দ্বীনের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে নিহত শহীদ আর অন্যান্য শহীদের মধ্যে মর্যাদার তারতম্য অবশ্যই বিদ্যমান।সাথে থাকুন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন!!
🌺শহিদের পরিচয়🌺
❏ ১. প্রত্যেকটি মানুষকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেন-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।
[সুরা-আল ইমরান,আয়াত নং ১৮৫]
❏ মৃত্যু (Death) বলতে একটি জীবনের সমাপ্তিকে বুঝায়।অস্বাভাবিক মৃত্যু যার একটি অংশ হল শহীদি মৃত্যু।মৃত্যুর মধ্যে সর্বোত্তম ও সম্মানজনক মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বারবার শাহাদত কামনা করেছেন।কেননা শহীদি মৃত্যুর জন্য যে আত্মত্যাগ, ধৈর্য,মনোবল ও আল্লাহভীতি দরকার হয় তা সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভবপর নয়।
❏ শাহাদাত পিয়াসী নবীর উম্মত হিসেবে মুসলমান মাত্রই শাহাদাতের আশা করা ও এ জন্য নিম্নোক্ত দোয়া করা উচিত।‘আল্লাহুম্মার যুকনি শাহাদাতান ফি সাবিলিক।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত নসীব করো।
❏ শহিদ’ (আরবি: شهيد šahīd, বহুবচনে: شُهَدَاء শুহাদাʾ ; স্ত্রীবাচক: শাহিদা) শব্দটি হলো পবিত্র কুরআনের তথা আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো সাক্ষী। এছাড়াও এর অন্য অর্থ হলো আত্ম-উৎসর্গ করা।
সাধারণত কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিকেই শহীদ মনে করা হয়।যদিও রাসুলুল্লাহ ﷺ উক্ত ব্যক্তি ছাড়া আরও অনেক মৃতকে শহীদি মর্যাদা লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন।এক্ষেত্রে তিনি এমন সব মৃত ব্যক্তিকেও শহীদ হিসেবে গণ্য করেছেন,যাদের মৃত্যুকে সাধারণত ‘অপমৃত্যু’ বলে মনে করা হয় (নাউজুবিল্লাহ)।
❏ ২. শহিদের পরিচয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে বলেন-
وَلِيَعْلَمَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاء وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
‘এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহিদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আল্লাহ অত্যাচারীকে ভালোবাসেন না।’
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ১৪০]
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে শহীদি মর্যাদা হাসিলের জন্য ঈমানদার হওয়া চাই।কারণ আল্লাহপাক ঈমানদারদের থেকে শহিদ আশা করেছেন آمَنُواْ শব্দটি পার্থক্য করেদিয়েছেন যে শহিদ হওয়ার জন্য একত্ত্ববাদের উপর বিশ্বাস থাকতে হবে।এবং তাদের শহীদি যেন আল্লাহর দ্বীনের জন্য হয় অর্থাত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ (জিহাদে ফি ছাবিলিল্লাহ) হয়।
❏ নবী করিম সল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘আমাদের মধ্যে যে শহিদ হলো সে জান্নাতে গেল’।ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের শহিদ হলো জান্নাতি আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামি নয়?’ রাসূল সল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘হ্যাঁ’।(সহীহ বুখারি)
❏ ৩. আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَنْ يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।
[সূরা নিসা,আয়াত নং ৭৪]
