যে সালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই সালাতে মিসওয়াক করা বিহীন সালাত থেকে ৭০গুণ বেশী নেকী হয়।
সহীহ হাদীসকে জাল হাদীস বানানোর ভয়ংকর ষড়যন্ত্র-
____________________________
নামধারী আহলে হাদীস সর্দার মুজাফফর লিখেছেন,
যে সালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই সালাতে মিসওয়াক করা বিহীন সালাত থেকে ৭০গুণ বেশী নেকী হয়। একথাটি জাল। এর কোন ভিত্তি নেই। দেখুন, [জাল হাদীসের কবলে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সালাত, ৩১]
___________________________
জবাবঃ
প্রথমেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি একটি সতর্কবাণী-
রাসুল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আমার উপর মিথ্যাচার করোনা। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যাচার করে সে যেন জাহান্নামে প্রবেশ করে। [সহীহ আল বুখারী-১০৬]
হাদিসটি ভিন্ন ভিন্ন সনদে বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে,
● হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)
● হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)
● হযরত জাবির (رضي الله عنه)
● তাবেঈ হযরত নাফে (رحمة الله)
● হজরত উম্মে দারদা (رضي الله عنه)
● হাছান ইবনে আত্বিয়া (رضي الله عنه)
● উরওয়াহ বিন যুবাইর (رضي الله عنه)
● হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
❏ হাদিস ১ : বর্ণনা ১-৫
হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) সূত্রে।
❏ বর্ণনা ১ :
হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত এ হাদীসটি বিভিন্ন সনদে এসেছে।
عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: ” فَضْلُ الصَّلَاةِ بِالسِّوَاكِ، عَلَى الصَّلَاةِ بِغَيْرِ سِوَاكٍ، سَبْعِينَ ضِعْفًا “
হযরত আয়শা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ মিসওয়াক করে নামায পড়ার ফযীলত মিসওয়াক বিহীন নামাযের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি।
তথ্যসূত্রঃ
১.ছহীহ্ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং ১৩৭
২.মুস্তাদরাকে হাকেম, ১ম খন্ড, ২১৬ পৃ: হাদিস নং ৫১৫
৩.ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ২৫১৯
৪.ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১৫৯
৫.ইমাম বায়হাকী: সুনানে ছাগীর, হাদিস নং ৮০
৬.মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৪৭৩৮
৭.ইমাম ইবনে শাহিন: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব লিকাওয়াইমিস সুন্নাহ, হাদিস নং ১৫৬৭
৮.আল্লামা ইবনে মুলাক্কিন: বদরুল মুনীর, ২য় খন্ড, ১৪ পৃ:
৯.ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮২ পৃ:
১০.ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুস সারী শরহে বুখারী, ২য় খন্ড, ১৬৪ পৃ:
১১.ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৬৭৯৬
১২.ইমাম মােল্লা আলী কারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, হাদিস নং ৩৮৯
১৩.আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস, নং ৫৮৫৭ সুবুলুস সালাম, ১ম খন্ড, ৫৭ পৃ:
১৪.মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৩৪০,
১৫.মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১০৮,
১৬.মেশকাত শরীফ-১/৪৫
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম (رحمة الله) ও ইমাম শামছুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) বলেছেন:
هذا حديث صحيح على شرط مسلم
“ইমাম মুসলীম (رحمة الله) এর মতে এই হাদিস ছহীহ্।” (হাকেম, ১ম খন্ড, ২১৬ পৃঃ)।
❏ বর্ণনা ২:
এর আরেকটি সনদ রয়েছে,
-“আবু হিশাম রিফাই ইসহাক থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি মুয়াবিয়া থেকে, তিনি যুহুরী থেকে, তিনি উরওয়া থেকে, তিনি হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে..।”
(মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৪৭৩৮; মাকছুদুল আলী ফি জাওয়াইদে আবী ইয়ালা মুছেলী, হাদিস নং ১৬৩০)।
