জাপানিতে ডুবে যান,
ক্যারিয়ার ভেসে উঠবে :)
-----

জাপানিরা বছরে ২০ দিন বেতন সহ ছুটি প্রাপ্য। তবু তারা গড়ে ১০ দিনও ছুটি নেয় না। অর্থাৎ, পুরা জাতি প্রাপ্য ছুটির অর্ধেক নেয়। বাকী অর্ধেক নেয়ও না।
আরো মজার ব্যাপার হল, এইযে ২০ দিন ছুটির মধ্যে ১০ দিন নিচ্ছে, এইজন্য প্রতি ৩ জন জাপানির মধ্যে ২ জন অপরাধবোধে ভোগে। অর্থাৎ, তাদের বেশিরভাগই চায় কোনদিনই ছুটি না নিতে। অর্ধেক প্রাপ্য নিয়েছে, বাকী অর্ধেক নেয়নি- এটা যেন তাদের অপরাধ। কেন পুরো সময় কাজ করলো না সে।

শুধু কি ছুটি?
রাত তিনটয় যদি টোকিওতে কোন রাস্তায় দাঁড়ান, একটু পর পর দেখবেন বিভিন্ন বিল্ডিং থেকে স্যুটেড ব্যুটেড লোকজন বেরিয়ে আসছে। ‍তারা বিভিন্ন কোম্পানির মালিক নয়, বা সেলফ-অ্যামপ্লয়েড মানুষও নয়। তারা স্রেফ কর্মকর্তা এবং কর্মচারী। মোস্টলি মিড লেভেল কর্মকর্তা।
সেই যে সকালে অফিসে এসেছে,
বিকালে তার অফিস শেষ হয়েছে,
শেষ রাতে সে বেরিয়ে যাচ্ছে বাসার উদ্দেশ্যে।
আবার কাল সকালে ঠিক সময়ে চলে আসবে।

আজকে যে সে অফিসে ছিল, এজন্য সে কোন ওভারটাইম পাবে না। প্রমোশন পাবে না। কোম্পানির মালিকপক্ষের সুনজর পাবে না। আজকে কোন বিশেষ দিন নয়। আজকে একটা সাধারণ দিন। তার যে পর্যন্ত কাজ ছিল, সে পর্যন্ত সে করে গেছে।

এইযে ভোরবেলা সে বাসা থেকে বেরুলো, তার গতি ছিল দ্রুত। সে দ্রুত হেঁটেছে। মুখে ছিল প্রশান্তি। কোন রাশ তার চোখেমুখে ফুটে ওঠেনি। এইযে দুপুর হয়েছে, তার প্রাপ্য ছিল পৌনে এক ঘন্টা থেকে সোয়া এক ঘন্টা ব্রেক, সে ব্রেক নিয়েছে ৫-২০ মিনিট। এইযে অফিস শেষ হল, তখনো তার চোখেমুখে ক্লান্তির ভাব ছিল না। মেজাজ তিরিক্ষি ছিল না অফিস শেষ হবার পরও। ভ্রু কুঁচকায় নাই রাত দশটা বাজার পরও। গলার স্বর একটু উচু হয়নাই রাত দুইটা বাজার পরও। এইযে তিনটার সময় সে বেরিয়ে গেল, তখনো খুব দ্রুত যাচ্ছে, কিন্তু তার টলা নেই, ঢলা নেই, চোখেমুখে ক্ষিপ্র ভাব নেই, বরং একটা নির্লিপ্ত বহি:প্রকাশ।

অফিসের মালিকপক্ষ কর্মচারী কর্মকর্তাদের অফিস থেকে তাড়াতে পারে না। বললেও তারা যায় না। এজন্য অনেক অফিস রাত ১০ টায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। অনেকে ১১ টায়। অনেকে ১২ টায়। এইবার কী করবে চান্দু? এইবার বাসায় যাও, গিয়ে ঘুমাও। আমার আর তোমার মাগনা কাজের দরকার নাই। :)

অথচ এতকিছু করে সে কী পাচ্ছে? কোন বিরাট কোম্পানির মালিক হয়ে যাচ্ছে? নাহ্। তবু এভাবে কেন কাজ করছে? কারণ সে নিজেকে চেনে। সে জানে, সে মানব। মানব বড় সম্মানের বস্তু। মানব জন্ম নিয়েছে কাজের জন্য। যে কাজই হোক, সেটা সে এভাবেই করবে। তাতে সে যা পাক বা না পাক, তাকে কাজটা করতে হবে এবং করণীয়ভাবে করতে হবে, এবং করার আগে পরে তার কোন ভাব নাই।

আচ্ছা বলেন তো,
আমরা যারা বলি, ‘কাজ করি’ আমরা কি কাজ করি? আমরা যদি কাজ করি, তারা কী করে? তারা যদি কাজ করে, আমরা কী করি?

আমরা যারা বলি, চেষ্টা করেছি, হয়নাই। আসলেই কি আমরা ‘চেষ্টা করেছি’? আমরা যারা বলি, ‘সব করেছি’ হয় নাই, আসলেই কি আমরা ‘সব করেছি’?

বলেন তো, ওই জাপানিটার সমস্যা কোথায়? সে কীভাবে সকাল নয়টা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত মেজাজ একই রকম রাখে? সে কীভাবে মনোযোগ একই রকম রাখে? চিন্তা ভাবনা একই রকম রাখে? কণ্ঠের টোন একই রকম রাখে?

এইটাই শিক্ষা। এইটাই প্রশিক্ষণ।
বাকী সব কুশিক্ষা।
এইটা আমরা পাইনাই। এবং আমরা জানিও না, যে আমরা তা পাই নাই।
Top