❏ প্রশ্ন-২০৯: بلعم بن باعوراء (বল‘আম বিন বাউরা) কে ছিল? তার অবস্থার বর্ণনা দাও।
✍ উত্তর: هوالمـستعان বল’আম বিন বাউরা বনি ইসরাইলের একজন আবেদ ও ধর্মনিষ্ঠ সাধক পুরুষের নাম। মুফাস্সিরীনে কিরামের মতানৈক্যের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত আয়াতে উক্ত ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ .
‘হে হাবীব! আপনি তাদেরকে ওই ব্যক্তির অবস্থা শুনিয়ে দিন, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে শয়তান লেগে গেছে, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে পড়েছে।’
269. সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৫
মুফাস্সিরীনে কিরামগণ উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত দিয়েছেন, যার সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। যথাঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضى الله تعالي عنه), হযরত ইবনে মাসউদ (رضى الله تعالي عنه) এবং হযরত মুজাহিদ (رضى الله تعالي عنه) বলেছেন যে, এতে ‘বল‘আম ইবনে বাউরা’র প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত মুসা (عليه السلام) এবং বনি ইসরাইলসহ সুয়াবের ময়দানে হার্ওন নদীর তীরে পারীহুন শহরের বিপরীতে যখন অবতরণ করেন, তখন মাওয়াজীও-এর বাদশাহ বলখ বিন সগুর এ সংবাদ শুনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলউমের নিকট দূত পাঠালেন যে, তিনি যেন এসে উক্ত অবতরণকারীদের জন্য বদ-দু‘আ করেন। প্রথমত তিনি অস্বীকৃতি জানান, পরবর্তীতে আসতে রাজি হয়ে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে তার আরোহনের গাধা বসে পড়লে, তারা মারধর করে এটিকে উঠানোর চেষ্টা করলে আল্লাহ তা‘আলা ওটাকে বাকশক্তি দান করেন, ফলে গাধাটি বলতে লাগলো আমি নিজ ইচ্ছায় বসিনি, বরং ফিরিশতারা আমাকে বাধা দিচ্ছে। অতঃপর বল‘আম বলখের কাছে গেলেন এবং এক পাহাড়ে আরোহন করে বনি ইসরাইলের দিকে তাকালেন। তখন অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখ দিয়ে অভিশাপের পরিবর্তে বনি ইসরাইলের জন্য বরকতের বাক্য বের হয়ে গেল। (উক্ত ঘটনা তাওরাত কিতাবের আদদ-এর ২৩-২৪নং অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে।) বদ-দু‘আর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কারণে বলউমের সমস্ত কারামত ও বুযূর্গী যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে দান করেছিলেন, সব বিলুপ্ত হয়ে গেল।
বনি ইসরাইলকে শুনানো হচ্ছে যে, কেউ আল্লাহর মাকবুল বান্দার বিরোধীতা করলেন, তার পরিণাম হবে এভাবে। বনি ইসরাইলে আল্লাহর দরবারে যাঁর দু‘আ গৃহীত বলে স্বীকৃত বাল‘অম ইবনে বাউরা এমন একজন বড় আলেম ছিল, সে কু-প্রবৃত্তির তাড়নায় স্বার্থের বশীভুত হয়ে হযরত মুসা (عليه السلام)-এর জন্য বদ-দু‘আ করেছিলেন। যে কারণে চলিশ বছর পর্যন্ত অরণ্য বন-জঙ্গলে অনুতপ্ত ও চিন্তান্বিত অবস্থায় ঘুরতে থাক। অবশেষে হযরত ইউসা‘ (عليه السلام)-এর বদ-দু‘আ করার দরূন সে ঈমান থেকে বঞ্চিত হয়। তার পিতার নাম ছিল বাউর।
