একজন রাবি (সাধারন) দ্বঈফ হওয়াতে হাদিস বাতিল হওয়া শর্ত নয় হাদিস শাস্ত্রে একজন রাবী সাধারন দ্বঈফ হলে বর্তমান আহলে হাদিসগন ফিতনা ছড়াচ্ছে যে, সে হাদিসটির সনদ নাকি অত্যন্ত দুর্বল বলে বিবেচিত হবে, তারা কোন ক্ষেত্রে জাল বা বানােয়াট বলে বেড়িয়ে সমাজে ফিতনা ছড়াচ্ছে। তবে এটির ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসগন একমত রাবির দুর্বলতা যদি কঠিন পর্যায়ের হয় (যেমন তার ব্যাপারে কোন মুহাদ্দিস যদি মুনকারুল হাদিস,মাতরুকুল হাদিস ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার থাকলে) তাহলে সনদটি দুর্বল তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই রাবীর সামান্ন দুর্বলতায় হাদিসের সনদ জাল বা অত্যন্ত দুর্বল হবে না। এ প্রসঙ্গে সংক্ষেপে কিছু লিখার জন্য প্রয়ােজন মনে করলাম এবং কিছু মুহাদ্দিসের সনদ তাহকীক উদাহরণ স্বরূপ পেশ করলাম।
আল্লামা ইবনে হাযার হাইসামী رضي الله عنه এক হাদীসের বর্ণনা করতে গিয়ে একজন রাবী দ্বঈফ হওয়ার কথা এভাবে বর্ণনা করেন,
-“উক্ত হাদিসে ইবনে লাহিয়া বিদ্যমান। তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী, তারপরও হাদিসটি হাসান।"
তার বক্তব্য দ্বারা বুঝা গেল একজন রাবী দ্বঈফ হওয়ার কারণেও হাদিসটি নি:সন্দেহে হাসান লিগাইরিহী। শুধু তাই নয় নাসিরুদ্দীন আলবানীও উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেন, ইবনে লাহিয়াহ দূর্বল রাবী তারপরও বলেন, “ অত:পর হাদিসটি “হাসান" বলে বিবেচিত হবে। হযরত যাবের رضي الله عنه হতে বর্ণিত, রাসুল ﷺ সবাইকে একথাটি জানানাের জন্য বলেছিলেন
-“মু'মিন ব্যতিত কেউ জান্নাতে যাবে না। এ হাদিসটি হাইসামী সংকলন করে বলেন, হাদিসটি ইমাম আহমাদ رضي الله عنه বর্ননা করেছেন,আর সনদে ইবনে লাহিয়াহ'  বিদ্যমান তারপরেও হাদিসটি হাসান'।” এ ইবনে লাহিয়াহ রাবির হাদিসকে ইন হাযার তার এ গ্রন্থের মােট ২৪টি স্থানে অনুরুপ বলেছেন।
শুধু তাই নয় ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী رضي الله عنه এর সুনানে তিরমিযীর ৫ম খতে কিতাবুল আদাব অধ্যায়ে হযরত যাবের رضي الله عنه হতে বর্ণিত আছে
-“আগে সালাম তারপর কথাবার্তা।” উক্ত হাদিসটি ইমাম তিরমিযী رضي الله عنه বর্ণনার করে বলেন উক্ত হাদীসের দুজন রাবী রয়েছেন আম্বাসা ইবনে আব্দুর রহমান দুর্বল এবং মুহাম্মদ ইবনে যাযান মুনকার (পরিত্যক্ত) বর্ণনাকারী। দুইজন রাবী দোষী হওয়ার পরেও হাদীসের ইমামগণ উক্ত হাদিসটি সনদের ব্যাপারে দ্বঈফ বলেছেন। বুঝা গেল, একজন রাবী মুনকার এবং দুর্বল রাবী হওয়ার পরও উক্ত হাদিসকে শুধু দুর্বল বলেছেন,জাল নয়। | আল্লামা ইবনে হাযার হাইসামী رضي الله عنه এক হাদীসের সনদ সম্পর্কে বলেন,
-“উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী তার মু'জামুল কবীর ও আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদীসে ইবনে লাহিআহ দুর্বল রাবী হলেও হাদিসটি হাসান অর্থাৎ গ্রহণযােগ্য।” | শুধু তাই নয়, আল্লামা ইমাম ইবনে যওজী رضي الله عنه তার গ্রন্থে একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেন, উক্ত হাদিসটি সহিহ লিগাইরিহী' (সহিহ লি জাতিহী নয় তার কারণ) উক্ত হাদীসে একজন দুর্বল রাৰী ইবনে লাহিআহ রয়েছে।” ' যেমন প্রসিদ্ধ একটি হাদিস রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضي الله عنه হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ  ইরশাদ ফরমান :
-“আল্লাহ কবর জিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর অভিসম্পাত করেন।”
উক্ত হাদিসটি ইমাম তিরমিযী, নাসায়ী, হাকিম, ইমাম আবু দাউদ  رضي الله عنه বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসের একজন রাবী আবু ছালেহ বাযাম তার সম্পর্কে ইমাম ইবনে মাহদী  رضي الله عنه বলেন, তার হাদিস পরিত্যাগযােগ্য।
