ভুলই ভুল: রাসূল দ.’র নিকটতর প্রিয় সাহাবি রা. গণ কি শুধুই দরিদ্র ছিলেন?
-----
আমার জান ও ঈমান ইমাম হুসাইন রা. এক ধাক্কায় দান করতেন ১০-২০ কোটি টাকা। একজনকে দিয়ে দিতেন। এক বসায়। এমন বহুবার করেছেন।
এইবার প্রবন্ধ শুরু:
এইটা একটা মারদাঙা মজার লেখা। আপনার সত্ত্বাকে বদলে দেয়ার লেখা। পড়াটা শুরুর আগে শুধু মাথায় রাখুন: ১ দিনার (রৌপ্যমুদ্রা) = ১ ব্যারেল ক্রুড অয়েল। আজকে ১ ব্যারেলের দাম ৪,৩০০ টাকার মতন। খিলাফাতের যুগের ১ দিনার আজকের ৪,৫০০ টাকার মতন।
এবার আসুন দিরহামে (স্বর্ণমুদ্রা)। ১ দিরহাম ১ ভরি থেকে আধ ভরি পর্যন্ত হতো (৮.৪ গ্রাম থেকে ৪.৪ গ্রাম স্বর্ণ, ৯৫% পিওর, স্বর্ণে খাদ থাকতেই হয়, নাহলে ক্ষয় হয়)।
তাহলে, ১ দিরহাম ছিল আজকের দিনে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে স্বর্ণের দামে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আমরা একটা মাঝামাঝি করি, ৩০ হাজার টাকা দিরহাম এবং ৪.৫ হাজার টাকা দিনার, ওকে?
এবার আসুন লেখাটা পড়া শুরু করি:
আমরা দারিদ্রকে এতই ভালবেসে ফেলেছি, যে, দারিদ্রকে ধর্ম বানিয়ে ফেলেছি। অথচ দারিদ্র ধর্ম নয়, সম্পদও ধর্ম নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ হল ধর্ম। সেবা হল ধর্ম। আনুগত্য হল ধর্ম। মমত্ব হল ধর্ম।
অথচ রাসূল দ. দারিদ্রকে যেমন সম্মান দিয়েছেন, তেমনি তিনি দ. এও বলেছেন যে, দারিদ্র কুফরের অনেক কাছাকাছি। দারিদ্র থেকে চট করে কুফর হতে পারে।
সাহাবীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ আর কারা ছিলেন, আছেন, থাকবেন?
ইসলামের সাহাবী রা. বলতেই আমরা মনে করি দরিদ্র। যার পোশাকও নেই। যার খাবার নেই। যার কিছুই নেই। শুধু দিনরাত যারা শুয়ে বসে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন আর জিহাদ করেন। ব্যস। কিছু নেই।
বাস্তবতা কি এমন?
রাসূল দ. বলেছেন, তার সুন্নাহ্ অনুসরণ করতে এবং খুলাফায়ে রাশিদুনের সুন্নাহ্ অনুসরণ করতে। খুলাফায়ে রাশিদুন ইসলামের সর্বোত্তম তাও তিনি দ. বলেছেন। আহলাল বাইতের পাশাপাশি আশারায়ে মুবাশশারাও ছিলেন সর্ব্বেোত্তম। এখানে আমরা খুলাফা ও আশারায়ে মুবাশশারার বাস্তব জীবন দেখব।
ইসলাম দারিদ্রকে ভালবেসে দরিদ্র ছিল না। ইসলাম ন্যায়নীতিকে ভালবাসে, তা দারিদ্রে হোক আর প্রাচুর্যে হোক। ইসলাম চায় আপনি যেমনি থাকুন, আপনার ভেতরটা যেন ঠিক থাকে। আপনার বাহিরটা যেন ঠিক থাকে। ইসলাম যেমন চরম দারিদ্র দেখেছে, তখনো যেমন ছিল, ইসলাম যখন পরম প্রাচুর্য দেখেছে, তখনো একই রকম ছিল।
আমরা জানি,
উমার রা.’র মিসর জয় পর্যন্ত মাস পিপল মুসলিমরা দারিদ্র্যের মধ্যে ছিলেন। কাইসার-কিসরা-মিসর জয় হবার সাথে সাথে সম্পদের বন্যায় মুসলিম সাম্রাজ্য ভেসে গেল। এই সম্পদ লিগ্যাল সম্পদ। গণিমত, বিভিন্ন ধরনের কর। রাজ্য যখন বড় হয়, রাজ্যে যখন বিভিন্ন ধরনের সম্পদ অভ্যন্তরীণভাবে উৎপণ্ণ হয়, তখন পুরো দেশই ধনী হয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক।
আমরা জানি, খুলাফায়ে রাশিদুন ও আহলাল বাইতই শ্রেষ্ঠ এবং তাঁদের যুগই শ্রেষ্ঠ।
উসমান রা.’র সময়টা কেমন ছিল আসুন দেখি:
আল মাস’উদি বলেন:
রাসূল দ.’র বেশি কাছাকাছি যে সাহাবিরা ছিলেন, তাঁরা উসমান রা.’র খিলাফাতের সময়কালে ভূসম্পত্তি এবং বিস্তর টাকার মালিক হন।
মহান খলিফা উসমান রা.’র শাহাদাতের দিনও তাঁর দেড় লক্ষ দিনার এবং দশ লক্ষ দিরহাম ছিল। ওয়াদি কুরা, হুনাইন এবং অন্যান্য জায়গায় উসমান রা.’র যে জমিদারি ছিল, সেগুলোর দাম ছিল দুই লাখ দিনার। এসবের বাইরে তাঁর অনেক উট ও ঘোড়াও ছিল।
