ইতিপূর্বের আলোচনা থেকে প্রমাণ করেছি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রদি মদপান সংশ্লিষ্ট বর্ণনার সনদ ও মতনগতভাবে কোন ভিত্তিই নাই।
* এ পর্বে আমরা দেখবো, মদপান সংশ্লিষ্ট বর্ণনা সম্পর্কে হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে দলীল:
ইমাম হাকেম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মদপান করে নামায পড়ার মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করে বিপরীতে মূল ঘটনার বিবরনে সহীহ হাদীছ (পরবর্তীতে আলোচনায় আসবে) উল্লেখ করে এ বিষয়ে সমাধান দিয়ে বলেন,
وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ فَائِدَةٌ كَبِيرَةٌ وَهِيَ أَنَّ الْخَوَارِجَ تَنْسُبُ هَذَا السُّكْرَ وَهَذِهِ الْقِرَاءَةَ إِلَى أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ دُونَ غَيْرِهِ وَقَدْ بَرَّأَهُ اللهُ مِنْهَا فَإِنَّهُ رَاوِيُ الْحَدِيْثِ-
‘অত্র হাদিসে বহু ফায়েদা রয়েছে আর তা এই যে, খারেজীরা এই মাতলামি ও এই ক্বিরাআতে যোগ-বিয়োগ হওয়াকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এর দিকে সম্বন্ধ করে, অন্যের দিকে নয়। অথচ আল্লাহ তাকে এই দোষ থেকে মুক্ত করেছেন। কেননা তিনিই এই হাদিসের রাবী’। (আল মুস্তাদরাক ২/৩৬৬ : হাদীছ ৩২৫৯)
ইলমে হাদীছ ও ইলমে উছূলে হাদীছের ইমাম হযরত ইমাম হাকেম নাঈসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য থেকে প্রমাণ হলো, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে মদপান করে নামাযে ভুল করার কথা খারেজীদের বানানো। তারা বিদ্বেষবশত অন্যের ঘটনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে সম্পর্কযুক্ত করে দেয়। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে এ ঘটনার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নাই তিনি শুধুমাত্র এ ঘটনার বর্ণনাকারী রাবী।
মদপান সংশ্লিষ্ট বর্ণনা সর্ম্পকে আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওনুল মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ কিতাবে ইমাম মুনজিরির বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন,
وَقَالَ أَبُو بَكْر الْبَزَّار : وَهَذَا الْحَدِيث لَا نَعْلَمهُ يُرْوَى عَنْ عَلِيّ رَضِيَ اللَّه تَعَالَى عَنْهُ مُتَّصِل الْإِسْنَاد إِلَّا مِنْ حَدِيث عَطَاء بْن السَّائِب عَنْ أَبِي عَبْد الرَّحْمَن يَعْنِي السَّلَمِيّ ......... وَقَدْ اُخْتُلِفَ فِي إِسْنَاده وَمَتْنه ، فَأَمَّا الِاخْتِلَاف فِي إِسْنَاده فَرَوَاهُ سُفْيَان الثَّوْرِيّ وَأَبُو جَعْفَر الرَّازِيّ عَنْ عَطَاء بْن السَّائِب فَأَرْسَلُوهُ ، وَأَمَّا الِاخْتِلَاف فِي مَتْنه فَفِي كِتَاب أَبِي دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ مَا قَدَّمْنَاهُ ، وَفِي كِتَاب النَّسَائِيِّ وَأَبِي جَعْفَر النَّحَّاس أَنَّ الْمُصَلِّي بِهِمْ عَبْد الرَّحْمَن بْن عَوْف ، وَفِي كِتَاب أَبِي بَكْر الْبَزَّار أَمَرُوا رَجُلًا فَصَلَّى بِهِمْ وَلَمْ يُسَمِّهِ ، وَفِي حَدِيث غَيْره فَتَقَدَّمَ بَعْض الْقَوْم . اِنْتَهَى كَلَام الْمُنْذِرِيِّ
হযরত ইমাম আবু বকর বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন এ হাদীছ হযরত আতা ইবনে সাঈব, আবু আব্দুর রহমান সুলামী ব্যতিত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে মুত্তাছিল সনদে বর্ণিত আছে বলে আমরা জানি না। এর সনদ ও মতনে মতবিরোধ রয়েছে। আর সনদের মতবিরোধ হচ্ছে সুফিয়ান ছাওরী , আবু জাফর রাজী, আতা ইবনে সাঈব বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা করেন। আর মতন বিষয়ে মতবিরোধ হচ্ছে আবু দাউদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফে যা উল্লেখ করেছি। কিতাবু নাসাঈতে হযরত আবু জাফর নাখখাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয়ই নামায পড়িয়েছিলেন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। হযরত আবু বকর বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তিকে নামায পড়তে আদেশ করা হয় কিন্তু তার নাম জানা যায় না। (আওনুল মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ ১০/১০৮)
