সূফিদের ইসলাম, ইসলামের সূফি: তিন লাখ নওমুসলিম এক মহাদেশে, এই যুগে, কিন্তু কীভাবে?
-----
এভার ওয়ান্ডার, হাউ উই বিকেইম মুসলিমস?
সূফিরা তো ‘ভাষাও জানতেন না’, লোকাল ভাষায় কথাও বলতেন না, সূফিরা তো এক কাপড়ে সফর করে চলে এসেছেন বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান ইন্দো মালয়ে। তার পরও এখানে হাজার বছর ধরে ইসলাম প্রমিনেন্ট। কীভাবে!
এভাবে:
এই যুগেও ঠিক এভাবে হয়।
তিঁনি আফ্রিকান একেবারে প্রান্তিক, ‘জঙ্গলী’ একটা গোষ্ঠীর কাছে গেলেন।
বকবক বকবক করে কথা বলতে থাকলেন না।
চুপচাপ ভালবাসা দিলেন।
গোত্রপতিকে বললেন, দেখো, আল্লাহ্ তো এক, তাই না? তুমিও তো বোঝ! আসো, আমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ দ.’ পড়ি। সত্য কে না নিতে চায়? কে না সত্য হতে চায়? তুমিও চাওরে ভাই। আসো, সত্য নিয়ে ফেলি।
সরদার জানে, সবাই ট্রিক করে। সবাই ট্রিক করে নিজের মতে নিতে চায়। নিজের ধরন বানাতে চায়। নিজের সভ্যতার শেকল পরাতে চায়। আফ্রিকানরা আর কোনও শেকল পরতে রাজি না। তারা নিজেকে আর বদলাতে রাজি না। সে অনেক বুঝেশুনে বলল, আমাদের আবার পাল্টে যেতে বলো না। বদলে যেতে বলো না। তোমাদের মত হয়ে যেতে বলো না। এটা যখন সত্যি, তখন যাও, সত্যিটাকে অন্তরে মেনে নিব। চলবে?
চলবে। সবাই মুসলিম হয়ে গেল ওই গোত্রের।
ঈদের সময় এলো। লোকজন তখনো ‘তাঁকে’ কাছে পায়। দেখে। তিঁনি সরদারকে বললেন, ঈদে যদি এই দুটা রাকাত নামাজ পড়ো, তখন সবার সাথে সামাজিক মেলামেশাও হবে। সবাই মিলে আনন্দ করব। ঈদতো আনন্দ।
ভালই তো। হোক।
হলো। সরদারের খুব ভাললাগলো। তিঁনি কিছুদিন পর জানালেন, জুমআর নামাজেও দু’ রাকাত মাত্র পড়তে হয়। সুন্দর পোশাক পরে একত্রে বসে থাকা যায়। এটাও আনন্দ।
সরদারের মনে হল, হ্যা। তাইতো, এটাও আনন্দ।
এর বহুদিন পর তিঁনি বললেন, একটা মাত্র রাকাত বেশি। মাগরিব। সারাদিন কাজকর্ম করে আমরা হয়রান হয়ে যাই না? সবাই বাসায় যাই। তার আগে যদি ক্লান্তিটা দূরে সরিয়ে ফেলি, কেমন হয়? বাসায় যাবার আগে যদি সবাই একসাথে একটু বসি। মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে না!
হ্যা, প্রিয়, আপনি অলরেডি জানেন যে, কিছুদিনের মধ্যে ওই গোত্রের সব মানুষ ভালবাসার সাথে ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাহ্ সবই আদায় করা শুরু করল এবং সেটা অভ্যাসও হয়ে গেল।
এই ঘটনা দিয়েই কি তিন লক্ষ মুসলিম হল? নারে ভাই। তিন লক্ষ মুসলিম বানানোর কাহিনির এইটা একটা ছোট্ট পার্ট। অন্য কাহিনি অন্যরকম, ভিন্নরকম। ভিন্নরঙা।
কে তিঁনি? তিঁনি প্রত্যেক সূফির প্রতিচ্ছবি।
তিঁনি আফ্রিকায় জীবন কাটালেন, তাঁর পিতা? ওই মহান সূফি ইন্দোনেশিয়ায়। তাঁর মাতা ছিলেন হাফিযা, দুগ্ধপান করানোর সময় কুরআন শুনাতেন ছেলেকে। নানা ছিলেন আরেক ওয়ালিউল্লাহ্।
তিঁনি সারা আরব-আফ্রিকা চষে বেড়াচ্ছেন, অথচ মদিনায় সম্ভ্রমে মুহাব্বাতের খাওফে প্রবেশ করেন না। রাসূল দ. ঘুমে তাঁকে বললেন, ‘পুত্র আমার! আমরা তোমাকে মদিনায় যখন খুশি আসা ও যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি।’
বৃক্ষ! বৃক্ষ! বৃক্ষহে! তোমার নাম কী?
