্রেণীর লোক কবরে ফেতনায় পড়ে। মু’মীন ও মুনাফিক। মু’মীনদেরকে ৭ দিন ফেতনায় থাকে আর মুনাফেক ৪০ দিন ফেতনায় থাকে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২১৬ পৃ:)


এই হাদিসে মুনাফেকের কবরের ফেতনার সময় বলা হয়েছে ৪০ দিন। সাধারণত আমাদের মৃতদের মুনাফেক মনে করা হয়না, তবে তারা গোনাহগার এই ভেবে সতর্কতামূলক ৪০ দিনের সময় যিয়াফত করা হয়।

উপরে উল্লেখিত মাহাত্ব্যের কারণে ৪০ দিনের মাথায় ফাতেহা ও যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা হয়। পৃথিবীর এমন কোন কিতাব নেই যেখানে দলিলে ক্বাতয়ীর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য ৪০ দিনের সময় ফাতেহা ও যিয়াফত করা নিষেধ করেছেন। তবে ৪০ দিনের মাথায় করতেই হবে এরূপ মনে করাও ঠিক না, বরং সকলের সুবিধামত সময়ে এরূপ আয়োজন করতে হবে। 

আমাদের বক্তব্য হল, ৪০ দিনেই হোক আর ৩৫ দিনেই হোক অথবা মৃত ব্যক্তির আহল বর্গের সুবিধামত যেকোন দিনেই হোক মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব ও মাগফেরাত অনুষ্ঠান করাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। মৃত ব্যক্তির জন্য নামাজ পড়ে, রোজা রেখে, কোরআন পাঠ করে, জিকির-আজকার করে, বিভিন্ন আমল করে তাদের রুহে বকশিয়ে দেওয়া স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ)  এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে গরীব-মিসকীন ও মুসলমানদেরকে যিয়াফত করে খাবার পরিবেশন করা প্রিয় নবীজি (ﷺ)  এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ও হানাফী ফকিহ্গণের কাছে স্বীকৃত। 


❍ আর মত্বলকান এ যিয়াফতের ব্যাপারে প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেছেন:


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ 


“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত (এখানে فَلْيُكْرِمْ শব্দের ভাবার্থ বুঝানোর জন্যই যিয়াফত অর্থ করা হয়েছে। কারণ উরফী দৃষ্টিকে মেহমানকে সম্মান করা হয় মূলত তার প্রতি উত্তম আচরন ও উত্তম খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে। যাকে বলা হয় আতিথেয়তা বা আপ্যায়ন। আর এই আতিথেয়তা বা আপ্যায়নকেই যিয়াফত বলা হয়ে থাকে, যা মূলত মেহমানের উদ্দেশ্য সম্মান।) করে।”

তথ্যসূত্রঃ

(ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ৬১৩৬ ও মুসলীম মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৪২৪৩ বাবুয যিয়াফাত)


এই হাদিসে মত্বলকান বা শর্তহীনভাবে মানুষকে যিয়াফত করার অনুমতি রয়েছে।

Top