রাসূল দ. বলেছেন, এই যুগে দিনার ও দিরহাম দ্বিনের কাজে লাগবে। সম্পদকে অবহেলা করবেন না। সম্পদকে যদি নিজের সম্পদ মনে করেন, তাহলে তো তা অবহেলার জিনিস। যদি আল্লাহ্’র আমানত মনে করেন, তবে তা মূল্যবান।

এই যুগে যে যত ভাল তার তত ধনী হওয়া উচিত। একজন ‘ভাল’ মানুষের হাতে সম্পদ না এলে সেই সম্পদটা তো একজন ‘খারাপ’ মানুষের হাতেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই না? কারণ ‍পৃথিবীতে সম্পদ সীমিত, আপনি যদি ওটা আয় করে ভাল কাজে ব্যয় করে না ফেলেন, কোনও খারাপ ব্যক্তি সেই একই সম্পদটা আয় করে আরো খারাপ কোনও জায়গায় ব্যয় করে ফেলবে।

আপনি সম্পদ আয় করলে সেটা যাবে ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোয় এবং অজ্ঞানকে প্রজ্ঞাবানে পরিণত করায়।
আরেক ব্যক্তি সেই একই সম্পদ আয় করলে সেটা যাবে মদের কারখানা বড় করার কাজে। একজন মু’মিন তো এ থেকেই বুঝতে পারে, সম্পদ অর্জন তার ব্যক্তিকেন্দ্রীক খিলাফাতের একটা দায়িত্বও বটে!

হ্যা, ব্যতিক্রম থাকতেই পারেন, যিঁনি সম্পদ অর্জন না করেও নিজের ও পরিবারের হক আদায় করতে পারেন। আরো ব্যতিক্রম আছেন যারা দুনিয়ার দেনা পাওনা থেকে দূরে থাকেন। আরো আছেন যারা শুদ্ধ রিযিকের একটা বিশেষ সংজ্ঞায় গিয়ে সম্পদ থেকে দূরে থাকেন। এই তিন ধরনের মানুষ মহান।

কিন্তু যারা আলস্যে সম্পদ থেকে দূরে থাকে, বা সম্পদ খারাপ এটা ভেবে সম্পদ থেকে দূরে থাকে, বা আমি সৎভাবে অর্জন করতে পারব না এটা ভেবে দূরে থাকে, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.’র পক্ষ থেকে বান্দাদের হক আদায়ে বিরত রয়েছে। এই ধরনের কুধারণা ও কুপ্রশিক্ষণ পাওয়া মানুষের অভাব নেই। আলস্য একটা কুপ্রশিক্ষণ। সুপ্রশিক্ষণ দিয়ে এটাকে পাশ কাটানো সম্ভব। আত্মঅবনমন একটা কুশিক্ষা, সুপ্রশিক্ষণ দিয়ে এটাকে পাশ কাটানো সম্ভব। সম্পদ খারাপ- এমন ভাবাও একটা কুপ্রশিক্ষণ। সম্পদ ভালও না, খারাপও না। ভালর হাতে গেলে ভাল, খারাপের হাতে গেলে খারাপ। সম্পদ ছুরির মতন, ডাক্তারের হাতে আছে নাকি নেশাখোর ছিনতাইকারীর হাতে আছে এটা হল কথা। এখন সম্পদ এলে আমি বদলে যাবো, এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। যে সম্পদ এলে বদলে যায়, সে খুশি এলেও বদলে যায়, দু:খ এলেও বদলে যায়। তার পক্ষে কাফির হওয়া খুবই সম্ভব।

রাসূল দ. তো বলেননি, সম্পদ তোমাকে কাফির বানিয়ে দিবে!
বরং তিনি দ. বলেছেন, সম্পদের অভাব তোমাকে কাফির বানিয়ে দিতে পারে।

কেন আমাদের এত কুবিদ্যা? কেন আমাদের মনে শুধু আল্লাহ্’র ব্যাপারে ভুল ধারণাই ভুল ধারণা? কেন আমাদের মনে রাসূল দ. সম্পর্কে কুসংস্কারই কুসংস্কার? কেন রাসূল দ.’র আসল কথা আমরা বুঝতে পারি না, শুধু ভুলটাই বুঝতে পারি?

শেষ লেভেলে দেখতে গেলে তো পুরো পৃথিবীর সবাই আমাদের প্রতি হকদার। কেউ দেহের পুষ্টির জন্য হকদার তো কেউ অন্তরের পুষ্টির জন্য হকদার তো কেউ রুহের পুষ্টির জন্য হকদার।

আর এই যুগে এই হক পূরণের সবচে বড় উপায় হল যে ব্যক্তি সর্ব-কুসংস্কারমুক্ত, তার হাতে অপরিসীম সম্পদ আসা।

আরে, কুসংস্কারমুক্তির ট্রেনিং নিতে গেলেও, আত্মনিয়ন্ত্রণ পাহাড়ের মত করতে গেলেও তো সম্পদ দরকার। ওটারও তো নূনতম চার্জ আছে।
Top