অদৃশ্যের জ্ঞান কি শুধু থিওরি?
-----

ইলমে গায়েব হল আধ্যাত্মিকতার একটা বিশেষ স্তর। অনাধ্যাত্মিক বস্তুবাদী জড়বাদী পার্থিববাদী অনেক মতধারা এটাকে অস্বীকার করে। এমনকি এটাও বলে, খোদ্ রাসূল দ. কে কোন ইলমে গায়েব দেয়া হয়নি। আর দেয়া হলেও তা অতি অনুল্লেখ্য, অতি সামান্য।

সূফিত্বের পথে বরং অদৃশ্যের জ্ঞান (আল্লাহ্ যদি মনযুর করেন এবং যতটুকু মনযুর করেন) একটা প্র্যাক্টিক্যাল বিষয়। স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত বিষয়। এমনকি এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও নয়। ফ্যান্টাসির বিষয়ও নয়। সূফিরা ফ্যান্টাসিতে ভোগে না। সূফিরা পাবার ঘোরে ডোবে না।‍

আগে একটু থিওরি দেখে নেয়া যাক:
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইলমে গায়েব দেয়া হয়েছে, কুরআনের সূরাসমূহ ও আয়াতসমূহ: জ্বিন ২৬-২৭, আল ই ইমরান ১৭৯, নিসা ১১৩, আনআম ৩৮, নাহল ৮৯, ইউনূস ৩৭, আর রাহমান ১-২, তাকভীর ২৪, আনআম ৫৯।

যেখানে আল্লাহ্ কুরআনে বলছেন, তিনি যাকে ইচ্ছা যতটুকু ইচ্ছা গায়েবের জ্ঞান দান করেন- সেখানে যদি আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ্ কাউকে গায়েবের জ্ঞান দান করেননি- এটা কি কুফর হবে না? কুরআনের যে কোন আয়াত অস্বীকার করাই তো কুফর। তাই না?

আল্লাহ্’র পানাহ্! এটা কি আল্লাহ্’র বাণীর উপর যুলম নয়? এটা কি কিতাবুল্লাহ্’র উপর যুলম নয়? এটা কি মুসলিম উম্মাহ্’র উপর যুলম নয়? এটা কি মুসলিম উম্মাহ্’র বিশ্বাসের উপর যুলম নয়?

এবার প্র্যাক্টিক্যাল তুলনায় আসি:

এগুলো থিওরির বিষয় না, প্র্যাক্টিক্যালের বিষয়। আমি যদি জীবনেও কাউকে সাঁতরাতে না দেখি, এবং যদি দেখি যে মানুষ পানিতে ডুবে যায়, তবে আমি সব সময়েই অবিশ্বাস করব সাতারকে।

কারণ আমার লজিক বলছে, আমি যতবার পানিতে নামি ততবার ডুবি। মানুষের দেহ পানির চেয়ে ভারি এবং পানিকে অপসারণ করে, তাই মানুষ কখনোই সাতরাতে পারবে না- আমি এটাই বলব। এ মতেই স্থির থাকব।

আল্লাহ্ যে মানুষকে ইলমে গায়িব বিভিন্ন পরিমাণে বিভিন্ন সময়ে দান করেন, এটা শুধু ওই মানুষই বিশ্বাস করবে, যে তা পেয়েছে অথবা পেতে দেখেছে।
অন্যে করবে না। এটাই স্বাভাবিক।

যে মতবাদের কেউ আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে অদৃশ্য সংবাদ পায়নি- সে মতবাদের সবাই ইলমে গায়েব অস্বীকার করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে মতধারার মানুষকে আল্লাহ্ কখনো অদৃশ্যের সংবাদ জানান না, সে মতধারা যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্’র পক্ষের মতধারা নয়- তা বুঝতে মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

সাঁতার তখনি বিশ্বাস করা সম্ভব, যখন কেউ নিজে সাঁতার কাটে অথবা কাউকে কাটতে দেখে। অথবা কোন গ্রন্থকে বিশ্বাস করে, যেখানে লেখা আছে যে সাঁতার কাটা সম্ভব।

এখন, কুরআনে তো লেখা আছে আল্লাহ্ সিলেক্টিভ পারসনদের যতটুকু ইচ্ছা ইলমে গায়েব দেন- তবু কি আমরা কুরআনকেও অস্বীকার করব, যদিওবা আমার মতবাদের কেউ কখনো ইলমে গায়েব পায়নি এবং আমার মতবাদের কেউ কখনো ইলমে গায়েব পেতে দেখেনি?
গ্রন্থটাকেই অস্বীকার করে বসব?
Top