জিজ্ঞাসা-৩৪:যদি কেউ বিগত জীবনে খুন ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ করে পরবর্তী জীবনে পীর সাহেব হয়ে যায় তখন তার প্রতি ইসলামের রায় বা মন্তব্য কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।–Rezaul Karim
জবাব : কাউকে খুন বা ধর্ষণ করলে সেখানে দুইটি অপরাধ সংঘটিত হয়। একটি হল বান্দার হকের ক্ষেত্রে। আরেকটি হল আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে।
বান্দার হক হল এই যে, এক্ষেত্রে খুনকারী বা ধর্ষণকারীব্যক্তি নিহতব্যক্তি বা মহিলার উপর জুলুম করেছে। যার ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তে যথাযথ দন্ডবিধি রয়েছে। যেমন এক হাদিসে এসেছে ‘তিনটি অপরাধের দরুণ একজন মুসলিমকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায় । ১. বিবাহিত হয়েও ব্যভিচার করলে । ২. কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে । ৩. নিজ ধর্ম (ইসলাম) ত্যাগ করলে ।‘… {তিরমিজী শরীফ – ১৩৪২ }
আরেকটি হল আল্লাহর হক তথা জিনা করা এবং খুন করা নিষিদ্ধ। আর খুন বা ধর্ষণ করার দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এ নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে। তাই এতে লোকটি কবীরা গোনাহ করেছে। আর কবীরা গোনাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কায়মানোবাক্যে সহীহ পদ্ধতিতে তওবা করার দ্বারা ক্ষমা হয়ে যায়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন পবিত্রতা অর্জনকারীদের।'{সূরা আল-বাকারা,আয়াত- ২২২}
রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“বনী ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল। অতঃপর তাকে একজন খৃষ্টানপাদ্রীর কথা বলা হ’লে সে তার নিকট এসে বলল যে, সে নিরানব্বইজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য তওবার কোন সুযোগ আছে কি? পাদ্রী বলল, নেই। ফলে লোকটি পাদ্রীকেও হত্যা করল। এভাবে তাকে হত্যা করে সে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করায় তাকে একজন আলেমের কথা বলা হ’ল। সে তাঁর নিকট গিয়ে বলল যে, সে একশ’জনকে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তওবার কোন সুযোগ আছে কি? আলেম বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তার ও তার তওবার মাঝে কিসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহ্র ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে ইবাদত কর। আর তোমার দেশে ফিরে যাবে না। কেননা ওটা খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল।
অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হ’ল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ও আযাবের ফেরেশতামণ্ডলীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোকটি নিখাদ তওবার মাধ্যমে আল্লাহ্র দিকে ফিরে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতা বলল, লোকটিতো কখনও কোন ভাল কাজ করেনি। এমন সময় অন্য এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের নিকট আগমন করলেন। তখন তারা তাকেই এ বিষয়ের শালিস নিযুক্ত করল। তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখ। যে দিকটি নিকটবর্তী হবে, সে দিকেরই সে অন্তর্ভুক্ত হবে’। আল্লাহ তা‘আলা সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পিছনে ফেলে আসা স্থানকে আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে যাত্রা করেছিল, তারা তাকে সেদিকেরই এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী পেল। ফলে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হ’ল এবং রহমতের ফেরেশতা তার জান কবয করল। {আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হ’তে বর্ণিত, বুখারী হা/৩৪৭০, মুসলিম হা/২৭৬৬, মিশকাত হা/২৩২৭ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ}
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, তাওবার শত পূরণ করে তাওবা করলে ইসলামের দৃষ্টিতে যেকোনোব্যক্তি আল্লাহর ওলি (হক্কানী পীর) হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ {সূরা নিসা-১৭-১৮}
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী