বিষয় নং- ০৬: রাসূল (ﷺ)-এর তারকা রূপ
‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৯৫ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান বিকৃতি করে এ হাদিসকে জাল প্রমাণ করার হীন চেষ্টা করেছেন, যেমনটি করেছেন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার জঘন্য কিতাব ‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ৩২৩ পৃষ্ঠায়। মাওলানা মুতীউর রহমান হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করেন-‘‘রাসূল (ﷺ) হযরত জিবরাঈল عليه السلام কে তাঁর বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, একটি তারকা প্রতি সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হত, আমি সেটি সত্তর হাজার বার উদিত হতে দেখেছি। এতে আপনি আমার বয়স আন্দাজ করে নিন। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সেটিই ছিল আমার নূর।’’
অথচ মূল কিতাবে রয়েছে ‘এভাবে আমি ৭২ হাজার বার উদিত হতে দেখেছি’ আর তারা বাংলায় লিখেছে ৭০ হাজার বার দেখেছি, যা মিথ্যা ও ধোঁকাবাজীর নামান্তর। তারপর জিবরাঈল عليه السلام রাসূল (ﷺ) কে নাকি বলেছেন, ‘এতে আপনি আমার বয়স আন্দাজ করে নিন’, অথচ মূল কিতাবে এমন কোন কিছুই নেই যা তারা সম্পূর্ণ বিকৃতি করে বর্ণনা করেছেন।
দুপণ্ডিতের এক পণ্ডিতও তাদের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার একক অভিমত ছাড়া আর কোনো দলিল খুঁজে বের করতে পারেননি। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩২৩ পৃষ্ঠায় এ হাদিসকে জাল বলার প্রমাণ হিসেবে ইবনে তাইমিয়ার মাজমাউল ফাতওয়ার গ্রন্থের বরাত টেনেছেন, আফসোস! যে এ সমস্ত সত্যগোপনকারী মৌলভীগণ নিজেদের ইমামের নামেও মিথ্যাচার করেন। ইবনে তাইমিয়া তার গ্রন্থে জাল বলা তো দূরের কথা তিনি এ হাদিস নিয়ে আলোচনাই করেননি।
❏ ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন-
عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سأل جبريل عليه الصلاة والسلام فقال يا جبريل كم عمرت من السنين؟ فقال يا رسول الله لست أعلم، غير أن في الحجاب الرابع نجما يطلع في كل سبعين ألف سنة مرة، رأيته اثنين وسبعين ألف مرة فقال: يا جبريل وعزة ربي جل جلاله أنا ذلك الكوكب-
-‘‘বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয়ই একদা নবী পাক (ﷺ) জিবরাঈল عليه السلام কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বয়স কত? জিবরাঈল عليه السلام আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! (আমার বয়স সম্পর্কে) আমি জানি না, তবে চতুর্থ পর্দায় একটি নক্ষত্র প্রতি সত্তর হাজার বছর পর পর একবার উদিত হতো, তাকে আমি ৭২ হাজার বার দেখেছি। নবী করীম (ﷺ) ফরমালেন, হে জিবরাঈল! আমার প্রতিপালকের ইজ্জতের কসম। আমিই ছিলাম সেই নক্ষত্র।’’ ১২৫
➥{ইমাম বুখারী : আত তাশরীফাতে ফি খাসায়েস ওয়াল মুজিজাত : ২/২৫৪ পৃ., ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবী শাফেয়ী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১ম খণ্ড : পৃ-৪৯, তিনি ইমাম বুখারীর সূত্রে, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৩/৫৪৩ পৃ: ৩য় খণ্ড : সূরা তাওবা : আয়াত : ১২৮, আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৩৯ পৃ. নিজস্ব বর্ণনা অনুসারে কারও মতামত উলেখ ছাড়া হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, আল্লামা শফি উকাড়ভী : যিকরে হাসীন : ৩০ পৃ.}
পর্যালোচনা:
ইমাম বুরহান উদ্দিন হালাবী আশ শাফেয়ী (رحمة الله) একজন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস তার উপর কোন অভিযোগ নেই।
❏ আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী (رحمة الله) কিতাবের ভূমিকায় বলেন,
ولا يخفى أن السير تجمع الصحيح والسقيم، والضعيف والبلاغ، والمرسل والمنقطع والمعضل دون الموضوع،-
-‘‘সীরাত গ্রন্থ সমূহে সহীহ, সাক্বীম, দ্বঈফ, বালাগ, মুরসাল, মুনকাতা ও মু‘দাল হাদিস সমূহ একত্রিত করা হয়, কিন্তু মওদ্বু বা জাল হাদিস নয়।’’ ১২৬
➥{আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১ম খণ্ড : পৃ-৭}
অপরদিকে সীরাতবিদগণ বলেছেন نجم‘‘তারকা’’ রাসূল (ﷺ)-এর নামসমূহের অন্যতম একটি। রাসূল (ﷺ)-এর নূরানী সত্ত্বাকে তারকা বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। যেমন অনেক স্থানে কুরআনে পাকের সূরা ‘‘ওয়ান্নাজম’’ এর মধ্যে মজবুত যোগসূত্র পাওয়া যায়। অনেক তাফসীরকারক সূরা নাজম এর ‘আন-নাজম’ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, তাদ্বারা রাসূলে করীম (ﷺ) উদ্দেশ্য।
❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله)সহ একজামাত মুফাসসিরানে কিরাম উল্লেখ করেন-
وَقَالَ جَعْفَرُ بْنُ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ: (وَالنَّجْمِ) يَعْنِي مُحَمَّدًا ﷺ (إِذا هَوى) إِذَا نَزَلَ مِنَ السَّمَاءِ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ.-
-‘‘ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) বলেন, আন-নাজম বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। إِذا هَوى দ্বারা রাসূল (ﷺ) মি‘রাজ রজনীতে আসমান হতে যমিনে অবতরণ কে বুঝানো হয়েছে।’’ ১২৭
➥{ইমাম বগভী : মুআলিমুত তানযিল : ৪/৩০১ পৃ., ইমাম কুরতুবী : জামিউল আহকামুল কোরআন : ১৭/৮৩ পৃ., আল্লামা আলূসী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ১৪/৪৪ পৃ., আল্লামা কাজী সানাউল্লাহ পানীপথী : তাফসীরে মাযহারী : ৯/১০৩ পৃ., আল্লামা সাভী : তাফসীরে সাভী : ৪/১২৯ পৃ., ইমাম খাযেন : তাফসীরে খাযেন :৪/২০৩ পৃ., আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৯/২০৮ পৃ., ইমাম ছালাভী, তাফসিরে ছালাভী, ৯/১৩৫ পৃ.}
বুঝা গেল এ হাদিসটির মমার্থ সহীহ হওয়ার পক্ষে কোরআনুল কারীমের আয়াত এবং সাহাবী তাবেয়ীদের তাফসির দ্বারা প্রমাণ রয়েছে।