লা’মাযহাবী জামাতীদের অন্যতম মুরুব্বী আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তার তিরমিযী শরীফের শরাহ তোহফাতুল আহওয়াযী কিতাবে উল্লেখ করেন,
قَالَ الْمُنْذِرِيُّ : وَفِي إِسْنَادِهِ عَطَاءُ بْنُ السَّائِبِ لَا يُعْرَفُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِهِ وَقَدْ قَالَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ : لَا يُحْتَجُّ بِحَدِيثِهِ
ইমাম মুনজিরি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছের জন্য হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতিত অণ্য কোন সনদ দেখা যায় না। হযরত ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ দলীলযোগ্য নয়। (তুহফাতুল আহওয়াজী শরহে জামিউত তিরমিযী ৭/৩৪৭: হাদীছ ২৯৫২)
সকল লা’মাযহাবীদের ইমাম কাজী শাওকানী তার কিতাব নায়লুল আওতার কিতাবে অনেক কথাই উল্লেখ করেছে যা আওনুল মাবুদ ও তুহফাতুল আহওয়াযী কিতাব থেকে ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। তাই কথাগুলোর পূনরাবিত্তী না করে মূল আকর্ষনটাই দেয়া হলো,
وأخرج الحاكم في تفسير سورة النساء عن عطاء بن السائب عن أبي عبد الرحمن عن علي رضي الله عنه دعانا رجل من الأنصار قبل تحريم الخمر فحضرت صلاة المغرب فتقدم رجل فقرأ يا أيها الكافرون فالبس عليه فنزلت لا تقربوا الصلاة وأنتم سكارى ثم قال صحيح قال وفيهذا الحديث فائدة كبيرة وهي أن الخوارج تنسب هذا السكر وهذه القراءة إلى أمير المؤمنين علي بن أبي طالب دون غيره وقد برأه الله فإنه راوي الحديث
ইমাম হযরত হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে সূরা নিছার তাফসীরে হাদীছ বর্ণনা করেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন, ‘জনৈক আনসার ব্যক্তি দাওয়াত দেন মদ হারাম হওয়ার পূর্বে। এমন সময় মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। তখন জনৈক ব্যক্তি এগিয়ে যায় ও সালাতে সূরা কাফিরূণ পাঠ করে। কিন্তু তাতে যোগ-বিয়োগ করে। তখন নাযিল হয় হে ঈমানদারগন তোমরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না। ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি সহীহ।
(এরপার ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) ‘অত্র হাদিসে বহু ফায়েদা রয়েছে। আর তা এই যে, খারেজীরা এই মাতলামি ও এই ক্বিরাআতে যোগ-বিয়োগ হওয়াকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এর দিকে সম্বন্ধ করে, অন্যের দিকে নয়। অথচ আল্লাহ পাক উনাকে এই দোষ থেকে মুক্ত করেছেন। আর তিনিই এই হাদিসের রাবী’ (অর্থাৎ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম শুধুমাত্র এ হাদীছ শরীফ বর্ণনাই করেছেন তিনি না ওখানে উপস্থিত ছিলেন না নামায পড়িয়েছেন) । (নায়লুল আওতার মিন আহাদিছি সাইয়্যিদিল আখইয়ার ৯/৪২)
কাজী শাওকানী ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদৃতি দিয়ে স্পষ্ট বলে দিলেন, মদপান করে ভুল তেলাওয়াতের বিষয়টা খারেজিরা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে শত্রুতা ও বিদ্বেষবশত সম্বন্ধযুক্ত করে ।
নায়লুল আওতাতের সারসংক্ষেপ বুস্তানুল আহবার মুখতাছারু নায়লুল আওতার কিতাবে ৫ম খন্ড ৩৯৯ পৃষ্ঠায় হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি নিছবত করে তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফে যে বর্ণনা রয়েছে সে বিষয়ে বলা হয়েছে,
هَذَا الْحَدِيثُ وَقَدْ اُخْتُلِفَ فِي إسْنَادِهِ وَمَتْنِهِ
ঐসকল হাদীছ শরীফে সনদ ও মতনে ইখতিলাফ রয়েছে।”
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণ হলো, তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি যে তোহমত রয়েছে তা সনদ ও মতনগতভাবে অগ্রহনযোগ্য। এ বর্ণনা দলীল হিসাবে উপস্থপনযোগই না। বরং এ বর্ণনায় খারেজীরা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক যুক্ত করে শান মান খাটো করার জন্য উনার প্রতি অভিযোগ আরোপ করে। ( চলবে.....)