এই সনদটি জয়ীফ কারণ এর সনদে আপত্তিকর রাবী মুয়াবিয়া রয়েছে। এই রাবী সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত হল,
-“ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন, সে বিশ্বস্ত নয়।
ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন, সে কিছুই নয় ।
ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন: সে দুর্বল রাবী,
ইমাম দারে কুতনী (رحمة الله) বলেন: সে দুর্বল।”
(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৪০২)।
❏ বর্ণনা ৩:
ইমাম আবু বকর আহমদ ইবনে আলী বাগদাদী (رحمة الله) ওফাত ৪৬৩ হিজরী তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: মেসওয়াকের সহিত নামাজ পড়া মেসওয়াকহীন নামাজের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী সওয়াব।”
(মুত্তাফাক ওয়াল মুফরাক, ২য় খন্ড, ৯৪৯ পৃ: ৫৭৬ নং হাদিস)
❏ বর্ণনা ৪:
এর আরেকটি সনদ রয়েছে,
-“হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: মেসওয়াক সহ নামাজ পড়া মেসওয়াকহীন নামাজের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী সওয়ার , (ইমাম ইবনে হিব্বান: মাজরুহিন, ৩য় খন্ড, ৩৩ পৃ:)।
❏ বর্ণনা ৫:
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়াত রয়েছে,
-“হজরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, মেসওয়াকসহ নামাজ মেসওয়াকহীন ৭০ রাকাত নামাজের চেয়ে আরাে উত্তম।” (ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৭৯৫৮)
হাদিসের সনদমানঃ
☛এ হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,
-“এই হাদিসের সাক্ষ্য রয়েছে হজরত ইবনে আব্বাস ও জাবের (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসের সাথে। ইমাম আবু নুয়াইম (رحمة الله) এই দুইটি হাদিস অতি উত্তম হাছান সনদে বর্ণনা করেছেন।”
(ইমাম মােল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত, শরহে মেসকাত, ১৮৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
☛হাদিসটি ইমাম জুহুরী (رحمة الله) থেকে আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে, “এই হাদিস আবু নুয়াইম (رحمة الله) যুহুরী (رحمة الله) থেকে ইবনে উয়াইনা, মানছুর ও যুহুরী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবির, ১ম খন্ড, ২৪১ পৃঃ)
☛ইমাম ছাখাবী (رحمة الله) আবু নুয়াইম (رحمة الله) এর সনদ সম্পর্কে বলেন, “আবু নুয়াইম হুমাইদী, সুফিয়ান, মানছুর ও যুহুরী সূত্রে ইহা বর্ণনা করেছেন। এর সকল বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।” (ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ১ম খন্ড, ৬২৬ পৃ: ৬২৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
☛এ বিষয়ে ইমাম ছাখাবী (رحمة الله) ও ইমাম আজলুনী (رحمة الله) আরাে বক্তব্য লক্ষ্য করুন, -“এর সনদ অতি-উত্তম, হজরত আনাস (رضي الله عنه), জাবের (رضي الله عنه), ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকেও ইহা বর্ণিত আছে। অনুরূপ উম্মে দারদা (رضي الله عنه) ও যুবাইর ইবনে নাফির (رضي الله عنه) থেকে মুরছাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, ১ম খন্ড, ৬২৬ পৃ: ৬২৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ২৯ পৃঃ)
❏ হাদিস ২ :
এই হাদিসের অন্য সূত্রে রয়েছেনঃ
১) ইমাম খতীব বাগদাদী
২) ইবনু লাহি’আহ
৩) আবুল আসওয়াদ
৪) উরওয়াহ বিন যুবাইর (رضي الله عنه)
ইবনুল মুলকিন বলেছেন, হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, হাফিয আবু বাকর আল খাতীব তিনি ইবনু লাহী’আহ এর সুত্রে। [আল বাদরুল মুনীর-২) ১৭]
আবার এ হাদিসটি আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দিল্লাহ এর সুত্রেও এসেছে-
) ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﻌﺪﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﻤﻘﺮﺉ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺭﻭﺡ ﺑﻦ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﻋﻔﻴﺮ ﺑﻪ .