বল‘আম বিন বাউরা: তার সম্পর্কে তাফসীরে সাবি, জালালাইন, তাফসীরে রূহুল বয়ান ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ আছে। তাঁরা বলেছেন, উক্ত ব্যক্তি তার সময়কালের প্রখ্যাত আলিম, আবেদ, যাহেদ, একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন এবং তাঁর ‘ইসমে আ‘যম’ (اسم اعظم)ও জানা ছিল। তিনি নিজ স্থানে বসে স্বীয় আত্মাধিকতা বলে আল্লাহ তা‘আলার আরশে ‘আযীম পর্যন্ত দেখতে পেতেন। তিনি অনেক বড় মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন যে, তার দু‘আ মহান আল্লাহর দরবারে অধিক কবুল হতো এবং তার শিষ্যের সংখ্যাও ছিল অনেক।
প্রসিদ্ধ আছে যে, তার দরসে বা পাঠশালায় ছাত্রদের বার হাজার কালির দাওয়াত ছিল। অতএব প্রতীয়মান হয় যে, তার মাদ্রাসায় অসংখ্য হাজারো-লাখো ছাত্ররা লেখা-পড়া করতো।
হযরত মুসা (عليه السلام) যখন জালিম অত্যাচারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার লক্ষ্যে বনি ইসরাইলের মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হলেন, তখন বল‘আম বিন বাউরা সম্প্রদায়ের লোকজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তার (বল‘আম) নিকট আসল এবং বলল যে, হযরত মুসা (عليه السلام) এক বিরাট ও শক্তিশালী সৈন্য বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করার লক্ষ্যে আসছেন। তাঁর ইচ্ছা যে, আমাদেরকে আমাদের স্থান থেকে বহিষ্কার করে তাঁর সম্প্রদায় বনি ইসরাইলকে তা দিয়ে দিতে। সুতরাং আপনি হযরত মুসা (عليه السلام) এর জন্য এমন বদ-দু‘আ করুন, যাতে তিনি পরাজিত হয়ে ফিরে যান। যেহেতু আপনি ‘মুস্তাজাবুদ্ দাওয়াত’। অতএব আপনার দু‘আ অবশ্যই কবুল হবে। একথা শুনে বল‘আম বিন বাউরা কেঁপে উঠে বলতে লাগলেন, তোমাদের ক্ষতি হোক। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি! হযরত মুসা (عليه السلام) হলেন আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূল। তাঁর সৈন্য বাহিনীতে ঈমানদার ও ফিরিশতাগণের জামাআত অন্তভুর্ক্ত রয়েছেন। এমতাবস্থায় আমি তাদের বিপক্ষে কিভাবে বদ-দু‘আ করতে পারি?
কিন্তু তার সম্প্রদায়ের লোকেরা কেঁধে কেঁধে এবং বিনীতভাবে বেশী জোর করলে তিনি বলেন, ইস্তেখারা করার পর যদি অনুমোদন মিলে, তাহলে বদ-দু‘আ করব। ইস্তেখারা করার পর যখন অনুমোদন মিলেনি, তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় জবাব দিলেন যে, আমি যদি বদ-দু‘আ করি তা হলে আমার ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস হয়ে যাবে। এতদসত্ত্বেও উক্ত সম্প্রদায় অনেক মূল্যবান হাদিয়া ও উপঢৌকন তার খিদমতে পেশ করে বারবার সীমাহীন চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো। পরিশেষে বল‘আম বিন বাউরা’র নিকট এ মহা মূল্যবান হাদিয়া-তোহফার লোভ-লালসা ও আকর্ষণ প্রাধান্য পেলো। এই সম্পদের লোভ-লালসার ভূত তার ওপর সওয়ার হলো এবং ওই মাল-সম্পদের ফাঁদে আটকা পড়লো। ফলে তিনি তার ধার ওপর আরোহন করে বদ-দু‘আ করার জন্য রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে তার ধা বারবার থমকে যায় এবং মুখ ফিরিয়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি এটাকে মেরে মেরে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। পরিশেষে ধাকে আল্লাহ তা‘আলা বাকশক্তি দান করেন। সে বলে উঠলো, আফসোস! বড়ই পরিতাপের বিষয়!! হে বল‘আম বিন বাউরা! তুমি কোথায় ছিলে, এখন কোথায় যাচ্ছ? হে বল‘আম! তোমার ক্ষতি হোক, হে দুর্ভাগা! তুমি কি আল্লাহর নবী এবং মু’মিনদের দলের বিপক্ষে বদ-দু‘আ করবে?
