গ্রামাঞ্চলে ত্রাণ ঠিকমতো যাচ্ছে না। দুর্গতরা তা হাতেও পাচ্ছে না। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পরিষদে যেতেই ত্রাণের বড় অংশ লুটেপুটে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।
ফলে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আস্থাভাজন নয় এমন শ্রমজীবী অনেক মানুষকে অর্ধাহারে-অনাহারেও থাকতে হচ্ছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীভাঙনে জর্জরিত বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের গ্রামের অনাহারী মানুষের কাছ থেকে এমন অভিযোগ আসছে।
১০ টাকা কেজির চালের কার্ড জালিয়াতি, সরকারি ত্রাণ বণ্টনে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে চরাঞ্চলে। ত্রাণ চাইতে গিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হাতে নাজেহালও হচ্ছেন অনেকে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ও বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবী ও কৃষি শ্রমিক।
তবে কিছু মানুষ রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে, কিছু মানুষ ইটভাটায় কাজ করে এবং কিছু মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। এখন সবকিছুই বন্ধ। করোনার প্রকোপে পরিবার নিয়ে তারা গ্রামে ফিরেছেন। কিন্তু গ্রামে কোনো কাজ নেই।
ফলে পরিবার নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। শহরে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ ছাড়াও সরকারি উদ্যোগে ওএমএসসহ বিভিন্ন সহায়তা চালু থাকলেও চরাঞ্চলে নেই বিশেষ সহায়তা কার্যক্রম।
ত্রাণ বিতরণে চকরাজাপুর ইউনিয়নে চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীভাঙন কবলিত ও দুর্গত এলাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সব কার্ড ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আলম নিজের কাছে রেখেছেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী কার্ড থাকার কথা কার্ডধারী হতদরিদ্র মানুষের কাছে।
ইউনিয়নটিতে এক হাজার ১২৯ জন হতদরিদ্রের কার্ড রয়েছে। তবে ডিলার মিজানুর রহমানের দাবি- তিনি কার্ডধারীদের হাতে কার্ড তুলে দিয়েছেন। অন্য সুবিধাভোগীদের কার্ড চেয়ারম্যানের কাছে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ তার কাছে অভিযোগও করেনি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে এক হাজার ১৯০টি হতদরিদ্রের কার্ড রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নিজেদের লোক বিবেচনায় সচ্ছল ব্যক্তির নামে কার্ড দিয়েছেন। কিন্তু হতদরিদ্র মানুষ কার্ডবঞ্চিত।
১০ টাকা কেজি চালের কার্ডের তালিকা সংশোধন করা হলেও সচ্ছলরাই আবার তালিকায় স্থান পেয়েছে। করোনার বিভিন্ন সহায়তাও হতদরিদ্রদের বদলে সচ্ছলদের হাতেই যাচ্ছে।
চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে ভুক্তভোগীরা ত্রাণ চেয়েও পাচ্ছেন না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে পাকা, দুর্লভপুর ও উজিরপুর ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষের বাস। অধিকাংশ মানুষ এখন বেকার ও কর্মহীন। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এসব এলাকায় ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ।
ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা প্রশাসনে অভিযোগ দিয়েও চাল আত্মসাৎকারী ডিলার, চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং খাদ্য কর্মকর্তার দৌরাত্ম্য একটুও কমেনি। আগের মতোই গরিবের বরাদ্দ সরকারি সহায়তা আত্মসাতের প্রতিযোগিতা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের মদদ দিচ্ছেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এজেএম নুরুল হক বলেন, অনিয়ম চিহ্নিত করে হতদরিদ্রদের হাতে ত্রাণ ও সরকারি সহায়তা পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও কেউ অনিয়ম করলে তার কাছে সরাসরি অভিযোগ করার কথা বলেছেন।
Source: Daily Jugantor.
Source: Daily Jugantor.