সবচে কঠিন কাজ? আল্লাহ্’র ওয়ালী’র সঙ্গে কিছু সময় কাটানো
-----

কাচ্চা তাসাউউফ নিয়ে সাধারণত খুবই কম লিখি। আজকে কিছু হোক...

আমরা আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহ্’র ওয়ালীদের সঙ্গ পেতে চাই। কিন্তু আমরা কি জানি, সঙ্গ পাওয়াটা সবচে কঠিন একটা অবস্থান?

আল্লাহ্’র ওয়ালীদের আনুগত্যে নাফসের তাযকিয়ার জন্য কিছু সময় অতিবাহিত করতে চাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের পীর ও মুরশিদের সোহবতে যাবার আগে নিজেদেরকে তাদের জন্য প্রস্তুত করা দরকার।

অর্থাৎ আমাদের মনে তাদের আন্তরিক আনুগত্যের প্রতি প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। সোহবতের প্রথম পর্বই হল আনুগত্য।

সোহবত আল্লাহ্ কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা দিলেও একটা জায়গা ছিল মারাত্মক।

বিষয়টা অনেকটা এরকম: মূসা আলাইহিস সালাম যখন খাদ্বির আলাইহিস সালামের সোহবতে যান, তখন খাদ্বির আলাইহিস সালাম বলেছিলেন, ‘আপনি কি পারবেন বিনা প্রশ্নে থাকতে/ আপনি বিনা দ্বিধায় থাকতে পারবেন না।’

মূসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন, তিনি পারবেন।

খাদ্বির আলাইহিস সালাম শর্ত দিয়েছিলেন, প্রশ্ন তুললে কিন্তু চলে যেতে হবে।

কিন্তু খাদ্বির আলাইহিস সালাম কিছু আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত কাজ করেন, যেমন, এতিমদের বাড়ির দেয়াল ভেঙে দেন। একটা জাহাজ বা নৌকা ডুবিয়ে দেন পাড়ের কাছেই।

প্রশ্ন তো ঠিকই উঠেছিল। খাদ্বির আলাইহিস সালাম বলেন:
এই দেয়ালের নিচে ওই এতিমদের বাবার রেখে যাওয়া গুপ্তধন আছে। সেগুলো যেন হাতছাড়া না হয় এজন্য তিনি এতিমের ঘরের/বাড়ির দেয়াল ধ্বসিয়েছেন। এই নৌকাভর্তি মানুষ নদী/সমুদ্রে নামার পরই ঝড়ে মরতো, তাই তিনি আগেই নৌকা ডুবিয়ে মানুষগুলোকে বাঁচিয়েছেন।

মূলত আমরা সূফিপন্থীরা তাই মনে করি, সোহবতে যাবার আগে সোহবতের জন্য কতটা প্রস্তুতি প্রয়োজন, আল্লাহ্ কুরআনে এই ঘটনা বর্ণনা করে স্পষ্ট করেছেন।

এখান থেকে দ্বিতীয় যে শিক্ষা আমরা পাই: খাদ্বির আলাইহিস সালাম নবী হিসাবে প্রমাণিত না হবার পরও তিনি একজন শিশুর ভবিষ্যতের কাজ দেখতে/ জানতে পেরেছেন। এতিমের বাড়ির কোথায় তার পিতার রাখা গুপ্তধন আছে সেটাও দেখতে পেয়েছেন। দূরে নদী বা সমুদ্রে ঠিক কখন ঝড় উঠবে এবং সে ঝড়ে ঠিক কোন্ যানটা ডুবে যাবে সেটাও জানতে পেরেছেন।

অর্থাৎ সম্পূর্ণটাই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাথে আপাতদৃষ্টিতে অলৌকিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ।

একজন মানুষের পীর ও মুরশিদ হতে হলে আল্লাহ্’র সাথে ন্যূনতম কিছু না কিছু যোগাযোগ থাকতে হয়। এটা সহজ কথা।

কঠিন কথা হল, একজন মানুষের কোন ওয়ালীর মুরিদ/বায়াত/ সোহবতপ্রাপ্ত হতে হলে তাকে আগে এইসব বিষয়ে মনের দিক থেকে নি:সন্দেহ এবং অন্তর নিশ্চিন্ত ভরসায় ভরপুর থাকতে হয়।

আল্লাহ্’র ওয়ালীকে আল্লাহ্ জানাতেই পারেন, এটা সহজ বিষয়। আল্লাহ্’র ওয়ালীকে আল্লাহ্ পথ দেখাতেই পারেন, এটা খুব স্বত:স্ফূর্ত। কিন্তু কঠিন বিষয় হল, যে জানেও না, দেখেও না, তার অন্তরে অবিচল আস্থা তৈরি হওয়া।
এই অবিচল আস্থা তৈরি হবার পর মুরিদ হওয়ার জন্য একজন মানুষ প্রস্তুত হয়।

এজন্য মুরিদ হওয়া কঠিন, তারচে কঠিন খোদ্ মুরশিদের সোহবতে যাওয়া। কেননা, মুরিদ হয়ে যদি আমি তার সঙ্গপ্রাপ্ত না হই, তবু বেঁচে গেলাম। যদি তার সঙ্গে যাই, তবে কী থেকে কী করব, কী বলতে কী বলব, কোন্ভাবে কোন্ সীমা অতিক্রম করে ফেলব- কীভাবে তাকে অপ্রস্তুত করে ফেলব, কোন্ মুহূর্তে আমার মনে তার প্রতি অনাস্থার জন্য আল্লাহ্ ও অখুশি হয়ে যাবেন, এটা বলা যায় না।

তরিক্বতে তাই প্রথম ধাপ হল বেসিক নি:সন্দেহতার স্থানে পৌছা। দ্বিতীয় ধাপ হল সূফিদের আক্বিদাকে নিজের আক্বিদা করে নেয়া। তৃতীয় ধাপ সূফি মনোভাব ও আচার আচরণের সাথে একাত্ম্য হওয়া। চতুর্থ ধাপ মুরিদ হওয়া। পঞ্চম ধাপে একজন মানুষ তার মুরশিদের সান্নিধ্যে যেতে পারে।

মজার ব্যাপার হল, আমরা অহরহ এর বিপরীতটাও দেখেছি। কিছু না দেখে কিছু না জেনে মুরিদ হয়ে যাবার পরও সব দুয়ার খুলতে শুরু করে। কিন্তু সোহবতে যাওয়া উচিত যথা সম্ভব পরিণত হবার পর।

পরিণত হতে হতে এ ধাপগুলো পেরিয়ে এলেই একজন মানুষ তার মুরশিদের দেয়া শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়। তার আগে সে তারই জন্য দেয়া শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে পদে পদে প্রশ্ন করতে থাকে।
Top