স্ট্র্যাটেজি: একজন নবী-বিদ্বেষী লেখিকা ও আমাদের করণীয়
-----

 আমাদের প্রিয়তম রাসূল দ. কে সে ঘৃণ্যভাবে অবমাননা করেছে। লিখিতভাবে। বারংবার। এবং অবমাননা করার সময় সে সরাসরি মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। যেটা সত্য না, সেটা বলেছে।

সে পৃথিবীব্যাপী ইসলামবিদ্বেষী ফান্ডিংপ্রাপ্ত এক লেখকসংঘের বাংলাদেশি শাখায় আছে। এই লেখকসংঘকে আমরা হাড়ে হাড়ে চিনি। কীভাবে এরা কাজ করে, কীভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, কীভাবে ইসলামোফোবিয়ার লেখকদের তৈরি করে, জানি। দেশে বিদেশে ঘোরায়, অজস্র টাকা খরচ করে, বিভিন্ন কোর্স-কারিকুলাম-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ফ্রিতে করায়, অ্যাওয়ার্ড পাইয়ে দেয়, বিভিন্ন ভাষায় লেখা অনুবাদ করিয়ে দেয়। ওটা নাস্তিকতার সংঘ নয়, নাস্তিকতা এক জিনিস, ইসলাম বিদ্বেষ আরেক জিনিস।

এরা হঠাৎ করে এসব লেখে না। এরা হঠাৎ করে ভুলভাল লেখে না। এরা ভুল করে ভুল করে না। ইচ্ছা করেই ‘ভুল’ করে। এদের ভিতর একটা লার্কিং সার্পেন্ট আছে, ওটা খুব পরিকল্পনা করে বেরিয়ে আসে।

আমরা তার নাম জানি। তার ছদ্মনাম জানি। তার ফেসবুক আইডি জানি। যে গ্রামে তার জন্ম সে গ্রামের নাম জানি। যে স্কুলে সে পড়েছে সেই স্কুল জানি। এখন কোথায় থাকে তাও জানি। কী পেশা তাও জানি। এক্সাক্টলি কোথায় কাজ করে তাও সম্ভবত জানি। তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা জানি, কোন কোন প্রকাশক প্রকাশ করেছেন তাও জানি। প্রাপ্ত পুরস্কারের সংখ্যা জানি। কাদের সঙ্গ পেয়ে সে এমন হলো তাও জানি। কাদের সমর্থন পাচ্ছে, তাও জানি।

শুধু যে আমি একা জানি তাই নয়, বাংলাদেশের সূফিপন্থীদের বড় বড় কয়েকজন স্ট্র্যাটেজিক লিডারও এসব জানেন। তারা জানেন, তাই আমি জানি। এগুলা সিম্পল বিষয়, নেটসার্চ করতে জানলে এখন মানুষজন যে কোন খবরই বের করতে পারে।

একটা কথা মনে রাখতে হবে,
যে পর্যন্ত কৌশলকে কৌশল দিয়ে জিততে না পারবেন, সে পর্যন্ত:

১. আপনি জিতলেও আপনার প্রতিপক্ষ জিতবে,
২. আপনি হারলেও আপনার প্রতিপক্ষ জিতবে,
৩. আপনি নিউট্রাল থাকলেও আপনার প্রতিপক্ষ জিতবে।

কীভাবে?

১. ‘বিজয়’: হামলা করার তো প্রশ্নই ওঠে না। নিজের হাতে কোন সভ্য মানুষ আইন তুলে নেয় না। বিজয় মানে আপনি জনমত তৈরি করে তাকে দেশছাড়া করলেন। লেখা নিষিদ্ধ করালেন। এটা আপনার বিজয়। সফলভাবে দ্বিতীয় তসলিমা নাসরিন হবে। সে অন্যদেশে আশ্রয় নিল। তাকে দেশছাড়া করার আন্দোলনে ‘মেরে ফেল পুড়িয়ে ফেল’ বললেন। সেসব ভিডিও করা হবে। সারা পৃথিবীতে যতদিন এই মহিলা থাকবে, ততদিন এই ভিডিওগুলো থাকবে এবং এই ভিডিওগুলো দিয়ে ‘ইসলাম যে খারাপ’ সেটা প্রমাণ করা হবে। মুসলিমদের উলুলুলু জঙ্গলি প্রমাণ করা হবে। অনেক পটেনশিয়াল মুসলিম আর মুসলিম হবে না। অনেক পটেনশিয়াল মুসলিমপ্রেমী হয়ে উঠবে মুসলিম বিদ্বেষী। তার তো খুশিই খুশি। রাজার হালে থাকবে, রাজার হালে খাবে, জ্ঞানী গুণীদের মধ্যে বক্তব্য দিবে। তার রাজার হালে থাকা দেখে দলকে দল পোলাপান ইসলামবিদ্বেষী হবে। ট্রেন্ড হবে ইসলাম বিদ্বেষের।