🌻উপরোক্ত আয়াতে শহীদ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।এভাবে সুরা মুহাম্মদে আরো কিছু আয়াত রয়েছে শহীদ সম্পর্কে ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির তথা তৎকালিন আরবের লোকেরা প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহে ওয়া সাল্লাম নবুয়তের দাওয়াত দিতে গেলে অস্বীকারকারী কাফেরদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করার সময় যে সমস্ত বীর সাহাবায়ে কিরাম আজমাঈন আল্লাহর রাস্তায় নিজের মূল্যবান জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তারাই শহিদ।যার ব্যাপকতাপায় গজওয়ায়ে বদর ও উহুদসহ অন্যান্য প্রসিদ্ধ যুদ্ধে।ইচ্ছে করলেই যে কেউ শহীদি মর্যাদা ও সম্মান লাভ করতে পারে না।এর সম্মান লাভ করতে হলে বিশেষভাবে যোগ্যতা অর্জন করা বাধ্যতামূলক।আর সে যোগ্যতা হচ্ছে, আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে রাসুল সল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহে ওয়া সাল্লামের দেখিয়ে দেয়া রাহে জীবন উৎসর্গ করা।
❏ ৪. রাসুল সল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
” من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله “
যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করল,সে প্রকৃত মুজাহিদ। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ)
❏ ৫. রাসুল সল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে অথবা নিহত হয়,সে ব্যক্তি জান্নাতী এবং শহীদ
[ইবনু মাজাহ ২৯১০,মিশকাত৩৮১১]
❏ ৬. দ্বীনের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে নিহত শহীদ আর অন্যান্য শহীদের মধ্যে মর্যাদার তারতম্য থাকবে।মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ও কাফন দেওয়ার দিক বিবেচনায় শহীদ দুই প্রকার।
*(ক.) হাকিকি বা প্রকৃত শহীদ
*(খ.) হুকমি বা বিধানগত শহীদ
🌳হাকিকি বা প্রকৃত শহীদের শর্ত🌳
হাকিকি বা প্রকৃত শহীদ হল যিনি দুনিয়া-আখেরাত উভয় বিচারে শহীদ। তাকে গোসল করানো হয় না। কাফন দেওয়া হয় না। বরং যে কাপড়ে সে শহীদ হয়েছে,সে কাপড়েই জানাজা পড়ে দাফন করা হয়।
❏ তবে নিম্নোক্ত শর্তাবলি পাওয়া গেলে তাকে হাকিকি শহীদ বলে গণ্য করা হবে:
(ক) মুসলমান হওয়া।
(খ) প্রাপ্তবয়স্ক ও বোধসম্পন্ন হওয়া।
(গ) গোসল ফরজ হয়,এমন নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়া।
(ঘ) বেকসুর নিহত হওয়া।
(ঙ) মুসলমান বা জিম্মির হাতে নিহত হলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হওয়াও শর্ত। আর যুদ্ধ কবলিত এলাকায় কাফিরের হাতে অথবা ইসলামি খিলাফতের বিদ্রোহী ডাকাতের হাতে নিহত হলে ধারালো অস্ত্রের আঘাত শর্ত নয়।
(চ) এমনভাবে নিহত হওয়া যার শাস্তি স্বরূপ প্রাথমিক পর্যায়েই হত্যাকারীর ওপর কিসাসের বিধান আরোপিত হয়।
(ছ) আহত হওয়ার পর কোনোরূপ চিকিৎসা ও জীবনধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়াদি যেমন- খানাপিনা, ঘুমানো ইত্যাদির সুযোগ না পাওয়া। হুঁশ অবস্থায় তার ওপর এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত না হওয়া। পদদলিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে হুঁশ অবস্থায় লড়াইয়ের ময়দান থেকে তাকে উঠিয়ে না আনা।
হুকমি বা বিধানগত শহীদের শর্ত
❏ হুকমি বা বিধানগত শহীদ হল যিনি নবি করিম ﷺ এঁর সুসংবাদ মোতাবেক পরকালে শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। কিন্তু পৃথিবীতে তার ওপর প্রথম প্রকার শহীদের বিধান জারি হবে না। অর্থাৎ সাধারণ মৃত ব্যক্তির মতো তাঁকেও গোসল-কাফন ইত্যাদি দেওয়া হবে।
অন্য মতে শহীদগণ তিন শ্রেণীর
*(ক.) যারা দুনিয়া ও আখেরাতে শহীদ। তারা হলেন,কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত মুমিন ব্যক্তি
*(খ.) আখেরাতে শহীদ।তারা হলেন উপরে বর্ণিত অন্যান্য শহীদগণ
*(গ.) দুনিয়াতে শহীদ;আখেরাতে নয়। তারা হ’ল, যুদ্ধের ময়দানে গণীমতের মাল আত্মসাৎকারী অথবা জিহাদ থেকে পলাতক অবস্থায় নিহত ব্যক্তি।অর্থাৎ লোক দেখানো কপট শহীদ।
[ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৯১]