বঙ্গানুবাদ: এডমিন

[ভারত উপমহাদেশে ওহাবী/আহলে হাদীস/দেওবন্দী/তাবলীগী জামাআতের পূর্বপুরুষ ইসমাঈল দেহেলভী (মৃত্যু: ১২৪৬ হিজরী/১৮৩১ খৃষ্টাব্দ)] 

ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী চিশ্তী (রহ:) إمكان كذب - এমকানে কিযব (আল্লাহ মিথ্যে বলতে পারেন কি না প্রসঙ্গ), এমতেনা’আ আল-নাযীর ও প্রিয়নবী (দ:)’র শাফাআতের বিষয়গুলোতে মৌলভী ইসমাঈল দেহেলভীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি তীব্র আপত্তি উত্থাপন করেন।

(১) ১২৪০ হিজরী সালে ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী চিশ্তী আরো ১৩ (তেরো) জন নেতৃস্থানীয় আলেমকে সাথে নিয়ে ইসমাইল দেহেলভীর প্রতি কুফরের ফতোয়া আরোপ করেন। এঁরা সবাই শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহেলভী (রহ:)’র প্রথম সারির ছাত্র।

এই ফতোয়াটি প্রকাশিত হয়েছিলো ‘তাহক্বীক্ব আল-ফতওয়া’ পুস্তকে যা’তে ওই চৌদ্দ জন আলেম স্বাক্ষর করেছিলেন। দলিলচিত্র:



(২) ১২৪৬ হিজরী/১৮৩১ খৃষ্টাব্দ সালে ইসমাঈল দেহেলভী (বালাকোটে) নিহত হয়।

দেওবন্দী ভাষ্যমতে, “ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী চিশ্তী এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন এবং ইসমাঈল দেহেলভীকে ‘মহান আলেম’ ও উম্মতে মুহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র ‘হাকিম (ডাক্তার)’ বলে সম্বোধন করেন।”

অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন যে, এই কাহিনির প্রথম প্রচারকারী ছিলো ফজল হাসান বিহারী নামের এক ব্যক্তি, যার বইয়ের শিরোনাম ছিলো: ‘আল-হায়াত বা’দাল মামা’ত’

(৩) ১২৬৯ হিজরী সালে আলী আহমদ টংকী রামপুরী একটি বই লেখে, যা’তে সে ‘এমকানে কিযব’ ও ‘এমতেনা’আ আল-নাযের’ বিষয়ে ইসমাঈল দেহেলভীর ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করে।

ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী চিশ্তী এই বইটি খণ্ডন করেন এবং আবারো একটি ফতোয়া জারি করেন, যা’তে ওই সময়কার নেতৃস্থানীয় ৩৪ (চৌত্রিশ) জন আলেম সমর্থনসূচক স্বাক্ষর করেন। এটা পারসিক ভাষায় জারি করা হয়েছিলো এবং ‘মাতবা’অা-এ-হেদায়া’ হতে প্রকাশিত হয়েছিলো।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, এমন কী ইসমাঈল দেহেলভীর মৃত্যুর ২৩ বছর পর ১২৬৯ হিজরী সালেও ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী সাহেবের ঠিক একই দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো, যেমনটি ছিলো তাঁর ১২৪০ হিজরী সালে, যখন তিনি ইসমাঈল দেহেলভীর প্রতি কুফরের ফতোয়া জারি করেছিলেন।

এমতাবস্থায় ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী (রহ:) ১২৪৬ হিজরী সালে ইসমাঈল দেহেলভীর প্রশংসা করেছিলেন মর্মে দেওবন্দী (বানোয়াট) কাহিনীর জন্যে আর কোনো দরজা খোলা আছে কি?

