দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভেদ করার মূল ‍সূত্র
-----

দিন দশেক আগে আইডিয়াটা আল্লাহ্ দয়া করে অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন। এই পোস্টের প্রসংগটা হয়তো অর্থনীতির একটা বড় কোনও সূত্র হয়ে থাকতে পারে। আমাদের আগে অনেকে এই কথাটা বলেছেন, এটাই স্বাভাবিক, আবার এমনো হতে পারে, এতটা গাণিতিকভাবে কেউ বলেননি।

লক্ষ্য করবেন, যে দরিদ্র/নিম্ন মধ্যবিত্ত/ তথাকথিত ‘মধ্যবিত্ত’ সে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিতে পারে না। ফলে প্রতারক হিসাবে চিহ্নিত হয়। সে প্রতারক নয়, তবু প্রতারক হিসাবে চিহ্নিত হয়। সে চায় ফেরত দিতে, কিন্তু কিছুতেই পারে না। কেন পারে না?

এর কারণ লুকিয়ে আছে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ভিতরে।
একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ আমাদের হাতে আসার আগ পর্যন্ত আমরা দৈনন্দীন প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারি না। একটা বেলা গেলেই খাবার আসা বাধ্যতামূলক। একটা সপ্তাহ গেলেই ফোনে ব্যালান্স ও নেট কানেকশন ভরা বাধ্যতামূলক। একটা মাস গেলেই বাসা ভাড়া, কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, আরো কত্ত যে বিল দেয়া বাধ্যতামূলক!

আর অসুখ! অসুস্থতা! এইটা তো বেলা দেখেও আসে না, সপ্তাহ দেখেও আসে না, মাস দেখেও আসে না।

মানুষ চাইলেও না খেয়ে থেকে ঋণ শোধ করতে পারে না। মানুষ চাইলেও চিকিৎসা ফেলে রেখে ঋণ শোধ করতে পারে না। এটা সম্ভব নয়, তবু অনেকে এটা করে। অনেকে না খেয়েও ঋণ শোধ করে, অনেকে চিকিৎসা ফেলে রেখেও ঋণ শোধ করে।

আমাদের যারা নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত আছি তারা জানি, আমাদের বাবা-মায়েরা আজীবন নিজের রোগ পর্যন্ত লুকিয়ে গেছেন। ঠিক কী কারণে? ছোট রোগ, মাঝারি রোগ, বড় রোগ, নৈরোগ, সবই লুকিয়ে গেছেন।

দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের কারণে।
এঁরা এতই মহান।
এর পরও, এঁরা যদি ছেলেবেলায় আমাদের প্রতি কঠোর হয়ে থাকেন, সেটা মানসিক চাপের জন্য হয়েছেন। আর এই কঠোরতার মানসিক চাপ ৯৯% মানুষের বেলায় আসে সম্পদের জন্য।

তো, দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভেদ করার একটা মাত্র এলিমেন্ট আছে:

আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ। এটাকে আমরা ভেঙে বলি? কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, সারা জীবনেও পরের বেলার খাবারের টেনশন তার যাবে না। সে অনেকবার চেষ্টা করেছে, অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে। ভেবেছে, তার দ্বারা এটা হবে না। আসলে তার দ্বারা হয়নি, কারণ তার সম্পদ অর্জনের মানসিকতার প্রশিক্ষণ ও প্রিপারেশন ছিল না। এই ভুল বিশ্বাস নিয়ে যে মানুষ থাকে, এটাই হল আত্মবিশ্বাসের অভাব। এবার আসুন আত্মনিয়ন্ত্রণের উপর। আত্মনিয়ন্ত্রণ মানে হল, আপনি যখন কাজ করার কথা তখন কাজ করবেন। যখন সাহস করার কথা তখন সাহস করবেন। যখন ব্যর্থ হবেন তখন আরো বেশি করে নিজের উপর বিশ্বাস করবেন। আপনি ভাবছেন, করব, কিন্তু কিছুতেই করতে পারছেন না, আমার মতন, তার মানে আপনার প্রশিক্ষণের অভাব আছে। আপনি আবেগের ঠেলায় সম্পদ জমা করছেন না, তার মানে আপনার কুসংস্কারমুক্তির প্রশিক্ষণের অভাব আছে। আপনার কিছু সম্পদ জমেছে, সেটা সুচিন্তিত বিনিয়োগের আগেই রোকশোক চলে এসেছে, তার মানে আপনার দূরদর্শীতার প্রশিক্ষণের অভাব আছে। এমন অনেক মানুষ আমি চিনি, যাদের কয়েক কোটি টাকার জমিজমা পড়ে আছে অথচ ৫০ বছর যাবৎ চরম দারিদ্র্য। এই দরিদ্রতা কে দিল তাকে? তার আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের অভাবই তাকে এমন দরিদ্র করেছে। কোটি টাকার জমি নিয়ে কে কবরে যাবে? কবর তো তিনহাত এবং সেটা ফ্রিও পাওয়া যায়। সাহস করে যে কোটি টাকার জমির মধ্যে ১০ লাখ টাকার জমি বিক্রি করতে পারেনি, শিক্ষিত হওয়ার ফেইক পরিচয়ের কারণে যে বাজারে গঞ্জে একটা দোকান নিতে পারেনি, সে দরিদ্রতার সাথে যুঝবে না তো কে যুঝবে? সুযোগ আস্তে করে নানা ছদ্মবেশে দরজায় টোকা দেয়। আমরা তো দরজা খুলিই না, যদি কখনো সুযোগকে দেখতে পাই, তবে পাছায় লাথি দিয়ে বের করে দেই।

রাসূল দ. কি বলেননি, তিজারাতে আমাদের উন্নতি?
এমনকি মফ:স্বলের একটা গঞ্জেও একজন দোকানদার কত টাকা আয় করেন? দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভেদ করার মত যথেষ্ট টাকা। এটা কি হারাম? হারাম না হলে কী আমাদেরকে তা থেকে বিরত করে রেখেছে? ভুল আত্মঅহমিকা? সম্পদ উলটপালট করে নষ্ট করব এই ভাবনা? যদি কিছু না হয়, যদি পাছে লোকে কিছু বলে? এসবই আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আত্মপরিচয়ের প্রশিক্ষণের অভাব।

নাহ, উন্নতির একমাত্র পথ দোকান দিয়ে বসা নয়। উন্নতির একমাত্র পথ উবার নিয়ে পথে নামা নয়। উন্নতির একমাত্র পথ ব্যবসা নয়। উন্নতির একমাত্র পথ কুসংস্কারমুক্তি। নিজের উপর যে নিয়ন্ত্রণের পথটাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি, সেই অধিকার নিজের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া। সেটা হাজার পথে হতে পারে, লাখ পথে হতে পারে। সেটা তখনি হবে, যখন আমার মস্তিষ্ক আমার সাথে সমন্বয় করে চলছে।

আমি যা করছি, তার ভিতরে থেকেই উন্নতির বীজ প্রতিদিন বপন করব। সেখানে সার দিব। মাটি দিব। পানি দিব। নিজের গায়ের ঘাম দিব।

আমরা নকল শিক্ষা নিয়ে গোঁয়াড়গোবিন্দ হয়ে বসে আছি, আর ভাব করছি আমরা সিলেটের রাজা গৌড়গোবিন্দ!

আসল শিক্ষাই তো আমাদের ভিতর নেই।
Top