* এ পর্বে আমরা দেখবো, মদপান সংশ্লিষ্ট বর্ণনা সম্পর্কে হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে দলীল:
ইমাম হাকেম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মদপান করে নামায পড়ার মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করে বিপরীতে মূল ঘটনার বিবরনে সহীহ হাদীছ (পরবর্তীতে আলোচনায় আসবে) উল্লেখ করে এ বিষয়ে সমাধান দিয়ে বলেন,
وَفِي هَذَا الْحَدِيثِ فَائِدَةٌ كَبِيرَةٌ وَهِيَ أَنَّ الْخَوَارِجَ تَنْسُبُ هَذَا السُّكْرَ وَهَذِهِ الْقِرَاءَةَ إِلَى أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ دُونَ غَيْرِهِ وَقَدْ بَرَّأَهُ اللهُ مِنْهَا فَإِنَّهُ رَاوِيُ الْحَدِيْثِ-
‘অত্র হাদিসে বহু ফায়েদা রয়েছে আর তা এই যে, খারেজীরা এই মাতলামি ও এই ক্বিরাআতে যোগ-বিয়োগ হওয়াকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এর দিকে সম্বন্ধ করে, অন্যের দিকে নয়। অথচ আল্লাহ তাকে এই দোষ থেকে মুক্ত করেছেন। কেননা তিনিই এই হাদিসের রাবী’। (আল মুস্তাদরাক ২/৩৬৬ : হাদীছ ৩২৫৯)
ইলমে হাদীছ ও ইলমে উছূলে হাদীছের ইমাম হযরত ইমাম হাকেম নাঈসাবুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য থেকে প্রমাণ হলো, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে মদপান করে নামাযে ভুল করার কথা খারেজীদের বানানো। তারা বিদ্বেষবশত অন্যের ঘটনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে সম্পর্কযুক্ত করে দেয়। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে এ ঘটনার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নাই তিনি শুধুমাত্র এ ঘটনার বর্ণনাকারী রাবী।
মদপান সংশ্লিষ্ট বর্ণনা সর্ম্পকে আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওনুল মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ কিতাবে ইমাম মুনজিরির বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন,
وَقَالَ أَبُو بَكْر الْبَزَّار : وَهَذَا الْحَدِيث لَا نَعْلَمهُ يُرْوَى عَنْ عَلِيّ رَضِيَ اللَّه تَعَالَى عَنْهُ مُتَّصِل الْإِسْنَاد إِلَّا مِنْ حَدِيث عَطَاء بْن السَّائِب عَنْ أَبِي عَبْد الرَّحْمَن يَعْنِي السَّلَمِيّ ......... وَقَدْ اُخْتُلِفَ فِي إِسْنَاده وَمَتْنه ، فَأَمَّا الِاخْتِلَاف فِي إِسْنَاده فَرَوَاهُ سُفْيَان الثَّوْرِيّ وَأَبُو جَعْفَر الرَّازِيّ عَنْ عَطَاء بْن السَّائِب فَأَرْسَلُوهُ ، وَأَمَّا الِاخْتِلَاف فِي مَتْنه فَفِي كِتَاب أَبِي دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ مَا قَدَّمْنَاهُ ، وَفِي كِتَاب النَّسَائِيِّ وَأَبِي جَعْفَر النَّحَّاس أَنَّ الْمُصَلِّي بِهِمْ عَبْد الرَّحْمَن بْن عَوْف ، وَفِي كِتَاب أَبِي بَكْر الْبَزَّار أَمَرُوا رَجُلًا فَصَلَّى بِهِمْ وَلَمْ يُسَمِّهِ ، وَفِي حَدِيث غَيْره فَتَقَدَّمَ بَعْض الْقَوْم . اِنْتَهَى كَلَام الْمُنْذِرِيِّ
হযরত ইমাম আবু বকর বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন এ হাদীছ হযরত আতা ইবনে সাঈব, আবু আব্দুর রহমান সুলামী ব্যতিত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে মুত্তাছিল সনদে বর্ণিত আছে বলে আমরা জানি না। এর সনদ ও মতনে মতবিরোধ রয়েছে। আর সনদের মতবিরোধ হচ্ছে সুফিয়ান ছাওরী , আবু জাফর রাজী, আতা ইবনে সাঈব বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা করেন। আর মতন বিষয়ে মতবিরোধ হচ্ছে আবু দাউদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফে যা উল্লেখ করেছি। কিতাবু নাসাঈতে হযরত আবু জাফর নাখখাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয়ই নামায পড়িয়েছিলেন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। হযরত আবু বকর বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তিকে নামায পড়তে আদেশ করা হয় কিন্তু তার নাম জানা যায় না। (আওনুল মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ ১০/১০৮)