(৪) ১২৭০ হিজরী সালে ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী চিশ্তী তাঁর পারসিক ভাষায় লিখিত মহাকীর্তি সুসম্পন্ন করেন এবং ওর নাম দেন ‘এমতেনা’আ আল-নাযীর’।

দলিলচিত্র:





এই বইটিতে ‘আল্লাহ চাইলে সহস্র সহস্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করতে পারেন’ মর্মে ইসমাঈল দেহেলভীর বক্তব্যকে তিনি আবারো কুফর হিসেবে প্রমাণ করেন। মহান এই আলেম ওই বক্তব্য ও ধারণার সকল সম্ভাব্য ব্যাখ্যারও খণ্ডন করেন।

অতএব, আমরা দেখতে পাই এমন কী ১২৭০ হিজরী সালেও ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী (রহ:) তাঁর সেই ফতোয়ার ওপর অটল ছিলেন, যা তিনি ১২৪০ হিজরী সালে ইসমাঈল দেহেলভীর প্রতি জারি করেছিলেন। এমতাবস্থায় ১২৪৬ হিজরী সালে ইসমাঈল দেহেলভীর গুণকীর্তন করার সম্ভাব্যতা তথা অবকাশ কোথায়?

১২৭০ হিজরীর ওই একই বছর মওলানা ফজলে রাসূল বদায়ূনী সাহেব ‘আল-মুতাক্বাদ’ শীর্ষক পুস্তকটি রচনা করেন, যার মধ্যে ‘এমকান আল-কিযব’ ও ‘এমতেনা’আ আল-নাযীর’ বিষয়গুলোতে তিনি শুধু ইসমাঈল দেহেলভীকে খণ্ডন-ই করেননি, বরঞ্চ ওহাবীদের অন্যান্য ভ্রান্ত ধারণাকেও রদ করেছেন।

ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী চিশ্তী (রহ:) উক্ত বইটির ওপর তাক্বরিযলেখেন এবং তা (বইটির) অনুমোদন করেন এ কথা বলে:

“এই বইটি বিশুদ্ধ আক্বীদা-বিশ্বাস বর্ণনা করেছে এবং গোমরাহ দলগুলোকেও খণ্ডন করেছে...”

ইমাম ফজলে হক্ব খায়রাবাদী চিশ্তী (রহ:) যদি ১২৪৬ হিজরী সালে ইসমাঈল দেহেলভীর মৃত্যুতে সত্যি শোক প্রকাশ করতেন এবং তাকে মহান আলেম বলতেন, তাহলে কেন তিনি ১২৭০ হিজরী সালে ইসমাঈল দেহেলভীর প্রতি আরোপিত কুফরের ফতোয়ার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন?

আনুমানিক ১২৭০ হিজরী/১৮৫৩ খৃষ্টাব্দ সালের দিকে হায়দার আলী টংকিএকটি দ্বি-চরণে ইসমাঈল দেহেলভীর প্রশংসা করে; তাতে বলা হয়:

اتهجو عالماً بر اً تقياً وعند الله فى ذاك انتقام

“তোমরা কি খোদাভীরু আলেমের প্রতি করছো বিদ্রূপ,
খোদা এ জন্যে তোমাদের প্রতি করবেন প্রতিবিধান আরোপ।” [ভাবানুবাদ]

ইমাম ফজলে হক্ব খায়রাবাদী চিশ্তী ছিলেন ‘ফীল-বাদি শা’য়্যার’। কাব্যে তাঁর মহা পাণ্ডিত্য ছিলো এবং আরবী ভাষায়ও ছিলো গভীর দখল। তিনি জবাবে লেখেন:

اتمدح جاهلاَ شر اَ شقياً       تدار كم من الله انتقام
و انكر جا حداً غياَ وجحلاً     شفا عة من يلو ذ به الانام
و حرم ان يؤم بشد رحل ل    مزار دونه البيت الحرام
وجوز ان يقول الله كذباً       وقول الكذب منقصة وذام
فجوز ان يكون نظاءرفى      الكمال لمن له الفضل العظام

“তোমরা কি এক অজ্ঞ ও মন্দ লোকের প্রশংসামুখর, যাকে আল্লাহ দিয়েছেন শাস্তি,
একগুঁয়েমির কারণে যার ঘটেছিলো বিচ্যুতি, 
আর ওই আশীর্বাদধন্য সত্তার (দ:) সুপারিশের প্রতি যে জানিয়েছিলো অস্বীকৃতি,
সেই পবিত্র সত্তা (দ:) - যাঁকে ছাড়া সমগ্র সৃষ্টির নেই ইহ ও পরকালীন মুক্তি,
আর ওই বদমাইশ লোকটি দিয়েছিলো রওযা আকদস যেয়ারত না করার ফিরিস্তি,
যে পুণ্যস্থানটির রয়েছে এমন কী বায়তুল হারামের চেয়েও অধিক আশীর্বাদ ও স্বস্তি,      
অধিকন্তু সে বলেছিলো, আল্লাহ চাইলে করতে সক্ষম মিথ্যে উক্তি,
অথচ তা মহা পবিত্র আল্লাহর জন্যে নিশ্চয় এক দোষ ও ঘাটতি,
উপরন্তু নিখুঁত ও অনুপমের (দ:) অনুরূপ সত্তার সম্ভাব্যতা তার ভ্রান্তমতে সত্যি।”
[ভাবানুবাদ]

