কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর


বুযুর্গানে কিরামের উরস ও কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয এবং ছওয়াবের কাজ। দেওবন্দী ও অন্যান্যরা একেও হারাম বলে। এ জন্য এ আলোচনাটাকেও দুটি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে এর প্রমাণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসংগে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব দেয়া হয়েছে।

প্রথম অধ্যায়

উরস বা যিয়ারত উপলক্ষে সফরের প্রমাণ


মকসুদ অনুযায়ী সফরের হুকুম বর্তায়। অর্থাৎ হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম, জায়েয কাজের জন্য জায়েয, সুন্নাত কাজের জন্য সুন্নাত এবং ফরয কাজের জন্য ফরয। যেমন ফরয হজ্বের জন্য সফর করাও ফরয। মাঝে মধ্যে জিহাদ ও বাণিজ্যের জন্য সফর করা সুন্নাত, কেননা এ কাজ সুন্নাত। হুযুর আলাইহিস সালামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা ওয়াজিব, কেননা, এ যিয়ারত ওয়াজিব। বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাত, আত্মীয়-স্বজনের বিবাহ শাহী খতনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যোগদান, এবং চিকিৎসার জন্য সফর করা জায়েয, কেননা এগুলো হলো জায়েয কাজ। চুরি-ডাকাতির জন্য সফর করা হারাম কেননা এ কাজগুলো হারাম। মোট কথা হলো, সফরের হুকুমটা জানতে হলে, প্রথমে এর মকসুদটা জেনে নিতে হবে। মূলতঃ কবর যিয়ারত হচ্ছে সুন্নাত। সুতরাং কবর যিয়ারতের জন্য সফর করাটাও সুন্নাত বলে বিবেচ্য হবে।


❏ কুরআন করীমে অনেক ধরনের সফর প্রমাণিত আছে-


وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ.


-‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রসূলের উদ্দেশ্য নিজ গৃহ থেকে মুহাজির হয়ে বের হলো এবং (পথে) তার মৃত্যু ঘটলো, তার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে গেল। (সুরা নিসা, আয়াত নং.১০০) হিজরত উপলক্ষে সফর প্রমাণিত হলো।


لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ - إِيلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ.


-‘‘যেহেতু কুরাইশের আসক্তি আছে। আসক্তি আছে তাদের শীত ও গ্রীষ্মে সফরের।’’ (সুরা কুরাইশ, আয়াত, নং. ১-২) এ আয়াতে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সফল প্রমাণিত হলো।


وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا.


-‘‘স্মরণ করুন, যখন মুসা (আ:) নিজের খাদিমকে বললেন-  আমি ততক্ষণ পর্যন্ত বিরত হবে না, যতক্ষণ না সেখানে পৌঁছবে, যেথায় দু’টি সমুদ্র মিলিত হয়েছে।’’(সুরা কাহাফ, আয়াত নং. ৬০) হযরত মুসা (আ:) হযরত খিজির (আ:) এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য তথায় গিয়েছিলেন। এত মাশায়েখের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে সফর প্রমাণিত হলো।


اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا.


-‘‘হে আমার পুত্রগণ, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হইও না। (সুরা ইউসুফ, আয়াত নং. ৯৩) হযরত ইয়াকুব (আ:) তাঁর অন্যান্য সন্তানদেরকে হযরত ইউসুফ (আ:) এর সন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব প্রিয়জনের সন্ধানে সফর করা প্রমাণিত হলো। হযরত ইউসুফ (আ:) বলেছেন-


وَلَمَّا دَخَلُوا عَلَى يُوسُفَ آوَى إِلَيْهِ.


-‘‘অতঃপর যখন তারা সবাই হযরত ইউসুফ (আ:) এর কাছে পৌছলেন, তখন তিনি স্বীয় মা-বাপকে নিজের পার্শ্বে বৈঠক দিলেন।’’ (সুরা ইউসুফ আয়াত নং.৬৯) ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা করার জন্য সফর প্রমাণিত হলো। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ছেলেরা বাপের কাছে আরয করলেন-


فَأَرْسِلْ مَعَنَا أَخَانَا نَكْتَلْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ.