ধার কথা শুনেও বল‘আম বিন বাউরা ফেরত আসেনি। এমনকি ‘হিস্বান’ নামক পাহাড়ের সার্বোচ্চ চুড়ায় আরোহন করে হযরত মুসা (عليه السلام)-এর সৈন্য বাহিনীর প্রতি গভীর দৃষ্টিতে দেখল এবং সম্পদের লোভে বদ-দু‘আ শুরু করে দিল। কিন্তু আল্লাহ'র শান! সে হযরত মুসা (عليه السلام)’র জন্য বদ-দু‘আ করছিল কিন্তু তার মুখ দিয়ে তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বদ-দু‘আ এসে যায়। এ অবস্থা দেখে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা কয়েক বার তাকে টোকা মারল বা বাঁধা প্রদান করলো যে, হে বল‘আম! আপনি তো উল্টো বদ-দু‘আ করতেছেন। তখন সে বললো, হে আমার গোত্র! আমি কি করব? আমি বলতেছি একটি, আর আমার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে আরেকটি? অতঃপর হঠাৎ তার ওপর আল্লাহর গজব নাযিল হয়ে তার জিহ্বা লটকিয়ে তার বক্ষের ওপর এসে যায়। তখন বল‘আম বিন বাউরা নিজ সম্প্রদায়কে কান্নাজনিত কন্ঠে বলতে লাগলো, হায় আফসোস! হে আমার সম্প্রদায়! আমার দুনিয়া-আখিরাত উভয়ই ধ্বংস এবং বরবাদ হয়ে গেছে। আমার ঈমান চলে যাচ্ছে এবং আমি আল্লাহর গজব ও শাস্তিতে গ্রেফতার হয়ে গেছি। এখন আমার কোন দু‘আ কবুল হবে না। কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রতারণা ও ধোঁকার একটি কৌশল বাত্লিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা হয়তো এমন করলে হযরত মুসা (عليه السلام)-এর সৈন্যরা পরাজয় বরণ করবে। তোমরা সুন্দরী রূপসী রমণীদের উত্তম পোষাক ও অলংকারাদি পরিয়ে সুসজ্জিত করে বনি ইসরাইলের সৈন্যদের মাঝে পাঠিয়ে দাও। যদি তাদের একজনও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পুরো সৈন্যদল পরাজিত হবে। সুতরাং বল‘আম বিন বাউরা সম্প্রদায় তার নির্দেশনা মতে ষড়যন্ত্রের জাল বেধে অসংখ্য সুশ্রী ও সুন্দরী কুমারী মহিলাকে সুসজ্জিত করে বনি ইসরাইলের সৈন্যদলে পাঠিয়ে দিল।
পরিশেষে বনি ইসরাইলের এক সরদার এক সুন্দরী ও সুশ্রী রমণীর আসক্ত হয়ে গেল। সে উক্ত রমণীকে কোলে নিয়ে হযরত মুসা (عليه السلام)-এর নিকট গেল এবং ফাতওয়া তালাশ করল যে, হে আল্লাহর রাসূল! এই রমণীটি আমার জন্য হালাল কিনা? মুসা (عليه السلام) বললেন, সাবধান! এটা তোমার জন্য হারাম, তাড়াতাড়ি তাকে পৃথক করে দাও। আল্লাহ তা‘আলার কঠিন শাস্তিকে ভয় কর কিন্তু উক্ত সরদারের ওপর যৌন উত্তেজনা এতো বেশী প্রকট হয়েছিল যে, সে আপন নবীর আদেশ অমান্য করে উক্ত রমণীকে তার তাঁবুতে নিয়ে যায় এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে যায়। উক্ত পাপাচারীর দুর্ভাগ্য ও অমঙ্গলের প্রভাবে ফলাফল এটাই হয় যে, বনি ইসরাইলের সৈন্যদলে হঠাৎ পেগ, মহামারী রোগের প্রদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে সত্তর হাজার সৈন্য প্রাণ হারায় এবং সকল সৈন্যবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে হতাশ ও নিষ্ফল ফিরে আসে। ফলে হযরত মুসা (عليه السلام) এর পবিত্র অন্তর অনেক বড় মনোবেদনায় আক্রান্ত হলেন।
270. তাফসরে ‘আজাইবুল কোরআন, কৃত আল্লামা আবদুল মোস্তফা ‘আযমী (رحمة الله), পৃষ্ঠা-১৪১।
বল‘আম বিন বাউরা পাহাড় থেকে অবতরণ করে মহান আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ও প্রত্যাখ্যাত হল। আমৃত্যু তার জিহ্বা বক্ষের সাথে ঝুলানো ছিল এবং ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আল্লাহ তা‘আলা সূরা আ‘রাফে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন,
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ .
‘হে হাবীব! আপনি তাদেরকে ওই বল‘আম বিন বাউরা-এর অবস্থা জানিয়ে দিন, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তো পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে শয়তান লেগে গেছে, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে পড়েছে।"
271. সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৫
বর্ণিত আছে যে, কতিপয় আন্বিয়া-ই কিরাম (عليه السلام) আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে আরয করলেন, হে আল্লাহ্! তুমি বল‘আম বিন বাউরাকে এতগুলো নিয়ামত ও কারামত দান করার পর তাকে কেন এতো শাস্তি ও লাঞ্ছনায় নিপতিত করলেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করলেন, সে কখনো আমার দেয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেনি। যদি সে আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতো তাহলে আমি তার কারামতগুলো ছিনিয়ে নিয়ে তাকে উভয় জগতে এভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করতাম না।"
272. তাফসীরে রূহুল বয়ান, খন্ড-৩০, পৃষ্ঠা-১৩৯
উপরোক্ত ঘটনা থেকে আমাদের কিছু উপদেশ হাসিল হয়েছে।
১. এ ঘটনা থেকে ওই সকল আলিম ও নেতৃবৃন্দের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, যারা বিত্তবান ও ক্ষমতাসীনদের থেকে টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নিয়ে শরীয়তের বিধান ও ঈমান-আক্বীদা পরিপন্থী কথা বলে থাকেন এবং জেনে-শুনে নিজের দ্বীন-ধর্ম ও ঈমান-আক্বীদার ব্যবসা করে থাকেন যে, এই ব্যবসা মূলতঃ দ্বীন ও ঈমানের পরিবর্তে পার্থিব স্বার্থ হাসিল করা। এটা অত্যন্ত মন্দ ও ঘৃণিত ব্যবসা।
দেখুন! বল‘আম বিন বাউরা কি ছিলেন এবং কি হয়েছে? এরকম হলোই বা কেন? শুধু এ কারণে যে, সে ধন-সম্পদের লোভে পড়ে প্রতারণা ও চালাকি করে সত্য ও হক্বের পরিপন্থী কথা বলেছিল। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতারণা সম্পর্কে অধিক অবগত আছেন বিধায় আল্লাহ বলেন, وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ অর্থাৎ- ‘বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন প্রতারণাকারীদের প্রতিশোধ নিতে সর্বোত্তম কুশলী।’
273. সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৪
যেহেতু জেনে শুনে আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নবীর বিপক্ষে বদ-দু‘আ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। ফলে তার ওপর এ বিপদ পতিত হয়েছিল যে, দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে অভিশপ্ত, বঞ্চিত, বিতাড়িত ও বহিষ্কৃত হয়ে সারা জীবন কুকুরের ন্যায় বের হওয়া ঝুলন্ত জিহ্বা নিয়ে ঘুরতেছিল এবং পরকালে দোযখের ইন্ধন ও জালানীতে পরিণত হলো। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান বিশেষ করে ওলামা-মাশাইখ ও পীর-বুযূর্গদেরকে পার্থিব ও ধন-সম্পদের লোভ-লালসা থেকে সর্বদা সতর্ক ও সাবধান থাকা উচিত। অবশ্যই কখনো পার্থিব ধন-সম্পদের লোভে দ্বীন-ধর্ম ও ঈমান-আক্বীদার বিষয়ে শৈথিল্য প্রদর্শন মারাত্মক অপরাধ এবং তা পরিহার করা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় ভালো করে জেনে রাখো যে, আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ও শাস্তির তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিশুদ্ধ আক্বিদা পোষণকারীদেরকে এ বিপদ থেকে হিফাযত করুন।
২. সর্বসাধারণের শিক্ষা হাসিল করা উচিত যে, হযরত মুসা (عليه السلام)-এর সৈন্যদল যেখানে মু’মিন ও ফিরিশতারা ছিলেন। একথা স্পষ্ট যে, এই দল অকৃতকার্য হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ তাঁরা এমন আধ্যাত্মিক ও মালাকুতি (ফিরিশতাকুল) বাহিনী ছিলেন যে, তাঁদের সাওয়ারী ঘোড়ার খুরের আঘাতে পাহাড় পর্যন্ত থরথর করে কাঁপতো। কিন্তু মাত্র একজন দুর্ভাগা বদ-নসীবের পাপের কারণে এমন অমঙ্গল চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো যে, ফিরিশতারা সৈন্যদল থেকে আলাদা হয়ে গেলেন এবং মহামারি পেগের আঘাতে পুরো সৈন্যদলের মাঝে এমন বিচ্ছিন্নতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো যে, সম্পূর্ণ বাহিনী বিশৃংখল হয়ে গেল এবং উক্ত দল হতাশা ও অকৃতকার্য হয়ে পশ্চাৎপদ হয়ে গেল। তাই মুসলমানদের জন্য আবশ্যক যে, তারা যদি কাফির মুশরিকদের মোকাবিলায় জয়যুক্ত ও সফলতা অর্জন করতে চায়, তাহলে সর্বদা অপকর্ম ও পাপচারিতা বর্জন করে হতাশা ও দুর্ভাগা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় ফিরিশতাদের সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে এবং মুসলমানদের প্রভাবপ্রতিপত্ত কাফিরদের অন্তর থেকে বেরিয়ে যাবে। আর মুসলমানেরা কখনো সফলতার মুখ দেখতে পাবে না। বরং তাদের সামরিক শক্তি একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। পুরা জাতি পলায়নকারী কুকুরের ন্যায় কাফির, ফাসিক ও পাপাচারীদের তরবারির খোরাকে পরিণত হয়ে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অস্থিত্বহীন হয়ে যাবে।