এই সকল দ্বি-চরণ ‘এমকান আল-কিযব’, ‘এমতেনা’আ আল-নাযীর’ ও ‘শাফা’আত’ বিষয়ে ইসমাঈল দেহেলভীকে রদ করে। ইমাম খায়রাবাদী (রহ:) আরো ৩৫ (পঁয়ত্রিশ)-টি দ্বি-চরণমূলক কাব্যে ইসমাঈল দেহেলভীর (বদ) আক্বীদার বিরুদ্ধে লিখেছিলেন।

এতে বোঝা যায়, ১২৭০ হিজরী সালেও ইমাম ফজলে হক্ক খায়রাবাদী সাহেব তাঁর ১২৪০ হিজরী সালে ব্যক্ত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর অটল ছিলেন।

অতএব, ‘ইসমাঈল দেহেলভীর মৃত্যুতে ইমাম খায়রাবাদী শোক প্রকাশ করেন, এমন কী তার প্রশংসাও করেন’ মর্মে ওই দেওবন্দীর ফাঁদা কাহিনিটি একটি আষাঢ়ে গল্প ছাড়া কিছু নয়।

পাঠকমণ্ডলী নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন যে দেওবন্দীটি এই কাহিনি ধার করেছে আরেক দেওবন্দী হতে, যে ইন্টারনেটে মিথ্যে প্রচারে কুখ্যাত।

এই দেওবন্দী লেখক সত্যান্বেষী নয়। যদি সে তা-ই হতো, তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মহান আলেম-উলামার সমালোচনা করার আগে দলিলপত্র গবেষণা ও অধ্যয়ন করতো।

দেখুন কীভাবে এই দেওবন্দী লেখক শায়খ ড: জি, এফ, হাদ্দাদকে আক্রমণ করছে।

দেওবন্দী লিখেছে:

“ড: জিবরীল ফুয়াদ হাদ্দাদ কিছু বছর আগে (ইসমাঈল দেহেলভীর) ‘তাকভিয়াতুল ঈমান’ পুস্তকের ইংরেজি অনুবাদের ওপর ভিত্তি করে একটি সমালোচনা লিখেছিলেন, যেটা তাঁর পক্ষপাত, অসততা, অজ্ঞতা ও অনুবাদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ফলশ্রুতিতে অতিরঞ্জিত ও ভুল তথ্যে পূর্ণ ছিলো।”

কিন্তু পাঠকমণ্ডলী স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন কে আসলে পক্ষপাতদুষ্ট, অসৎ ও অজ্ঞ!!

ওই দেওবন্দী আরো লিখেছে:

“ড: হাদ্দাদের কথার তথ্যসূত্র হলো দেওবন্দীদের বিরুদ্ধে লেখা একটি ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্রবন্ধ।”

প্রকৃতপক্ষে শায়খ জিবরীল হাদ্দাদ সাহেব যা কিছুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তা স্রেফ ক্বুরআন মজীদ, সুন্নাহ ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাস পুস্তক হতেই; পক্ষান্তরে এই দেওবন্দী সব কিছুই ইন্টারনেট বা অনুবাদকর্ম থেকে গ্রহণ করেছে! সে এমন কী মূল ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ বইটির উদ্ধৃতিও দেয়নি, বরঞ্চ ইংরেজি ও আরবী অনুবাদের শরণাপন্ন হয়েছে।

ওই দেওবন্দী লেখক মৌলভী ইসমাঈল দেহেলভীর গুণকীর্তন করার অপচেষ্টারত, যে বলেছিলো:

“সালাত তথা নামাযে তোমার স্ত্রীর সাথে সহবাসের চিন্তা কিংবা অবৈধ যৌনাচারের কুপ্রলোভন-ও শ্রেয়তর; আর কোনো শায়খ বা পুণ্যাত্মা সম্পর্কে, এমন কী মহানবী (দ:) সম্পর্কে চিন্তা করাও তোমার নিজের গাধা বা বৃষের চিন্তার চেয়ে নিকৃষ্টতর।” [সিরা’ত-এ-মুসতাক্বীম, পারসিক কিতাব, ৮৬ পৃষ্ঠা] নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক!