লা’মাযহাবী জামাতীদের অন্যতম মুরুব্বী আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তার তিরমিযী শরীফের শরাহ তোহফাতুল আহওয়াযী কিতাবে উল্লেখ করেন,
قَالَ الْمُنْذِرِيُّ : وَفِي إِسْنَادِهِ عَطَاءُ بْنُ السَّائِبِ لَا يُعْرَفُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِهِ وَقَدْ قَالَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ : لَا يُحْتَجُّ بِحَدِيثِهِ
ইমাম মুনজিরি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছের জন্য হযরত আতা ইবনে সাঈব রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতিত অণ্য কোন সনদ দেখা যায় না। হযরত ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ দলীলযোগ্য নয়। (তুহফাতুল আহওয়াজী শরহে জামিউত তিরমিযী ৭/৩৪৭: হাদীছ ২৯৫২)
সকল লা’মাযহাবীদের ইমাম কাজী শাওকানী তার কিতাব নায়লুল আওতার কিতাবে অনেক কথাই উল্লেখ করেছে যা আওনুল মাবুদ ও তুহফাতুল আহওয়াযী কিতাব থেকে ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি। তাই কথাগুলোর পূনরাবিত্তী না করে মূল আকর্ষনটাই দেয়া হলো,
وأخرج الحاكم في تفسير سورة النساء عن عطاء بن السائب عن أبي عبد الرحمن عن علي رضي الله عنه دعانا رجل من الأنصار قبل تحريم الخمر فحضرت صلاة المغرب فتقدم رجل فقرأ يا أيها الكافرون فالبس عليه فنزلت لا تقربوا الصلاة وأنتم سكارى ثم قال صحيح قال وفيهذا الحديث فائدة كبيرة وهي أن الخوارج تنسب هذا السكر وهذه القراءة إلى أمير المؤمنين علي بن أبي طالب دون غيره وقد برأه الله فإنه راوي الحديث
ইমাম হযরত হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে সূরা নিছার তাফসীরে হাদীছ বর্ণনা করেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন, ‘জনৈক আনসার ব্যক্তি দাওয়াত দেন মদ হারাম হওয়ার পূর্বে। এমন সময় মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। তখন জনৈক ব্যক্তি এগিয়ে যায় ও সালাতে সূরা কাফিরূণ পাঠ করে। কিন্তু তাতে যোগ-বিয়োগ করে। তখন নাযিল হয় হে ঈমানদারগন তোমরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না। ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি সহীহ।
(এরপার ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) ‘অত্র হাদিসে বহু ফায়েদা রয়েছে। আর তা এই যে, খারেজীরা এই মাতলামি ও এই ক্বিরাআতে যোগ-বিয়োগ হওয়াকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এর দিকে সম্বন্ধ করে, অন্যের দিকে নয়। অথচ আল্লাহ পাক উনাকে এই দোষ থেকে মুক্ত করেছেন। আর তিনিই এই হাদিসের রাবী’ (অর্থাৎ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম শুধুমাত্র এ হাদীছ শরীফ বর্ণনাই করেছেন তিনি না ওখানে উপস্থিত ছিলেন না নামায পড়িয়েছেন) । (নায়লুল আওতার মিন আহাদিছি সাইয়্যিদিল আখইয়ার ৯/৪২)
কাজী শাওকানী ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উদৃতি দিয়ে স্পষ্ট বলে দিলেন, মদপান করে ভুল তেলাওয়াতের বিষয়টা খারেজিরা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার দিকে শত্রুতা ও বিদ্বেষবশত সম্বন্ধযুক্ত করে ।
নায়লুল আওতাতের সারসংক্ষেপ বুস্তানুল আহবার মুখতাছারু নায়লুল আওতার কিতাবে ৫ম খন্ড ৩৯৯ পৃষ্ঠায় হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি নিছবত করে তিরমিযী ও আবু দাউদ শরীফে যে বর্ণনা রয়েছে সে বিষয়ে বলা হয়েছে,
هَذَا الْحَدِيثُ وَقَدْ اُخْتُلِفَ فِي إسْنَادِهِ وَمَتْنِهِ
ঐসকল হাদীছ শরীফে সনদ ও মতনে ইখতিলাফ রয়েছে।”
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণ হলো, তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি যে তোহমত রয়েছে তা সনদ ও মতনগতভাবে অগ্রহনযোগ্য। এ বর্ণনা দলীল হিসাবে উপস্থপনযোগই না। বরং এ বর্ণনায় খারেজীরা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক যুক্ত করে শান মান খাটো করার জন্য উনার প্রতি অভিযোগ আরোপ করে। ( চলবে.....)