খোদা পাবার সহজ পথের সহজ কথা :
বায়েজিদ বোস্তামী রা.’র জবান ও রূমী রা. আলোকে কিছু ব্যাখ্যা
-----

“আমি প্রচুর ইবাদতকারীদের সাথে ছিলাম, কোন অগ্রগতি পেলাম না।
ছিলাম মুজাহিদদের সাথে জিহাদে, কোন অগ্রগতি পেলাম না।
বললাম,
ও আল্লাহ্! কীভাবে এগুবো তোমার দিকে?
আল্লাহ্ বললেন,
তোমাকে ছাড়ো। এরপর এগিয়ে এসো।”

এইযে ‘তোমাকে ছাড়ো’ পার্টটা, এইটাই ট্রিকি। এইটাকে মানুষ ভুল বোঝে। এমনকি অনেক বছর পেরুনোর পরও ভুল বোঝে। এই বিষয়েই ইমাম শাফিয়ি রা. (সম্ভবত) বলেছিলেন, যে সকালে সূফিপথ ধরে, দুপুরে তাকে বোকা পাবে।

সূফিপথ ধরেছে আর বোকা বনে যায়নি, তার মানে সে হয় প্রতারক নয়তো অবুঝ। এখনো পথ ধরতে পারেনি, পথের নাম ধরেছে।

সূফিপথ ধরে মানুষ বোকা বনবে এই কারণে যে, সে প্রমাণ পাবে:
১. সে কিছুই জানে না,
২. কিছুই দেখেনি,
৩. কিছুই শোনেনি এবং
৪. তার অতীত ছিল তীব্র তমসাচ্ছন্ন। ঘনঘোর। কুসংস্কারই কুসংস্কার।

এমনকি কিছু মানুষ সূফিপথ ধরার পর বুঝতে পারে, তার জীবন ছিল বন্য। কোনদিন স্রেফ হাইওয়ান বা প্রাণীসত্ত্বার বাইরে আর কিছুই সে অনুভব করেনি। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, গরম, ঠান্ডা, আরাম, খুশি, দু:খ, কষ্ট, হিংসা, গ্লানি, তুলনা, অর্জন, সম্মান, অপমান- এসবই যে প্রাণীজ বৈশিষ্ট্যের প্রলম্বিত অভিক্ষেপ- এটা হঠাত ধরতে পারে।

হঠাত মানুষ বুঝতে পারে, হায়, আমার প্রতিটা মোশন এবং নোশন তো এখন পর্যন্ত ফ্রয়েডের পথেই গেছে। ডারউইনের পথেই গেছে। সবকিছুতে তো স্রেফ আমি আমিই ছিল। সবকিছুতে তো স্রেফ প্রাণীজ চাহিদার রূপই ছিল। এমনকি নামাজে দাঁড়িয়েও। এমনকি রোজার সময়ও। মুসলিমের জন্য প্রাণের আকুতি বা জিহাদের হাতছানি ছিল আসলে আমার গোত্রবাদ। দেশপ্রেমের নামে ছিল আমার অগ্রহণযোগ্য জাতীয়তাবাদ। পরিবারপ্রেমের নামে ছিল আমার আত্মনিরাপত্তাবাদ। বাবাকে তো কখনো বাবা হিসাবে দেখিনি, নিজের নিরাপত্তাদানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দেখেছি। মাকে তো মা হিসাবে দেখিনি, স্রেফ দুধ পান করানো এবং পেটে নেয়ার কারণে আপন জেনেছি। আমার সবিই যে স্বার্থ! সবই যে প্রাণীজতা। এমনকি প্রতিটা ইবাদাতও যে প্রাণীজতা। যেটাকে আমি মনোযোগ ভেবেছিলাম, ওটা তো কিছুই না। আমার তো অপ্রাণীজ মনই ছিল না, প্রাণীজতা বাদে আমি ইবাদাতে মনোযোগ কীভাবে দিব! আমি তো ইসলামকেই কোনদিন ভালবাসিনি, নিজ দেশকেই কোনদিন ভালবাসিনি, নিজ পরিবারকেই কোনদিন ভালবাসিনি, নিজ পিতামাতাকেই কোনদিন ভালবাসিনি, মানবজাতিকেই কোনদিন ভালবাসিনি, এমনকি আল্লাহ্ কেও কোনদিন ভালবাসিনি- সব জায়গাতেই ছিল ‘আমি’ স্বার্থের ঘা।

মানুষ বুঝতে পারে, নিয়্যত তো কখনো আমার ছিলই না। কারণ নিয়্যত করার মতন ট্রেনিংই তো কখনো আমার ছিল না। আমার নিয়্যতও ছিল জৈবিক, আমার ট্রেনিংও ছিল জৈবিক। জৈবসত্ত্বার বাইরে নিয়্যত কী করে করতে হয় তাই তো আমি জানিনি।

তখন মানুষের সূফি জগতের দুপুর হয়। সে তখন বেজায় বোকা হয়। সে তখন আল্লামা রূমী’র মতন বস্তা বস্তা তাকে তাক সারিতে সারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ভরতি বইয়ের দিকে পেছন ফিরে ছুটে যায় শামস আদ দীন আত্ তাবরিজির পেছন।

বলে, “মাওলা! মাওলা! ওযু শেখাও। নিয়্যত শিখি, ওযু শিখি। ওযু আগে শেখাও।”
Top