বি:দ্র: স্ক্যানকৃত পৃষ্ঠাগুলোর লিঙ্কhttp://aakhirikhtilaafkyun.blogspot.com/

এবার আমরা দেখবো আশরাফ আলী থানভী কী বলেছেন:

প্রশ্ন: (এটা উত্থাপন করেন আবদুল মজীদ দরিয়াবাদী, থানভী সাহেবের শিষ্য ও খলীফা)
সালাতে মনোযোগ রাখার জন্যে আপনাকে স্মরণ করা কি আমার জন্যে জায়েয হবে?

উত্তর: (আশরাফ আলী থানভী প্রদত্ত)
এটা সঠিক/বৈধ যতোক্ষণ পর্যন্ত তুমি অন্যান্যদের কাছে তা প্রকাশ না করছো।” [হাকিমুল উম্মত, ৫৪ পৃষ্ঠা]

দেওবন্দী ফের্কার গোপন প্রকৃতি এই বর্ণনায় পরিদৃষ্ট হয়। তারা তাদের গোপন শিক্ষাগুলো নিজেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখে এবং অন্যদেরকে তা জানতে দিতেও চায় না!

আর তারা ইসমাঈল দেহেলভীকে খুব ভালোবাসে! কেননা كل شي يرجع الى اصله - সকল বস্তু-ই তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

- আবদুল্লাহ সাবরী চিশ্তী
১৫ রমাদান আল-মোবারক, ১৪৩২ হিজরী
১৬ আগস্ট, ২০১১ খৃষ্টাব্দ।

ইসমাঈল দেহেলভীর প্রতি ফতোয়ার স্ক্যানকৃত কপি:






মওলানা আবূল কালা’ম আযাদ সাহেব লেখেন:

“মওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল শহীদ (মাক্বতূল) ছিলেন মওলানা মুনাওওয়ারুদ্দীন সাহেবের সহপাঠী। শাহ আবদুল আযীয দেহেলভী সাহেবের বেসালের পরে তিনি (ইসমাঈল) যখন ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ ও ‘জিলাউল ‘আয়নাইন’ বইগুলো রচনা করেন এবং তার ফের্কাহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সমস্ত আলেম-উলামা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এসব বইয়ের খণ্ডনে যিনি সবচেয়ে বেশি বই লিখেছেন, তিনি হলেন মওলানা মুনাওওয়ারুদ্দীন সাহেব; তিনি বেশ কয়েকটি কিতাব লেখেন এবং ১২৪০ হিজরী সালে দিল্লীর জামে মসজিদে বিখ্যাত বাহাস/বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ভারত উপমহাদেশের সকল আলেমের কাছ থেকে একটি (সম্মিলিত) ফতোয়া জারির আহ্বান জানানো হয় এবং হারামাইন শরীফাইন হতেও একটি ফতোয়ার জন্যে আবেদন করা হয়।

“মওলানা মুনাওওয়ারুদ্দীন সাহেবের লেখনী থেকে স্পষ্ট হয় যে তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে মওলানা ইসমাঈল ও তার মেয়ের জামাই মওলানা আব্দুল হাই এবং তাদের সাথীদেরকে বোঝাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। তবে তাঁর ওই চেষ্টা বিফল হলে তিনি তাদের সাথে মোনাযেরা ও তাদেরকে রদ করতে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে দিল্লীর জামে মসজিদে ওই প্রসিদ্ধ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়; বিতর্কে এক পক্ষে ছিলেন মওলানা ইসমাঈল ও মওলানা আবদুল হাই, আর অপর পক্ষে মওলানা মুনাওওয়ারুদ্দীন ও দিল্লীর সমস্ত আলেম-উলামা।” [রেফারেন্স: আযাদ কি কাহানি, ৪৮ পৃষ্ঠা; মাকতাবা’ খলীল, উর্দূ বাজার, লাহোর; মওলানা আবদুল রাযযাক্ব মালীহ-আবাদী]