-‘‘আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে দিন। আমরা খাদ্যশস্য নিয়ে আসবো এবং তাকে নিশ্চয় হিফাজত করবো।’’(সুরা ইউসুফ আয়াত নং.৬৩)  উপার্জনের জন্য সফর প্রমাণিত হলে।


❏ হযরত মুসা (আ:) কে নির্দেশ দেয়া হলোঃ


اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى.


-‘‘ফিরাউনের কাছে যাও, কারণ সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে।’’(সুরা নাযিআহ, আয়াত নং.১৭) তাবলীগের জন্য সফর প্রমাণিত হলো।


❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল ইলমে বর্ণিত আছে-


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى يَرْجِعَ.


-‘‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হলো সে আল্লাহর পথে রয়েছে।’’ ২৮৬

{টিকাঃ

খতিব তিবরিযি, মিশকাত, কিতাবুুল ইলম, ১/৭৬ পৃঃ  হা/২২০, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/৩২৫ পৃঃ  হা/২৬৪৭,


☞ইমাম তিরমিযি হাদিসটি সংকলন করে বলেন- هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ-‘‘এই হাদিসটি হাসান, গরীব।’’ তাই আলবানী একে যঈফ বলায় আমাদের কিছু আসে যায় না।}


❏ আর একটি হাদীছে বর্ণিত আছে-


حدثنا أَبُو عَاتِكَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  اطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ.


-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জ্ঞান অর্জন কর, যদি চীনেও যেতে হয়।’’ ২৮৭

{টিকাঃ

ইমাম ইবনে আদি, আল কামিল, ৫/১৮৮ পৃঃ   ক্রমিক- ৯৬৩, ইমাম ইবনুল বারবারা, জামিউল বায়ানুল ইলমে ওয়া ফাদ্বলিহী, ১/২৮ পৃঃ , হা/২০, ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/১৯৩, /১৫৪৩,


☞ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন- هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ -‘‘এই হাদিসটি মতনগতভাবে মশহুর পর্যায়ের।’’ এই সনদটিতে হযরত আনাস (رضي الله عنه)-এর ছাত্র আবু আতিকা নামে একজন রাবী রয়েছেন। তিনি যঈফ রাবী।


☞হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে অন্য ছাত্রও হাদিসটি সংকলন করেছেন। ইমাম ইবনুল বার (ওফাত. ৪৬৩ হিঃ) সংকলন করেন-

سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রاطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ فَإِنَّ طَلَبَ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ

-‘‘সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা তিনি ইমাম শিহাব জুহুরী হতে তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে উপরের ন্যায় বর্ণনা করেছেন।’’ (ইমাম ইবনুল বারবারা, জামিউল বায়ানুল ইলমে ওয়া ফাদ্বলিহী, ১/২৮ পৃঃ , হা/২০)


☞ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) আরেকটি সূত্র সংকলন করেন-

عَنْ مُحَمد بْنِ عَمْرو، عَن أَبِي سَلَمَةَ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: اطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ

-‘‘.....মুহাম্মদ বিন আমর তিনি আবি সালামা থেকে তিনি আবু হুরাযরা (رضي الله عنه) হতে তিনি রাসূল (ﷺ) হতে, তিনি বলেন,......উপরের ন্যায়।’’ (ইমাম ইবনে আদি, আল কামিল, ১/২৯২ পৃঃ   ক্রমিক- ১৭)}  


❏ প্রসিদ্ধ ফার্সী পুস্তিকা করীমাতে আছে-


طلب كردن علم شد برتو فرض

دگر واجب است از پيش قطع ارض.


-‘‘জ্ঞান অনুসন্ধান করা তোমার জন্য ফরয। এর জন্য সফরেরও প্রয়োজন আছে।’’  

জ্ঞানানুসন্ধানের জন্য সফর প্রমাণিত হলো।


❏ প্রখ্যাত ফার্সী কাব্যগ্রন্থ গুলিস্তায় উলে­খিত আছে-


برواند جهاں تفرج كن- پيش ازاں روز كزجهاں بروى.


