কওমী হবার ট্রেন্ড চলছে চিন্তাশীলদের মধ্যে: কেন?
প্রথম চার কারণ:
-----
এর আগে আমরা আলোচনা করেছি সূফিপন্থী হবার ট্রেন্ড নেই, সালাফি হবার ট্রেন্ড নেই, শিয়া হবার ট্রেন্ড নেই।
জামাতি হবার ট্রেন্ড যে নেই, এটা তো আর বলা লাগে না। তাদের নেতারা ঝুলে যাবার পর এবং জামাত আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে পরিস্থিতি মেনে নেয়ার পর তারা প্রথমে সালাফিদের সাথে মিশে গেল। তারপর কওমিদের সাথে মিশে গেল। এখন মিজান আজহারির সাথে মিশে গিয়ে নিজেদের আইডেন্টিটি রিস্টোর করার চেষ্টা করছে। হারু পার্টির সাথে আর যাই হোক, ট্রেন্ড হয় না। তারা আবার উঠে দাঁড়াক, তখন তাদের নিয়ে ট্রেন্ড হবেখন।
প্রকৃতপক্ষে নাস্তিক হবার ট্রেন্ডও এখন নেই। একটা সময় আমরা নাস্তিকতার ট্রেন্ড দেখতাম এবং তখন নাস্তিকতার বিষয়ে ব্লগে অনেক চেষ্টা করেছি। এখন নাস্তিকতার ট্রেন্ড নেই কারণ নাস্তিকতার কোমড় ভেঙে দেয়া হয়েছে, আর এখানেই কওমি ট্রেন্ড হওয়ার প্রথম কারণ:
১. কওমিরা ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকতার কোমড় ভেঙে দিয়েছে। এইটা সত্য কথা, আর সত্য কথা বিষয়ে রাসূল দ’র তলোয়ার মুকাদ্দাসে খোদাই করে লেখা আছে: সত্য বল, যদিও তা তোমাকেই বিঁধে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নাস্তিকদের কিছুতেই মুখ সামাল দেয়ানো যাচ্ছিল না। এখন তাদের প্ল্যাটফর্ম বিনষ্ট। একতা বিনষ্ট। আড্ডা বিনষ্ট। ঠিকানাও বিনষ্ট। তাদের বেশিরভাগ আহতমনে দেশ ছেড়ে গেছে। অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলাপ করছে।
২. ট্রেন্ডের শূণ্যতা: ট্রেন্ডের একটা মহাশূণ্যতা এসেছে। মানুষ ইসলামিস্ট হচ্ছে, কিন্তু তারা কোন্ ফ্লেভারের ইসলামিস্ট হবে সেটা বুঝে পাচ্ছে না। সালাফি হওয়া ট্রেন্ড না, শিয়া হওয়া ট্রেন্ড না, সুফিপন্থী সুন্নি হওয়া ট্রেন্ড না, জামাতি হওয়া ট্রেন্ড না, নাস্তিক হওয়া ট্রেন্ড না। আরে বাবা, কোথায় যাবে, করবেটা কী? বিজয়ী কারা আছে? ইয়েস, কওমী। সরকারের ফেভারে আছে, ফ্লারিশ করছে, শক্তি জানান দিচ্ছে, সরকারকে প্রভাবিত করে কাজ করাচ্ছে। নাস্তিক ঠেকালো কওমী। জিরো থেকে মাস্টার্স পেলো কওমী। শিক্ষাক্রমে হাত দিল কওমী। সবশেষে খতমে নুবুয়ত। সুতরাং ট্রেন্ড স্পষ্ট, কওমী।
৩. কওমিদের গ্রহণ-মানসিকতা:
ক. আপনি নজদি জিহাদিস্ট? কওমিতে সুখ পাবেন। ওখানে নজদি ফ্লেভারের জিহাদিস্ট অ্যাকসেস আছে।
খ. আপনি জামাতি গণতন্ত্রিস্ট? সুখ পাবেন। ওখানে প্যান ইসলামিক জামাতি ফ্লেভারের গণতন্ত্রিস্ট ভাইব আছে।
গ. আপনি সফট সূফিস্ট, কিন্তু সূফিদের বেদাত আর বাড়াবাড়ি কষ্ট দেয়? কওমি আছে!
৪. কওমীরা সবগুলো মতবাদের সবচে ভাইটাল মধ্যস্থলে এই মুহূর্তে আছে। মধ্যস্থলের ভাইটালিটি শিফট করে। কওমী সহ মেজর মতধারাগুলোর পারস্পরিক আকিদাগত নৈকট্য এমন:
খারেজি বা ইবাদি এবং নাসেবি মুতাজেলার মত প্রান্তিক মতগুলো <-> খাঁটি নজদি তথা আহলে হাদিস ও সালাফির অসংখ্য ফ্যাকশন ইনক্লুডিং মওদুদিবাদ <-> দেওবন্দি কওমি <-> উলামাকেন্দ্রীক সুফিপন্থী, যেমন মাসলাকে আলা হযরত বা বেরলভি <-> ভক্তি ও সেবাকেন্দ্রীক সূফিপন্থী <-> বিভ্রান্ত ‘সূফিপন্থী’ যেমন দেহবাদী মিক্সচারবাদী লালনবাদী বা শিয়াবাদী <-> শিয়াদের শত শত ফিরকা।
এই মুহূর্তে মতবাদের ভাইটালিটির ডিমান্ডের জায়গাটা কওমীর ক্ষেত্রে সবচে সুবিধাজনক। সালাফির বিভিন্ন ফ্যাকশন, জামাতে ইসলামি এবং সূফিপন্থার বিভিন্ন ফ্যাকশন- সবাই কওমিতে কিছু কিছু নিজের পুরনো এলিমেন্ট পাচ্ছে এবং নিজের পুরনো এলিমেন্ট পেয়ে তৃপ্ত হয়ে ভাবছে, অন্য কোথাও তো এটা নেই। হালকার উপর ঝাপসাভাবে আছে। এটাই তো মধ্যপন্থা।
লেখা বেশি জটিল এবং বেশি বড় হচ্ছে। কহতব্য বলা হয়নি। নেক্সট পোস্টে ডাইমেনশন চেঞ্জ হবে...