এখানে বর্ণনাকারী রয়েছেন আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মাদ এবং রাওহ বিন ফারাজ এবং সায়ীদ বিন উফাইর। [আল মুত্তাফাকু ওয়াল মুতাফাররাক-৫৭৬]
এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য।
১) ইবনু লাহি’আহঃ
ইমাম খতীব বাগদাদী বলেন, তিনি সত্যবাদী, নির্ভরযোগ্য, উত্তম চরিত্রবান। [তারীখু বাগদাদ-৬৫২৭]
২) আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদঃ
ইমাম খতীব বাগদাদী বলেন, তিনি বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য। [তারীখু বাগদাদ-৬৪৮৩]
৩) রাওহ বিন ফারাজ
ইমাম খতীব বাগদাদী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য।
ইমাম কিনদী বলেন, তিনি অধিক নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
[তাকরীবুত তাহযীব- ১৯৬৭, তাহযীবুল কামাল- ২৩৪১, ১৯৩৭]
৪) সায়ীদ বিন উফাইর
● ইবনু আদী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য।
● আবু হাতিম বলেন, তিনি সত্যবাদী।
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-আত তাবাকাতুস সানিয়াহ আশারা]
৫) আবুল আসওয়াদ
ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি একজন তাবেয়ী এবং নির্ভরযোগ্য।
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-আত তাবাকাতুর রাবি’আহ]
৬) আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দিল্লাহ
ইমাম খতীব বাগদাদী বলেন, তিনি সত্যবাদী।
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা-আত তাবাকাতুস সানিয়াহ ওয়াল ইশরূন]
বিঃদ্রঃ
ইবনু লাহি’আহ এর জীবনে একটি ঘটনা ঘটেছিল। তার কিতাবাদি পুড়ে গিয়েছিল এজন্য মুহাদ্দিসগণ বলেন, ঘটনাটি ঘটার আগে যারা তার নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, সেগুলো সহীহ। এবং ঘটনাটির পর যারা তার নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাদের ঐ বর্ণনাগুলো দুর্বল।
আমাদের আলোচ্য হাদিসটি সায়ীদ বিন উফাইর (رحمة الله) ইবনু লাহি’আহ থেকে কিতাবাদি পুড়ে যাবার আগেই বর্ণনা করেছিলেন। এমনটাই বলেছেন, ইমাম ইবনু সায়্যিদিন নাস (رحمة الله)। সুতারাং হাদীসটি সহীহ।
[আন নাফখুশ শাযি ফী শারহি জামিইত তিরমিযি- ৮০৪-২/ ৭৯৯]
❏ হাদিস ৩ :
☛ইমাম মুনজেরী (رحمة الله) এভাবে রেওয়াতটি উল্লেখ করেছেন,
-“হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: মেসওয়াকসহ দুই রাকাত নামাজ মেসওয়াকহীন ৭০ বা নামাজের চেয়ে আরাে উত্তম। ইমাম আবু নুয়াইম (رحمة الله) তার কিতা ছাওয়াক’ গ্রন্থে অতিউত্তম সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম মুনজেরীঃ আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, হাদিস নং ৩৩৫)।
একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে।
ﻓﻘﺪ ﺃﺧﺮﺟﻪُ ﺃَﺑُﻮ ﻧﻌﻴﻢ ﻋَﻦ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺣﺒَﺎﻥ ، ﻋَﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻋَﺎﺻِﻢ ، ﻋَﻦ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺍﻟْﻤﻘﺪﻣِﻲ ، ﻋَﻦ ﻳﺰِﻳﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺛَﻨَﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟْﺤَﻮْﺭَﺍﺀ ﺃﻧَّﻪ ﺳﻤﻊ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺟُﺒَﻴﺮ ﻋَﻦ ﺍﺑْﻦ ﻋَﺒَّﺎﺱ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ : « ﻟِﺄَﻥ ﺃُﺻَﻠِّﻲ ( ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴﻦ ) ﺑِﺴِﻮَﺍﻙٍ ﺃَﺣَﺐُّ ﺇَﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺃﻥْ ﺃُﺻَﻠِّﻲ ( ﺳَﺒْﻌِﻴﻦ ) ﺭَﻛْﻌَﺔ ﺑِﻐَﻴﺮِ ﺳِﻮَﺍﻙٍ »
হযরত ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, মেসওয়াক বিহীন ৭০ রাকাত সালাত আদায় করা থেকে মেসওয়াক করে দু রাকাত সালাত আদায় করা আমার নিকট অধিক প্রিয়। (আবু নাঈম)
● ইমাম সাখাবী (رحمة الله) বলেন, ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত এ হাদীসটির সনদ ভাল। অর্থাৎ হাদীসটি সহীহ।
● ইমাম মুনযিরী (رحمة الله)ও একই কথা বলেছেন। (সনদ ভাল)
[আত তারগীব ওয়াত তারহীব]
● ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله)ও এটাকে সমর্থন করেছেন।
[আল মাকাসিদুল হাসানাহ-খন্ড ২/ ৪২৪ পৃ]
সনদ পর্যালোচনাঃ
১) মুহাম্মাদ বিন হিব্বানঃ
● তিনি মশহুর ইমাম। নির্ভরযোগ্য।
২) আবু বাকর বিন আবী আসিমঃ
● ইমাম আবু হাতিম রাযী (رحمة الله) বলেন, তিনি সত্যবাদী।
[আল জারহু ওয়াত তা’দীল-১২০]