-‘‘মৃত্যুর আগে পৃথিবীটা একবার পরিভ্রমণ করে দেখ।’’ ভ্রমণের জন্য সফর প্রমাণিত হলো।


قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ ثُمَّ انْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ.


-‘‘তাঁদেরকে বলুন, পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং কাফিরদের কি পরিণাম হয়েছে, তা দেখ।’’(সুরা আন‘আম, আয়াত, নং.১১) যেসব দেশে খোদায়ী গজব নাযিল হয়েছে, ওগুলো দেখে সতর্ক হওয়ার জন্য সফর প্রমাণিত হলো।


যখন এত রকম সফর প্রমাণিত হলো, তাহলে আওলিয়া কিরামের মাযার যিয়ারত উপলক্ষে সফর এমনিই প্রমাণিত বলে ধরে নেয়া যায়। আওলিয়া কিরাম হলেন, রুহানী ডাক্তার এবং ওনাদের ফয়েযও ভিন্ন ভিন্ন। ওনাদের মাযারে গেলে খোদার শান চোখের সামনে ভেসে উঠে। খোদা প্রাপ্তগণ মৃত্যুর পরও দুনিয়াতে বিরাজ করেন, এর দ্বারা ইবাদতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আর ওনাদের মাযারসূহে দুয়া সহসা কবুল হয়।


❏ ফতওয়ায়ে শামী প্রথম খণ্ড ‘যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উলে­খিত আছে-


وَهَلْ تُنْدَبُ الرِّحْلَةُ لَهَا كَمَا اُعْتِيدَ مِنْ الرِّحْلَةِ إلَى زِيَارَةِ خَلِيلِ الرَّحْمَنِ وَأَهْلِهِ وَأَوْلَادِهِ، وَزِيَارَةِ السَّيِّدِ الْبَدَوِيِّ وَغَيْرِهِ مِنْ الْأَكَابِرِ الْكِرَامِ؟ لَمْ أَرَ مَنْ صَرَّحَ بِهِ مِنْ أَئِمَّتِنَا، وَمَنَعَ مِنْهُ بَعْضُ أَئِمَّةِ الشَّافِعِيَّةِ إلَّا لِزِيَارَتِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قِيَاسًا عَلَى مَنْعِ الرِّحْلَةِ لِغَيْرِ الْمَسَاجِدِ الثَّلَاثَةِ. وَرَدَّهُ الْغَزَالِيُّ بِوُضُوحِ الْفَرْقِ،.


-‘‘কবর যিয়ারত উপলক্ষে সফর করা মুস্তাহাব। যেমন আজকাল হযরত খলিলুর রহমান ও হযরত ছৈয়দ বদ্দবী (رحمة الله عليه) এর মাযার যিয়ারতের জন্য সফর করা হয়। আমি এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমামদের কারো ব্যাখ্যা দেখিনি। তবে শাফেঈ মাযহাবের কয়েকজন আলিম তিন মসজিদ ভিন্ন সফর নিষেধ-  এ হাদীছের উপর অনুমান করে নিষেধ বলেছেন। কিন্তু ইমাম গাযযালী (رحمة الله عليه) এ নিষেধাজ্ঞাকে খণ্ডন করেছেন এবং পার্থক্যটা বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন।’’ ২৮৯

{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃঃ  দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}


❏ একই জায়গায় শামীতে আর উলে­খিত আছে-


وَأَمَّا الْأَوْلِيَاءُ فَإِنَّهُمْ مُتَفَاوِتُونَ فِي الْقُرْبِ مِنْ اللَّهِ - تَعَالَى، وَنَفْعُ الزَّائِرِينَ بِحَسَبِ مَعَارِفِهِمْ وَأَسْرَارِهِمْ.


-‘‘কিন্তু আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভে ও যিয়ারতকারীদের ফয়দা পৌছানোর বেলায় নিজেদের প্রসিদ্ধি ও আধ্যাত্মিক শক্তি অনুসারে ভিন্নতর।’’ ২৯০

{ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃঃ  দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}


إنِّي لَأَتَبَرَّكُ بِأَبِي حَنِيفَةَ وَأَجِيءُ إلَى قَبْرِهِ، فَإِذَا عَرَضَتْ لِي حَاجَةٌ صَلَّيْت رَكْعَتَيْنِ وَسَأَلْت اللَّهَ تَعَالَى عِنْدَ قَبْرِهِ فَتُقْضَى سَرِيعًا.


