কুরআন সংরক্ষণ: এ নিয়েও দোষারোপ
-----
কুরআন একত্র করারই কথা ছিল না, যেহেতু তা রাসূল দ. বলেননি। একজন সাহাবি উমার রা. কে বলেন। উমার রা. প্রথমে অরাজি ছিলেন, পরে ঠিকই একমত পোষণ করেন। সেটা সিদ্দিকে আকবর রা.’র জমানা। সিদ্দিকে আকবর রা. শুনেও কেঁপে ওঠেন। রাসূল দ. যা করেননি, আপনারা তা করতে বলেন? পরে তিনিও বুঝলেন। অনেক হাফিয সাহাবা শহীদ হচ্ছেন। কুরআন সুসংবদ্ধভাবে না থাকলে বিরাট বিপদ হয়ে যাবে।
এরপর যখন কুরআনের কপি তৈরি করা হল, সাহাবা ও তাবিয়িরা সেসব কপির অনুলিপি করতেন। অনুলিপির অনুলিপি তৈরি হল। অনুলিপির অনুলিপি তৈরি যেহেতু কোন সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে হয়নি, সবাই ভাল মনে করে অনেকগুলো কাজ করলেন, যেসব কাজ একই সাথে ওই প্রজন্মের জন্য ভাল হলেও পরের প্রজন্মের জন্য সকল প্রজাতির বাঁশ রূপে আবির্ভূত হতো।
উসমান রা.’র হাতে সুসংবদ্ধভাবে একত্রিত হবার আগে সাহাবী ও তাবেয়িরা কুরআনের মধ্যে হাদিস ঢুকিয়ে পড়তেন, কুরআনের মধ্যে তাফসির ঢুকিয়ে পড়তেন, কুরআনের মধ্যে শানে নুযুল ঢুকিয়ে পড়তেন। অনেক ক্ষেত্রে কুরআনের মধ্যে যে ব্যাখ্যাটা তাঁরা জানেন, সেই ব্যাখ্যাটা বাক্যের মধ্যে ঢুকিয়ে পড়তেন। এই পড়াটা তাঁদের জন্য ভুল ছিল না, কেননা তাঁরা যে আয়াত পড়ছেন সেটার মূলভাব যেসব হাদিস থেকে জানতেন সেসব হাদিস এনেই পড়তেন। কিন্তু কুরআনের আয়াতে ব্যাখ্যা যুক্ত করা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, যখন খুলাফায়ে রাশেদা থাকবেন না, তখনকার জন্য বিরাট ফিতনা হয়ে যেতে পারতো।
দেখা যাচ্ছে এখনো তা বাস্তব।
এখনো অনেকে দাবি করে উসমান রা.’র জমানায় কুরআন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। অথচ উসমান রা. যেসব কুরআন পুড়িয়েছেন সেগুলো ছিল একেতো লোকাল ভাষায় লিখিত, দ্বিতীয়ত সেগুলোর বানানে অসামঞ্জস্য স্বাভাবিকভাবেই ছিল, তৃতীয়ত আয়াতও উল্টোপাল্টাভাবে সাজানো ছিল।
যিঁনি যতটুকু পেরেছেন, যতটুকু সম্ভব হয়েছে, কুরআনকে সেভাবে সংরক্ষণ করেছিলেন এবং পাঠ করছিলেন। এজন্য উসমান রা. ব্যাখ্যা সহ কুরআন, আয়াতের ভিতরে শানে নুযুল সহ কুরআন, আয়াত উল্টোপাল্টাভাবে এক জায়গারটা আরেক জায়গায় আছে সেসব কপি, বানানে ভুল আছে সেসব কপি সহ সবই পুড়িয়ে ফেলেন।
তিনি সবচে নির্ভরযোগ্য সাহাবাদের পরামর্শ নেন, কার কাছে কুরআনের সবচে অথেন্টিক কপিটা আছে? আমার যতদূর মনে পড়ছে সম্ভবত কোন উম্মুল মু’মিনীনের কপিকে ব্যাখ্যা টিকা টিপ্পনি ব্যতীত কপি হিসাবে ডিটেক্ট করা হয়। সেই কপিকে পুরোপুরি চেক করা হয় হাফিযদের দ্বারা।
এই একটা কপিকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে সারা আরব ও আযমের সকল কুরআনের কপি একত্র করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এরপর মূল কপিকে বহু অনুলিপি করা হয়। এ কাজ করার সামর্থ্য তখন আরবদের ছিল, কেননা তাঁরা অকল্পনীয় সম্পদের অধিকারী ছিলেন।
একটা ইউনিফাইড ভার্শন প্রকাশ পায়, যেটা অবিকৃত এবং ডিপেন্ডেবল। এর ফলে কুরআন সংরক্ষিত হয়। উসমান রা. কে দিয়ে আল্লাহ্ ওইদিন ওই কাজ না করালে আজকে মুসলিম উম্মাহ্ ই থাকতো না।
এরপর আলী রা. আসেন। তিঁনি ওই কপিই বহাল রাখেন। এরপর হাসান রা. আসেন। তিঁনিও কুরআনের ওই কপিই বহাল রাখেন।
কুরআন অবিকৃত, এর পেছনে সিদ্দিকে আকবর, ফারুকে আযম, উসমান গণী, মাওলা আলী, ইমাম হাসান (রিদ্বওয়ানুল্লাহি তাআলা আযমাঈন) সবার কর্ম ও পারস্পরিক অবদান অকল্পনীয়।
আহলাল বাইত এবং খুলাফায়ে রাশিদুনের অবদান ইসলামে যে কোন্ পর্যায়ে আছে, তা আমরা তাঁদেরকে দুনিয়াবি রাজা বা দুনিয়াবি অর্থে রাসূল দ.’র পরিবার মনে করলে কখনো বুঝতে পারব না।