ইমাম আবু আহমদ  رضي الله عنه ও ইমাম নাসায়ী  رضي الله عنه বলেন, তিনি শক্তিশালী রাবী নয়, অনুরূপভাবে ইমাম যাহাবী ও বলেছেন।” অথচ ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
আল্লামা হাইসামী  رضي الله عنه একটি হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলেন
-“উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসের সমস্ত রাবী বিশ্বস্ত শুধু “ইবনে লাহিআহ” ব্যতীত,কেননা তিনি দুর্বল রাবি। তাই উক্ত হাদিসটি হাসান” পর্যায়ের।
দেখুন ইবনে লাহিআহ  رضي الله عنه হলেন একজন দুর্বল রাবী। তারপরও হাদিসটি দুর্বল বলেন নি।
তিনি অন্যস্থানে উক্ত দুর্বল রাবী সম্পর্কে লিখেন
-“উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ  رضي الله عنه বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসের সমস্ত রাৰী সহিহ বা বিশুদ্ধ শুধুমাত্র ইবনে লাহি'আহ ছাড়া। তবে তার হাদিসটি হাসান পর্যায়ের।তিনি অন্যস্থানে উক্ত রাবী সম্পর্কে  বলেন
-“উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী সংকলন করেছেন, উক্ত সনদে ইবনে লাহিত, বিদ্যমান, তারপরও তার কারণে হাদিসটি হাসান”। আর বাকী রাবীগুলাে সহিত বিশুদ্ধ।
শুধু তাই নয়, তিনি অন্যত্র হুবহু বলেন
-“উক্ত হাদিসটি ইমাম বাযযুর رضي الله عنه বর্ণনা করেছেন উক্ত সনদে ইবনে  লাহিয়াহ রয়েছেন, তারপরও হাদিসটি “হাসান"। আর বাকী সমস্ত রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।” ইমাম হাইসামী এ রাবির ব্যাপারে অনুরুপ তার এ গ্রন্থের ১৮ স্থানে বলেছেন।'
তিনি অন্যস্থানে অন্য এক রাবী সম্পর্কে লিখেন
- “উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ رضي الله عنه  সংকলন করেছেন, উক্ত সনদে “আলী বিন যিয়াদ রয়েছেন, আর তিনি দুর্বল, তারপরও হাদিসটি “হাসান”।” আল্লামা ইবনে হাযার হাইসামী এক হাদিস প্রসঙ্গে বলেন, হাদিসটি তাবরানী বর্ণনা করেছেন,হাদিসের সমস্ত রাবি বিশ্বস্ত,তবে ইবনে লাহিয়াহ ব্যতিত, তারপরও হাদিসটি হাসান।" (মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১০/১৫৯ পূ, হাদিস,১৭২৭২) তিনি অনুরুপ নিম্নের আরেকটি হাদিস প্রসঙ্গে বলেন,
-“হাদিসের সমস্ত রাবি বিশ্বস্ত, শুধু ইবনে লাহি'আহ ব্যতিত। তারপরেও হাদিসটি হাসান।” (মাযমাউদ যাওয়াইদ,১০/১৭০পৃ.হাদিস:১৭৩৪৭)।
শুধু তাই নয় প্রসিদ্ধ একটি হাদিস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণিত, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন
-“রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন : কিয়ামতের ময়দানে আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে সেই ব্যক্তি যে আমার প্রতি অধিক দুরূদ শরীফ পাঠ করবে।”
উক্ত হাদীসে পাকটি ইমাম তিরমিযী رضي الله عنه ইমাম ইবনে হিব্বান رضي الله عنه বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসে একজন রাবী মুসাবিন ইয়াকুব জামাঈ আল মাদানী সম্পর্কে ইমাম নাসায়ী رضي الله عنه বলেন," সে মজবুত কিন্তু শক্তিশালী রাবী নয়।
তারপরও ইমাম তিরমিযী رضي الله عنه উক্ত হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, তাই প্রমাণিত হলাে একজন রাবী সাধারণত দুর্বল হলে হাদিস হাসান' বা গ্রহণযােগ্য।
সুতরাং তার বক্তব্য দ্বারা বুঝা গেল একজন রাবি দ্বঈফ হওয়াতে হাদিসের সনটি দ্বঈফ হওয়া শর্ত নয় তবে রাবির ব্যাপারে যদি মুহাদ্দিসগন বেশী দুর্বলতার শব্দ দ্বারা ইঙ্গিত করে যেমন মুনকার, বাতিল, মাতরুক হলে নিশ্চয় দ্বঈফ হবে। একজন রাবি মুনকার,মুদুত্বব,
মাক ইত্যাদি হলে হাদিসের সনদটি জাল নয়, বরং ঘসফ বলা যেতে পারে বর্তমান আহলে হাদিসগন খুবই ফিতনা ছড়াচ্ছে যে হাদিসের সনদে কোন কিছুর ব্যাপারে যদি মুনকার ..ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয় তাহলে তা তাদের দৃষ্টিতে হাদিসটি জাল।



Top