❏ প্রশ্ন-৪৮: হুযূর আক্বদাস (ﷺ)-এর পবিত্র জানাযায় ইমামতি না হওয়ার হিকমত কী ছিল? বর্ণনা কর।
✍ উত্তর: هو المستعان ইমাম আহমদ রেযা (رحمه الله تعالي ) বলেন, লাশ মুবারক রওজা শরীফের দিকে নিয়ে না যাওয়া, যেখানে রূহে আক্বদাস পরম বন্ধুর দিকে ঊর্ধ্বগমন করেছে, বিশেষ নির্দিষ্ট স্থানে দাফন হওয়া, গোসল দেয়ার সময় পবিত্র জামা শরীর মুবারক থেকে আলাদা না করা, সকল সাহাবা-ই কিরাম সাক্ষাৎ লাভের সুবিধার্থে জানাযা মুবারক পৌনে দু’দিন বিলম্ব করা এবং পবিত্র জানাযায় কাহারো ইমামতি প্রযোজ্য না হওয়া, হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব। বিশেষতঃ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, এ সকল কার্যক্রম হুযূর (ﷺ)-এর অসিয়ত মোতাবেক সংঘটিত হয়েছে।
জানাযার নামায এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের হক্ব। রাসূলে কারীম(ﷺ) ইরশাদ করেন,
حق المسلم على المسلم خمس : ردُّ السلام وعيادة المريض واتباع الجنازة واجابة الدعوة وتشميت العاطس .
এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি হক্ব রয়েছে।
১. সালামের জবাব দেয়া,
২. রোগীর সেবা করা,
৩. জানাযার অনুসরণ করা,
৪. দাওয়াত কবুল করা এবং
৫. হাঁচির জবাব দেয়া।
অত্র হাদীসখানা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত আছে।
সাধারণ মু’মিন মুসলমানের হক্ব এমন হওয়া সমীচীন যে, উপস্থিত লোকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহান আল্লাহ তা‘আলার হক্বের পর সবচেয়ে বেশী হক্বের অধিকারী হচ্ছেন আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামত দু’জাহানের বাদশাহ হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর হক্ব বা অধিকার। যদি উপস্থিত সকলের ওপর আবশ্যিক হয় তা হলে মহান উদ্দেশ্য দ্বারা উপস্থিত প্রত্যেক মুসলমানের সত্তাগতভাবে এ মহান সত্তার সাক্ষাৎ লাভ করা দূরের কথা নয়।
সীরাতে মোস্তফা (ﷺ) দ্বিতীয় খন্ডর ৩১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, রাসূল কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যবান বান্দা ইন্তিকালের পর তাঁর প্রথম পুরস্কার যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মিলে, তা হচ্ছে, যে সকল লোক তাঁর জানাযার নামায পড়ে, পরম করুণাময় আল্লাহ তা‘আলা সকলের গুনাহ ক্ষমা ও মাফ করে দেন। তা কোন নবীর কিংবা কোন রাসূলের কিংবা সৈয়্যদুল আন্বিয়া ওয়াল মুরসালীন-এর জানাযা হোক। তাঁর দয়ার পরিমাণ কে বা আছেন তা পরিমাপ করতে পারবেন? এখানে কোন্ ধরনের কিয়াস? এখানে রহমতে ‘আলম (ﷺ)-এর জোর তাগিদ এটাই ছিল যে, এখানে সাধারণ অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হুজরা শরীফের জায়গাই বা কতো? আর উপস্থিত লোকের সংখ্যা ৩০,০০০ হাজার। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, এখন যদি এমন হুকুম হতো যে, প্রথমবার যারা পড়ার তারা পড়ে নিন। তাহলে হাজার হাজার সাহাবার বঞ্চিত হওয়া এতে অন্যান্য সাহাবাগণ নিশ্চিতরূপে কঠিন বিবাদে লিপ্ত হতেন। যখন একথা জানা হতো যে, অন্যান্য জানাযার ন্যায় এখানেও একবারই অনুমতি মিলবে, তাহলে প্রত্যেকেই এটা কামনা করতো যে, আমিই পড়ব।
অতএব হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর মহাজ্ঞানের জোর তাগাদা হচ্ছে, স্বয়ং নিজের ক্ষেত্রে দলে দলে এসে হাযিরী দেয়ার অসিয়ত করেন। صلى الله عليه دائمًا ابدًا । এ মহান গোপন কথা ও অন্তঃরহস্য পবিত্র জানাযায় ইমামতি না হওয়ারও এক স্বচ্ছ হিকমত রয়েছে, যাতে উপস্থিত সবাই সত্তাগতভাবে কোন মাধ্যম ছাড়াই হুযূর মোস্তফা (ﷺ)-এর থেকে ফয়েয ও বরকত দ্বারা সম্মানিত এবং উপকৃত ও মর্যাদাবান হয়।
প্রখ্যাত ইমাম সুহাইলী (رحمه الله تعالي ) এখানে ইমামতি না হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
اخبرالله تعالٰى انه وملائكتهُ يصلّون عليه صلّى اللهُ عليهِ وسلّم وامر كل واحدٍ من المؤمنين ان يصلّى عليه فوجب على كل واحد ان يباشر الصلواة عليه فى حياته والصلواة عليه صلّى اللهُ عليه وسلّم بعد موته من هذا القبيل .