৩) মুহাম্মাদ বিন আবী বাকর আল মুকাদ্দামীঃ
● ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য।
[সিয়ারু আ’লামিন নুবালা আত তাবাকাতুস সানিয়্যাতা আশারাহ]
৪) ইয়াযিদ বিন আব্দিল্লাহঃ
● ইমাম ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। [কিতাবুস সিকাত-১৬৪০৫]
৫) আব্দুল্লাহ বিন আবিল হাওরাঃ
● উনি মূলত আব্দুল্লাহ বিন আবিল জাওযা। ইমাম ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। [কিতাবুস সিকাত-৯৩৯২]
❏ হাদিস ৪:
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়াত রয়েছে,
-“মেসওয়াক সহ নামাজ পড়া মেসওয়াকহীন নামাজের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী সওয়াব। ইবনে নাজ্জার তার তারিখে বাগদাদে হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।”
(ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৬৮৭২; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১২৭৭২)
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়াত রয়েছে,
-“হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: মেসওয়াকের সহিত নামাজ পড়া মেসওয়াকহীন নামাজের চেয়ে ৭৫ গুণ বেশী সওয়াব।” (ইমাম ইবনে আদী: আল কামিল ফিদ দোয়াফাই রিজাল, ৮ম খন্ড, ১৭ পৃ:)।
❏ হাদিস ৫ :
হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 'মিসওয়াক আদায় করার পর ২ রাকাআত আদায় করা মিসওয়াক বিহীন ৭০ রাকা'আত নামাজ আদায় করা চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ।'
[আল-তারগীব ওয়া আত- তারহিব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০২, হাদিস ১৮, কাশফুল খাফা-১/৪৯৭]
ইমাম আজুলুনী (রহঃ) উক্ত হাদীসের ব্যাপারে মন্তব্য করেনঃ
ورواه الحميدي وأبو نعيم عن جابر وإسناده حسن،
এ মর্মের হাদীস ইমাম হুমাইদী এবং আবু নূআইম হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। যার সনদ হাসান। [কাশফুল খাফা-১/৪৯৭, বর্ণনা নং-১৩৯৯]
❏ হাদিস ৬:
ইমাম আসলাম ইবনে সাহল ইবনে আসলাম ওয়াছেতী (رحمة الله) ওফাত ২৯২ হিজরী তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
-“ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর গােলাম তাবেঈ হযরত নাফে (رحمة الله) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: মেসওয়াক সহ নামাজ পড়া মেসওয়াকহীন নামাজের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী সওয়াব।” (তারিখে আওছাত, ১ম খন্ড, ২৩৪ পৃ:)
❏ হাদিস ৭:
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়াত রয়েছে, “হজরত উম্মে দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, মেসওয়াক সহ নামাজ পড়া মেসওয়াকহীন নামাজের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী সওয়াব। দারে কুতনী তার ইফরাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।”
(ইমাম ছিয়তী: জামেউস ছাগীর, হাদিস নং ৬৮৭৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১৭২৭৩)।
হাদিসের সনদমানঃ
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেন, -“এর সনদ হাছান।”
(আল্লামা মানাবী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইস ছাগীর, ২য় খন্ড, ৩৫ পৃ:)।
☛এ সম্পর্কে ইমাম মানাভী (رحمة الله) আরাে বলেন,
☛“ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত। ইমাম হুমাইদী ও আবু নুয়াইম (رحمة الله) জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।
☛ইমাম মুনজেরী (رحمة الله) বলেছেন: এর সনদ হাছান।
☛ইমাম ছামহুদী (رحمة الله) বলেছেন: এর সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত।” (আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদীর, হাদিস নং ৪৪৬৬)
☛এই রেওয়াত সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ছিলাহ ছানআনী (رحمة الله) ওফাত ১১৮২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন,
-“ইমাম হায়ছামী বলেন: এর বর্ণনাকারী সকলেই বিশ্বস্ত।” (আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৪৪৫০ এর ব্যাখ্যায়)
❏ হাদিস ৮:
এ বিষয়ে আরেকটি সনদসহ রেওয়াত উল্লেখ করা যায়, -“হাছান ইবনে আত্বিয়া (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: মেসওয়াকসহ দুই রাকাত নামাজ মেসওয়াকহীন ৭০ রাকাত নামাজের চেয়ে আরাে উত্তম।” (ইমাম ইবনে শাহিন: আত্তারগীব ফি ফাদ্বাইলিল আমাল ওয়াছ ছাওয়াব, হাদিস নং ৫১০)