-‘‘আমি ইমাম আবু হানিফা থেকে বরকত হাসিল করি এবং তার মাযারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। অতঃপর তাঁর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমাধান হয়ে যায।’’ ২৯১

{টিকাঃ

ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৫৫পৃঃ  দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


☞বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) এ ঘটনাটির সনদসহ উল্লেখ করেন এভাবে-

أَخْبَرَنَا الْقَاضِي أَبُو عَبْد اللَّهِ الْحُسَيْنُ بْن عَلِيّ بْن مُحَمَّد الصيمري قال أنبأنا عمر بن إبراهيم قال نبأنا عَلِيّ بْن ميمون قَالَ: سمعت الشافعي يقول: إني لأتبرك بأبي حنيفة وأجيء إِلَى قبره في كل يوم- يَعْنِي زائرا- فإذا عرضت لي حاجة صليت ركعتين وجئت إِلَى قبره وسألت الله تعالى الحاجة عنده، فما تبعد عني حتى تقضى.

-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন আমাকে.......তাকে আলী ইবনে মায়মুন (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, আমি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর উসিলায় প্রতিদিন তার যিয়ারত করার মানসে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর মাজারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। তাঁর মাজারের পাশে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমাধান হয়ে যায়।’’ (খতিবে বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ, ১/১৩৫পৃঃ  দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)


তাই আহলে হাদিস ও দেওবন্দী মৌলভীরা যে দ্বীনের মুজতাহিদ ইমামদের থেকেও কতবড় হাদিস পণ্ডিত তা সকলেরই জানা আছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই সত্য গোপনকারী আলেম হতে হেফাজত করুন। আমিন।}


উপরোক্ত বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানা গেল-  কবর যিয়ারতের জন্য সফর, কেননা ইমাম শাফেঈ (رحمة الله عليه) নিজের জন্ম ভূমি ফিলিস্তিন থেকে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله عليه) এর মাযার যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সূদুর বাগদাদ শরীফ আসতেন, কবরবাসীদের থেকে বরকত গ্রহণ, ওনাদের মাযারের কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং কবরবাসীকে অভাব পূর্ণ করার মাধ্যমে মনে করা। অধিকন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের জন্য সফর করা আবশ্যক। ফতওয়ায়ে রশিদীয়ার প্রথম খন্ড ------ এর ৫৯ পৃষ্ঠায় উলে­খিত আছে বুযুর্গানে কিরামের যিয়ারতের জন্য সফর করা প্রসংগে উলামায়ে আহলে সুন্নাতের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ জায়েয বলেন এবং কেই কেউ নাজায়েয বলেন। কিন্তু উভয় পক্ষের আলিমগণ হচ্ছেন আহলে সুন্নাতের অধিকারী। বিতর্কিত মাসআলা নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। আর আমাদের মত ইমামের অনুসারীদের পক্ষ থেকে সমাধান দেওয়া অসম্ভব- রশীদ আহমদ।


এখন আর উরস উপলক্ষে সফর করতে কাউকে নিষেধ করার কোন অধিকার দেওবন্দীদের নেই। কেননা মৌলভী রশীদ বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছন এবং এর কোন সিদ্ধান্তও দেননি। বিবেকও বলে যে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েয হওয়া চাই। কেননা আমি ইতিপূর্বে উলে­খ করেছি যে সফর হালাল বা হারাম হওয়াটা এর মকসুদ থেকেই বোঝা যায়। এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে কবর যিয়ারত যা নিষেধ নয়, কেননা যিয়ারতে কবর সাধারণভাবেই অনুমোদিত الا فزوروها। তাহলে সফর কেন হারাম হবে? অধিকন্তু দ্বীনি ও দুনিয়াবী কাজ কারবারের জন্য সফর করা হয়। এটাও একটি দ্বীনি কাজের জন্য সফর হেতু হারাম কেন হবে?

Top