Latest News

কামেল পীরের আলামত

“ছেরাজুছ্-ছালেকীন” – আবদুল খালেক এম এ
কামেল পীরের আলামতঃ
যিনি কামেল মোরশেদ হইবেন তাঁহার নিম্নলিখিত শর্তসমূহ থাকা বিশেষ আবশ্যক:
প্রথম শর্ত: কোরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ফেকাহ্‌ শরীফের এলেম জানা থাকা আবশ্যক। এলেম ব্যতীত কেহ আল্লাহতায়ালাকে চিনিতে পারে না। কোরআন শরীফের এতটুকু এলেম জানা থাকা দরকার যে, তিনি তফ্‌ছীরে মাদারেক, জালালাইন এইরূপ অন্য কোন তফ্‌ছীর বুঝিবার ক্ষমতা রাখেন। হাদীছ শরীফের মধ্যে মেশকাত শরীফের তুল্য কোন হাদীছ আয়ত্ব করিয়া থাকেন। দ্বীনের জরুরী মাছায়েল ও শরীয়তের আদেশ ও নিষেধ সমূহ ভালরূপে জানা থাকা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলিয়াছেন: দুই শ্রেণীর লোক আমার পৃষ্ঠদেশ ভাঙ্গিয়া দিয়াছে-জাহেল এবাদতকারী ও বে-আমল আলেম। এক শ্রেণীর জাহেল বেদয়াতী ফকিরেরা বলিয়া থাকে যে, পীর মোরশেদের জন্য কোরআন, হাদীছ ও ফেকার এলমের কোন দরকার নাই, যেহেতু, শরীয়ত এক বিষয় আর মা’রেফাত অন্য এক বিষয়। ইহা ডাহা বাতিল কথা। হজরত ইমাম মালেক (রাঃ) বলিয়াছেন: যে ব্যক্তি তাছাওয়োফ (এলমে মারেফাত) শিক্ষা করিল, অথচ দ্বীনি এলেম শিক্ষা করিল না, সে ব্যক্তি আকায়েদে ও আমলে গোলমাল করিয়া জিন্দিক (কাফের) হইয়া গেল। আর যে ব্যক্তি দ্বীনি এলেম শিক্ষা করিল, অথচ তাছাওয়োফ শিক্ষা করিল না, সে ব্যক্তি এলেম অনুযায়ী আমলের মধ্যে এখলাছের অভাবে ফাছেক হইয়া গেল, আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করিল, সে মুহাক্কেক (খাঁটি লোক) হইল। হজরত বড় পীর ছাহেব (রাঃ) বলিয়াছেন: যেই হাকীকতের বুনিয়াদ শরীয়ত দ্বারা সুদৃঢ় করা হয় নাই, উহা কাফেরী কার্য এবং তরীকত শরীয়ত বিরোধী তাহা কাফেরী কার্য। কিতাবে আছে: শরীয়ত মা’রেফাত হইতে এবং মা’রেফাত শরীয়ত হইতে পৃথক নহে। কেবল একটি মূলের চারটি অবস্থা মাত্র। শরীয়ত হইতেছে আইন-কানুন, তরীকত হইতেছে তদনুযায়ী আমল, মা’রেফাত আমল করার পর দিলের হাল বা অবস্থা এবং হাকীকত উহার ভেদ ও গুপ্ততত্ব।
দ্বিতীয় শর্ত: মোরশেদ ন্যায়পরায়ণ ও পরহেজগার হওয়া দরকার। গোনাহে কবীরাকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা, গোনাহে ছগীরারকে পুনঃপুনঃ না করা এবং হারাম মাল ভক্ষণ না করা, তাঁহার পক্ষে একান্ত কর্তব্য।
তৃতীয় শর্ত: মোরশেদের পক্ষে দুনিয়ার প্রতি রাগবত না থাকা ও আখেরাতের খেয়ালে নিবিষ্ট থাকা, এবাদত সঠিকভাবে আদায় করা, তরীকতের নির্দেশ অনুযায়ী জিকির মোরাকাবা প্রভৃতি সুসম্পন্ন করা, নফছের প্রলোভন দমন করিবার ক্ষমতা থাকা, লোভ-লালসা ও বিলাসিতা পরিহার করা আবশ্যক।
চতুর্থ শর্ত: শরীয়তের আহ্‌কাম মানিয়া চলিবার জন্য সর্বসাধারণকে নছীহত করা। শরীয়তের খেলাপ কোন কাজ করিতে দেখিলে তৎক্ষণাৎ তাহাকে নিষেধ করা এবং গোনার কাজ দমন করিবার শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাহাতে কাহাকেও প্রশ্রয় না দেওয়া।
পঞ্চম শর্ত: মোরশেদ হইবার ইচ্ছা করিলে প্রথমতঃ কোন কামেল পীরের ছোহ্‌বতে থাকিয়া মা’রেফাত শিক্ষা করিতে হইবে এবং কঠোর পরিশ্রম সহকারে তরীকতের হাল মাকাম প্রভৃতি আয়ত্ত করিয়া লইতে হইবে। অবশেষে তাঁহাকে যোগ্য মনে করিয়া পীর তাঁহাকে খেলাফত দান করিলে তালীম, তরবিয়াত আরম্ভ করিবেন। মোরশেদ উল্লিখিত গুণবিশিষ্ট হওয়া দরকার।
এক পীর থাকা অবস্থায় অন্য পীর গ্রহণ করা নাজায়েজ। নিম্নলিখিত তিন কারণে অন্য পীর গ্রহণ করিতে পারে: (১) পীর যদি বেদয়াতী বেশরা হয় (২) পীর যদি এন্‌তেকাল করিয়া যান, কিংবা (৩) পীর এমন দূরদেশে আছেন যে তাঁহার ছোহ্‌বতে বসিয়া ফায়েজ হাছেল দ্বীনের বিষয়াদি শিক্ষা করা সুকঠিন। এমতাবস্থায় অন্য পীর গ্রহণ করা জায়েজ। পীর বেশরা হইলে তৎক্ষাণাৎ তাহাকে পরিত্যাগ করা ওয়াজেব।
Top