মহামহিম হজরত জুবায়ের রা.’র সম্পদ ছিল ৪ লাখ দিনারের। এর বাইরেও তাঁর ১ হাজার ঘোড়া এবং অন্যান্য সম্পদ তো ছিলই। আয যুবায়ের রা.’র প্রাসাদ ছিল বসরা, মিসর, কুফা এবং আলেক্সান্দ্রিয়াতে।
সাইয়্যিদুনা তালহা রা.’র ইরাক থেকে প্রতিদিন আয় ছিল ১ হাজার দিনার। অপরদিকে আস্ সাহারা (উত্তর আফ্রিকা) থেকে ছিল এরচেও বেশি। জ্বি, বছরে ৮ লাখ দিনার আয়। তালহা রা.’র বাসা ছিল ইট, প্লাস্টার ও দামি কাঠের প্রাসাদ। মদিনায় একটা, কুফায় একটা।
সাইয়্যিদুনা আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা.’র আস্তাবলে ঘোড়ার সংখ্যা ছিল ১ হাজার। ১ হাজার উট। ১ হাজার ভেড়া (দুম্বা)। তাঁর সম্পদের পরিমাণ হিসাব করা হয়েছিল ৩ লাখ ছত্রিশ হাজার দিনার।
যায়েদ বিন সাবিত রা.’র রেখে যাওয়া সম্পদ ছিল ১ লাখ দিনারের।
সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা.’র প্রাসাদ ছিল মদিনার ঠিক বাইরে বাইরে। সেটা যেমন ছিল প্রশস্ত, তেমনি ছিল উঁচু। সেখানে ছাদের উপর দামি কারুকাজ করা রেলিং পর্যন্ত ছিল।
আল মিকদাদ রা.’র বাসা যে শুধু বিল্ডিং ছিল তাই না, প্লাস্টার করা বিল্ডিং ছিল।
এই পর্যন্ত যা বললাম, আল মাসউদি থেকে বললাম।
এঁরা এইসব সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনও করেননি, ইসলামের নীতিমালার বাইরে ভোগও করেননি। না অপচয় করেছেন, না অপব্যবহার করেছেন। বরং খুবই চিন্তা ভাবনা করে নিজেও ব্যবহার করেছেন, অপরকেও ব্যবহার করতে দিয়েছেন এবং অবশ্যই ব্যবসা বাণিজ্য করে সেগুলো বৃদ্ধিও করেছেন।
এই সম্পদ তাঁদেরকে পরিবারের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, সমাজের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, উম্মাহ্’র সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, এমনকি সকল মানুষের সেবা করার সুেযোগ যেমন দিয়েছে তেমনি নিজ দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার সুযোগও দিয়েছে, ঠিক তেমনি দ্বিনের দাওয়াহ করার সুযোগও দিয়েছে।
কী কুঁড়েঘরের গল্প শোনান মিয়ারা আমাদেরকে?
এঁরা কি সাহাবা ছিলেন না? এঁরা ছিলেন সাহাবাশ্রেষ্ঠ। এঁরা ছিলেন শ্রেষ্ঠদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
আর কত মুসলিমদের কুঁড়ে করে কুঁড়েঘরে রেখে দিয়ে নিজেদের আখের গোছাবেন এবং সবদিক দিয়ে আমাদেরকে দুনিয়ায় বঞ্চিত ও লাঞ্চিত করে রাখবেন? আগে না আামাদের মাথা খুলতে হবে, তারপর না মাথায় কিছু ঢুকতে হবে, মাথায় কিছু ঢুকলে না হাত চালু হবে, হাত পরিশ্রম করলে না আমরা কিছু করতে পারব! আমাদের মাথাই আপনারা বর্গা নিয়ে রেখেছেন! সেখানে বাধ্যতামূলক গোবর ঢালেন আর ধানচাষ করেন, তিনভাগের একভাগ আামদের দিয়ে দুই ভাগ নিয়ে যান! আপনারা মুসলিমদের কাজ করার সাহস পর্যন্ত খেয়ে দিয়ে বসে আছেন মিয়ারা।
বাই দ্য ওয়ে,
এইবার আসেন বাংলা টাকায়:
উসমান রা.’র সম্পত্তির যেটুকু এখানে বলা আছে:
রূপার টাকা: সাড়ে সাতষট্টি কোটি টাকা।
সোনার টাকা: তিন হাজার কোটি টাকা।
এস্টেট: নব্বই কোটি টাকা।
শুধু সোনা রূপা ও তিন চার জায়গায় জমিদারির দাম ৩,১৫০ কোটি টাকা। উট দুম্বা ঘোড়ার দাম বা অন্যান্য সম্পত্তির দাম তো বাদ।
তালহা রা.’র বাৎসরিক আয় ছিল ৩৬০ কোটি টাকা। আরবি বছর তো, দৈনিক আয় ১ কোটির উপরে।
বাকীদেরটা আর বললাম না। আসেন, কাজ করি।