২. ‘পরাজয়’: তাকে নিয়ে অনেক নর্তন কুর্দন করলেন। তাকে দেশছাড়া করতে পারলেন না। তার লেখাও নিষিদ্ধ করতে পারলেন না। আপনার পরাজয় হল। বরং তাকে ভাইরাল করে দিলেন। তার আইডিতে গিয়ে গালাগালি করবে, সেসব গালাগালির স্ক্রিনশট বিবিসি সিএনএন ব্যবহার করবে। ব্যবহার করবে সবাই। এখনো ইসলামবিদ্বেষী স্ট্র্যাটেজিস্ট ছাড়া কেউ তাকে চেনে না। তার আইডিতে মাছিও বসে না। এখনো তার ফলোয়ার নেই। তার ফেসবুক টুইটার লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার হবে। সে নীল পাড়ের শাড়ি পরলে প্রথম আলোয় খবর আসবে, লেখিকা অমুক নীল পাড়ের শাড়ি পরেছেন। উল্টায় ফেলেছেন। তাকে নিয়ে বিবিসি সিএনএন ডয়চে ভেলে সাত পর্বের ধারাবাহিক সংবাদ করবে। শিরোনাম হবে, ‘বাংলাদেশের যে অগ্নিকন্যা আধুনিক তরুণ তরুণীদের হৃদয় জয় করেছেন...’

৩. ‘নিউট্রাল’ : আপনি নিউট্রাল থাকবেন? কী লাভ হবে? তাকে ভাইরাল করা হবে। যদি আপনি করে না দেন, অন্য কাউকে দিয়ে করানো হবে। একটু ধীরে হবে, কিন্তু কাজ হবে।

এই মহিলাকে বসানো হয়েছে বাংলাদেশে ইসলাম বিদ্বেষের যে ভাটা পড়ছে, সেই ভাটায় নতুন জোয়ার আনার জন্য। সে নেক্সট তসলিমা নাসরিন। সে নেক্সট ধর্মকারী ব্লগ। তবে আশার কথা হল, মহিলা মিডিওকারও না, লোয়ার ক্লাসের ইন্টেলেক্ট তার। একটু আপার লেভেল হলে সে অনেক কাজে লাগতো, আপটু দ্য মার্ক না।

পোলাপান নাস্তিকতার ভাটা দেখে আর নাস্তিক হতে চায় না। আর ইসলাম বিদ্বেষী হতে চায় না। এই ভাটায় নতুন জোয়ার তাদেরকে দিয়ে আনা হবে।

এখন, কী সেই স্ট্র্যাটেজি হতে পারে, যে স্ট্র্যাটেজিতে তাকে সেইরকম আইকনিক ভাইরাল না করে দিয়েও বাংলাদেশে মুসলিম বিদ্বেষের, বিশেষত রাসূল দ. বিদ্বেষের নেক্সট আপরাইজিং বন্ধ করা যায়?

কিছু মানুষ সেটা নিয়ে ভাবছেন। আলোচনা করছেন। বাংলাদেশের সূফিপন্থী সবগুলো গ্রুপের সাথে সমন্বয় করে এগুনোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমাদের জান ও ঈমান রাসূল দ.’র প্রতি অপবাদ যারা দেয়, তাদের সভ্যভাবে নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া হল কৌশলকে কৌশল দিয়ে পরাভূত করার প্রক্রিয়া।

আমাদেরকে সময়মত সিভিলাইজড পদ্ধতিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষের চোখে ইসলাম ও মুসলিমরা ‘উলুলুলু’ হিসাবে উপস্থাপিতও না হয়, আবার নৈতিকভাবে তাদেরকে পরাভূতও করা যায়, এভাবেই এগুতে হবে।

আপাতত আইনগতভাবে প্রতিরোধের পরিকল্পনা চলছে, জনমত গঠন ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদের সময় আমরা সক্রিয় থাকতে যেন পারি।
Top