মওলানা মাখসূসউল্লাহ বিন শাহ রফিউদ্দীন দেহেলভী, মওলানা মুহাম্মদ মূসা বিন শাহ রফিউদ্দীন দেহেলভী, মওলানা ফজলে হক্ব খায়রাবাদী (শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহেলভীর ছাত্র), মুফতী সদরউদ্দীন আযুরদাহ (শাহ আবদুল আযীয মুহা্দ্দিসে দেহেলভীর ছাত্র), মওলানা মুহাম্মদ ফজলে রাসূল উসমানী বদায়ূনী, মওলানা আহমদ সাঈদ নক্বশবন্দী দেহেলভী, মওলানা রশীদউদ্দীন দেহেলভী, মওলানা খায়রউদ্দীন দেহেলভী, হাকীম সাদিক্ব আলী খাঁন দেহেলভী (মাসীহুল মুলক্ হাকীম আজমল খাঁনের দাদা), মওলানা সাইয়্যেদ আশরাফ আলী গুলশান-আবাদী, মওলানা মুখলিসুর রহমান চাটগামী (চট্টগ্রামের আলেম), মওলানা ক্বালান্দার আলী যুবায়রী পানিপথী এবং আরো অনেক সুন্নী আলেম তাঁদের ভাষণ ও লেখনীর দ্বারা ইসমাঈল দেহেলভীর প্রবর্তিত ভ্রান্ত ও বেদআতী ধ্যান-ধারণার খণ্ডন করেন। তাঁরা নিজেদের জ্ঞান ও কর্ম দিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতকে রক্ষা করার মহৎ উদ্দেশ্যে এই পবিত্র জ্বেহাদে অংশগ্রহণ করেন।

হযরত শাহ মাখসূসউল্লাহ বিন শাহ রফিউদ্দীন বিন শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহেলভী’কে আল্লামা ফজলে রাসূল উসমানী বদায়ূনী সাহেব ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ পুস্তকটি সম্পর্কে সাতটি প্রশ্ন করেন।

এসব প্রশ্ন ও উত্তর ‘তাহক্বীক্ব আল-হাক্বীক্বত’ শিরোনামের একটি বইতে বোম্বে হতে ১২৬৭ হিজরী সালে প্রকাশিত হয়

এর মধ্যে তিনটি উত্তর এখানে পেশ করা হলো:

হযরত মাখসূসউল্লাহ দেহেলভী লেখেন:

প্রথম প্রশ্নটির উত্তর যা ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ সংক্রান্ত - আর আমি এটাকে ‘তাফউইয়াতুল ঈমান’ (আরবী تفويت الإيمان যা ‘ঈমানহারা’ বোঝায়) অভিহিত করেছি - তার খণ্ডনে আমি ‘মু’ঈদুল ঈমান’ শীর্ষক একটি একক পুস্তক রচনা করেছি।

ইসমাঈলের বই শুধু আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যেরই বিরোধী নয়, বরঞ্চ তা সকল নবী-রাসূল (আলাইহিমুস সালাম)’বৃন্দের তওহীদেরও বিরোধী! কেননা তাঁদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে মানুষদেরকে শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে এবং তওহীদের পথে চলার লক্ষ্যে।

তবে এই বইটিতে তওহীদের কিংবা আম্বিয়া (আ:)’মণ্ডলীর সুন্নাহের কোনো লেশচিহ্নমাত্র-ও নেই।

বইটিতে যেসব বিষয়কে শির্ক ও বেদআত বলে দাবি করা হয়েছে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, সেগুলো পয়গম্বর (আ:)’বৃন্দের মধ্যে কেউই সে মোতাবেক চিহ্নিত করেননি, কিংবা তাঁদের অনুসারীবৃন্দও তা করেননি। এর পরিপন্থী কোনো প্রমাণ থাকলে ইসমাইলের অনুসারীদের বলুন তা আমাদেরকে প্রদর্শন করতে। 

চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর হলো (ইবনে আবদিল ওয়াহহাব নজদীর) ওহাবী বইটি ছিলো মূল, আর এটা যেনো তারই ব্যাখ্যামূলক পুস্তক।

পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর হলো শাহ আবদুল আযীয (বৃদ্ধ বয়সে) ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিদ্বারা আক্রান্ত ছিলেন। এই বইটি সম্পর্কে শোনার পরে তিনি বলেছিলেন অসুস্থ না হলে ‘তোহফা-এ-এসনা আশারিয়্যা’ গ্রন্থের মতো একটি রদ-সূচক বই তিনি প্রণয়ন করতেন

আল্লাহতা’লার অনুগ্রহে আমি (মওলানা মাখসূসউল্লাহ) এই ব্যাখ্যামূলক বই (তাকভীয়াতুল ঈমান)’টির একটি রদ লিখেছি এবং এই সূত্রে মূল কিতাবেরও(কিতাবুত-তওহীদ) খণ্ডন করা হয়েছে।

আমার পিতা শাহ রফিউদ্দীন এই বইটি দেখেননি, কিন্তু যখন শাহ আবদুল আযীয দেহেলভী এটা দেখতে পান এবং তাঁর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন, তখন আমি এর রদ লেখায় প্রবৃত্ত হই।

(রেফারেন্স: আনওয়ার-এ-আফতাব-এ-সাদাক্বাত, ৬১৭-৬২০ পৃষ্ঠা; করীম প্রেস, লাহোর - মুহাম্মদ ক্বাজী ফজলে আহমদ লুধীয়ানী)

ইমাম ফজলে হক্ব খায়রাবাদী (রহ:) প্রণয়ন করেন ‘তাহক্বীক্ব অাল-ফাতওয়া ফী ইবতাল আল-তাগওয়া’ শীর্ষক গ্রন্থ, যা’তে তিনি ইসমাঈল দেহেলভীর বিভিন্ন ইসলামবিরোধী ধারণার খণ্ডন করেন।

মৌলভী ইসমাঈল দেহেলভী ও তার লিখিত ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’ পুস্তকের প্রতি কুফরের ফতোয়া জারি করা হয়:



‘তাহক্বীক্ব আল-ফাতওয়া ফী ইবতাল আল-তাগওয়া’র মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ১৭ (সতেরো) জন নেতৃস্থানীয় আলেম স্বাক্ষর করেছিলেন।

ইমাম আহমদ রেযা খাঁন (রহ:)’এর জারিকৃত ইসমাঈল দেহেলভীর প্রতি ফতোয়া? 

ইমাম আহমদ রেযা খাঁন সাহেবের (রহ:) সময়কালের বহু বছর আগেই ইসমাঈল দেহেলভী মারা যায়। তাই ইমাম সাহেব যদিও ইসমাঈল দেহেলভীরলেখনীর খণ্ডনে নিজের বইতে লিখেছিলেন যে দেহেলভীর কিছু কিছু লেখা কুফর, তথাপিও তিনি ইসমাঈলের প্রতি কুফরের ফতোয়া জারি করেননি; কেননা সে তখন মৃত এবং নিশ্চয় আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোনো কিছু লেখায়ও ছিলো অপারগ।

ইমাম সাহেবের (রহ:) আগে অনেকেই দেওবন্দের উলামা’বর্গের (ওই মসলকের পূর্বসূরীদের) বিরুদ্ধে লিখেছিলেন; যেমন - 

ইমাম ফজলে হক্ব খায়রাবাদী (রহ:): ‘তাহক্বীক্বুল ফাতাওয়া।’
আল্লামা ফজলে রাসূল বদায়ূনী (রহ:): ‘সাইফুল জব্বার’
এছাড়াও অন্যান্য সুন্নী আলেম-উলামা।

বস্তুতঃ এগুলো যখন লেখা হয়, তখন ইমাম আহমদ রেযা (রহ:)’র জন্মও হয়নি!

ইমাম ফজলে হক্ব খায়রাবাদী (রহ:) রচনা করেন ‘তাহক্বীক্ব আল-ফাতাওয়া ফী ইবতাল আল-তাগওয়া’

ইমাম আহমদ রেযা খান (রহ:) জন্মগ্রহণ করেন ১২৭২ হিজরী সালের ১০ই শাওয়াল/১৪ই জুন, ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দ

ইসমাঈল দেহেলভী মারা যায় ১২৪৬ হিজরী/১৮৩১ খৃষ্টাব্দ।

                                               *সমাপ্ত*
Top