বৃক্ষের কোন নাম হয় না,ফলে পরিচয়।
তিঁনি আমাদের একজন সাইয়্যিদ। তিঁনি নবী ﷺ ‘র একজন পুত্র। ইমাম যাইন আল আবিদিন রা.’র স্বভাব ও কর্ম তাঁর অন্তর ও রক্তে প্রবাহিত। হাবিব আহমাদ মাশহুর আল হাদ্দাদ। একজন মানুষ। তাঁর হাতে হাতি নেই, ঘোড়া নেই, স্মার্টফোন নেই, সোশ্যাল মিডিয়া নেই, টিভি চ্যানেল নেই, বস্তা বস্তা কুরআনের তাফসির এবং হাদিসের গ্রন্থ নিয়েও যাননি।
বৃক্ষ! তোমার নাম কী?
জিগ্যেস করো না নাম, ফলে পরিচয়।
তিঁনি যা নিয়ে গেছেন, তা নিয়ে দেখেছেন, তা দিয়ে জয় করেছেন। সূফিত্ব। এই জয় অবশ্যই রাজ্যজয় নয়, ডার্টি ট্রিকস করে মুসলিম করা নয়, এই জয় অন্তর জয়, অন্তরে আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে জয়।
হাবিব আহমাদ বলেছেন, ‘আমাদের রাসূল দ. বলেছেন কম, করেছেন বেশি।’
তিঁনি এক দেশে থাকেননি, এক গোত্রে থাকেননি। এক অঞ্চলে থাকেননি। একভাবে কাজ করেননি।
হাবিব আহমাদ গেলেন উগান্ডায়। মানুষ বিভিন্ন স্থানীয় ধর্মের পূজায় লিপ্ত। কেউ খ্রিস্টান। কিছু সংখ্যক কাদিয়ানি এবং ইসমাঈলী আছে কারণ কাদিয়ানি ও ইসমাঈলীরা ড্যাম গুড প্রিচার। স্থানীয় প্যাগানরা এসব মত ধারণ করছে অথবা নিজের মত থাকছে। বাকী মুসলিম কমুনিটিতে ইসলামের নাম গন্ধও নেই। কেউ অজ্ঞেয়বাদী হয়ে গেছে, কেউ হয়ে গেছে ভোগবাদী, কেউ নীতিতেও বামপন্থী। আহ, তিনি কত মূলধারার সাবেক মুসলিম যে পেলেন, যারা খ্রিস্টান হয়ে গেছে, যারা কাদিয়ানি হয়ে গেছে, যারা ইসমাঈলী হয়ে গেছে। বাকী অনেকে হয়ে গেছে চরমপন্থী। সবাইকে মেরে ফেলবে। সবাইকে কেটে ফেলবে।
তিঁনি বই লিখলেন, মিফতাহুল জান্নাহ। এই বইতেই কি খেল খতম হল? না। সূফিরা বই দিয়ে খেল খতম করেন না। তাঁরা সত্যের অন্তর্মুখী শক্তিকে যখন অন্তরের দিকে ধাবিত করেন, খেল খতম হয়ে যায়।
এত সরলভাবে কেন সূফিরা এগোন তা কি জানেন?
কারণ ব্যক্তিপর্যায়ে সূফিরা সরলই হন। এই সারল্য তাঁদের সব কাজে এবং সব ধরনের মধ্যে ফুটে ওঠে। সরল মানে কিন্তু নির্বোধ নয়, বোকা নয়, মূর্খ নয়, অসক্রিয় নয়। সরল মানে শুদ্ধ মানুষ।
মনে করার কোন যো নেই, সূফিরা এইসব ‘টেকনিক’ করে মুসলমান বানায়। মনে করার উপায় নেই সূফিরা কিছু জানেও না, বোঝেও না। সূফিরা তাওহিদ বোঝে না। আকিদা বোঝে না। কুরআন সুন্নাহ্ বোঝে না। সূফিরা গান্ডু!
আমাদের এই শাইখ যখন ২৫ বছর বয়সি, তখনি তাঁর ঠিকানা তৃতীয় বা চতুর্থবারের মত বদলে গেছে। তখন তিঁনি যে দেশে থাকতেন, বাসায় সর্বক্ষণ ছাত্ররা থাকতো আর তিনি শুধু বাসায় নয় বরং মসজিদে মসজিদে ঘুরে ঘুরে শিক্ষাদান করতেন।
প্রকৃতপক্ষে, তৌহিদ সূফিদেরচে বেশি কেউ বোঝেও না, বোঝাতেও সক্ষম নয়, তৌহিদের প্রমাণ সূফিদেরচে বেশি কেউ পায়ও নি, তাই তৌহিদের মশালও সব সময় সূফিরা জ্বালিয়েছেন দিকে দিকে। এই যুগেও। সেই যুগেও। সব যুগে।
মাত্র ২১ বছর বয়সে জাঞ্জিবারের মূল মসজিদে রমজান মাসে শিক্ষকতার অনুরোধ পান।
তিঁনি তখন পরপর ১৫ দিন শুধু:
‘ই’য়্যাকা না’বুদু ওয়া ই’য়্যাকা নাস্তাঈন’ ব্যাখ্যা করেন। :)