১. মুদ্রার ভাল পিঠ: ফিকাহ্-হাদীসের ইমাম ও স্কলাররা যখন যেটাই বলে গেছেন
সেখানেই কি শেষ?
-----
আমাদের আহলুস সুন্নাহ্’র একটা মারাত্মক উসুল:
সাহাবি-তাবিয়ি পরবর্তীতে আসা পূর্বযুগের ম্যাক্সিমাম ইমামরা যেটা বলে গেছেন, সেটাই আমাদের পথ।
এই উসুল একই সাথে প্রচন্ড উপকারী এবং প্রচন্ড অপকারী।
আহলুস সুন্নাহ কে যারা উসুলগতভাবে মেনে এসেছেন, বা নীতিগতভাবে মানেন বলে দাবি করেন, এই গোত্রের মধ্যে পড়ে আজকের এই গ্রুপগুলো:
১. শরিয়ত-সচেতন এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরিয়ত-অসচেতন সূফিপন্থীরা। আমরা এটা। আমরা এটাকে সুন্নি বলি।
২. সূফি-অসচেতন এবং প্রায়োগিকক্ষেত্রে সূফি-চেতনা-বিরোধী কিন্তু আহলুস সুন্নাহ্’র ট্র্যাডিশনাল কিতাবি ইন্টারপ্রিটেশনকে যারা প্রাধান্য দেন। এর মধ্যে দেওবন্দিদের সংখ্যাই বেশি।
৩. মোটাদাগে সূফিপন্থী বিরোধী এবং শিয়াবিরোধী, হাদিসের গ্রন্থ কিছুটা মানে, এই হিসাবে আহলে সুন্নাহ্’র শিয়াবিরোধিতা ও হাদিসগ্রন্থ স্বীকৃতির ট্র্যাডিশন ফলো করছে। এরা তাইমিয়াবাদী, বা নজদীবাদী। এদেরকে গালভরে সালাফি ও আহলে হাদিস বলা হয়।
উপকারের দিকটা:
উপকারের দিকটা হল, আমরা যারা সূফিপন্থী সুন্নি, তারা বিশ্বাস করি, আল্লাহ্ কখনো ব্যক্তি-গাইড ছাড়া উম্মাহ্ কে ছেড়ে দেননি, দেনও না।
এই ব্যক্তি-গাইডরা আছেন বলেই কুরআন ও সুন্নাহ্’র ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা এক প্রজন্মে আরেক প্রজন্ম থেকে প্রবাহিত হয়।
রাসূল দ.’র ওই সাত বিখ্যাত কথা:
‘ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাসী হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সবকিছু থেকে আমাকে বেশি ভাল না বাসো’
‘তোমাদের মাঝে রেখে গেলাম কুরআন ও সুন্নাহ্’
‘তোমাদের মাঝে রেখে গেলাম কুরআন ও আহলাল বাইত’
‘আমার সুন্নাহ্ ও খুলাফায়ে রাশিদুন মাহদিয়ুনের সুন্নাহ্ অনুসরণ করো’
‘আমার সুন্নাহ্ ও আমার জামাতকে অনুসরণ করো’,
‘বেশিরভাগের দলকে অনুসরণ করো’ ও
‘আমি মধ্যপন্থী, আমার উম্মাহ্ মধ্যপন্থী’।
মোটাদাগে বর্তমান আলোচনার সুবিধার্থে আমরা বলতে পারি, এই সাতটা দিকনির্দেশনার উপর ভিত্তি করে ইসলামের ধারাবাহিকতা বা ট্র্যাডিশন সৃষ্টি হয়।
এই সাত হাদীসের সবগুলোই যাদের ভিতর প্রকটিত, তারা নি:সন্দেহে সত্যপন্থী।
বেশিরভাগের দল তৈরি হয়েছে, ও টিঁকে গেছে, বিশ্লেষণের দিক থেকে বলতে গেলে, ট্র্যাডিশনকে ফলো করার মাধ্যমে। কারণ প্রত্যেক যুগে তারাই ছিল বেশিরভাগের দল, শুধু এক যুগে না, হোয়েদার তাদের রাজশক্তি ফেভার করুক বা অপোজ-সাপ্রেস করুক।
আর স্বাভাবিকভাবেই, মধ্যপন্থা মানুষ অনায়াসে গ্রহণও করতে পারে, পালনও সহজে করতে পারে, বুঝতেও সহজে পারে, প্রজন্মান্তরে প্রবাহিতও সহজে করতে পারে।
মধ্যপন্থা হল সেই নীতি, যেটাকে অনুসরণ করা শুধু সহজই নয়, স্বত:স্ফূর্তও বটে।
এককথায়, মধ্যপন্থা অনুসরণে একটা সিভিলাইজড ও সিভিলিয়ান ভাইভ আছে। শান্তি, স্থিতি, সাসটেইনিবিলিটি ও গ্রোথ।
যখন এই সহনশীলতার ভাইভটা জামাতবদ্ধ রেঞ্জে রাসূল দ.’র সাহাবীদের অনুসরণ করে, তখন তাদের সবকিছুর সংজ্ঞা অনেক ওয়াইড হয়ে যায়। কারণ লক্ষ সাহাবীর পারস্পরিক ইন্টারাকশন চওড়া ছিল।
তো, মধ্যপন্থী মানুষজন যখন জ্ঞানীদের মধ্যে বেশিরভাগের মতকে গ্রহণ করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আম উম্মাহ্ বা সাধারণ্যে বেশিরভাগের দল তৈরি হবে।
এই বেশিরভাগের দল যত সহজে প্রজন্মের পর প্রজন্মে শিক্ষা প্রবাহিত করবে, তত সহজে আর কেউ পারবে না। কারণ এখানে ব্যক্তি-অনুসরণের পাশাপাশি দলবদ্ধতা অনুসরণের উপর খুবই গুরুত্ব আছে। আর এই দলবদ্ধতা অনুসরণ মানে হল বেশিরভাগ স্কলারের মতামতকে অনুসরণ।
কোন আশ্চর্য বিষয় নয় যে, আমরা সুফিপন্থী সুন্নিরা হাজারো বছর ধরে বেশিরভাগের দল। এটাই-
* সাওয়াদে আযম,
* এটাই আহলুস সুন্নাহ্,
* এটাই আহলুল বাইতের অনুসারী (কারণ প্রায় সব সূফি চেইন অজস্র আহলাল বাইতের হাতে প্রবাহিত হয়েছে, সব যুগে),
* শোঁকাও লাগে না, দেখলেই বোঝা যায় যে এটাই মধ্যপন্থী,
* এটাই, প্রজন্মান্তরে গাইডেন্সকে পারস্পরিক স্বীকৃতি বা লাইনেজের মাধ্যমে প্রবাহিত করে। এই ধাপটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তো, পুর্ববর্তী বিভিন্ন যুগের, বিশেষ করে :
হাদীস ক্ল্যারিফিকেশনের যুগের,
কুরআনের তাফসিরের যুগের এবং
ফিকাহ শাস্ত্র গঠনের যুগের-
ইমাম ও মুজতাহিদদের অনুসরনের মাধ্যমে আমরা এই বেশিরভাগের-মধ্যপন্থী-আহলাল বাইত-খুলাফা-সাহাবীমুখী ট্র্যাডিশনকে পাই।
এটা হল পূর্ববর্তীদের ব্যাখ্যাকে আঁকড়ে ধরার বাস্তব সুবিধা।
শুধু যে সূফিপন্থীরা তা-ই নয়, দেওবন্দ ও সালাফি ঘরানাও পূর্ববর্তী ইমামদের ট্র্যাডিশন ও ব্যাখ্যাকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নেয়, সবার মধ্যে কিছু সংখ্যক ইমাম/স্কলার কমন, কিছু ইমাম/স্কলার কমন নয়।