‘মহান আল্লাহ সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর সকল ফিরিশতা মাহবুবে খোদা (ﷺ)-এর ওপর দরূদ প্রেরণ করেন এবং প্রত্যেক মুসলমানের ওপর হুকুম করেছেন যে, তাঁর (ﷺ) ওপর দরূদ প্রেরণ করার। তাই প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব যে, মাহবুবে খোদা (ﷺ)-এর ওপর এমনভাবে দরূদ প্রেরণ করবে যে, অন্যের মাধ্যম ছাড়া স্বয়ং নিজের পক্ষ থেকে মাহবুবে খোদা (ﷺ)-এর দরবারে দরূদ প্রেরণ করবে।
صلّى اللهُ عليك يا رسول الله وسلّم عليك يا حبيب الله وعلى اٰلك واصحابك يا نبى الله .
মাহবুবুল্লাহ, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) , নবীয়ুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর বেছাল শরীফের পর সালাত ও সালামও সরাসরি কোন মাধ্যম ছাড়াই একাকী হওয়াই উচিত।
ইমাম শাহ্ আহমদ রেযা (رحمه الله تعالي ) জানাযায়ে আক্বদাসে ইমামতি না হওয়ার আরো একটি কারণের দিকে ইঙ্গিত করতে গিয়ে লিখেছেন যে, ইমাম শামসুল আইম্মা সারখ্সী (رحمه الله تعالي ) তাঁর ‘মাব্সুত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,
ان ابابكر رضى الله عنه كان مشغولًا بتسوية الامور وتسكين الفتنة فكانوا يصلون عليه قبل حضوره . وكان الحق له لانه هو الخليفة فلمَّا فرغ صلّى عليه ثم لم يصلِّ عليه بعدهُ عليه .
সারকথা হচ্ছে এই যে, সৈয়্যদুনা আবু বকর সিদ্দীক (رضى الله تعالي عنه) ফিৎনা-ফ্যাসাদ থেকে শান্তি এবং উম্মতের কর্মকান্ড সমূহ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর পবিত্র হাতে বাইআত গ্রহণ করেনি। মানুষ দলে দলে আসলেন এবং তাঁর পবিত্র জানাযার ওপর নামায পড়লেন। যখন পরিপূর্ণ বা’ইআত হলো, তখন ওলীয়ে শরয়ী বা হযরত সৈয়্যদুনা আবু বকর সিদ্দীক (رضى الله تعالي عنه) শরীয়তসম্মত ওলী বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন। তিনি জানাযা-ই মুকাদ্দাসার ওপর জানাযার নামায পড়েন এবং এরপর আর কেউ জানাযা পড়েননি।
ثم لم يصل عليه بعدهُ عليه
ওলী বা অভিভাবকের জানাযার নামায আদায় করার পর, জানাযার নাম পুনরায় পড়ার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী (رحمه الله تعالي ) জানাযার নামায পুনরুক্তি শরীয়ত সম্মত না হওয়ার সুস্পষ্ট বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
নূরুল ইযাহ গ্রন্থের পাদটীকায় সিরাজ, গুনিয়্যাহ ও ইমদাদ গ্রন্থের হুবহু শব্দ উল্লেখ করে বলেন,
ولايصلِّ على قبره الشريف الى يوم القيمة لبقائه صلّى اللهُ عليه وسلّم كما دفن طريًا بل هو حىّ يرزق ويتنعم سائراللذات والعبادات وكذا سائر الانبياء عليهم الصلواة والسلام ، وقد اجتمعت الامة على تركها .
‘এই জানাযার নামায যদি তাক্রার বা বারবার হতো, তাহলে পবিত্র মাযার শরীফে কিয়ামত পর্যন্ত নামায পড়া হতো। কেননা হুযূর আক্বদাস (ﷺ) সব সময় এভাবেই তরুতাজা ও প্রাণবন্ত আছেন যেমন দাফন মুবারকের সময় ছিলেন বরং তিনি স্বশরীরে জীবিত এবং তাঁকে রিযিক দেয়া হয়। সব ধরনের স্বাদ এবং সকল ইবাদতের মনোমুগ্ধকর নি‘য়ামতসমূহ বিদ্যমান এবং অনুরূপ অন্যান্য নবীগণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অথচ মুসলিম উম্মাহর সকলেই এ নামায না পড়ার ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন।
67. সীরাতে মোস্তফা (ﷺ), খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩১৭; ফতওয়া রেযভীয়া, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৬৬।